Share this link via
Or copy link
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের যে ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জন্য আমজনতা পাগল, তা প্রত্যাখ্যান করেছিল আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। সে অনেকদিন আগের কথা। অমিতাভ তখন গ্র্যাজুয়েশন করার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাঁর এক বন্ধু তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, রেডিওতে ইংরেজি সংবাদ পাঠকের পদের জন্য চেষ্টা করতে। সেইমতো অমিতাভ ইংরেজি ও হিন্দি সংবাদ পাঠকের জন্য অডিশন দেন। কিন্তু বিফল হন। আকাশবাণীর তরফে তাঁর কণ্ঠস্বর প্রত্যাখ্যান করে জানানো হয়, সেটি সংবাদ পাঠের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ঘটনায় হতাশ হন যুবক অমিতাভ। এরপর তিনি কলকাতায় চাকরি পান এবং একটি নামি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ হয়ে বছর সাতেক চাকরি করেন।
অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ অমিতাভের ছোট বয়স থেকেই ছিল। এলাহাবাদের সেন্ট মেরিজ স্কুলের কিন্ডারগার্টেনে পড়াকালীন স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানের নাটকে মুরগির ছানার ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন। এরপর নৈনিতালের শেরউড কলেজে পড়াকালীন শেক্সপিয়র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নাটকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর চাকরিসূত্রে কলকাতায় থাকাকালীন অ্যামেচার্স নামে একটি নাটকের গ্রুপে নিয়মিত ইংরেজি নাটকে অভিনয় করতেন অমিতাভ।
ভাই অজিতাভের ইচ্ছাতেই মুম্বইয়ের একটি ফিল্মি ম্যাগাজিনের নতুন অভিনেতা প্রতিভা অন্বেশন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে প্রথম রাউন্ডেই বিফল হয়েছিলেন। তবে এতে দমে না গিয়ে অমিতাভ কলকাতার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় করবার বাসনা নিয়ে মুম্বই পাড়ি দেন। এই বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে বিগ বি রসিকতা করে বলেছেন, এই সময় তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে ফিল্ম জগতে কিছু করতে না পারলে অন্তত মুম্বইতে ট্যাক্সি চালাতে পারেন। সেই সময় নিজের ছবি নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হতো কাজের সন্ধানে।
প্রথম দিকে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে। তখন অমিতাভের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যেভাবেই হোক চলচ্চিত্রে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করানো। তখন বাছবিচার করার কোনও উপায় ছিল না। প্রথম ছবি সাত হিন্দুস্থানিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এরপর তাঁর দ্বিতীয় ছবি সুনীল দত্তর রেশমা ও শেরা ছবিতে পর্দায় অমিতাভের দুই মিনিটের উপস্থিতি ছিল। এইভাবেই অনেক পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে একটু একটু করে চলচ্চিত্র জগতে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সক্ষম হন।
একটা কথা শোনা যায় যে, চলচ্চিত্র জগতে সংগ্রাম করতে আসার সময় নাকি তাঁর কাছে ইন্দিরা গান্ধীর রেকমেন্ডেশন লেটার ছিল। এই প্রসঙ্গে অবশ্য বিগ বি বলেছেন, তিনিও এরকম কথা শুনেছেন, তবে এরকম কিছু ঘটেনি। তিনি একথাও বলেছেন, কারও কাছে যদি এরকম কোনও চিঠি থেকে থাকে, তবে তিনি যেন তাঁকে দেখান। এরপর অমিতাভ বচ্চন বলেন, ঈশ্বরের রেকমেন্ডেশন লেটার থাকলেও চলচ্চিত্র জগতে কেউ কাজ দেবেন না, যদি না সেই ব্যক্তির মধ্যে প্রযোজক, পরিচালকরা কোনও সম্ভাবনা দেখতে পান।