KK তখনও কলকাতায় গান গেয়ে শহর মাতিয়ে দিচ্ছেন। কাতারে কাতারে ছেলে-মেয়ে ভিড় জমাচ্ছে KK-র গান শোনার জন্য। স্বপ্নের গায়ককে একবার স্বচক্ষে দেখার সে জন্য সে কী উত্তেজনা! অনুষ্ঠানের পাস জোগাড় করার জন্য তুমুল কাড়াকাড়ি। তখন ওড়িশাতে একটি শ্যুটিংয়ে ছিলেন বাঙালি গায়ক রূপঙ্কর। সেখান থেকেই KK-কে নিয়ে বাঙালি সঙ্গীতপ্রেমীদের তুমুল উত্তেজনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রূপঙ্কর। রূপঙ্করের সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই, তাঁকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়।
এরপরেই কাকতালীয়ভাবে রূপঙ্করের সেই ভিডিও পোস্ট হওয়ার পরদিনই KK-র আকস্মিকভাবে মৃত্যু ঘটে। এরপর রূপঙ্করের প্রতি দর্শক-শ্রোতাদের বিতৃষ্ণা ঝড়ে পড়ে আরও কয়েকগুণ বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে একটাই আলোচ্য বিষয় একটাই হয়ে ওঠে, তা হল- KK-কে নিয়ে রূপঙ্করের তির্যক মন্তব্য।
অবশেষে মুখ খুললেন রূপঙ্কর বাগচী। প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, ''প্রথমেই প্রয়াত কেকে-র(KK) পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার যে ভিডিওটি গত ক'দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে এত বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান হয়েছে, এখানে পৌঁছবার আগে সেটি আমি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম। পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারোর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে তাঁদের আবার জানাচ্ছি যে, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কেকে আজ যেখানেই থাকুন ,ঈশ্বর যেন ওঁকে শান্তিতে রাখেন।
আমার সঙ্গীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। যেখানে ওড়িশায় বসে করা একটা ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক ,দুৰ্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিস। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রী-র ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশে-বিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাঁদের আবেগ অনুভব করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানান স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানতো ? এত ঘৃণা! এত আক্রোশ! এত বিরুদ্ধতা --কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।
প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওঁর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একইরকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতে যেভাবে তারা শিল্পীদের স্বার্থরক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে ,আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প -সাহিত্য -সঙ্গীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সঙ্কটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি। একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম।
একই সঙ্গে তাই আরও কিছু সহযোদ্ধার নাম করেছিলাম, যাদের ট্যালেন্ট আমার মতে জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি এককভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে-র মতো ভারতবিখ্যাত পারফর্মারের নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ্য। লক্ষ্য কখনো তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই।
কে জানত, চরম দুর্ভাগ্য কেকে-র জন্য এইভাবে ওৎ পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয় বিদারক। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি।''