Share this link via
Or copy link
প্রসূন গুপ্ত: বিশ্ববরেণ্য সত্যজিৎ রায় কখনও সিনেমার সঙ্গে আপস করতে নিজের ভাবনার বাইরে যাননি। একেক ছবিতে একেক রকম চরিত্র। কিন্তু এই সত্যজিতের, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপর একটা দুর্বলতা ছিল। তাঁর ছবিতে সৌমিত্র সবথেকে বেশি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। বাংলা সিনেমার মানিকবাবুর মানসপুত্র ছিলেন বড় পর্দার 'অপু'। এমনটাই কানাঘুসো টলিপাড়ায়। অনেকে বলেন, এমন অনেক ছবি ছিল যেখানে হয়তো সৌমিত্রের বিকল্প ছিল। কিন্তু মানিকবাবু মনে করতেন সৌমিত্রের বিকল্প হয় না। সৌমিত্রকে আবিষ্কারও সত্যজিতেরই 'অপুর সংসার' দিয়ে। এরপর আরও ১৩টি, সব মিলিয়ে ১৪টি ছবিতে সৌমিত্র কাজ করেছেন সত্যজিত রায়ের সঙ্গে। এক ফেলুদা ছাড়া আর অন্য কোনও ছবিতে সৌমিত্রের চরিত্রের একটির সঙ্গে অপরটির কোনও মিল পাওয়া যায়নি।
সৌমিত্র জীবদ্দশায় তা বারবার স্বীকার করে বলেছেন যে, মানিকদা তাঁর জীবনের দ্বিতীয় পিতা, যিনি হাতে ধরে সৌমিত্রকে তৈরি করেছেন। অপুর সংসারে এক অভাগা দরিদ্র যুবক, দেবীতে জমিদারি আমলের এক বিদ্রোহী নাস্তিক, সমাপ্তিতে এমন এক যুবক যে নিজের মর্জিতে চলতে চায়। অভিযানে এক ট্যাক্সি ড্রাইভার অসামাজিক কাজে যুক্ত হতে গিয়েও ফিরে আসে নিজের আদর্শে। চারুলতার অমল যেন রবি ঠাকুরের ক্ষুদ্র সংস্করণ। কাপুরুষ-মহাপুরুষে এ এক কাপুরুষ যুবক, যে জীবন বোধে পরাজিত। অরণ্যের দিনরাত্রিতে এক উচ্চাভিলাসী বোহেমিয়ান যুবক।
এরপর সত্যজিৎ রঙিন ছবি তৈরি করেন এই সৌমিত্রকে নিয়েই। যদিও তাঁর একসময়ের রঙিন ছবি ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা (এতটাই পয়সা খরচ হয়েছিল যে ইচ্ছা থাকলেও রঙিন ছবি করতে পারেননি)। ছবি অশনি সংকেত, এই ছবিতে সৌমিত্রকে দিয়ে স্বাধীনতা পূর্বে এক পুরোহিতের চরিত্রে কাজ করিয়েছিলেন। এবার পরপর দুটি ফেলুদা, সোনার কেল্লা ও জয়বাবা ফেলুনাথ। যেখানে ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র ছাড়া কাউকে ভাবতে চাননি সত্যজিৎ। এরপর এলো গুপীবাঘার দ্বিতীয় পর্ব হীরক রাজার দেশে। এখানে সৌমিত্র এক বিপ্লবী পণ্ডিত, যে একনায়ক রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ফের রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ।
ছবি করলেন ঘরে-বাইরে। এই ছবিতে সৌমিত্র এক ভণ্ড স্বাধীনতা সংগ্রামী। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন সত্যজিৎ। কিছুটা সুস্থ হয়ে করলেন একেবারে ইনডোর শুটিংয়ে গণশত্রু, যেখানে সৌমিত্র এক ডাক্তার, যিনি অসামাজিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এই জুটির শেষ ছবি শাখা-প্রশাখা। এক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ যিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।
কাজেই সৌমিত্রর জীবনে এত ধরনের চরিত্র এক বিশ্ববন্দিত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে তিনি খাঁটি সোনা থেকেছেন বাংলা চলচ্চিত্রে। আজ বাঙালির অপুর ৮৮ বছর পূর্ণ হল।