গিয়েও যেন যাচ্ছে না। আর যাবেটাই বা কী করে। যেভাবে অসচেতনতার ছবি চারদিকে, তাতে এটা নিয়েই হয়তো আমাদের বাঁচতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তো অনেক আগে থেকেই নানাভাবে মানুষকে সতর্ক করছেন। কিন্তু শুনছেটা কে?
তাই সংক্রমণের পরিসংখ্যানেও সেই ছবিটাই ফুটে উঠছে। বুধবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মোট নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। গত কদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করলেই একটা বিষয় পরিষ্কার, দৈনিক সংক্রমণ ৮০০ র নিচে কিছুতেই নামছে না। কোনওদিন হয়তো তা কমে ছয় থেকে সাতশোর মধ্যে নেমেছিল, কিন্তু স্থায়ী হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, সংক্রমণের সংখ্যা কম মানেই স্বস্তি, এটাও জোর দিয়ে সবসময় বলা যাবে না। কারণ, রোজ কতজন করে পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে সংক্রমণের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
পরীক্ষাই যদি কম হয়, তাহলে রোগ ধরা পড়বে কী করে? যেমন বুধবার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার। পজিটিভিটির হার ২.০৬ শতাংশ। এবার উদাহরণস্বরূপ ২২ নভেম্বরের তথ্য দেখা যাক। ওইদিন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৬১৫, অর্থাৎ তুলনামূলক বিচারে অনেক কম। কিন্তু ওইদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল মাত্র ২৬ হাজার। সংক্রমণের সংখ্যা আপাতভাবে ওইদিন কম মনে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পজিটিভিটির হার ছিল বুধবারের চেয়ে সামান্য হলেও বেশি, ২.৩৪ শতাংশ। আবার সংক্রমণ কম দেখালেও ওইদিন মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু উদ্বেগজনক জায়গাতেই ছিল।
গত কদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যায় সেভাবে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। সংখ্যাটা খুব কম সময়ই ১০ এর নিচে নেমেছে। মোটামুটি ১২ থেকে ১৪ র মধ্যেই থাকছে। বুধবার যেমন তা ১২ ছিল।
আরও একটা উদ্বেগের জায়গা রয়েই যাচ্ছে। তা হল কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনা। কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত ১৪৫, মৃত ২। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্ত ৬২, মৃত ১। অর্থাৎ এই তিনটি জেলা মিলেই মৃতের সংখ্যা ৭। বাকি ৫ জনের মৃত্যুর হিসাব হল এইরকম। জলপাইগুড়ি ১, মালদহ ১, নদিয়া ২ এবং পূর্ব বর্ধমান ১ জন।
ফলে আক্রান্ত এবং মৃত্যু, দুটি ক্ষেত্রেই স্বস্তি মিলছে না। স্কুল-কলেজ খুলেছে। ট্রেন চলছে। ফলে আগের থেকে আরও বেশি সতর্কতা না নিলে পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, কবে আমরা মাস্কহীন হয়ে রাস্তায় বেরতে পারবো, সেটাই চিন্তার বিষয়।