শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: কলকাতার হোটেল, রেস্তোরাঁতে তো অনেক খেয়ে থাকেন, খাবেনও। এবার কলকাতা শহর থেকে একটু দূরে গিয়ে ছুটির দিনে জমিয়ে লাঞ্চ বা ডিনার সেরে আসতে পারেন। একঘেয়ে গতানুগতিক জীবনযাপন যখন আমাদের মানসিকভাবে খানিকটা বিষণ্ণ করে তোলে, তখন মন বলে ওঠে এই শহর থেকে আরও অনেক দূরে চলে যেতে। কিন্তু ব্যস্ততা ও সময়ের অভাবে সে আর হয়ে ওঠে না হয়তো। তাই ছুটির দিনে কলকাতা থেকে ঘণ্টা দেড়েকের পথ চন্দননগর থেকে স্বচ্ছন্দে ঘুরে আসতে পারেন। গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভ বা লোকাল ট্রেনে চেপে আরামে ঘুরে আসতে পারেন।
চন্দননগর ছিল ফরাসি উপনিবেশ। ফরাসিদের হাতেই গড়ে উঠেছিল এই শহর। সেই সময় ইংরেজ শাসিত কলকাতার সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছে ফরাসি শাসিত চন্দননগর। এই দুই শহরের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। কলকাতার মতো চন্দননগরেও গঙ্গার ধারে রয়েছে ফরাসিদের দ্বারা নির্মিত স্ট্রান্ড। এছাড়া এখানে বউবাজার, বড়বাজার, বাগবাজারও রয়েছে।
এখনও চন্দননগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফরাসি উপনিবেশের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপত্য ও সৌধ। এগুলি ঘুরে দেখে গঙ্গার ধারে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মন ভালো করে সোজা চলে আসতে পারেন বাগবাজারে চন্দননগরের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ রয়্যাল বিরিয়ানিতে। নামটা শুনলে মনে হতে পারে এটি একটি বিরিয়ানির দোকান। কিন্তু ভিতরে ঢুকলে ভুল ভেঙে যাবে। দোতলা ছিমছাম অন্তঃসজ্জা বিশিষ্ট বাতানুকূল একটি রেস্তোরাঁ। যেখানে একই ছাদের তলায় নর্থ ইন্ডিয়ান, মোগলাই, চাইনিজ ও বাঙালি খাবার পরিবেশিত হয়। এখানকার প্রতিটি খাবারেরই স্বাদ ও মান ভালো। তবে স্টার্টারে ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাঁচালঙ্কা, নারকেল বাটা ও পাতিলেবুর পুরভর্তি কাঁটাবিহীন ভেটকি মাছের ব্যাটার ফ্রাই "ফিস পাসিন্দা" স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। দুই পিস করে পরিবেশিত হয়। দাম ৩৮০ টাকা।
মেইন কোর্সে গারলিক বা চিজ নান সহযোগে মাটন কিমা ও চিকেনের যুগলবন্দিতে তৈরি মশলাদার চিকেন বাগদাদীর স্বাদে রয়েছে স্বতন্ত্রতার ছোঁয়া। একেবারে মন ভালো করা স্বাদ। চারপিস চিকেনের এই পদটির দাম ৩২০ টাকা। মাখন, ক্রিম, কালো গোলমরিচের গুঁড়ো ও অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি চিকেন কালি মির্চ-এর স্বাদ অত্যন্ত মনমুগ্ধকর। চিজ নান সহযোগে এই পদটি জমে যাবে। চারপিস চিকেন থাকে, দাম ৩২০ টাকা। এখানকার মাটন বিরিয়ানির বেশ নামডাক। চন্দননগরে এঁরাই প্রথম বিরিয়ানি চালু করেন। রয়্যাল বিরিয়ানির মশলাদার মাটন বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ ভালো। সুস্বাদু অথচ হালকা এই বিরিয়ানি খেতে ভালোই লাগে। পরিমাণ একজনের জন্য ঠিকঠাক। দাম ২৭০ টাকা।
এখানে শেষ পাতে চকোলেট ব্রাউনি, আইসক্রিম বা চন্দননগরের বিখ্যাত জলভরা তালশাঁস খেতে পারেন। প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে রাত ১০ টা ৩০ পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা থাকে। এখানকার পরিবেশ ও কর্মীদের ব্যবহারও ভালো।