শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের বাড়িতে যে সব দেশীয় রাঁধুনি ছিলেন, তাঁরা সাহেবদের সহধর্মিনীদের কাছ থেকে বিদেশি খাবারের রেসিপি শিখে তাতে ভারতীয় মশলা প্রয়োগ করে স্বাদের সামান্য অদলবদল ঘটিয়ে, মানে ফিউশন করে অনবদ্য সব পদ তৈরি করতেন। সেই সব পদের রসাস্বাদন করে সাহেব ও মেমসাহেবরা উল্লসিত হয়ে উঠতেন। এছাড়া অনেক ভালো ভালো ভারতীয় পদ তেলমশলা ও ঝাল কম ব্যবহার করে রান্না করে সাহেবদের পছন্দসই করে তুলতেন। একইভাবে ফরাসি, পর্তুগিজ উপনিবেশ থাকাকালীন ফরাসি ও পর্তুগিজ পরিবারের ভারতীয় রাঁধুনিরা ফরাসি ও পর্তুগিজ খাবারের সাথে ভারতীয় স্বাদ ও মশলার মেলবন্ধন ঘটিয়ে নানা রকমের পদের সৃষ্টি করেছিলেন। সেইসব জিভে জল আনা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান খাবারের প্রতি আজও খাদ্যরসিকদের যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও সেভাবে এইসব খাবার আজ আর সহজলভ্য নয়। তাই এই খাবারগুলির প্রতি খাদ্যরসিকদের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।
বাঙালি খাদ্যরসিকদের ঘরোয়া, সুস্বাদু অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ও পুরনো কন্টিনেন্টাল খাবার পরিবেশন করার উদ্দেশ্য নিয়ে শেফ কাম কর্ণধার অরূপ ঘোষ বেহালা ঠাকুরপুকুরের জেমস লং সরণির উপর চালু করেছেন বেঞ্জামিন বাঙালি রেস্তোরাঁ। এখানে বাঙালি, মোগলাই, নর্থ ইন্ডিয়ান, চাইনিজ খাবারও পাওয়া যায়। ছিমছাম অন্তঃসজ্জা বিশিষ্ট বাতানুকুল এই রেস্তোরাঁর বাইরে ও ভিতরের দুটি ডাইনিং হল মিলে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন মানুষ বসে খেতে পারেন।
বেহালার ঠাকুরপুকুরের বেঞ্জামিন বাঙালি রেস্তোরাঁতে বেশ কিছু জিভে জল আনা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পদ পরিবেশিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গোটা গরমমশলা, হলুদ ও নারকেলের দুধ দিয়ে তৈরি কোকোনাট রাইস (১৮০ টাকা), পেঁয়াজ ও গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান চিকেন কারি (২৭০ টাকা), সঙ্গে সুস্বাদু ডেভিল চাটনি সহযোগে পরিবেশিত হয়। স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, নারকেলের দুধ, ধনে, জিরের গুঁড়ো, তেঁতুল, টমেটো, ধনেপাতা, গোলমরিচ, গোটা গরমমশলা দিয়ে তৈরি বিখ্যাত রেলওয়ে মাটন কারি (৪০০ টাকা), মাটন ব্রাউন স্টু (৪০০ টাকা ) দুটি পদই স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। খেতে খেতে নস্টালজিক হয়ে যেতে পারেন। গাজর, চিকেন, বিনস, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি সহযোগে তৈরি সুস্বাদু চিকেন ঝাল ফ্রেজি (২৮০ টাকা), চিকেন মেরিংগো (২৮০ টাকা) স্বর্গীয় স্বাদ হৃদয় জুড়িয়ে দেবে। এই দুটি পদ গারলিক ব্রেড বা নান দিয়েও খেতে পারেন।
এখানকার প্রায় সাড়ে আটশো গ্রাম ওজনের গোটা রোস্ট চিকেন উইথ সতে ভেজিটেবিল, হার্ভড রাইস ও ব্রাউন সস স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। দাম ৪৮০ টাকা। দুজন পেট ভরে খাওয়া যায়।
এখানকার সিগনেচার ডিস হল বেকড হোল ভেটকি। মেয়নিস মাখানো সিদ্ধ করা চিংড়ি ও ডিমের পুর ভর্তি আস্ত বোনলেস ভেটকি মাছের উপর হোয়াইট সস ও চিজ ছড়িয়ে ওভেনে বেক করে তৈরি করা সুস্বাদু এই পদটি একবার চেখে দেখবেন। এক কেজি ওজনের গোটা ভেটকির দাম ১২০০ টাকা। এর সঙ্গে হার্ভড রাইস ও বয়েলড ভেজিটেবিল পরিবেশিত হয়। চার থেকে পাঁচজন ভাগ করে খেতে পারবেন। হাঙ্গেরিয়ান মাটন গুলাশ পদটিও স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। এর দাম ৩৮০ টাকা। এর সঙ্গে গারলিক ব্রেড পরিবেশিত হয়। ৪ পিস বোনলেস মাটন পরিবেশিত হয়।
যাঁরা এখানে বিকেলে আসবেন, তাঁরা এখানকার সুস্বাদু মেয়নিস ও বোনলেস চিকেনের পুরে ঠাসা গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ ও কফি খেতে ভুলবেন না। খরচ ২০০ টাকা। শেষ পাতে এখানকার হটব্রাউনি উইথ ভ্যানিলা আইসক্রিম অ্যান্ড চকোলেট সস অবশ্যই খাবেন। অরূপবাবুর হাতের তৈরি এই পদটি অনবদ্য। পরিমাণও খুব ভালো। দাম ১৫০ টাকা। প্রতিদিন দুপুর ১১ টা থেকে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত এই রেস্তোরাঁ খোলা থাকে।