শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়: এই মুহূর্তে কলকাতার সেরা মাটন ব্রেস্ট কাটলেট (Mutton Breast Cutlet) ও মোগলাই পরোটা (Moglai Paratha) পাওয়া যায় সাতাশি বছরের প্রাচীন ধীরেন কেবিনে (Dhiren Cabin)। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই ধীরেন কেবিনে। একেবারে শোভাবাজারের মুখেই এই দোকান। এখানকার রকমারি চপ, কাটলেট, ফ্রাই, স্টু ও মোগলাইয়ের বিশেষ খ্যাতি। এক সময় বহু বিখ্যাত মানুষ এই ধীরেন কেবিনে এসে চপ, কাটলেট, ফ্রাই, স্টু, মোগলাই জমিয়ে খেতেন ও আড্ডা জমিয়ে তুলতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তমকুমার, তরুণকুমার, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, ক্রিকেটার পঙ্কজ রায় প্রমুখ। এখনকার বহু বিখ্যাত মানুষও এসে বা লোক পাঠিয়ে এখানকার বিখ্যাত খাবার নিয়ে খেয়ে থাকেন। ধীরেন কেবিনে পরিবেশিত প্রতিটি খাবারই স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। তবে এখানকার মাটন ব্রেস্ট কাটলেট ও মোগলাই পরোটার জবাব নেই। স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়।
সেই ইংরেজ আমলে মেমসাহেবদের শেখানো কাটলেটের রেসিপি দেশীয় রাঁধুনিরা তাঁদের নিজেদের পদ্ধতিতে দেশীয় মশলা ও গুলমো (Herbs) ব্যবহার করে সুস্বাদু মাটন ব্রেস্ট কাটলেট তৈরি করে সাহেব ও মেমদের খাইয়ে তাঁদের মন জয় করেছিলেন। সেই কাটলেট ইংরেজ মহলে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তী সময়ে সেইসব রাঁধুনিদের হাত ধরে দেশীয় খাদ্যরসিক মহলেও এই মাটন ব্রেস্ট কাটলেট বিরাট জনপ্রিয়তা অর্জন করে, যে ধারা আজও অব্যাহত।
পেঁয়াজকুচি, আদা, রসুনবাটা, ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, গরমমশলার গুঁড়ো, নুন, চিনি, গোলমরিচের গুঁড়ো সহযোগে এটি তৈরি হয়। মাটনের পাঁজরের একটি হাড়সমেত বাকি অংশের হাড়বিহীন মাংসের কিমার পুরভর্তি মিশ্রণ ডিমের গোলা ও ময়দার খামিতে চোবানে হয়। তারপর বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে ডুবো তেলে মুচমুচে করে ভেজে তৈরি করা হয় মাটন ব্রেস্ট কাটলেট।
ধীরেন দে আজ থেকে সাতাশি বছর আগে এক ইংরেজ পরিবারের রাঁধুনির কাছ থেকে মাটন ব্রেস্ট কাটলেটের যে রেসিপি শিখে নিজের হাতের জাদু মিশিয়ে এই পদটি তৈরি করে দীর্ঘদিন কলকাতার তামাম খাদ্যরসিকদের মন জয় করেছিলেন, ওনার মৃত্যুর পর ওনার ছেলেরা ও বর্তমানে ওনার নাতিরা সেই গোপন রেসিপি মেনেই এখানকার বিখ্যাত মটন ব্রেস্ট কাটলেট তৈরি করে চলেছেন গুণগত মানের সাথে কোনওরকম আপস না করে। মাটন ব্রেস্ট কাটলেটের দাম আশি টাকা। শশা, পেঁয়াজ, সিদ্ধ করা আলু, গাজর ও কাসুন্দি সহযোগে পরিবেশন করা হয় স্বাদেগন্ধে অতুলনীয় এই পদটি। এখানকার মোগলাই পরোটাও স্বাদেগন্ধে অতুলনীয়। আলুর তরকারি দিয়ে খেতে খুবই ভালো লাগে। দাম সত্তর টাকা।