
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী শহর ক্যানিং। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার নামেও খ্যাত এই শহর। এক সময় বাণিজ্যের জন্য বিট্রিশ আমলে প্রাণকেন্দ্রের রূপ নিয়েছিল এই শহর। আর সেই কারণেই বিট্রিশ আমলে পুরসভার তকমা পেয়েছিল।
তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই সেই পুরসভা তকমা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে হারিয়ে ফেলেছে। তবে পুরসভা তকমা হারালেও ক্যানিং তার নিজস্বতায় আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার এবং মাছের জন্য সুখ্যাতি ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে কদর বাড়লেও বর্তমানে বিট্রিশ আমলের ক্যানিং শহরের ঐতিহ্য চাপা পড়ছে প্লাস্টিক আর ময়লা-আবর্জনায়।
ক্যানিং পুরসভার তকমা হারিয়ে বর্তমানে পঞ্চায়েতের অধীনস্থ। মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্যানিং শহরের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমছে। আর সেই ময়লা থেকেই দূষণ ছড়াচ্ছে সমগ্র ক্যানিং শহরে। যার জেরে অতিষ্ঠ মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত নাগরিক সহ নিত্য যাতায়াতকারী লক্ষ লক্ষ পথচলতি মানুষ এবং দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।
এমনকি রেহাই মিলছে না খোদ মহকুমা শাসকের দফতর সংলগ্ন রাস্তা, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, ক্যানিং সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মাছ ও সবজি বাজার, পথের সাথী, এমনকি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অবস্থিত কোভিড হাসপাতাল লাগোয়া যাতায়াতাতের রাস্তাও। ফলে সুন্দরবনের প্রাণকেন্দ্র ক্যানিং শহর যে দূষণে ভরপুর, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।
উল্লেখ্য, এই এলাকায় নির্দিষ্টভাবে ময়লা ফেলার কোনও জায়গা নেই। এলাকাবাসীদের দূষণের হাত থেকে এবং প্লাস্টিক, ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্তি দিতে মাতলা ১ পঞ্চায়েত পুরসভার ধাঁচে ময়লা পরিষ্কারের জন্য ৫ টি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত শহরের অলি-গলিতে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে সেগুলি। নির্দিষ্টভাবে ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় সেই সমস্ত ময়লা-আবর্জনা মাতলা নদীর চরে ফেলা হয়। আর সেখানেই আবর্জনা স্তূপের পাহাড় জমেছে। সেই ময়লা-আবর্জনার উপর কুকুর, শূকর, গরু সহ বিভিন্ন কাক-পক্ষীদের অবাধ বিচরণ। ফলে সেই সমস্ত ময়লা-আবর্জনা প্রকাশ্যে জনবহুল রাস্তার উপর ছড়িয়ে পড়ছে। ঢালাই রাস্তার উপর এতটাই ময়লা-আবর্জনা জমা হয়েছে যে, রাস্তা রয়েছে কি না আদৌ বোঝাই ভার।
ফলে দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়েই চলেছে। কার্যত প্লাস্টিক, ময়লা-আবর্জনার কারণে ক্যানিং শহর তার মুখ ঢেকে ফেলছে ক্রমাগত।
একদিকে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ক্যানিং শহরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় চরম অবক্ষয়ের পথে ঐতিহ্যবাহী ক্যানিং শহর। ময়লা আবর্জনা থেকে কবে মুক্ত হবে ক্যানিং শহর? এমন প্রশ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
অন্যদিকে ক্যানিং ১ এর বিডিও শুভঙ্কর দাস জানান, মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা থাকায় ময়লা জমছে ঠিকই, তবে পঞ্চায়েত সেগুলো তৎক্ষণাত পরিষ্কার করে ফেলছে। তাছাড়াও পঞ্চায়েতের তরফে একটি প্ল্যান জমা দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে। কীভাবে ওই সমস্ত ময়লা-আবর্জনা সঠিক পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা যায়, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে ক্যনিং আবারও সুস্থ হয়ে ওঠে।