
প্রসূন গুপ্তঃ নাহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের বিবরণ নয়। প্রতিবেদনটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপালের। যিনি অবশ্যই ধানকর নন, সিভি আনন্দ বোস। বেশ কয়েক বছর ধরে অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাতের খবর ছাপা হয়েছে। এ রাজ্যে তো ধানকর এবং রাজ্য সরকারের অম্ল সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। ধানকরের মতো নিয়মিত বাকবিতন্ডা এর আগে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে ছিল কি? একসময় প্রায় প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে ধানকর সাহেব প্রেস ডাকতেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতেন। নিয়মিত বিজেপি নেতাদের রাজভবনে যাওয়াটা একটা রুটিনে পরিণত হয়েছিল।
তৃণমূল মুখপাত্ররা, রাজভবনকে বিজেপির অফিস বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। অবশেষে ধানকর দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এরপরেই এ রাজ্যে আসেন উচ্চ শিক্ষিত প্রাক্তন আইসিএস সিভি আনন্দ বোস। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে রাজ্যপাল ঠিক করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অমিত শাহকে ফোনে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এমনটি হচ্ছে। শাহ জানিয়েছিলেন যে, যিনি খুব কাজের মানুষ, দিদির নিশ্চই পছন্দ হবে।
তারপর কিন্তু সময় কাটছিল দিব্বি। বোস প্রেস করা পছন্দ করতেন না বরং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মধুর সম্পর্ক রেখেই চলেছিলেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোস যেতেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতেন ভাষণে। কিন্তু ইদানিং সুর যেন একটু বেতাল হচ্ছিলো। বেশ কিছু বিষয়ে রাজ্যপাল সরকারের কাজের বিরোধিতা করেছেন। প্রথমে নবান্নের পাঠানো সচিবকে তিনি বাতিল করেছিলেন। পরে শিক্ষা দফতরের বিষয়ে নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন যা কিনা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বোসের আপত্তি ছিল। সম্প্রতি তিনি তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী (তিনি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও বটে) অস্থায়ী উপাচার্য ঠিক করেছিলেন যা ফের সংঘাতের স্থান নিয়েছিল ব্রাত্যর সঙ্গে। কিন্তু এবারে শেষ কাজটি প্রথমে অরাজি হয়েও মমতার পছন্দেই সিলমোহর দিলেন।
রাজ্য নির্বাচন প্রধান সৌরভ দাস অবসর নেন গত ২৮ মে। এরপরে মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার নাম প্রস্তাব করেন। আপত্তি জানান বোস। তিনি আরও নাম চেয়ে পাঠান। এরপর নতুন নাম যায় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার অফিসার অজিতরঞ্জন বর্মনের। কিন্তু আনন্দ বোস মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম পছন্দের রাজীবকেই দায়িত্ব নিতে জানান। বুধবার থেকে নির্বাচন প্রধান হলেন রাজীব সিনহা। মেঘ ও রৌদ্রের মধ্যেই চলেছে নবান্ন ও রাজভবনের সম্পর্ক।