মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন হওয়া ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চূড়ান্ত অব্যবস্থা ও অমানবিকতার ছবি। টাকার অভাবে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেনি রোগীর পরিবার। অভিযোগ কর্তব্যরত চিকিৎসককে বলেও হয়নি সুরাহা। উলটে রোগীর পরিবারকে বলা হয়, 'ট্রেনে করে বর্ধমানে নিয়ে যান।' এরপর নিরুপায় হয়ে ট্রেন পথে আশঙ্কাজনক রোগীকে নিয়ে বর্ধমানে যাওয়ার তোরজোড় শুরু হতেই ভাতার স্টেশনে মৃত্যু হয় বছর ৪৮-র মেনকা কোঁড়ার।
ঠিক কী ঘটেছে বৃহস্পতিবার? জানা গিয়েছে, ৪৮ বছরের মেনকা কোঁড়ার বাড়ি বর্ধমানের পারবীরহাটার কোঁড়া পাড়ায়। ধান কাটার জন্য সপরিবারে ভাতারের কাঁচগোড়িয়া গ্রামে এসেছিলেন মেনকারা। গত দু-তিন দিন অসুস্থ থাকায় দুর্বল হয়ে পড়েন মেনকাদেবী। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছ'টা নাগাদ তাঁকে ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তিনটে স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়, তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে রেফার করা হয়।
এখন এই অব্যবস্থার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, রেফার রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা না করে দিয়ে কীভাবে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হল? ভাতারের ঘটনায় মৃতার ভাই রাজু কোঁড়ার অভিযোগ, 'দিদিকে সকাল সাড়ে আটটার সময় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হাসপাতালে বলি, তাঁরা বলে টাকা লাগবে। আমাদের কাছে অত টাকা নেই শুনে বলা হয়, যাঁদের বাড়ির ধান কাটতে এসেছেন, তাঁদের বাড়ি থেকে টাকা আনতে। এদিকে দিদি ছটফট করছে, তখন ঠিক করি, ট্রেনে করে বর্ধমান নিয়ে যাব। সেই মতো টোটো করে স্টেশনে নিয়ে আসি। প্ল্যাটফর্ম ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই দিদি মারা যান।'
মৃতার স্বামী অসিত কোঁড়ার অভিযোগ, 'আমাদের রোগীকে নিয়ে বর্ধমানে যেতে বললে, আমরা বলি পয়সা নেই কীভাবে যাবো। ওরা বলে ট্রেনে করে চলে যাও। এরপর সঙ্গে যা টাকা ছিল, সেই টাকায় টোটো ভাড়া করে স্টেশনে নিয়ে যাই। তারপরেই মারা গেলো রোগী। হাসপাতালে ছাড়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা। সঠিক সময়ে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা গেলে স্ত্রী বেঁচে যেতেন।'
তবে এখানেই দুর্গতির শেষ নেই। জানা গিয়েছে, রেল স্টেশনে গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে মৃতদেহ রেখে কান্নাকাটি শুরু করে মৃতার পরিজন। কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর নজরে বিষয়টি পড়লে তাঁরা চাঁদা তুলে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করেন। সেই গাড়ি করে মৃতদেহকে বর্ধমানে পরিবার। এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ভাতারের এই ঘটনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) জগন্নাথ হেমব্রম জানান, 'ঘটনার কথা শুনেছি। বিএমওএইচ-কে রিপোর্ট দিতে বলেছি। শুনেছি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি খারাপ আছে। এই ঘটনা অনভিপ্রেত।'