
ভারতীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি গায়ক মান্না দে ছিলেন অত্যন্ত ভোজনরসিক। রান্নাবান্নাতেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন তিনি। সময়-সুযোগ পেলেই হাতা-খুন্তি নিয়ে নানা পদ রান্না করতে মেতে উঠতেন। খুব ভালো মাংস রান্না করতেন। নানা রকমের সুস্বাদু মাছের পদ রান্নাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। মান্না দের একটি প্রিয় পদ ছিল মাটন কিমা দিয়ে তৈরি খিচুড়ি। দুর্দান্ত রান্না করতেন এই পদটি। বন্ধুবান্ধব সহ অনেক বিখ্যাত মানুষকেই এই পদটি ও কষা মাংস রান্না করে খাইয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
এক রবিবার ছুটির দিনে মান্না দের স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। বাড়িতে মান্না দে একা। ঠিক করলেন, জমিয়ে মাটন রান্না করে দুপুরে ভাত দিয়ে খাবেন। সেইমতো তিনি জোরকদমে রান্নার প্রস্তুতি শুরু করলেন। এমন সময় বেল বেজে উঠল। মান্না দে দরজা খুলে দেখেন, গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখেই বেজায় খুশি হলেন মান্না দে। অত্যন্ত সমাদরে পুলকবাবুকে ঘরে এনে বসালেন। পুলকবাবু দিন কয়েক হল মুম্বইতে এসেছেন। তাই রবিবার সকালে মান্না দের সাথে দেখা করতে এসেছেন। মান্না দে পুলকবাবুকে বললেন, খুব ভালো হয়েছে আপনি আজ এসেছেন। বাড়িতে কেউ নেই, তাই আমি মাংস রান্না করছি, দুপুরে দুজনে জমিয়ে খাবো। বলে মান্না দে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
পুলকবাবু সিগারেট ধরিয়ে ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাতে থাকলেন। কিছুক্ষণ বাদেই রান্নাঘর থেকে মাংস রান্নার সুবাস সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল। পুলকবাবুর তখন ঘ্রাণেই অর্ধভোজন হবার অবস্থা। আর থাকতে না পেরে পকেট থেকে পেন বার করে লিখতে শুরু করলেন, আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না। ইস্তানবুল হয়ে জাপান, কাবুল গিয়ে শিখেছি দারুণ এই রান্না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই লিখে ফেললেন সেই বিখ্যাত গানের কথা। রান্না শেষ করে মান্না দে ঘরে ঢুকতেই একগাল হেসে পুলকবাবু সেই লেখাটি পড়ে শোনালেন। শুনে আবেগে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরে মান্না দে বললেন, অসাধারণ লিখেছেন পুলকবাবু। তারপর দুই বন্ধু খেতে বসলেন। ভাত সহযোগে মান্না দের হাতের তৈরি মাটন কারি চেটেপুটে খেলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর কিছুদিন পরে সুধীন দাশগুপ্তর সুরে এই গান রেকর্ড করলেন মান্না দে। তারপর তো ইতিহাস। আজও বাঙালিদের কাছে আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না সমান জনপ্রিয়।