
ধুতি-পাঞ্জাবি বা শাড়ি পরা বাঙালির সংস্কৃতিতে ছিল। কিন্তু আদৌ একে কি চিরকালীন বলা যায় ? বাংলা সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, ধুতি আদি ও অকৃত্রিম | পৌরাণিক যুগ বাদ দিলেও ইতিহাসের পাতা থেকে জানা গিয়েছে, ইসলামিক রাজ এদেশে শুরু হওয়ার আগে বাঙালি সেলাইহীন পোশাক পরতেন | তখন শীতকালে গায়ে গরম চাদর ছাড়া আর কিছুই পরার ছিল না |
ইসলামিক শাসন আসার পর সেলাই করা পাঞ্জাবি বা জামার প্রবেশ হয় | স্বাধীনতা উত্তর যুগেও ধুতি-পাঞ্জাবি বা ধুতি-শার্ট পরার সংস্কৃতি ছিল | তখনকার দিনে সিনেমার নায়করা ওই পোশাক পরতেন শতকরা ৯৫ জন | এরপর দিন পাল্টে গেলে প্যান্ট-শার্ট থেকে কোট-প্যান্ট ঢুকে গেল |
উত্তমকুমারের প্রিয় পোশাক ছিল ধুতি, গোল গলার পাঞ্জাবি একেবারে শেষদিন অবধি | স্কুলের শিক্ষকদের চিনতে গেলে ধুতি পরিহিত মানুষ দিয়ে চিনতে হত | আজ জিনসের যুগ, ধুতিপ্রিয় মানুষের বেশিরভাগ পরলোকে | আজ কলকাতা থেকে বাংলার যে কোনও শহরের দিকে তাকালে ধুতি পরা মানুষ পাওয়া যায় না, ব্যতিক্রম পুরোহিতরা | প্রশ্ন উঠেছে, ধুতি কি বিদায়ের পথে ?
আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানকার প্রধানমন্ত্রী থেকে কাজে বেরনো মহিলাদের বেশিরভাগ নারী ব্যবহার করেন শাড়ি | ওপারের বাঙালিরা শাড়ির ঐতিহ্য রেখে চলেছেন | শেখ হাসিনা নাকি জানিয়েছিলেন, স্কুল বা কলেজের একটু বড় মেয়েরা শাড়ি পরেই ক্লাসে যায় | তিনি গর্ব করে শাড়ি নিয়ে বলেন, বাঙালি নারী চেনা যায় শাড়িতে | এদেশেও শাড়ির চল আছে। আজও গ্রামের মহিলারা সারা ভারতে শাড়ি পরেন |
আধুনিক শহরে অবশ্য আজকের মেয়েরা শাড়ি ছেড়ে সালোয়ার-স্যুট পরা শুরু করেছে | অন্য পোশাকও আছে, যথা জিন্স টপ কিংবা ছোট গাউন | এরা বলে, ট্রামে বাসে চলতে গেলে শাড়ি চলে না | সুচিত্রা সেন থেকে অপর্ণা সেনের প্রিয় পোশাক শাড়ি | আধুনিক শাড়ির দিকে ঝোঁক কিন্তু নারীর আছে। তাই বোধহয় আজকেও বিয়েবাড়ির প্রধান উপহার শাড়ি। সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ বা শাল | ধুতি বিদায় নিলেও শাড়ি থাকছে |