
মনি ভট্টাচার্য: 'বাম আমলে চাকরি ভাগ হত, অনেককে চাকরি (Job) দিয়েছেন আমার বাবা, আমিও অনেকের জন্য সুপারিশ করেছি,' এই মন্তব্য খোদ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী (Minister) উদয়ন গুহের। তাঁর অভিযোগের তীর বাম আমলের নিয়োগের দিকে, উদয়ন গুহ (Udayan guha) সিএন-ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেন, 'নিজের দলের ছেলেদের চাকরি দেওয়া দুর্নীতি হলে, আমিও সেই দুর্নীতিতে যুক্ত, বাম আমলে আমিও অনেককে চাকরি দিয়েছি।' যদিও এর পাল্টা উত্তরে সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষ বলেন, 'বাম আমলে যদি ওর বাবা আর উনি চাকরির সুপারিশ করে থাকেন, ভালো তো, তাঁর বাবাকে তো আর পাওয়া যাবে না, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে বলুক, জেলে ঢুকিয়ে বাটাম দিলেই, বলে দেবে কাকে চাকরি দিয়েছে, কে অযোগ্য ছিল।'
উদয়ন গুহ বামেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের বাবাকেও দোষী বলতে ছাড়েননি। শনিবার উদয়নবাবু বলেন, 'বাম আমলে চাকরির জন্য আমিও সুপারিশ করেছি, আমি যখন সুযোগ পেয়েছি, আমিও চাকরি দিয়েছি, এবং সেক্ষেত্রে আমি যাকে চাকরি দিয়েছি, তার থেকে কী যোগ্য প্রার্থী ছিল না!' শনিবার তিনি আরও বলেন, 'যে আমার দল করত, তাকে চাকরি দিয়েছি।' এখন মন্ত্রী হিসেবে আপনি কাউকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন? বা সুপারিশ করেছেন? এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি তো মন্ত্রী হিসেবে তিনজনকে অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে নিয়েছি, আমি কি অন্য দলের কাউকে অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে নেব? আমার অধিকার আছে ৩ জনকে নেওয়ার তাই নিয়েছি।'
শনিবার, মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, 'বাম আমলে দুজন করে অ্যাটেনডেন্ট নিয়েছে প্রতিটা মন্ত্রী। প্রতি বছর নিয়োগ করেছে, প্রতি বছর ওই দুজন করে পার্মানেন্ট হয়ে গিয়েছে। আবার দুজনকে নিয়েছে, জ্যোতি বাবু করেননি? বুদ্ধবাবু করেন নি? হয়ত বুদ্ধবাবু নাম সাজেস্ট করেননি। কিন্তু বামদের কেউ নাম সাজেস্ট করেছে আর প্রতি বছর অ্যাটেনডেন্ট নিয়োগ করেছে, আর পুরোনো দুজনকে পার্মানেন্ট করেছে।' এবিষয়ে শনিবার সিএন ডিজিটালকে সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষ বলেন, 'অ্যাটেনডেন্ট কোনও সরকারি পদ নয়, বুদ্ধবাবুর অ্যাটেনডেন্ট বামেদের দলের, কেউ হবে না তো কি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভাইপো হবে? উনি ফালতু বকছেন, বুদ্ধবাবুর অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন জয়দীপ মুখার্জী, সে এখন গণশক্তির হোলটাইমার।'
শনিবার উদয়ন গুহ আরও বলেন, 'কেউ সাধু নয়, আবারও আমি বলছি, দুর্নীতি মানে ৫ টাকা নিলেও দুর্নীতি, ৫০০০ টাকা নিলেও দুর্নীতি, ৫ লক্ষ টাকা নিলেও দুর্নীতি। আমার হোলটাইমারকে আমি টাকা দিতে পারছি না, দল টাকা দিতে পারছে না, তার বদলে তাঁর বৌকে একটা সরকারি চাকরি পাইয়ে দিলাম সেটাও দুর্নীতি। এসব কংগ্রেস আমলে হয়েছে, বাম আমলে হয়েছে, এখনও হচ্ছে, যদি এটাকে দুর্নীতি বলেন, আপনারা সবাই ভাবের ঘরে চুরি করছেন।' তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূল দীর্ঘদিন ঘরে ক্ষমতায় আসার পরেও বাম আমলে নিয়োগ নিয়ে কেন আদালতে যাচ্ছেন না, কেন তদন্ত করছেন না? এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রীমশাই বলেন, 'এটা তো নিয়ম আছে, প্রত্যেক মন্ত্রী, বছরে দুজন-তিনজন করে অ্যাটেনডেন্ট নিয়ে তাদের চাকরি পাকা করে দিয়েছে। তাহলে সেটা যদি অন্যায় না হয় এখন কেন অন্যায় বলা হচ্ছে?'
তিনি আরও বলেন, 'প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ হত কোচবিহার জেলা-সহ গোটা রাজ্যে, সিপিআইএম পেত ৬০ শতাংশ, ফরওয়ার্ড ব্লকের ভাগে যেত ৫ শতাংশ , আর আরএসপি-সিপিআই পেত ৫ শতাংশ, সেখানে মাধ্যমিক পাশ হলেই চাকরি হয়ে যেত। সেখানে কোনও কোয়ালিফিকেশনের ব্যাপার ছিল না!' পরবর্তীকালে পরীক্ষা চালু করল, ৯০ দশকে বামেরা যত পারলো লোক ঢুকিয়ে নিলো, শেষবেলায় এসে সতীত্ব দেখানোর জন্য তারা পরীক্ষা চালু করলো। এভাবেই পূর্বতন বাম জমনাকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি।