
কলকাতার আনন্দপুর থানার অনতিদূরেই গুলশান কলোনির একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল জাল পরিচয়পত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত চক্রের পান্ডা মাহফুজ রহমানকে। অভিযান চলেছিল উত্তরপ্রদেশ এবং কলকাতা পুলিসের যৌথ উদ্যোগে। তার সঙ্গে পাকড়াও করা হয়েছিল আরও ১৭ জনকে। এবার মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এল চাঞ্চল্য়কর তথ্য। তার সঙ্গে পাক যোগের হদিশ পেলেন উত্তরপ্রদেশ পুলিসের তদন্তকারী আধিকারিকরা।
উত্তরপ্রদেশ অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা এই মাহফুজ রহমান। ২০১০ সালে সে বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করে। পশ্চিমবঙ্গে ওই সময় থেকেই ঘাঁটি গাড়ে এবং তার হাতে আসে জাল হিন্দু পরিচয়পত্র। ২০১৩ সালে এই জাল হিন্দু পাসপোর্ট নিয়ে মেহফুজ পাড়ি দেয় দুবাইতে। ওই বছরই ফের ফিরে আসে পশ্চিমবঙ্গে। তারপর থেকেই পাকাপাকিভাবে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস শুরু করে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে। তদন্তকারীদের অনুমান, মাহফুজের অবাধ যাতায়াত ছিল পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলা তো বটেই, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তেও।
২০১৩ সাল থেকেই শুরু হয় তার এই বেআইনি কার্যকলাপ। সেই সময় বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে একাধিক ব্যক্তিকে মোটা টাকার বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসে মাহফুজ। ভিনদেশে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য শুরু করে জাল পরিচয়পত্র তৈরির কাজ। পাসপোর্টের সঙ্গে মাহফুজ ভিসা তৈরিতেও পারদর্শী।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরের ২৬ শে অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মিঠুন মণ্ডল, সান আহমেদ, মমিনুর ইসলাম, মেহেদি হাসান নামে চার বাংলাদেশিকে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে মাহফুজের তথ্য। অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয় মাহফুজের খোঁজে তল্লাশি অভিযান। অবশেষে ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে কলকাতার আনন্দপুর থানার অনতিদূরে গুলশান কলোনির বহুতল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মাহফুজ রহমানকে।
মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কানপুর রেল স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরও আটজন বাংলাদেশিকে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, এই আটজন প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক। মেহফুজের হাত ধরেই ভারতে প্রবেশ এদের। জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়ে আবুধাবিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মাহফুজ এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নিয়েছিল মাথাপিছু ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশি নাগরিক ও মায়ানমারের নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মাহফুজ ব্যবহার করত হোয়াটস অ্যাপের গ্রুপ চ্যাট। যারা জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল, সেই সমস্ত বাংলাদেশি ও মায়ানমারের নাগরিকদের অ্যাড করা হত "Only Bro" নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। যোগাযোগ করার প্রয়োজন হলে মেহফুজ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে কথা বলত প্রত্যেকের সঙ্গে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, আনন্দপুরের গুলশান কলোনির যে বাড়িতে ভাড়া থাকত মাহফুজ রহমান, গত দুমাস ধরে সেই বাড়ির মালিকের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। বাড়ির মালিকের নাম ইমতিয়াজ খান। ঠিক কী পরিচয়পত্র দিয়ে মাহফুজ তার কাছ থেকে বাড়িভাড়া নিয়েছিল, তা জানার জন্য পুলিশ আধিকারিকরা মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চান।