
শুক্রবার সকাল ৮ টায় জামাই বাড়িতে ঢুকে দেখেন, ঘরের দরজা খোলা। পড়ে রয়েছেন শাশুড়ি। জিনিসপত্র ছড়ানো-ছেটানো। সাধারণত ওই বৃদ্ধা অনেক গয়না পরে থাকতেন। গায়ে সেসব কিছুই নেই। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে তাঁকে। কান ফেটে গেছে। একটা চোখ পুরো বন্ধ হয়ে গেছে।
কালীপুজোর রাত। সবাই ব্যস্ত পুজো নিয়ে। আর তার মাঝেই ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা। টালা থানার খেলাৎবাবু লেনে একাকী বৃদ্ধাকে মারধর করে লুটপাট চালাল দুষ্কৃতীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ওই বৃদ্ধা। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃদ্ধার নাম পদ্মা মন্ডল। রাত পর্যন্ত মেয়ে-জামাই বৃদ্ধার সাথেই ছিলেন। তাঁকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে চলে যান। কারণ, সেখানে ছিল কালীপুজো।
তাঁরা চলে যেতেই ওই ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান। খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের ডাকাতি দমন শাখার অফিসাররা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেন। আসে ফরেনসিক টিম। ঘটনাস্থলে হাজির হয় ডিডি-র দলও। তারা বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় তদন্তের স্বার্থে। পুলিস আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে। সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজে একজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে।
কলকাতা শহরে একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা ফের ওই বিতর্ককে উসকে দিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তি হাতানোই দুষ্কুতীদের প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই কাজ হাসিল করার সময় অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মারধর করতেও এতটুকু হাত কাঁপছে না তাদের।
বেশিদিন আগের কথা নয়। শেক্সপিয়র সরণি থানার থিয়েটার রোডের একটি অভিজাত আবাসনে একইভাবে এক বৃদ্ধার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে লুটপাট চালিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় উঠে এসেছে ওই বাড়িরই গাড়ির চালকের নাম। ঘটনার দিন রাতেই তাকে হুগলির ডানকুনি থেকে গ্রেফতার করে পুলিস। সেখানে দেখা গিয়েছে, স্রেফ আক্রোশের বশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই চালককে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে তাকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সে বারবার দরবার করে গেছে। কিন্তু ওই বৃদ্ধা রাজি হননি। তারপরই সে একরকম বদলা নিতে এরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে পুলিসের অনুমান।