
এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! বিভিন্ন দফতর থেকে সরকারি আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে (HighCourt) মামলা লড়ছেন বেশ কিছু সংখ্যক আইনজীবী। অথচ তারা কখনই ছিলেন না সরকারি প্যানেলে। আর এই সমস্ত ভুয়ো সরকারি আইনজীবীদের কথা জানেই না রাজ্য। মঙ্গলবার বিষয়টি নজরে আসার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের তলব উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক, অফিস অফ লিগাল রিমেমব্রান্সারের এক গুচ্ছ অফিসারকে। আর বিচারপতির প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্যকেও।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এর আগে বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে, যেখানে এই ভুয়ো আইনজীবীদের বিষয়টি নজরেই আসেনি। এই চক্রে নিশ্চিতভাবে আর্থিক লেনদেন আছে, না হলে বেআইনি ভাবে কেউ যুক্ত থাকলে কেউ মদত দেবে কেন? ডিভিশন বেঞ্চে অন্তত ৩১ টি মামলা রয়েছে, একাধিক মামলা রয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চেও। সব মামলা প্রত্যাহার করে নতুন করে দায়ের করা হোক। তবে রাজ্যের পদক্ষেপের আশ্বাস ও প্রভাবশালী আইনজীবীদের অনুরোধ উপরোধে প্রবল অসন্তোষের কথা জানালেও এই মুহূর্তে কোনও কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটেনি হাইকোর্ট।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ১১ সেপ্টেম্বর যিনি মামলা দায়ের করেন, তিনি প্যানেলেই নেই? তার মানে দাঁড়াচ্ছে জুডিসিয়াল অফিসারও এই প্রতারণায় অভিযুক্ত। এদের সবার হেফাজতে নিয়ে জেরা হওয়া উচিত। এটা কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। অভিযুক্ত আইনজীবী সুবীর পালকে বিচারপতি বলেন, আপনার এই কাজের জন্য ২ জন বিচার বিভাগীয় অফিসারের চাকরির ভবিষ্যত অনিশ্চিত। হাইকোর্ট, জিপি, প্রশাসনিক বিভাগ সবাইকে আপনি বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লিগাল রিমেমব্রান্সার সব আইনজীবীদের প্রচার করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, এই ভাবে মামলা না দায়ের করার জন্য। দফতর থেকে সুশোভন সেনগুপ্তর কাছে বলা হলে তিনি সই করার জন্য সুবীর পালের কথা বলেন। বিচারপতি বলেন, তার মানে সুশোভন ও সুবীর বেআইনি ভাবে এই মামলায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ওই আইনজীবী সহ যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে লিগাল রিমেমব্রান্সার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এই সব বিতর্কিত মামলা তুলে নিয়ে নতুন করে মামলা করার জন্য রাজ্যকে অনুমতি দেওয়া হোক। এর পরেই বিচারপতি বলেন, এর আগে এমন বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি করেছি, যেখানে এমন যোগ আছে বলে এখন বোঝা যাচ্ছে। জাতীয় সড়কের পাট্টা মামলাতেও তাহলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন মনে হচ্ছে সেই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত।
এরপরেই উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসক, অফিস অফ লিগাল রিমেমব্রান্সারের এক গুচ্ছ অফিসারকে তলব এবং এমন ধরনের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নতুন ভাবে দায়ের করার নির্দেশ দেন। এখন দেখার, হাইকোর্টের ভর্ৎসনার পর প্যানেলে না থাকা ভুয়ো সরকারি আইনজীবীদের হাইকোর্টে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কতটা কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে রাজ্য।