Breaking News
Anubrata: পিছল ইডির করা মামলা, মেয়ের মত অনুব্রতরও পুজো কাটতে চলেছে তিহারে      Court: আদালতে কিছুটা স্বস্তি রাজ্যের, সমবায় দুর্নীতির তদন্ত সিবিআইয়ে আস্থা সার্কিট বেঞ্চের      Nipah virus: নিপা আতঙ্ক এবার বাংলাতেও, বেলেঘাটা আইডিতে ভর্তি কেরল ফেরত পরিযায়ী শ্রমিক      Abhishek: ফের আদালতে ধাক্কা অভিষেকের, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় মিলল না বাড়তি সময়      Supreme Court: কেষ্টর জামিনের মামলায় সিবিআই-কে নোটিস দিল শীর্ষ আদালত      Siraj: সি...রাজই রাজা      Showcause: কলকাতা পুরনিগমে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়া দুই কাউন্সিলরকে শোকজ      Justice Ganguly: 'দুর্গা' বানান ভুল, অথচ চাকরি পেতে আইনি লড়াই জাস্টিস গাঙ্গুলির বেঞ্চে, এরপর...      Mamata: স্পেন সফরে মাদ্রিদের রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী বাজালেন পিয়ানো, করলেন মর্নিং ওয়াকও      Abhishek: 'নির্যাস শূন্য নয়, মাইনাস ২', প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর সিজিও থেকে বেরিয়ে বললেন অভিষেক     

story

Kalpana Dutta: স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরকন্যা কল্পনা দত্ত (১ম পর্ব)

সৌমেন সুর: ১৯৩২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবের কাছে পুরুষের বেশে কয়েকজন সঙ্গীসহ আটক করা হয়। পুলিশ তাদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সন্দেহ না করে প্রেমঘটিত ব্যাপার মনে করে। যখন সনাক্ত হন যে তিনি রায়বাহাদুরের নাতনি, তখন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী পুলিশ দ্বিধায় পড়ে যায়। কিন্তু ছেড়ে দেয় না, অপরাধীর মতন ১০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে জামিন দেয়। এর সাত দিন পর ২৪শে সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ হয় প্রীতিলতা ওয়েদেদারের নেতৃত্বে। এই প্রথম একজন মহিলার নেতৃত্বে বৈপ্লবিক আক্রমণ হলো। এই ঘটনায় সারাদেশের ছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ বিরোধী অকুতোভয় যোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সদস্যা কল্পনা দত্ত ছিলেন বীর কন্যা। মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রিয়পাত্রী ও রবীন্দ্রনাথের কন্যাসম ছিলেন তিনি। ১০৯ ধারায় মামলা চলাকালীন ডিসেম্বর মাসে মাস্টারদা নির্দেশ পাঠালেন কল্পনা দত্তকে আত্মগোপন করতে হবে। যদি না করে তাহলে তাকে বিনা বিচারে জেলে আটক করবে। এই কথা শোনা মাত্র তার নতুন জীবন শুরু হয়। আজ এ গ্রাম, কাল অন্য গ্রাম করতে থাকে। সুখে থাকা মেয়ে কৃষকের বাড়িতে মোট চালের ভাত খাচ্ছে। ছেঁড়া কাঁথায় ঘুমোচ্ছে। তাঁর জীবনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ১৯৩৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি। গৈরলা গ্রামে ক্ষিরোধ প্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন মাস্টারদার সঙ্গে। রাত ৯টা নাগাদ বুঝতে পারলেন মিলিটারি চারদিকে ঘিরে ফেলেছে। সবাই বেষ্টনী ভেদ করে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। গুলি বিনিময় শুরু হয়। অবশেষে মাস্টারদা ধরা পড়েন। আর কল্পনা দত্ত পাশের গ্রামে এক কৃষকের ধানের গোলায় আশ্রয় নেন। এদিকে কল্পনা দত্তের বিরক্ত কাহিনী গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩৩ সালে জুন মাসে শুরু হয় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি ট্রাইবুনলি। ১৪ই অগাস্ট রায় হয় সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি। কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দ্বীপান্তর। মৃত্যুদণ্ড না দেবার কারণ তিনি নারী এবং বয়স কম।  তথ্যঋণ- কল্পতরু সেনগুপ্ত

6 days ago
Vishwakarma: সৃষ্টির দেবতা বিশ্বকর্মা

সৌমেন সুরঃ আর মাত্র সাতদিন পরে অর্থাৎ ১৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে বলেই তথ্যটা আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। বিশ্বকর্মা হলেন সবকিছুর স্রষ্টা। এই বিশ্বের সমস্ত কারিগর শিল্পীর প্রধান প্রতিনিধি তিনি। একসময় এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড ছিল অন্ধকারে পূর্ণ। তখন জল, পৃথিবী, বায়ু, তেজ, স্পন্দন, ধ্বনি ছিল না। জীব পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না। সবকিছুই অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। একদিন হঠাৎ ধ্বনি জেগে ওঠে। সংকেত হয়- সৃষ্টির সূচনা আরম্ভ হলো। এক উজ্জ্বল আলোকময় দীপ্তির মধ্যে প্রকাশিত হলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। জন্ম হলো জল,মাটি,বায়ু,গ্রহ,নক্ষত্র, দেবতা, দানব, মানব। জগৎকে যিনি সৃষ্টি করলেন তিনি মহাস্রষ্টা বিশ্বকর্মা।

বেদ বেদান্ত, রামায়ণ, মহাভারত বিভিন্ন পুরাণে বিশ্বকর্মার যে ভাবনা জন্ম নিলো উত্তরকালে তার প্রতিফলন দেখা দিলো। প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যখন আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠলো স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন এলো জীবনযাত্রার। সমস্ত শ্রমিক শ্রেণির মানুষের কাছে তাদের কর্মের দেবতা হয়ে উঠলেন বিশ্বকর্মা। বৈদিক যুগে যা ছিল অরূপে, একালে তারই প্রকাশ হলো রূপে। বর্তমানে মানুষের জীবনে যন্ত্রের ব্যবহার ক্রমশই বেড়ে চলেছে। আর যন্ত্র অর্থে বিশ্বকর্মা। তাই অনেক বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর মতো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন দেবমূর্তি এনে পুজোর আয়োজন করা হয়। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে যন্ত্রসংক্রান্ত বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে বিশ্বকর্মা পুজো হয়।

বিশেকর্মা শুধু যন্ত্র সৃষ্টি করেন না, তিনি জ্ঞানের প্রসারও করেন। কোথাও কোথাও দীপাবলির দিন বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোয় আর এক বৈশিষ্ট্য হলো ঘুড়ি ওড়ানো। ঘুড়ির মধ্যে দিয়ে মানুষ মেলে ধরে নিজেকে অসীম অনন্তে, যা বিশ্বকর্মার মূল ভাবের প্রতীক। এই বিশ্বকর্মা পুজো শুধু বাংলায় নয়, অসম, ত্রিপুরা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের নানা অঞ্চলে প্রচলন আছে, এমন কি দক্ষিণ ভারতের কিছু কিছু আঞ্চলে এই পুজোর প্রচলন আছে।

a week ago
Teachers' Day: শিক্ষকতা শুধু জীবিকা নয়, এক মহাব্রত

সৌমেন সুর: আমাদের জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যেগুলো নতুন ভাবে আমাদের উজ্জীবিত করে। অনুপ্রাণিত করে। সেদিন মনে হয় আমাদের অন্তরের শুদ্ধিকরণ হল। জাগরণ হল শ্রদ্ধাবোধের। মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রতি সেদিন আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন। ৫ই সেপ্টেম্বর এমনই একটা মহান দিন। মহান সাধক ও মহান শিক্ষক সর্বোপরি ড. রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিবস উপলক্ষে ৫ই সেপ্টেম্বর 'শিক্ষক দিবস' রূপে দেশ ও জাতির কাছে চিহ্নিত হয়। শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড। তারা সমাজের প্রণম্য। একমাত্র তারাই শিক্ষার্থীর মনের অন্ধকার দূর করে জ্বালিয়ে দেন জ্ঞানের প্রদীপ। শিক্ষকরাই দেশ ও জাতির অগ্রগতির উৎস। সমস্ত বিভাগীয় শিক্ষকদের কাছে ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখটি উজ্জ্বলতার অনন্য নির্যাস।

১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন অনন্য প্রতি ভাই প্রদীপ্ত সাধক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে এম. এ। এরপর মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু। তারপর মহীশূর কলেজে অধ্যাপনা। এই মহিশুর এই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯১৮ সালে। সাক্ষাতের আগেই তার লেখা 'দ্য ফিলোজফি অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর' গ্রন্থের প্রকাশ। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। টানা কুড়ি বছর এই বিভাগে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হন।

কথা হলো শিক্ষক হলেন দেশের অন্যতম প্রধান কর্ণধার। রাধাকৃষ্ণণ ছিলেন একজন আদর্শনিষ্ঠ শিক্ষক, বিদ্যান, বাগ্মীও জ্ঞান তপস্বী। তার ওপর রাষ্ট্রপ্রধান। তাই ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন উপলক্ষে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। এই পবিত্র দিনের শিক্ষকরাই যে জাতির মেরুদন্ড তা শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। শিক্ষক শুধু শিক্ষাই দেন না। তিনি শিক্ষার্থীর কোমল মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেন। চিত্তের প্রসার ঘটান। সাধারণ মানুষ শিক্ষক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাবান হোক। এটাই শিক্ষক দিবসের প্রাণের কথা। আবার এই দিনের শিক্ষক সমাজ তাদের ভূমিকার কথা স্মরণ করুক, এটাই শিক্ষক দিবসের মহৎ বার্তা।

2 weeks ago


Durgapuja: দুর্গাপুজোকে কেন 'কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ' বলা হয় জানেন?

সৌমেন সুরঃ দুর্গাপুজোকে বলা হয় কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ। এই যজ্ঞের সূচনা লগ্ন মহালয়ার ক্ষণ থেকে। তত্ত্বগতভাবে মহালয়ার সঙ্গে দেবীপুজার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক না থাকলেও সাধারণভাবে এই দুটি উৎসবকে আমরা একই উৎসব রূপে চিহ্নিত করে থাকি। বিশেষ করে বাঙালির কাছে এই শুভ তিথিটি কাব্যিকভাবে স্থান পেয়েছে। দেবী পার্বতী তাঁর সন্তানদের নিয়ে কৈলাস থেকে আসছেন বাপের বাড়ি। পিতা হিমালয় আর মা মেনকার সঙ্গে মানব মনও অপেক্ষা করে থাকে কন্যা উমার উপস্থিতির জন্য। দেবী আসেন বাংলার কন্যা হয়ে। মানুষ কল্পনা করে এই মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবী কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি যাত্রা করেন। মহালয়ার অর্থ দেবী আগমনের সাত দিনের অপেক্ষা। আর ধর্মের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের মতে অর্থাৎ পন্ডিতের মতে 'পিতৃপুরুষ' উপাসনা ধর্মভাবনা সৃষ্টির কারণ। মহালয়ার দিনটি সেই পিতৃউপাসনার দিন। পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে চলে জলদান। সমস্ত অনুষ্ঠানটির মধ্যে আমাদের ভারতবর্ষের সংস্কৃতির মূল ভাবনাটি ফুটে ওঠে। মহালয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ। এক অমাবস্যা থেকে পরের পূর্ণিমা পর্যন্ত আমাদের আরাধনার কাল। সেই আরাধনার সূচনা হয় মহালয়ার পিতৃঅর্চনার মধ্যে দিয়ে। এরপরই দেবীপক্ষের মূল অংশে চলে যায়।

কাঠক সংহিতায় দেবী অম্বিকাকে শতরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে ' শরদ্বৈ অম্বিকা।' শরৎরূপী অম্বিকার পুজো বলেই তো শারদীয়া। পন্ডিতগন বলেন, এ হলো অকালবোধন। অকালবোধন বলা হয়েছে এইজন্য যে,  আমাদের ছ' মাসে দেবতাদের একদিন, অন্য ছ'মাসে একরাত। মাঘ থেকে আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ন। দেবতারা জাগ্রত থাকেন। শ্রাবণ থেকে পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন। দেবতারা নিদ্রিত থাকেন। ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। নিদ্রিত দেবতাকে জাগ্রত করেছিলেন বলে এই পুজোকে অকালবোধন বলে।

শস্যের সঙ্গে দেবীর নিগুঢ় সম্পর্ক। বেবির আর একটি রূপ হল শস্যবধূ। এই শস্যবধূকে বলা হয় নবপত্রিকা। নবপত্রিকায় কলা গাছের সঙ্গে থাকে কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, মানকচু, অশোক এবং ধান। এইভাবে বিভিন্ন শস্যের সঙ্গে দেবীকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেবীর শাকম্ভরী রূপটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শস্যদায়িনী রূপে দেবীর দশটি অস্ত্রের সঙ্গে দশ রকমের শাককেও যুক্ত করা হয়েছে। যেমন,  পাতা, অগ্র, মূল, কবীর, ফল, কাণ্ড, ত্বক, ফুল, অস্থিরূঢ়ক, কবুক। যাইহোক, আমাদের জীবনের নানা অংশ পিতৃপুরুষ বন্দনা থেকে শাকান্ন পর্যন্ত দেবীপুজোর সঙ্গে জড়িত।

এই পূজো আজ বিশ্ববন্দিত। প্রচুর মানুষের মনে ফুটে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা। কারণ সারা পুজো জুড়ে চলে অভাবনীয় অর্থনীতি। গরীব, দিনমজুর, অন্য শ্রেণীর মানুষ দুটো পয়সা হাতে পায়। সুখের বিলাসে দিন কাটায়। তাই এই মহাজাগ্রত সর্ব মানব মিলন পুজোকে কখনোই রাজনৈতিক কলুষতায় কলুষিত হতে দেওয়া উচিত নয়। আসুন এই পুজোকে কেন্দ্র করে মাকে প্রার্থনা জানাই- সবাই সুখে থাক, আনন্দে থাক, শান্তিতে বিরাজ করুক। জয় মা দুর্গা। তথ্যঋণ- পূর্বা সেনগুপ্ত

3 weeks ago
Durga Puja: পুজোয় ফেরিওয়ালা মেয়ের চিন্তাভাবনায়... (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুরঃ (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের শেষ খন্ড) দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ষষ্ঠীর দিন মোটামুটি দর্শনার্থীদের ভিড়। বুনিদের দোকানটা ভালই চলছে। বুনি একমনে কাস্টমারদের খাবার দিয়েই চলেছে। আজ বুনিকে একটু অন্যরকম লাগছে। খুব ভাল করে সেজেছে ও। ওর রূপের টানে মানুষ বেশি করে ভিড় করছে। সন্ধে সাতটায় দোকান চালু হয়েছে। রাত দশটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। দোকানের সমস্ত মালপত্র ভ্যানে ওঠায়। একবুক আনন্দ নিয়ে বাবা মেয়ে ও বাচ্চা ছেলেটা ভ্যানে উঠে পড়ে।

বাড়ি এসে একটু ফ্রেশ হয়ে বুনির বাবা দিনান্তের আয়ের টাকা পয়সা গুলো গুনতে থাকে। একমুখ হাসি নিয়ে বুনিকে বলে, 'হাজার তিনেক টাকা লাভ হয়েছে।' বুনি খুশি হয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, আমি তোমার হাসিমুখটা দেখতে চাই। গতবছর মুখ হাড়ি করে ছিলে, তখনই আমি চিন্তা করেছিলাম, সামনের পুজোয় আমি তোমাকে সাহায্য করবো।'

খাবারের জিনিস দ্বিগুন করে সপ্তমীতে চললো দুজনে দোকানে। মানুষের এত ভিড়, রাত নটার মধ্যে সমস্ত মাল শেষ। অষ্টমীর দিনও তাই। সারা বাড়িতে মাত্র তিনজন প্রাণী। বুনি ও তার মা বাবা। প্রত্যেকের মনে চরম আনন্দ। সকাল সকাল পুজো দিয়ে বুনি খাবার বানাতে বসে যায়। আজ নবমী, খাবার চারগুন বেশি। বিকেলের রান্না শেষ। বুনি স্নান সেরে জিন্স ও কুর্তি পরে মালপত্র নিয়ে ভ্যানে উঠে পড়ে। সঙ্গে বাবা ও বাচ্চা ছেলেটি। আজ তিনটে ভ্যান। বুনির বাবা একটু ইতস্তুত করেছিল, চারগুন খাবার! যদি বিক্রি না হয় তাহলে তো- বুনি বাধা দিয়ে বাবাকে বলে, 'বাবা, ব্যবসা হলো সাপ লুডো খেলার মতো, বিক্রি হলে বিশাল ব্যাপার, না হলে হতাশা। দেখো বাবা, আজ শেষ দিন। ব্যবসায় একটু ঝুঁকি নিতে হয়। তুমি অত ভেবো নাতো, যা থাকে কপালে। মা নিশ্চই গরীবকে মারবেনা।'

আজ মানুষের ঢল নেমেছে। বুনির দোকানে ভীষণ ভিড়। সব ধরনের খদ্দের জমায়েত হয়েছে দোকানে। রাত একটার মধ্যে সমস্ত মাল নিঃশেষ। সবকিছু গুছিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফেরে বুনিরা। আজ বাড়ির সমান মনে প্রচন্ড আনন্দ।" বাবা মা টাকাপয়সা গুনে বুনিকে বলে, 'মা আমি সারাজীবন এত টাকার লাভ চোখে দেখিনি। ২৮ হাজার টাকা। সব তোর করিশ্মা।' বুনু প্রতিবাদ করে, 'না বাবা, আমি কেউ না, সব ঐ ওপরওয়ালা। উনি যদি সহায় না হতেন তাহলে আজকের এই আনন্দের মুখ আমরা কেউ দেখতে পেতাম! যাক বাবা, কাল আমাদের ছুটি। আমরা গঙ্গার ঘাটে মায়ের বিসর্জন দেখবো। আর মনে মনে বলবো, মা আবার এসো তুমি। সমস্ত গরীব দিনমজুরদের ঘরে আলো দেখাও, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারে' বাবা মা ভক্তিভরে হাতজোড় করে। তিনবার শব্দ করে ওঠেন, 'জয় মা দুর্গা।' দূর থেকে প্রথম ভোরের ঢাকের আওয়াজ ভেসে ওঠে। ঢাকিরা ঢাকে বিসর্জনের বোল তোলে। (সমান্ত)।

4 weeks ago


Special Story: কন্যা উমা চিন্ময়ী রূপে সবার হৃদয়ে বিরাজমান

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) শ্রী শ্রী চণ্ডীর ঋষি মেধস মুনি বলেছেন- মহামায়া মায়ের ইচ্ছাতেই ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু ঘটছে। ইনি মহাশক্তি। সৃষ্টি স্থিতি বিনাশ করেন। ইনি যেমন, মানুষ অশুভ কর্ম করলে দুঃখ দুর্দশা প্রদান করেন, তেমনি তাকে বিশ্বাস ভক্তি করলে তাকে ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ প্রদান করেন। মহামায়া সর্বদা বর্তমান। এমন কিছু নেই ইনি করতে পারেন না। মোট কথা ইনি অঘটন-ঘটন পটিয়সী। ইনিই মহাশক্তি। এই মহাশক্তিই দুর্গা কালী লক্ষ্মী সরস্বতী নামে পরিচিত। মহাশক্তি সর্বদাই শক্তিমান ব্রহ্মকে আশ্রয় করে থাকে। এই ব্রহ্ম হল নিষ্ক্রিয় চলমানহীন। শক্তিকে আশ্রয় করেই তিনি সচল ও কর্মপ্রাণ হয়ে ওঠেন। এই নিষ্ক্রিয় জ্ঞানময় সত্তাকে বলে শিব। এই সদাশিবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শক্তিরূপী দেবী দুর্গা সক্রিয় ও লীলাময়ী হয়ে ওঠেন। তাই তিনি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় করেন। তাই দুর্গা হলেন ত্রিগুণাময়ী। কিন্তু রহস্য হলো, শিব দুর্গার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা। এই সম্পর্কটা এসেছে বিভিন্ন লোকগাথা ও পুরান কাহিনী থেকে। এর ফলে মহাজাগতিক দেবতারা বা দেবদেবীরা আমাদের ঘরে চলে আসেন। এদের নিয়ে নানা কাহিনীতে উঠে এসেছে, শিব পার্বতী একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারে না। শিব ছাড়া দুর্গা প্রেরণা লাভ করতে পারে না, আবার দুর্গা ছাড়া শিবের কোন কর্মে মন যায় না। এমনই হলো শিবশক্তির প্রবল আকর্ষণ।

বাঙালি পণ্ডিতদের আরও ধারণা হলো, এরা স্বামী-স্ত্রী মিলে হিমালয়ের স্বর্গরাজ্য কৈলাসে বাস করেন। ক্রমে ক্রমে এদের মধ্যে প্রেমের জোয়ার এলো। এক এক করে চারটি সন্তান হলো। যথাক্রমে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ । এবার বাঙালি কবিরা বর্ষার পর তাঁকে বঙ্গে দেখতে চায়। তাই মাতৃভক্ত কবি নজরুল লিখলেন, 'বর্ষ গেল, আশ্বিন এলো, উমা এলো কই/ শূন্য ঘরে কেমন করে পরান বেঁধে রই/ ও গিরিরাজ সবার মেয়ে/ মায়ের কোলে এলো ধেয়ে/ আমারই ঘর রইলো আঁধার/ আমি কি মা নই।' এখানে মা মেনকার এই আর্তি বাঙালি জননীর প্রতীক স্বরূপা। যাই হোক, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গনেশ এই পরিবার নিয়ে বাঙালি সমাজ সংস্কৃতিতে মেতে ওঠে। দেখতে দেখতে ষষ্ঠী থেকে দশমী এসে যায়। মা তাঁর পরিবার নিয়ে ফিরে যাবে কৈলাশে। মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। মাকে বিদায় জানাতে হবে। পাঁচটা দিন হই হই করে সবার আনন্দে কেটেছে। এবার বিষাদে ভরে যায় মন। মায়ের কানে কানে তাই বলে, 'আবার এসো মা, আবার এসো।' বাস্তবিকই বাঙালির মনের কোণে সারা বছরই উমাকে ধরে রাখার উন্মাদনা জাগে। কিন্তু বিসর্জন মানে প্রাণের মধ্যে পুনঃ আহ্বান। তাই গঙ্গায় বিসর্জন দিলেও চিন্ময়ীরূপে মা সবার হৃদয়ে বিরাজমান। তথ্য সংকেত-স্বামী বেদানন্দ

4 weeks ago
Durga Puja: পুজোয় ফেরিওয়ালা মেয়ের চিন্তাভাবনায়... (১ম পর্ব)

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনার সমাপ্তি পর্বের ১ম খন্ড) সকাল থেকে আকাশটা কেমন মুখ ভার করে আছে। বুনির বাবা একটু চিন্তিত। চিন্তাটা স্বাভাবিক। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ফেরিওয়ালার দিন শেষ। সারা বছর ফেরী করার পর পুজোর চারটে দিন একটু বেশি ইনকামের আশায় বুনির বাবার মত অনেকেই হা করে বসে থাকে।। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রি করে বুনির বাবা। দিনান্তে তেমন লাভের মুখ হয়তো দেখতে পায় না, তবে যেটুকু হয় তাতে কোনোরকমে সংসার চলে যায়। সংসারের খরচ ছাড়া বুনির কলেজের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অপেক্ষা করতে থাকে পুজোর জন্য। বুনির বাবা অনেক আশা নিয়ে পুজোয় খাবারের দোকান দিয়েছিল রাস্তায়। কিন্তু মাথায় হাত তার। বিক্রি তেমন ভালো হয়নি। অর্ধেকটাই লস। খুব মুষড়ে পড়েছিল বুনির বাবা। এবছর আর দোকানের নাম করে না। কিন্তু বুনি ছাড়বার পাত্র নয়। বাবাকে বলে দোকান দিতে। ও বসবে দোকানে। কথাটা শুনে বুনির বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কলেজের পড়ুয়া মেয়ে বাবার সঙ্গে রাস্তার দোকানে বসবে!

আসলে বুনি তার বাবাকে বুঝতে পেরেছিল। সেই পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে তার বাবা। বর্তমানে অনেক কিছুর বদল হয়েছে। সেই আধুনিকতার ছাপ বাবার ব্যবসায়ে নেই। বাবার ব্যবসার ধরন, গেট আপ, ব্যবহার, কথাবার্তা একেবারে ম্যার ম্যারে, সেকেলে। কোথায় চৌকস উজ্জ্বলতা থাকবে তা নয়- একদম বোগাস। এসব কিছু বুঝতে পেরে বাবার পাশে থাকার জন্য এগিয়ে এসেছিল সে। বুনি বাবাকে বলে, 'বাবা দোকানে থাকবে চা, ডিমটোস্ট, ঘুগনি আর চিলি চিকেন। তোমার ভয় নেই চিলি চিকেন আমি বানাবো। তুমি শুধু চা বানাবে। বাকি সব আমি সামলে নেব। সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলে থাকবে ব্যাস।'

বুনির কথা শুনে ওর বাবার মনে একটা চাপা আনন্দ ফুটে ওঠে। কোনো কথা বলেন না। মনে মনে ভাবেন, মেয়ের কি প্ল্যান আছে কে জানে। বুনির বাবা দিনমজুর,  ফেরিওয়ালা। জীবন যে কত সুন্দর, এ ফিলিংস বুনি ছাড়া এ পরিবারের আর কারো হয়নি। সবাই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে চলে, তবে সে উদ্দেশ্য কারো সফল হয়, কারো হয় না। দোচালের মধ্যে এই পরিবারের জীবন। পরিপূর্ণ সুখ কোনদিন কল্পনা করেনি। ( চলবে)

4 weeks ago
Special story: মহামিলনের প্রতীক দেবী দুর্গার অর্থ ও মাহাত্ম্য কি

সৌমেন সুর: (দুর্গাপুজো সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) রথ যাত্রার দিন থেকে দেবীর কাঠামো তৈরি হয়, কাঠামো তৈরি থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গাপুজোর উপকরণ সংগ্রহের জন্য মালি, তাঁতি, কুম্ভকার, পতিতা, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শুদ্র, কায়স্থ সব শ্রেণীর মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন এই পুজোয়। তাই এই পুজো মহামিলনের পুজো অন্যদিকে শারদীয় উৎসবকেই বলা হয় মহামিলন উৎসব। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন এবং বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে অন্তরের মিলনে প্রতিবছর নতুন করে জীবন দান করে, কারণ দেবীর শক্তি ও আসরিক শক্তির যে গুণাবলী তা মানুষের শরীরে বিদ্যমান। তাই বিজয়া দশমীতে মাকে বিসর্জন দেবার পর মাকে প্রার্থনা করি, মা আমাদের আসরিক শক্তিকে তুমি নাশ করো। দেবী শক্তি প্রদান করে আমাদের মানুষ করো। এটা করলে তবে সমাজ থেকে হিংসা-দ্বেষ হানাহানি কাটাকাটি ভুলে মানুষের আবার সুখ শান্তি লাভ করতে পারবে।

আমরা যে দুর্গা পুজো করি, এই দুর্গার অর্থ কি বলেছে? 'দ' অক্ষরটি দৈত্য নাশক 'উ' কার হল বিঘ্ননাশক, 'রেফ' হল রোগনাশক, 'গ' কার হল পাপনাশক এবং 'অ' কার হল শত্রুনাশক। তাহলে দৈত্য বিঘ্ন ভয় বা শত্রু হতে যিনি রক্ষা করেন তিনি দুর্গা।

ষষ্ঠীর দিন থেকে পুজো শুরু হয়। সকালে কল্পারম্ভ। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত পুজো করার সংকল্প করে দুর্গা মন্ডপের একপাশে ঘর স্থাপন করা হয়। পুজোয় চণ্ডীপাঠ করতে হয় ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত। শুদ্ধ মনে এই দেবী মাহাত্ম্য পাঠ করা হয়ে থাকে। এদিন সন্ধ্যাবেলায় বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে বোধন করা হয়। এবং অধিবাস ও আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণ করা হয় এই বলে যে, পরের দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুজোর জন্য মন্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে। সপ্তমীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় ও চক্ষুদান করা হয়। অষ্টমীতে কুমারী পূজোর বিধান শাস্ত্রে আছে। এক থেকে ১২ বছর বালিকাকে কুমারী পুজোর জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। এক বছর বয়সের নাম হবে- সন্ধ্যা,  দুই বছর হলে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে-কালিকা, পাঁচ বছরে সুভাগা, ছয় বছরে-উমা, ৭ বছরের মালিনী, আট বছরের-কুঞ্জিকা, নয় বছরের কালসন্দর্ভা ইত্যাদি। তন্ত্রে কুমারীকে সাক্ষাৎ যোগিনী ও পরম দেবতা বলা হয়।

দেবী দুর্গার দশ হাত শ্রী শ্রী চন্ডিতে আছে, দেবতাদের পুঞ্জিভূত তেজ থেকেই এই দেবী মূর্তি আবির্ভাব হন তার দশ হাতে দশটি অস্ত্র আছে। দশ জন দেবতা অসুর নাচের জন্য দশ হাতের ১০ টি অস্ত্র প্রদান করেছেন। শিব দিয়েছেন ত্রিশূল, মহাকাল দিলেন খড়গ, বিষ্ণু দিলেন চক্র বায়ু দিলেন তীক্ষ্ণ বান অগ্নি দিলেন গদা যম দিলেন কাল দন্ড, বরুণ দিলেন নাগ পাশ, ইন্দ্র দিলেন অঙ্কুশ, বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার, আর বাহন হলেন সিংহ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে পশু ভাব আছে যখন পুরুষাকার সাধনভজনের মাধ্যমে মানুষ পরিণত হয় তখন পশুভাব কেটে গিয়ে দেবভাব জাগ্রত হয়। দেবীর চরণ তলে সিংহের সেই ভাবেরই প্রতীক।

4 weeks ago


Special story:অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা)

একমাত্র বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজো সবচেয়ে বেশি আনন্দের। এই পুজোতেই দেখা যায়, মহামিলনের অবিশ্বাস্য় ছবি। মহামিলন বললাম এই জন্য় যে, বিবিন্ন জাতের মানুষেরা এই উৎসবে মিলিত হয়ে সমস্ত মানুষের সাথে আনন্দে লীন হয়ে যায়। যেমন কামার কুমোর, কুম্ভকার, ঝাড়ুদার, পতিতা, শোলা শিল্পী, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য়, শুদ্র, কায়স্থ, অবাঙালি সমস্ত শ্রেণীর মানুষ এই পুজো উৎসবে মেতে ওঠে আনন্দে। দৃশ্য়ত এ এক অভূতপূর্ব মহামিলন। শারদীয়ার এই পুজো যেন অগ্রিম জানান দেয়-আমি আসছি। সাদা কাশফুল, নীল আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া খণ্ড সাদা মেঘ, মেঘ রোদের খেলা, বর্ষার পর মাটির সোঁদা গন্ধ, শিউলি ফুলের সুবাস, সব মিলিয়ে দুর্গাপুজা যে আসন্ন, তা চোখ বুজে বলা যায়। মহালয়ার দিন থেকেই উৎসব শুরু। প্রথমে মহালয়ার তাৎপর্য তুলে ধরি আপনাদের কাছে। মহালয়া কথাটি এসেছে মহাআলয় থেকে, অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আবার বলা যায় মহৎদের আলয় বা পরমস্থান। 'মহা' 'লয়'- অর্থাৎ পরমলীন। মহতীদের লয় হয় যেখানে। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। এইদিন থেকেই মহাপুজা আরম্ভ।

এই মহাপুজা ঠিক কবে থেকে শুরু, তার হিসেব বলা মুশকিল। তবে মনে হয় দুর্গাপুজা শুরু পৌরাণিক কাহিনী-'রামায়ন' থেকে। কৃত্তিবাসী রামায়নে এই পুজার উল্লেখ আছে। ভক্তি, বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে এই পুজা করেছিলেন। তাই এই পুজাকে অকালবোধন বলা হয়। অকালবোধন কেন? দেখুন, আমাদের ছ'মাসে দেবতাদের একদিন। অন্য় ছ'মাসে দেবতাদের একরাত। মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্য়ৈষ্ঠ, আষাঢ়- এই ছমাস দেবতাদের উত্তরায়ন। দেবতারা উত্তরায়নে জাগ্রত থাকেন। আর শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ- এই ছমাস দেবতাদের দক্ষিণায়ন। দেবতারা এই দক্ষিণায়নে নিদ্রিত থাকেন। এই দক্ষিণায়নে রামচন্দ্র মাকে আহবান জানিয়ে ছিলেন অর্থাৎ মাকে জাগালেন। অসময়ে মাকে বোধন করেছিলেন বলে এই পুজাকে বলা হয় অকালবোধন। অকালবোধনে রামচন্দ্র পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।   

a month ago
Life: এক নিমেষে জীবনটা চলে গেল...

সৌমেন সুর: এক নিষ্পাপ যুবকের  জীবনটা চলে গেল। চিরদিনের মতো। কয়েকজন আলটপকা সো কলড মনুষ্যত্বহীনের জন্য সে হারিয়ে গেল। কত আশা করে বাবা-মা একবুক স্বপ্ন নিয়ে, তাঁদের একমাত্র ছেলেকে যাদবপুরে পাঠিয়েছিলেন- তাঁদের ছেলে একদিন তাঁদেরকে দেখবে। নতুন ঘর বাঁধবে। স্বপ্নের ইরামত গড়বে। সব স্বপ্ন এক নিমেষে ধুলিসাৎ হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পাশ আউট ছেলেরা কী করে হোস্টেল দখল করে থাকে বছরের পর বছর। কর্তৃপক্ষ কি কিছুই জানেনা। জানে না বললে অবিশ্বাসযোগ্য। জানলে, কেন প্রশাসনকে আগেভাগে জানানো হয়নি।

জে.ইউ-তে যে সুনাম একসময় ছিল এখন তার বিন্দুবিসর্গ নেই। এই ইউনিভারসিটির প্রতিটা ইটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অমানবিকতা, নেপোটিজম, ভায়োলেন্সের ছড়াছড়ি। উদ্ভব যখন হয়েছে, এর নিঃশেষ হলো না কেন? কোন শক্তির বলে মাথাচাড়া দিলো! আড়ালে কাদের মদত- সব প্রকাশ্যে আসুক। মানুষ বুঝুক এখানকার শিক্ষা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। কথা হচ্ছে এত সাহস পায় কোত্থেকে? কোন পেশীবলে তারা বলীয়ান- সব খুলে দেওয়া হোক। যারা দোষী তাদের চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

একটা জীবনের দাম দেওয়া যায় না। জীবনের দাম অনেক।  জীবন হেলায় ফেলায় নয়।  জীবন শেষ হতে এক মিনিট। কিন্তু জীবন গড়তে কয়েকশো কোটি মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এখনো কানে বাজে নিষ্পাপ যুবকের ফোনের কথা, 'মা, আমার খুব ভয় লাগছে। তোমরা আমাকে নিয়ে যাও।' তারা আর নিয়ে যেতে পারলো না, মাত্র কয়েকজন পাষণ্ড, পাশবিক , উদভ্রান্ত হত্যাকারীদের জন্য। যারা ৱ্যাগিং করে, সে ছাত্রই হোক আর শিক্ষকই হোক- তাদের ষড় রিপু ঠিক নেই। অনতি বিলম্বে তাদের সাইক্রিয়াটিসদের কাছে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করা দরকার। কারণ তারা অমানবিক, অমানবিক, অমানবিক।

a month ago


Durgapuja: আসন্ন দুর্গাপুজোয় পশুবলি একদম নয়

সৌমেন সুর: (দেবী দুর্গা সম্পর্কীয় ধারাবাহিক আলোচনা) আকাশের মেঘ আর রোদের খেলা দেখে, চোখ বুজে বলতে পারা যায় দুর্গাপুজো আসন্ন। এখন বেশকিছু মাঠের কিনারে সাদা কাশফুলের দোলা আর শিউলি ফুলের উল্লাস দেখে মনে হয়- মা আসছেন। মা অর্থাৎ দুর্গা মা। কোনো কোনো বাঙালির ঘরে কন্যা উমা মর্তে আসছেন। মায়ের কাছে কটা দিন মেয়ে আসছে তার পুত্রকন্যা নিয়ে। এই আনন্দে সারা বাংলায় সাজো সাজো রব।

দুর্গাপুজো মূলত শাক্ত পুজো। শক্তির আরাধনাই এখানে মূল বিষয়। রক্তের মাধ্যমে অশুভ অসুর শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং দুর্গাপুজো বা যে কোন শক্তির আরাধনায় পশুগুলি জড়িয়ে আছে রক্তপাতের মাধ্যমে শুভ শক্তির জয় আর অশুভ শক্তির পরাজয়। দুর্গাপূজোই পশু বলি নিয়ে নানা ঘটনার উল্লেখ আছে। মার্কেন্ডেয় পুরাণ-এর দেবী মাহাত্ম্য নিয়ে প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ও লোকশিল্পের গবেষক মোহিত রায় তাঁর 'রূপে রূপে দুর্গা' নামক বইটিতে লিখেছেন বোলপুরের আদি ইতিহাস। এক সময় রাজা সুরথ তাঁর রাজধানীর সুপুরে এক লক্ষ বলি দিয়ে দেবীকে পুজো দিয়েছিলেন। এক লক্ষ বলির পর তার রাজধানীর নাম বদলে হয় বলিপুর। কালক্রমের সেই বলিপুর হয়ে উঠল বোলপুর নামে।

খোদ কলকাতাতেই আছে ৪০০ বছরের পুরনো চিত্তেশ্বরী মন্দির। চিতপুরের চিতে ডাকাত এই মাকে পুজো করতেন। সুতরাং বলা যায় ডাকাত কালীর মতো ডাকাতের দুর্গাপুজোয় বলিদান নিত্য ঘটনা। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের বিজয় উৎসব পালনের জন্য বসন্তকালের দুর্গাপুজো শরৎকালে নিয়ে এসে নবপত্রিকা পুজোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই কাজ করেছিলেন নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র ও কলকাতার নবকৃষ্ণ দেব। এদের উৎসাহিত করেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। প্রমাণ হচ্ছে সপারিষদ ক্লাইভের উপস্থিতি ও একশো এক টাকা দক্ষিনা ও ঝুড়ি ঝুড়ি ফলদান। তিনি নব কৃষ্ণের বাড়িতে পশুবলি সহ পুজো দিয়েছিলেন শোনা যায়।

বর্তমানে বিভিন্ন বারোয়ারি এবং অধিকাংশ রাজবাড়িতে পশুবলি না হয়ে সন্ধিপুজোয় আঁখ, চালকুমড়ো, শশা প্রভৃতি বলিদান প্রথায় অনুষঙ্গ হিসাবে বলি দেওয়া হয়ে থাকে। শাক্ত পুরুষ মাতৃভক্ত রামপ্রসাদ সেনের এই গানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক- " মেষ, ছাগ, মহিষাদি কাজ কিরে তোর বলিদানে/ তুই জয় কালী জয় কালী বলে বলি দাও ষড়রিপুগনে।" অবলা পশুদের হত্যা করে পুজো- মা কখনই তা চায় না।  আসুন, আসন্ন দুর্গাপূজায় শপথ করি প্রাণী হত্যা করে পুজো আমরা কখনোই দেব না। এই প্রথায় আমরা ঘোরবিরোধী। তথ্য সংকেত- সুমিত তালুকদার

a month ago
Special story: আমরা সভ্য, না অসভ্য-কোনটা!

সৌমেন সুর: এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনায় নেমেছি- এক একসময় মনে হয় আমি কোন জগতে বাস করছি! সামান্য নিম্নবর্ণের মানুষ নদীতে স্নান করেছে বলে সেই নদীর জল অপবিত্র হয়ে গেছে। তাই তাকে উচ্চবর্ণের মানুষ অমানুষিকভাবে বাঁশপেটা করলো। বাঁশ নিয়ে যত শক্তি আছে শরীরে সেটা প্রয়োগ করা হলো। এটা সভ্যজগতের কাজ? আমরা বড়াই করি-সভ্যজগতে বাস করি, আমরা সভ্য। আসলে আমরা এখনো অসভ্য। কারণ আমরা এখনো দাঙ্গা লাগাই, দাঙ্গাই অংশ নিই। কুসংস্কারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, নিষ্পাপ শিশু কিশোরকে ধর্ষণ করি বর্বরোচিতভাবে। অদ্ভুদ এক সমাজে বাস করছি। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিষয়-জাতিভেদ। 

কোনো শিশু জন্মাবার সময় কোনো প্রতীকচিহ্ন নিয়ে জন্মায় না। কারণ সব মানুষই একটি জাতি। তাহলে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বমানব এক জাতি। মানুষ মাত্রই এক জাতি, এই ধারণা জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা বিভাজনের খেলায় মেতে সমাজে অসংখ্য জাতির প্রাচীর তুলে দিয়েছি। ঋগবেদের যুগে জাতিভেদ বলে কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে জাতি হয়ে ওঠে জন্মসূত্রে অর্জিত সামাজিক স্তর। অধ্যাপক ব্যাসামের মতে, ষোড়শ শতকে পোর্তুগীজরা হিন্দুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উপজাতিতে চিহ্নিত করে। সেই সময় থেকে 'Caste' শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কুসংস্কার মানুষের মনের জমিতে এমন গভীরে শিকড় চালিয়ে দেয়েছে যে, আজও জাতপাতের ভিত্তিতে সামাজিক অবিচার, অনিয়ম। কবি নজরুল একে 'জাতের নামে বজ্জাতি সব' বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। মানুষের কুসংস্কারকে আরও প্রশয় দিয়েছে ব্রিটিশ শাসক। কারণ এটা জিইয়ে থাকলে ওদের দিকে তাকাবার সময় থাকবে না। এদিকে মানুষের মুখটাকেও ঘুরিয়ে দেওয়া গেল। কালের চক্রে এটাই চলছে বর্তমানে। বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে জাতিভেদের চিন্তাভাবনা প্রবেশ করায় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। স্বাধীনোত্তর যুগে জাতপাত নিয়ে কতবার যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। রাজনীতি থেকে জাতপাতের ভাবনাকে বিসর্জন না দিলে, জাতির সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।  

a month ago
Special Story: নিঝুম রাতে (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: ঝড়ের গতিতে ভ্যান চলে আসে সুকুমার ব্যানার্জীর বাড়ি। কিশোর বলে, 'দিদি, ওই যে সুকুমার কাকুর বাড়ি।' নন্দিনী ভ্যান থেকে নেমে বলে, 'ভাই কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ জানাবো সে ভাষা আমার নেই। যাক, তোমার কথা দেব বলো!' 'বেশি দিতে হবে না দিদি, ৫০ টাকা দিন।' নন্দিনী টাকাটা বের করে ওর হাতে দিতেই চমকে ওঠে। কিশোরের হাত বরফের মত ঠান্ডা। কিছু বোঝার আগেই ভ্যান চালিয়ে চলে যায় কিশোর। নন্দিনী ঠিক না, মনের ভুল এসব ভাবতে ভাবতে সুকুমারদার বাড়ি চলে আসে। গেটের হ্যাজবোল্ড নাড়াতেই সুকুমার বলে ওঠেন, ' এসো এসো নন্দিনী, এসো। নন্দিনী ঘরে ঢোকে। একটা চেয়ারে বসে। পথে তোমার একটু কষ্ট হল। 'প্যান্টোগ্রাফ ভেঙেছে বলে কিশোরকে বলে রেখেছিলাম, তোমাকে রিসিভ করবার জন্য।' ' ধন্যবাদ সুকুমার দা।' 'যাক স্ক্রিপ্টটা এনেছো?' ' হ্যাঁ এনেছি, এই নিন।' নন্দিনী সুকুমারদা কে দেয়। সুকুমারবাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে বলেন, ' আলোচনা করবার আগে তোমার ভাবনাটাকে আমি পরিষ্কার করে দিই। তুমি কলেজে জিজ্ঞাসা করেছিলে,  আমি গ্রামে থাকি কেন।' 'দেখ নন্দিনী, প্রথম দিকে আমি কলকাতাতেই থাকতাম। কিন্তু পরে শুনি, আমার অনেকটাই বাস্তু জমি রাজনৈতিক দল হড়প করে নেয়। খবর দেয় আমার জমির কেয়ারটেকার কিশোর আর তার দিদি। একদিন আমি পুলিশ নিয়ে এসে ওই রাজনৈতিক দলের দুজনকে ধরি। এরপর একদিন সন্ধ্যায় আমরা মানে, কিশোর, ওর দিদি আর আমি বেশ মজা করে মুড়ি তেলেভাজা খাচ্ছিলাম, এমন সময় রাজনৈতিক দলের গুন্ডারা হঠাৎই উপস্থিত হয়। কিশোরের দিদি। ' দাঁড়ান সুকুমার কাকু, বাকিটা, আমাকে বলতে দিন।' নন্দিনী খুলে তাকায়, কিশোরের দিকে ভালো করে দেখে। মেয়েটি কথা বলতে বলতে দুই পা এগিয়ে আসে। ' ওই গুন্ডারা প্রথমে সুকুমার কাকুর ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে। তারপর আমাদের সবাইকে খুন করে।' নন্দিনী ঘরে তাকাতেই দেখে সুকুমার ব্যানার্জি অদৃশ্য। চকিতে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়, দেখে মেয়েটি অদৃশ্য। নন্দিনী কি করবে ভেবে পায় না। ঘামতে থাকে। কাঁপতে থাকে সারা শরীর। নন্দিনী অজ্ঞান হয়ে যায়। (সমাপ্ত)

a month ago


Haunted: নিঝুম রাতে (২য় পর্ব)

সৌমেন সুর: কিশোর আপনমনে ভ্যান চালাতে থাকে। নন্দিনী ভয়ে কিশোরকে জিজ্ঞাসা করে, 'এত জোরে ভ্যান চালাচ্ছ কেন, আস্তে চালাও না?' কিশোর উত্তর দেয়, 'দিদি, আমার জন্য আমার দিদি একটা গাছের তলায় অপেক্ষা করছে- তাই জোরে চালাচ্ছি।  ভয় নেই আপনি পড়বেন না।' নন্দিনী আর কথা বলে না। সুকুমার দার কথা ভাবে। এত গুণী মানুষ, এত বড় একজন লেখক, সে কেন এই গ্রামে পড়ে আছে! আবার কলেজের লেকচারার। এখান থেকেই নন্দিনীর সাথে আলাপ। নন্দিনীর মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন সুকুমার ব্যানার্জি। ভবিষ্যতে নন্দিনী একজন ভালো প্রবন্ধকার হতে পারবে।

আজ নন্দিনী চলেছে নতুন একটা লেখা নিয়ে। সুকুমার বাবুই ওকে আসতে বলেছিলেন। আসতে গিয়ে যত বিপত্তি। সাত পাঁচ ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ভ্যানটা থামে। নন্দিনী অবাক হয়ে বলে, 'ভ্যান থামালে কেন!' 'দিদি ওই গাছটার নিচে আমার দিদি অপেক্ষা করছে। আমি যাব আর আসবো।' কথা বলে কিশোর দৌড়ে চলে যায়। চারদিক নিকষ অন্ধকার। শুধু জোনাকির মিটমিটে আলো। দূরে কোথাও কুকুর ডেকে ওঠে। ভেসে উঠছে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার কান্না। রাত কত হল কে জানে। নন্দিনী ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে।

'শালাদের দেখা পেয়েছিস'- কিশোরের দিদি উত্তেজিত হয়ে বলে। কিশোর দিদিকে বলে, ' না দিদি। লাস্ট ট্রেনের একজন প্যাসেঞ্জার নামে। যে আমার গাড়িতে আছে।' 'কোথায় যাবে?' 'সুকুমারদার বাড়ি।' 'তাই! যা, ওনাকে নামিয়ে দিয়ে আয়।' কিশোর চলে আসে ভ্যানে। 'দিদি ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছি। টেনশন করবেন না।'

a month ago
Haunted: নিঝুম রাতে (১ম পর্ব)

সৌমেন সুর: রাতে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ট্রেনটা নিঝুমপুর স্টেশনে থামে। প্লাটফর্ম ফাঁকা। কোনো মানুষজন নেই। ট্রেন থেকে নন্দিনী নামে। হাত ঘড়ির দিকে তাকায় নন্দিনী। রাত প্রায় দেড়টা। চারিদিক শুনশান। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। নন্দিনীর একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। একা মেয়ে মানুষ। এই নির্জন স্টেশনে কোন মানুষের দেখা নেই। কিভাবে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাবে! মোবাইলটা বার করে। তারপরেই চমকে ওঠে। নেট নেই। একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে মোবাইলটা রেখে দেয়। নন্দিনী নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। নিঝুমপুরে আরো তিন ঘন্টা আগে আসতে পারতো যদি না প্যানটোগ্রাফ ভেঙে পড়তো। ওটা সারাতেই তিন ঘন্টা চলে গেল। তারপর যে ট্রেনটা ছেড়েছে এটা ঠাকুরের অসীম কৃপা। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নন্দিনী আস্তে আস্তে এগিয়ে চলে। একটা রিক্সা বা ভ্যান কিছুই চোখে পড়ছে না।

এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল নন্দিনী। সুকুমারদা বলেছিলেন, সব ঠিকঠাক পেয়ে যাবে। কোথায় ঠিকঠাক! তবে সুকুমার দা'র দোষ কোথায়। বাদ সাধলো  তো প্যানটোগ্রাফ ভেঙ্গে। এইসব ভাবতে ভাবতে নন্দিনী লাইন পেরিয়ে রাস্তায় নামে। পিছন থেকে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে একটা গলা ভেসে ওঠে, 'দিদিভাই, কোথায় যাবেন?' চকিতে এদিক ওদিক তাকায় নন্দিনী। একটা ভ্যান ভেঁপু বাজিয়ে কাছে আসে। নন্দিনী ভ্যানচালকের পা থেকে মাথা অব্দি দেখে। পরক্ষণে ভ্যানচালক বলে, 'কোথায় যাবেন?' নন্দিনী কোনরকম ভণিতা না করে বলে, 'ঘোষপুর যাব।' 'ঘোষপুর কার বাড়িতে যাবেন?' 'সুকুমার ব্যানার্জীর বাড়ি।' 'ও, সুকুমার কাকুর বাড়ি যাবেন-বসুন বসুন। আপনাকে ওনার বাড়ি দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। বসুন' নন্দিনী আর কোনো কথা না বলে ভ্যানে উঠে পড়ে।

ভ্যান চলতে থাকে। চলতে চলতে কথাবার্তা বিনিময় হতে থাকে। অন্ধকার রাস্তা। চোখে কিছু ঠাওর করতে পারেনা নন্দিনী। অথচ কি দ্রুত ভ্যান চালাচ্ছে যুবক ছেলেটি। নন্দিনী একসময় বলে ওঠে, 'তুমি এত তাড়াতাড়ি ভ্যান চালিও না। অন্ধকার রাস্তা। পড়ে যাব।' ভ্যান চালকটি হাসিমুখে জবাব দেয়, 'কিছু চিন্তা করবেন না দিদি, এ রাস্তা আমার খুব চেনা। ' এমন সময় দূরে কোথাও শেয়াল ডেকে ওঠে। নন্দিনী চমকে ওঠে। ভ্যান চলতে থাকে আপন মনে। নন্দিনী জিজ্ঞাসা করে, 'তোমার নাম কি ভাই?' 'আজ্ঞে কিশোর দাস।' 'আচ্ছা কিশোর, তুমি এত রাতে ভ্যান চালাও কেন? বাড়িতে রেস্ট নিতে পারো না?' হাসিমুখে কিশোর বলে, 'দিদি রাতে ভ্যান চালালে লাভ আছে। প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে ডবল ভাড়া পাওয়া যায়।' 'তাই বুঝি, যাক আর কতদূর কিশোর!' 'দিদি, ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে কাকুর বাড়ি চলে আসবো।'

হঠাৎ ভ্যানের গতি বেড়ে যায় নন্দিনী শক্ত করে ভ্যানটা ধরে অবাক হয়ে তাকায় কিশোরের দিকে। ( চলবে)

a month ago