অবিলম্বে মানবিক স্বার্থে ইজরায়েল-হামাস সংঘাত থামানো হোক। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে এই রেজোলিউশন নিয়ে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটদানে বিরত থাকল ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘ যদিও তাঁদের বক্তব্যে হামাস গোষ্ঠীর হামলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের ডেপুটি পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ও অ্য়াম্বাসাডর যোজনা প্যাটেল গত ৭ অক্টোবর হামাস গোষ্ঠীর হামলা নিয়ে নিন্দা করেন। গাজা সংকটে ভারতের অবস্থান ফের জানান তিনি।
১২০টি দেশের ভোট পেয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘে রেজোলিউশন পাস হয়ে যায়। ভারত ছাড়া ৪৫টি দেশ ভোট দেয়নি। তাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, ইউক্রেন, ইউকে। ১৪টি দেশ এই প্রস্তাব সমর্থনই করেনি। তাদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, ইজরায়েল।
রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওল ভুট্টো জ়ারদারির (Bilawal Bhutto jardari) অভিযোগকে নস্যাৎ করল নয়াদিল্লি (New Delhi)। কাশ্মীরের (Kashmir) পরিস্থিতি নিয়ে করা জারদারির অভিযোগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ বলেন, 'পাক বিদেশমন্ত্রীর (Pakistan) ঘৃণ্য, ভিত্তিহীন মন্তব্য জবাব দেওয়ারই যোগ্য নয়।' এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তুলে বিলাওল অভিযোগ করেন, 'ভারতের (India) রাষ্ট্রযন্ত্র কাশ্মীরের মহিলাদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে!' পাল্টা রুচিরা বলেন, 'পরিকল্পনামাফিক বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছে পাকিস্তান।'
পড়শি দেশে শাসক বদলের পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী বিলাওল। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ২০০২ সালের গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বেনজির-পুত্র। এরপরে কূটনৈতিকস্তরে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের উত্তেজনার পারদ আরও চড়ে।
এরপর ফেব্রুয়ারিতে এক কর্মসূচিতে বিলাওল বলেন, 'কাশ্মীরিদের নিজভূমেই এক ঘরে করা হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকায় পরিকল্পনামাফিক অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে ভারত সরকার। এর ফলে কাশ্মীরের ভূমিপুত্রর অধিকার খর্ব হচ্ছে।'
গোটা বিশ্ব জানে কারা সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে (United Nation) নাম না করে এভাবেই পাকিস্তানকে (Pakistan) বিঁধলেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jayshankar)। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এক আলোচনাসভা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশের বিদেশমন্ত্রী। চলতি সপ্তাহে সেখানেই তিনি সন্ত্রাসবাদে (Terrorism) মদত প্রসঙ্গে পরোক্ষে পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তোলেন।
দিন কয়েক আগে পড়শি দেশের বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ভারতকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, 'সন্ত্রাসবাদকে ভারতের মতো কেউই ব্যবহার করতে পারেনি।' হিনা রব্বানিকে জবাব দিতেই গর্জে ওঠেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, 'আমি জানি যে গত আড়াই বছর অতিমারি চলার কারণে অনেকে অনেক কিছু ভুলেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, গোটা বিশ্ব ভোলেনি কোন দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ ছড়ায় অন্য কারও দিকে আঙুল তোলার আগে নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।'
সাংবাদিক বৈঠকে এক পাক সাংবাদিক জয়শঙ্করের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, 'কাবুল, নয়াদিল্লি এবং পাকিস্তান থেকে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর ঘটনা কত দিন চলবে?' জবাবে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জানান, 'আপনি ভুল মন্ত্রীকে প্রশ্নটা করেছেন। বরং আপনার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে এই প্রশ্নটা করুন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন, পাকিস্তান আর কত দিন ধরে সন্ত্রাসবাদের অনুশীলন চালাবে।'
এ মাসেই রাষ্ট্রপুঞ্জের (United Nation) নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে ভারত। সেই গুরু দায়িত্ব পাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার নিয়ম মেনে ঘানার (Ghana) প্রস্তাবে সায় দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভাপতিত্বের দায়িত্ব এল ভারতের হাতে। এই কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ বলেন, 'গণতন্ত্রে কী করতে হয়, তা ভারতকে (India) বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনা আড়াই হাজার বছরের পুরনো।'
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এখনও স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ১৫। ভারত স্থায়ী সদস্য না হলেও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণের নয়াদিল্লির ভূমিকা অপরিহার্য। দীর্ঘ মাস যাবৎ চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভারতের অবস্থান কোনও পক্ষের কাছে উদ্বেগজনক, কোনওপক্ষ আবার কুর্নিশ করেছে। যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে বরাবর মস্কোর কাছে সওয়াল করেছে দেশের বিদেশ মন্ত্রক। একইভাবে পশ্চিম ইউরোপ এবং মার্কিন নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া প্রস্তাবে সায় দেয়নি মোদী সরকার।
সেই কারণেই পশ্চিমী দুনিয়ার একটা অংশের আশঙ্কা, ঘনঘন রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের আনা প্রস্তাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারত। সেই কারণেই হয়তো আগেভাগে 'গণতন্ত্র' নিয়ে ভারতের অবস্থান রাষ্ট্র পুঞ্জে পরিষ্কার করে রাখলো রুচিরা।