প্রসূন গুপ্ত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক ১০ দিন আগে প্রচারে সরগরম আগরতলা-সহ গোটা রাজ্য। সপ্তাহের প্রথম দিন অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি আগরতলা গিয়ে পৌঁছন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গী ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে প্রচার শুরু করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।মঙ্গলবার প্রথমে পদযাত্রা, রোড শো সেরে মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠলেন মমতা। একই দিনে উপস্থিত হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির নেতারাও ত্রিপুরা গিয়ে প্রচারে ঝড় তুলছেন। আগামী বৃহস্পতিবার প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
অন্যদিকে জোট অর্থাৎ বাম কংগ্রেস ও পরোক্ষ জোটসঙ্গী তিপরা মোথা এখনও কোনও তেমন স্টার বক্তাকে প্রচারে ব্যবহার করেনি। নিজেরাই প্রচার সারছে এবং শোনা গেলো ঘরে ঘরে ভোটার স্লিপ দিতে গিয়ে যোগাযোগ রাখছে ভোটারদের সঙ্গে। এখন মজার বিষয় এই যে প্রতি দলের প্রচারে প্রচুর ভিড় হচ্ছে কাজেই হওয়া কোন দিকে, ঠাউর করা যাচ্ছে না।
অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যে সরাসারি আক্রমণ শানালেন সিপিএম বা বামেদের। বললেন যে, 'এই সিপিএম বা বামেদের বিশ্বাস করা যায় না। এরা সময় বুঝে কংগ্রেসকে সঙ্গী করেছে এবং সঙ্গী করেছে তিপরা মোথাকে।' শাহী ভাষণে অবশ্য তৃণমূল বা মমতার উল্লেখ ছিল না। ফলত বিরোধীরা জানাচ্ছে, যে তৃণমূল ভোটে দাঁড়িয়েছে বিজেপিকে সুবিধা করতেই।
অবশ্য আজ মমতা ভাষণে জানালেন যে বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস তাঁর রাজ্যে এক। তিনি বিরোধীদের কটাক্ষের জবাবে বললেন, 'বাংলায় বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি, সিপিএম প্রকাশ্য জোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছে।' তিনি বাংলায় চলা কন্যাশ্রী, যুবশ্রী ইত্যাদির যুক্তি দিলেন এবং তাঁদের ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করলেন।
যোগী তাঁর ভাষণে উত্তরপ্রদেশ বর্তমান অবস্থার কারণে রাজ্যের মানুষ খুশি, এমনটাই জানালেন। যত দিন এগোচ্ছে উত্তাপ, উত্তেজনা এবং সব দলের টেনশন বাড়ছে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফলের একটা আভাস পাওয়া গেলেও অদ্ভুত ভাবে ত্রিপুরার জনতা কিন্তু এই বিষয় টু শব্দ করছে না। কাজেই ২ মার্চ অবধি অপেক্ষা ছাড়া এই মুহূর্তে কোনও বিকল্প নেই। যদিও বিরোধীরা ভোটে প্রচণ্ড গন্ডগোলের আশংকা করছে, অন্যদিকে বিজেপি জানাচ্ছে ভোট হবে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ।
প্রসূন গুপ্ত: কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে তা শেষ পর্যন্ত প্রশ্নই থেকে যাবে ত্রিপুরায়। আপাতত প্রচার শুরুর অবস্থান যে যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকেই। তিপরা মোথা নামক নতুন দলের প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম মানিক্য দেববর্মন মোটামুটি নিজের দলের ভরসায় ভোট লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। মাণিক্যের পূর্বপুরুষ একসময় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধু তাই নয় আইনসভাতেও তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু দিন পালটেছে, দীর্ঘদিন বামেরা ত্রিপুরা রাজ্য চালিয়েছে নিজেদের দলে থাকা আদিবাসী নেতাদের সঙ্গেই। এখানে আদিবাসীরা আলাদা দল গড়লেও রাজ্যে ছাপ ফেলতে পারেনি।
কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আদিবাসী উন্নয়নে কাজ হচ্ছে না বলে বিজেপির জোটসঙ্গী আইপিএফটি বারবার আবেদন করেছিল। বর্তমানে ওই দলের প্রায় সব বিধায়ক তিপরা মোথা দলে যোগ দিয়েছে। ত্রিপুরার ৬০টি আসনের মধ্যে ২০টি আসন কিন্তু আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। ফলে প্রশ্ন থাকতেই পারে ভাঙা দল আইপিএফটি সেখানে দাঁত ফোটাতে পারবে কি?
প্রচারের প্রাথমিক লগ্নে ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৮ আসনে তিপরা মোথা প্রার্থী দিয়েছে। তাদের দাবি ১৮টি আসনে তাদের জয় নিশ্চিত। যদি তাই হয় তবে প্রশ্ন বিজেপির জোটসঙ্গী একটিও আসন জয় করতে পারছে না। কাজেই বিজেপিকে বাকি ৪২ আসনের মধ্যে ৩১ আসন জিততেই হবে ক্ষমতায় ফিরতে। অবশ্য ওপিনিয়ন পোল ইত্যাদি যা দেখাচ্ছে তাতে খোদ ত্রিপুরাবাসীর ভরসা নেই।
এখানে ওপার বাংলা থেকে আগত বাঙালির অবস্থান ৯৫ শতাংশ এবং এই আদিবাসী ও বাঙালি ভোটারদের মধ্যে সখ্যতা নেই। পশ্চিমবঙ্গে যেমন ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জয় করেছিল। সেই ফর্মুলায় ত্রিপুরায় পদ্ম শিবির চেষ্টা করবে বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি করে ঝুলি ভরানোর।
কিন্তু এতেও সমস্যা আছে। ওই ২০টি আদিবাসী এলাকায় প্রার্থী দিতে হবে বিজেপিকে। সেক্ষেত্রে প্রার্থী যেই হোক, তার আদিবাসী হওয়া জরুরি। এখানেই বাঙালি ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন থাকবে যে সেই তো বাঙালি/আদিবাসী জোটেই সরকার হচ্ছে। কাজেই খুব হিসাব করে এগোতে হচ্ছে বিজেপিকে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা কিন্তু কালবিলম্ব না করে প্রচারে বেড়িয়েছেন। (আগামী সংখ্যা দেখুন)
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় (Tripura) বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে রাজ্যে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে প্রশাসন। রাজ্যের আটটি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ত্রিপুরা পুলিস টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর চিরুনি তল্লাশি চলছে। এরই ফলস্বরূপ ২৩শে জানুয়ারি সোমবার রাজ্যব্যাপী একযোগে চলা অভিযানে মোট ৩৪৯ জনকে গ্রেফতার (Arrested) করেছে পুলিস (Police)। আপরাধ, এঁদের মধ্যে কেউ নেশা দ্রব্য পাচারকারী, কেউবা ফেনসিডিল ব্যবসায়ী, কেউ গাঁজার কারবারি অথবা ড্রাগস, হেরোইন বিক্রেতা। আবার চুরি-ছিনতাই-র মতো অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে।
গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেকেই আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যব্যাপী বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে বলে পুলিসের ধারণা। আর তাই তাদের আগে থেকেই চিহ্নিত করে আটক করেছে পুলিস। ত্রিপুরা পুলিসের সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতি থেকে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের পুলিস ৩৩ কেজি গাঁজা, ১০.৫ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করেছে। মোট ৩৪৯ জন অভিযুক্তকে একাধিক ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ত্রিপুরা পুলিসের নজরদারি এবং তৎপরতা ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনদিন আগেই এমনই একটি অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় ২১৯ জনকে গ্রেফতার করেছিল ত্রিপুরা পুলিস। যেখানে মোট ২৩০ কেজি শুকনো গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিস। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই অভিযানে খুশি ত্রিপুরাবাসী।