
পর পর ছবি ফ্লপ। এবারে ছবিতে দেশপ্রেম দেখালেও তাও কাজে দিল না। ২৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বলিউড 'কুইন' কঙ্গনা রানাউতের ছবি 'তেজস'। কিন্তু 'তেজস'-এ কঙ্গনার তেজ দেখিয়েও কোনও লাভ হল না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ৬০ কোটি টাকার বাজেটের ছবি দু'দিনে মাত্র ১ কোটির মত ব্যবসা করতে পেরেছে। ফলে অবশেষে নিজের ছবি দেখার জন্য দর্শকদের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করলেন খোদ অভিনেত্রী। এক্স অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করে জানালেন একপ্রকার সাফাই গাইলেন যে কেন তাঁর ছবি প্রেক্ষাগৃহে মানুষ দেখতে যাচ্ছেন না।
Even before covid theatrical footfalls were dipping drastically post covid it has become seriously rapid.
— Kangana Ranaut (@KanganaTeam) October 28, 2023
Many theatres are shutting down and even after free tickets and many reasonable offers drastic footfall decline is continuing.
Requesting people to watch films in theatres… pic.twitter.com/Mty9BTcpkD
তেজস প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে মুথ থুবড়ে পড়ে। ফলে বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজসের ব্যর্থতা ঢাকতেই মুখ খুলেছেন কঙ্গনা। শনিবার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করে কঙ্গনা বলেন, 'আমি জানি এই আধুনিক সময়ে আমাদের সবার কাছে মোবাইল আছে, টিভি আছে। কিন্তু একসঙ্গে সিনেমা দেখা, থিয়েটার অনেক আগে থেকে আমাদের সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নাচ, শিল্প, কথাকলি, লোকগান, নাটক আমাদের আমাদের সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই মাল্টিপ্লেক্সের দর্শকদের কাছে অনুরোধ করছি, যদি আপনাদের এর আগে ‘উরি’, ‘মেরি কম’, ‘নীরজা’র মতো সিনেমা ভালো লেগে থাকে তাহলে ‘তেজস’ও ভালো লাগবে। এর পাশাপাশি অভিনেত্রী অভিযোগ করেছেন, ৯৯ শতাংশ ছবিকে নাকি দর্শক সুযোগই দেন না।
তবে কঙ্গনার এই ভিডিও-র পরও নেটিজেনদের ট্রোলিং-এর শিকার হতে হয়। নেটিজেনরাও জানিয়ে দিয়েছেন, ছবি ভালো হলে অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে মানুষ যাবে সিনেমা দেখতে। এছাড়াও 'জওয়ান', 'পাঠান'-এর ছবিরও উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নেট নাগরিকরা।
আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। চলতি মাসের ১৬ তারিখেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে বহু প্রতীক্ষিত ছবি 'আদিপুরুষ' (Adipurush)। ওম রাউত (Om Raut) পরিচালিত ছবিটি নিয়ে বিতর্কে কম ছিল না। কিন্তু সেই বিতর্ককে এড়িয়ে এবারে বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই 'আদিপুরুষ'-এর টিম একটি বড় ঘোষণা করল। তাদের তরফে বলা হয়েছে, ছবি মুক্তি পাওয়ার পর প্রত্যেক প্রেক্ষাগৃহে একটি করে সিট রামভক্ত হনুমানের (Lord Hanuman) জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হবে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন জাগছে নেটিজেনদের মনে।
প্রত্যেক প্রেক্ষাগৃহে একটি করে সিট বজরংবলীর উদ্দেশে উৎসর্গ করার নেপথ্যে কী কারণ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, আদিপুরুষ-এর টিম একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, 'যখনই রামায়ণ পাঠ করা হয় তখন সেখানে রামভক্ত হনুমানের আবির্ভাব হয়। আর এই বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করেই প্রেক্ষাগৃহে একটি করে সিট বরাদ্দ করা হয়েছে ও এই সিটটি বিক্রি করা হবে না। এটি রামভক্ত হনুমানের জন্য বরাদ্দ।'
লকডাউনের (LockDown) সময় গোটা বিশ্বজুড়ে এক নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, যা হল 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' (Work From Home)। এই নতুন ট্রেন্ড আসার পর যেন মানুষের কাজের চাপের থেকে স্বস্তিই নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় এরকমই হাল কর্মীদের। সকাল থেকে রাত, সবসময় ল্যাপটপের মধ্যে মুখ গুজে বসে থাকতে হয়। ফলে এখন কর্মীদের জীবনে যেন কোনও ছুটি বলেও কিছু থাকে না। এমনি এক দৃশ্য দেখা গেল বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) এক সিনেমা হলে (Cinema Theatre)। যেখানে এক ব্যক্তি প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপে কাজ করতেও দেখা যায়। আর এই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই ভাইরাল নেট দুনিয়ায়।
এর আগেও একবার বিয়ের পিঁড়িতে বসে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল এক ব্যক্তিকে। বিয়ের মত এক বিশেষ দিনেও নতুন বরকে কাজ করতে দেখে হইচই পড়ে গিয়েছিল নেট দুনিয়ায়। এবারেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে। সিনেমা হলে চলছে ছবি, আর সেখানেই এক ব্যক্তি ল্যাপটপ খুলে কাজ করে চলেছে। ফলে এই থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সামান্য তিন ঘণ্টারও ছুটি নেই জীবনে। এই ভিডিওটি সেখানে থাকা কোনও এক দর্শক বানিয়েছিলেন। এটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ঠাট্টা-মশকরায় মেতে উঠেছে নেটিজেনরা। তবে নেটিজেনদের অনেকে এই দৃশ্যকে দেখে বলেন,'বেঙ্গালুরুর টেক কর্মীদের এই জীবন।'
সৌমেন সুর: আজ আপনাদের কাছে এমন একজন নক্ষত্রের নাম করব, যিনি কালের স্রোতে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই মহিয়সী নারীর অভূতপূর্ব অভিনয়ে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ আশীর্বাদ করে বলেছিলেন,'তোর চৈতন্য হোক।'
বিনোদিনী দাসী। ১৮৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নাট্যকার ও নাট্যশিক্ষক গিরীশচন্দ্র ঘোষ বিনোদিনীকে প্রথম থিয়েটারে নিয়ে আসেন, যখন ওর বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বয়সেই সমগ্র বাংলার বুকে অভিনয় শিল্পে রীতিমতো সাক্ষর রেখে কিংবদন্তী হয়ে পড়েন। সীতা, দ্রৌপদী, রাধা, কৈকেয়ী ও শ্রীচৈতন্য চরিত্রে অভাবনীয় অভিনয় করেন। প্রায় ৮০টি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। বিনোদিনী এত প্রতিভাময়ী হওয়া সত্ত্বেও অমৃতলাল বসু, গিরীশ ঘোষ-এর মতো ব্যক্তিত্বরা বিনোদিনীর মর্যাদা দিতে পারলেন না সমাজের ভয়ে। সেই অবস্থা থেকে গোটা বাঙালি জাতটাই আর উঠে আসতে পারল না।
বিনোদিনীর অভিনয়ের একটি নাটকের সংলাপ ও গান 'হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়'-আজও শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। নটি-বিনোদিনী নামের মধ্যে এমন একটা গভীরতা, সম্মান প্রকট হয়ে পড়ে-যার প্রমাণ, নান্দীকার থিয়েটার তাঁদের 'নটি বিনোদিনী' প্রোডাকশন প্রায় ২০০ রজনী হাউসফুল হয়েছিল। এখনও তাঁর নাম শুনলে মানুষ জড়ো হয় হলে। স্টার থিয়েটার গড়ার পেছনে বিনোদনীর অবদান, ত্যাগ অনস্বীকার্য। আজ ১৫০ বছর পরেও বিনোদিনীর নাম উপেক্ষার আড়ালেই রয়ে গেল। কেন?
সৌমেন সুর: গ্রুপ থিয়েটারে তারা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নাটকে নতুন নতুন রীতির আর্বিভাব ঘটিয়েছে। অন্যদিকে পেশাদার থিয়েটার যেহেতু একটা জায়গায় অবস্থিত এবং যেখানে বৃহস্পতি-শনি এবং রবিবার নাট্য প্রদর্শন হয়, সেহেতু দর্শকসংখ্যা একটা সীমায় আবদ্ধ। চাহিদার তুলনায় জোগান কম। প্রখ্যাত নাট্যধারার বাইরে যেতে পারেনি পেশাদার থিয়েটার। ফলে দর্শক কমতে থাকে। পেশাদার থিয়েটারের অনেক শিল্পীই তো গ্রুপ থিয়েটার বা গণনাট্যে সফলতা এনে দিয়েছেন।
তাহলে পেশাদার থিয়েটারের দৈনদশা ঘোচাতে সচেষ্ট হলেন না কেন? জানতে পারা যায়, শিল্পজ্ঞানহীন ব্যবসায়ী প্রযোজকদের কথা। তাদের রক্তচক্ষুর জন্য এই দুর্দশা। অজিতেশ বন্দোপাধ্যায় লেখেন, 'শিল্পক্ষেত্রে সাহসিকতা বলতে আমরা বুঝি যে স্রষ্টার পরিকল্পনা আপসহীন ভাবে উচ্চারিত হয়েছে কিনা। উৎপল দত্ত বাংলা নাটক প্রযোজনার ক্ষেত্রে অন্যতম দুঃসাহসিক পরিচালক।'
১৯২৭ সালে ৬ জুন 'নাচঘর' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পেশাদার রঙ্গশালার রসবোধ ও কলাজ্ঞান নিয়ে বিরক্ত হয়েছিলেন। তার প্রায় ৬০ বছরের মধ্যে একই চিত্র দেখা গিয়েছে পেশাদার থিয়েটারে। ফলে তাঁকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে অনিবার্য ভাবে। ব্যবসায়ীদের মানসিকতাই হল, কোনও একটি ক্ষেত্রে ব্যবসা ভালো না হলে তাঁরা অন্য ক্ষেত্রে টাকা ঢালে। পেশাদারী নাটকে যখন ঠিকঠাক ব্যবসা হচ্ছিল না, তখন তাঁরা থিয়েটার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তাই থিয়েটারে পেশার বিষয়টি একটি প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আজ।
সৌমেন সুর: সুকুমারী দত্ত, শ্যামা, তিনকড়ি, এলোকেশী, বিনোদিনী, ক্ষেত্রমনি, কুসুমকুমারী, তারাসুন্দরী প্রমুখদের জীবনচর্চা থেকে থিয়েটারে দক্ষ অভিনেত্রী করে তোলার জন্য গিরীশ ঘোষ, অমৃতলাল মিত্র, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির পরিশ্রম উল্লেখযোগ্য। অভিনেত্রীদের দাম কোনওদিনই কম ছিল না। বিশেষ করে নটি বিনোদিনীর নাম। তাঁর আত্মত্যাগ, থিয়েটার গড়ে তোলার স্বপ্ন, মানুষ বহুদিন মনে রাখবে। বর্তমানে শুধু অভিনেত্রীরাই নয়, বহু অভিনেতাও বিভিন্ন নাট্যদলে অভিনয় করে জীবিকা অর্জন করেন।
পেশাদার নাট্যশালার প্রায় সব শিল্পীই চেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে। অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষতা, অক্ষমতা হয়তো কাজ করেছে, কিন্তু তাদের নিষ্ঠা কম ছিল না। যখন পেশাদার থিয়েটারের শেষ পর্ব, তখন সৌমিত্র চ্যাটার্জী, অপর্ণা সেন, মনোজ মিত্র, গীতা দে, সাবিত্রী চ্যাটার্জী, চিন্ময় রায়, অনুপকুমার, জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মিত্র প্রমুখ বড় বড় শিল্পী পেশাদার নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলা পেশাদার থিয়েটারের দর্শকদের কাছ থেকে মন্তব্য শুনে কতকগুলো ভাবনা কাজ করেছে।
যেমন পেশাদার থিয়েটারকে স্বাস্থ্যকর লড়াই করতে হয়েছে গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে। গ্রুপ থিয়েটারের নতুন নতুন দল, নতুন নতুন নাটক নিয়ে সারা বাংলায় ঘোরে। তাদের বিষয়ে অভিনবত্ব রয়েছে তেমনি বৈচিত্র দর্শকও তারা পেয়েছে। নাটকে তারা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় নতুন রীতির আবির্ভাব ঘটিয়েছে। (চলবে)
সৌমেন সুর: দেখতে দেখতে পেশাদার থিয়েটারে রাজনীতির বিষয়ের অতিসক্রিয়তা ইংরেজ সরকার ভাল চোখে নিতে পারেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল, থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে মানুষের গণচেতনা প্রসার লাভ করছে। ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে প্রবল চাপ আসতে থাকল- থিয়েটারে রাজনীতির কথা থাকবে না। বন্ধ করা হলো এই থিয়েটার। সেইসময় পেশাদার থিয়েটার জগৎ ইংরেজদের এই হুলিয়া মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।
তৈরি হয়তে শুরু করল পৌরাণিক নাটক। নাট্যকার গিরীশ ঘোষ একের পর এক পৌরাণিক নাটক লিখলেন। অন্যদিকে সুকৌশলে নাটকের মধ্যে স্বদেশপ্রেম-এর কথা ঢুকিয়ে দেওয়া শুরু হল। পেশাদার থিয়েটার সাড়ম্বরে সেটা উপস্থাপন করতে থাকল। এর মধ্যে বাংলায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে থিয়েটার নতুন রূপে প্রাণ ফিরে পায়। বাঙালির মনে যে রাজনৈতিক সচেতনতা কাজ করছিল, তাকে নতুনভাবে রূপ দেওয়া হলো ঐতিহাসিক নাটকে। সেইসময়ে বারাঙ্গনাদের নিয়ে থিয়েটারে অভিনয় করানো খুব একটা সহজ ছিল না। সেদিন বহু মানুষ থিয়েটারকে ঘৃণার চোখে দেখতেন, অবশ্য বিপরীত মনস্ক মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না।
স্বয়ং মাইকেল মধুসূদন, বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার শরৎচন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন, "তোমরা স্ত্রী লোক লইয়া থিয়েটার খোলো। আমি তোমাদের জন্য নাটক লিখিয়া দেবো।" তারপর তো ইতিহাস। (চলবে)
সৌমেন বসু: ১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর, ন্যাশনাল থিয়েটারের 'নীলদর্পন' নাটক মঞ্চস্থ হল মধুসূদন সান্যালের ঘড়িওয়ালা বাড়িতে। তখনকার সময় বাঙালি সমাজ জীবনবোধের এক নতুন সংস্থা পেলো থিয়েটার। এতদিন জমিদার বাড়িতে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য মঞ্চস্থ হতো। কিন্তু শৌখিন থিয়েটার সামাজিক দায়িত্ব পালনে অগ্রণীর ভূমিকায় প্রকাশ পেল। সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে থিয়েটারকে সংযুক্ত করে দেওয়ার প্রয়াস এবং নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা যে হয়নি তা নয়। তবু অতৃপ্তি ছিল- শখের থিয়েটারের কর্মকাণ্ড দেখার জন্য তাদের আত্মীয়স্বজন, চেনা পরিচিতজনদের টিকিট ছাপিয়ে নিমন্ত্রণ করতেন।
ফলে অনেক দর্শক টিকিটের জন্য প্রার্থনা করে না পেয়ে বিফল মনোরথে ফিরতেন। এই অতৃপ্তি থেকেই বাংলা থিয়েটার সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে। যে কারণেই হোক, ন্যাশনাল থিয়েটার বাংলা থিয়েটারকে স্বাবলম্বী করে তুলেছিল। পেশাদার ভাবে তাকাতে হয়নি থিয়েটারকে। অর্থনৈতিক সুবিধা শিল্পীদের যেমন নাট্যনির্ভর করে তুললো, তেমনি সাধারণ দর্শকের সমাগমে তারা সাধারণ মানুষের প্রাণের কথাকে রূপ দিতে থাকলো।
এবার থিয়েটারের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক বিশেষত স্বদেশ প্রেমের সম্পর্ক হয়ে ওঠে গাঢ়তর। এই সময়ে একের পর এক স্বদেশ প্রেমের নাটক রচিত হয়। (চলবে)
সুজিত সাহা: প্রসেনিয়াম থিয়েটারের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে একটু ভিন্ন মাত্রার নাটকের উপস্থাপন বাংলায় শুরু ৭০ দশকে। নাট্যকার বাদল সরকার তথাকথিত ভাবধারার বাইরে এসে দর্শকের সঙ্গে অভিনেতাকে এক করে মুক্ত প্রাঙ্গণ, পথে বা কোনও ঘরে থিয়েটারকে অন্যভাবে মানুষের কাছে আনলেন। তাঁর নির্দিষ্ট দর্শনে জন্ম নেয় এক নতুন আঙ্গিক, যার নাম দেওয়া হয় তৃতীয় থিয়েটার। যদিও ৭০ দশকের আগেই এই আঙ্গিকের নাটক উপস্থাপন হয়েছে নাট্যব্যক্তিত্ব পানু পাল ও উৎপল দত্তের হাতে। বিদেশে অবশ্য এই ধারার নাটকের ভাবনা অনেক আগে থেকেই।
'অন্তরঙ্গ' থিয়েটার নতুন আঙ্গিক কিনা, তা বলবে সময়। তবে এই যাত্রাপথের কয়েকজন কাণ্ডারির নাম না করলেই নয়-- যেমন গৌতম সেনগুপ্ত, প্রবীর গুহ প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে নাট্য নির্দেশক সুপ্রিয় সমাজদার অন্তরঙ্গ থিয়েটারকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যান। বর্তমানে জাতীয়স্তরেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে এই 'অন্তরঙ্গ থিয়েটার'। আঙ্গিক প্রসঙ্গে সুপ্রিয় সমাজদার এক জায়গায় লেখেন, "আমার কাছে এই অন্তরঙ্গ নাটকের চর্চা, এক ভাষার অন্বেষণ- যা আমাদের সজাগ করে, ঋদ্ধ করে, আমাকে চেনায়।'
ভিন্নধর্মী নাট্যপ্ৰেমিকরা জানলে খুশি হবেন, সম্প্রতি 'বিভাবন থিয়েটার একাডেমির' উদ্যোগে জাতীয় অন্তরঙ্গ থিয়েটার ফেস্টিভেল কলকাতার থিয়ে এপেক্সে অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশ, জাতীয়স্তরে মুম্বই-সহ বিভিন্ন প্রান্তের মোট ১৯টি দল তাদের নাটক উপস্থাপন করেছে। এই ধরণের নাট্য দলগুলোকে সরকার নজর দিলে- নাট্যঙ্গনে নতুন আঙ্গিকের (অন্তরঙ্গ থিয়েটার) প্রতিষ্ঠা পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। অন্তরঙ্গ নাট্যচর্চার উদ্যোগ ও উপস্থাপনের দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করার কৃতিত্বের যোগ্য দাবিদার বাংলার 'বিভাবন থিয়েটার একাডেমি'। সাধুবাদ জানাই তাদের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে।