
অর্জুন চক্রবর্তী: সত্যজিৎ, ঋত্বিক বা মৃণাল সেনের নাম ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক লহমায় আলোচিত হয়ে থাকে। তারপর কেউ কেউ দয়া করে বিশিষ্ট পরিচালক তপন সিংহের নাম করে থাকেন। আমি অভিনেতা হিসাবে মনে করি একই পংক্তিতে তপনদার নাম থাকা উচিত। এটা বাস্তব তপনদা সিনেমার বাণিজ্যিক দিকটার কথা মনে রাখতেন। সেটা কি অপরাধ? মানিকদা একসময় বলেছিলেন, ছবি তৈরিই হয় দর্শকদের কথা ভেবেই। মানিকদা বা সত্যজিৎ রায়, তপনদাকে বিশেষ পছন্দ করতেন এবং তপনদার মুখেই শুনেছি, বহু সময়ে তপনদার সঙ্গে মানিকদার ছবি নিয়ে আলোচনা করতেন। তপনদার ছবিতে মানিকদার প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীকে পাওয়া যেতই। সৌমিত্রদা, রবি ঘোষ, মাধবীদি, লিলি চক্রবর্তী, শর্মিলা ঠাকুর থেকে কে নন। তপনদাও একটা অনিয়মিত গল্পকে অবলম্বন করে অসংখ্য ছবি করেছেন। মানিকদার মতোই তিনি চিত্রনাট্য থেকে গানের সুর বা সংগীতপরিচালনা নিজেই করতেন। অনুপ ঘোষালকে মানিকদা গুপী বাঘাতে নিয়ে এসেছিলেন, তেমনই তপনদার ছবি সাগিনা মাহাতোতে অনুপদার কণ্ঠ এবং দিলীপ কুমারের লিপ ছিল।
তপনদা যে কোনও ছবি করার আগে পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করতেন। বহু ছবিকে আমি ডকুমেন্টরি হিসাবে ধরতে পারি। ধরুন, হুইলচেয়ার। এটিকে কি বলবেন? কিংবা হাটে বাজারে বা সাগিনা মাহাতো? গল্প পরে দেখুন, ক'জন চেষ্টা করবেন এই ঘটনা নিয়ে ছবি বানাতে। তাঁর ৪৮ টি ছবি ৪৮ রকমের ছিল, শুধু দুটি ছবি হিন্দিতেও রিমেক করেছিলেন। অশোক কুমার, দিলীপ কুমার, শত্রুঘ্ন সিনহা থেকে বৈজয়ন্তীমালা, সায়েরাবানুর মতো ব্যস্ততম শিল্পীদের কাজে নিয়েছিলেন। আবার এই বাংলার উত্তম,সৌমিত্র থেকে প্রসেনজিৎ কে নয়। আমার সৌভাগ্য আমি তাঁর ৫টি ছবিতে কাজ করেছি। ৫টি ৫ ধরণের চরিত্র।
তপনদার এটি প্রাক জন্মশতবর্ষ। আগামী বছর ২ অক্টোবর তার শতবর্ষ পূর্ণ হবে। বর্তমানে মিডিয়ার দিকে তাকালে শুধু রাজনীতির কচকচানি। তপনদা মনে রাখবে তো?
মাধবী মুখোপাধ্যায়, চলচিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অসাধারণ অভিনেত্রী। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক হাসপাতালে ভর্তি। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন, সঙ্গে নাকি শ্বাসকষ্ট! অনেকদিন ধরে ব্লাড সুগারের সমস্যা ছিল। খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারদের অনেক নিষেধাজ্ঞা ছিল। মাধবীদেবীর পান খাওয়ার নেশা ছিল, অবশ্যই জর্দা সহযোগে, তাও ছাড়তে হয়েছে কয়েক বছর। কিছুদিন আগে থেকেই নাকি অসম্ভব দুর্বলতায় ভুগছিলেন,মাথা ঘুরতো, শরীর চলতো না ঠিক মতো। স্বাভাবিক, রক্তাল্পতার এটাই প্রধান লক্ষণ। সুগারের সমস্যা থাকায় আয়রনযুক্ত সমস্ত খাবার খেতেও পারছিলেন না। এ ছাড়া বয়স বর্তমানে ৮০। বয়সটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। শুক্রবার শরীর খুব খারাপ লাগায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর আপাতত চিকিৎস্যা শুরু হয়েছে মেডিসিন বিভাগে অবশ্যই প্রাথমিক স্তরে।
মাধবী মুখোপাধ্যায় এমন এক অসাধারণ শিল্পী যিনি কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃনাল সেন এবং তপন সিংহের সঙ্গে। তিনিই একমাত্র নায়িকা যিনি এই চার কিংবদন্তির সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশেষত্ব এই যে মাধবী এই চার বিশ্বখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে যে যে চরিত্রে কাজ করেছেন তা ছবির প্রধান চরিত্র ছিল। দেশের মতো বিদেশেও সমাদৃত হয়েছে ছবিগুলি। অন্যদিকে উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে প্রায় টলিউডের তৎকালীন সব অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রিয় নায়ক ছিলেন। কয়েকদিন আগে আক্ষেপ করে বলেছিলেন সৌমিত্রর শেষ সময়ে তাঁর কাছে থাকতে পারিনি। একটু বয়সে বিয়ে করেন আর এক চরিত্রভিনেতা নির্মল কুমারকে। কিন্তু দীর্ঘদিন আলাদা থাকেন তাঁরা। শোনা গেলো নির্মলবাবু মাধবীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পেলেও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সুস্থতা কামনা করেছেন সিনেমা জগত ও শিল্পী মহল।