Breaking News
Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?      Sarabjit Singh: ভারতীয় বন্দি সরবজিৎ সিং-এর হত্যাকারী সরফরাজকে গুলি করে খুন লাহোরে     

SudipPaul

Sudip: দশম সুদীপ মেটালো এক জীবন শিক্ষকের আক্ষেপ

মণি ভট্টাচার্যঃ  জীবনের ব্যক্তিগত সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ভালোবাসার স্কুলটাকে। সব পেয়েছিলেন। শিক্ষকতার জন্য দেশের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কারও জুটেছিল। তবু মৃত্যুর আগে প্রধান শিক্ষক স্বর্ণকমল বিশ্বাসের (Swarnakamal Biswas) একটা খেদ থেকে গিয়েছিল, “আমার স্কুলের কেউ মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে র‍্যাঙ্ক পেলো না এখনও”। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে সেই খেদ মিটে গেল। উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থান পেয়েছে দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠের (Duttapukur Mahesh vidyapith) সুদীপ পাল (Sudip Paul)। একইসঙ্গে যারা স্কুলটাকে মদ-গাঁজার ঠেক বলে বিদ্রুপ করেছিল তাদেরকেও ডাস্টবিনে পাঠিয়ে দিল উচ্চ মাধ্যমিকের সার্বিক ফলাফল। 

দুচোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিল। আর ডানায় ছিল আগুনের ঝলকানি। পথ চড়াই উৎরাই। নিজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ভরসা রেখেছিলেন উত্তর প্রজন্মের উপর। কিন্তু বনিকসভ্যতার বানিজ্যিক মন ক্রমশ দুর্গম করে দিয়েছিল স্বপ্ন ছোঁয়ার পথ। তাই জীবদ্দশাতে দেখে যেতে পারেননি তাঁর স্বপ্নের উত্তরণ। পরে যাত্রা দলের অধিকারীর সবজান্তা পালায় বিপন্ন হতে বসেছিল অস্তিত্বটাই। ঠিক সেখান থেকেই ফিনিক্স পাখির মত উঠে দাঁড়ালো স্বর্ণকমল বাবুর স্বপ্নের মহেশ বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তীতে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি পরিবারের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে দশম হয়ে বার্তা দিল ফের ঘুরে দাঁড়ানোর।


সুদীপের বাবার একটা ছোট দর্জির দোকান, দত্তপুকুর স্টেশনের কাছে। একমাত্র দাদাও দর্জির কাজ করে। তেমন পসার নেই। মাধ্যমিকের ফল মনের মত হয়নি। তবু হিসাব শাস্ত্র নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিল। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই চলত লাখ লাখ টাকার অংকের হিসাব। স্বপ্ন কি আর সীমানা মানে ! সেই স্বপ্নই ওকে শুধু হিসাব নয়, পাঠ দেয় জীবন শাস্ত্রেরও। উচ্চ মাধ্যমিকে হিসাব শাস্ত্রের নম্বর পুরো একশ। বাংলা বাদে অন্যান্য বিষয়গুলিতেও নম্বর নয়ের ঘরের উপরের দিকে। স্কুলের সার্বিক ফলাফলও অনন্য। তাই এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ১১৪ জন। তার মধ্যে ৭৬ জন পাশ করেছে প্রথম বিভাগে। কোনও ফেল নেই। স্টার মার্কস রয়েছে ২২ জনের। আটজন পেয়েছে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক, এই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র সজল গঙ্গোপাধ্যায় ফলাফল শোনার পরেই স্কুলে আসা সুদীপ পালকে ফুল ও চকলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরশাদ উজ জামান, এস আই অমিত মণ্ডল সহ অন্যান্য পদাধিকারীরাও। সুদীপ জানালো, বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউনটটেনট হতে চায়। আরশাদ উজ জামান জানালেন, তারা সব সময় পাশে আছেন। এর আগে তারা গিয়েছিলেন বারাসাত –এক ব্লক থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম হওয়া শ্রীতমা মিস্ত্রীর বাড়িতে। শ্রীতমা নিবাধুই গার্লস স্কুলের ছাত্রী হলেও ওর বাবা রমেশ মিস্ত্রী মহেশ বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন ছাত্র। রমেশবাবু জানালেন, স্যার বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। নিজের স্কুল ছাড়াও এলাকার সব ছাত্র ছাত্রীকে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উৎসাহ দিতেন। মহেশ বিদ্যাপীঠের বর্তমান প্রধান শিক্ষক সজলবাবু জানালেন, স্যার এর স্বপ্ন সফল করতে পেরে ভালো লাগছে। এই ধারা বজায় রাখতে হবে।

এমন দিনেও অবশ্য বিতর্ক থেমে থাকলো না। গত ১০ মার্চ ডি এ সহ বেশ কয়েক দফা দাবিতে সারা রাজ্য জুড়ে শিক্ষকদের ধর্মঘটে সামিল হয় মহেশ বিদ্যাপীঠ এর শিক্ষকরাও। সেদিন শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় আরাবুলরা চড়াও হয় স্কুলে। স্কুলে শিক্ষকরা মদ গাঁজার নেশা করে বলে অভিযোগ তোলে তারা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক অলক জানা তাঁর ফেসবুক পোস্ট এ উল্লেখ করেছেন সে কথা। প্রশ্ন তুলেছেন, এখন সেই অভিযোগকারীরা কোথায় তা জানতে চেয়ে। সেদিন সেই বহিরাগতদের নেতৃত্বে ছিলেন কাশিমপুর পঞ্চায়েত সমিতির পরিষদীয় দলনেতা অমল বিষ্ণু। এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য বলেন, তেমন কিছু নয়, স্কুলের মধ্যে যেন বিড়ি সিগারেট বিক্রি না হয় আমরা সেটা বলেছিলাম। যদিও বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলই সব অভিযোগের উত্তর বলে জানিয়ে দেয় সমবেত ছাত্ররাই।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বর্ণকমল বাবুর আবক্ষ মূর্তিকে সাক্ষী রেখেই প্রধান শিক্ষক সম্বর্ধনা জানান সুদীপকে। নত হন সেই মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায়। বাংলার শিক্ষক ছিলেন স্বর্ণকমলবাবু। তাঁর বিষয়ে মাত্র তিরাশি। কোনও অতৃপ্তি কি থাকলো না ? সুদীপ জানায়, যেহেতু সেরা পাঁচটা বিষয়ের নম্বর যোগ হয়, তাই বাংলায় দু তিন নম্বর বাড়লেও মোট নম্বর একই থাকতো। সুদীপ বোঝেনি। কিংবা খেয়াল করেনি। বাংলার তিরাশি নম্বর, সেই স্বর্ণ কমল বাবুকেই প্রনাম। কাকতালীয় নাকি পোয়েটিক জাস্টিস? কে জানে! বেঁচে থাকলে স্বর্ণ কমল বাবুর বয়স হত তিরাশি বছর।

11 months ago