
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে (Fire) পুড়ে ছাই শোভাবাজারের একটি বিউটি পার্লার (Parlour)। হঠাত্ করেই পার্লারের ভিতর থেকে কালো ধোঁয়া দেখতে পায় এলাকাবাসীরা। আগুন লাগায় নিমেষেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। বুধবার সকালে শোভাবাজারের ৪১ শ্রী অরবিন্দ সরণিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। দমকলে খবর দেওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন-সহ দমকল এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। দমকলের দুটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালায়।
জানা গিয়েছে, বাড়ির একতলায় অবস্থিত এই পার্লারটি। মূলত পার্লারের ভিতরে থাকা এসির কারণেই কোনওভাবে আগুন লেগে যায়। যার ফলে এই আগুনের কারণেই কার্যত কালো ধোঁয়া নির্গত হতে থাকে। সূত্রের খবর, দুটি দমকলের ইঞ্জিন কাজ করায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে মিনিট চার-পাঁচেকের হাঁটা পথ পেরোলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ছিয়াশি বছরের ঐতিহ্যবাহী ধীরেন কেবিনে। ১৯৩৫ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দে এই দোকানটি চালু করেছিলেন। শুরুর দিনগুলোতে এখানে ভেজিটেবল চপ, মাছের চপ, মাংসের চপ, ফিশ ফ্রাই, মটন ব্রেস কাটলেট, চিকেন স্টু, মোগলাই পরোটা, চা ইত্যাদি পরিবেশিত হত। কিছুদিনের মধেই ধীরেনবাবুর তৈরি উন্নতমানের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ ক্রেতাদের মন জয় করে ফেলতে সক্ষম হল। শোভাবাজারের গণ্ডি পেরিয়ে সারা কলকাতার খাদ্যরসিকদের কাছে ধীরেন কেবিনের খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল।
যত দিন যেতে থাকল, ধীরেন কেবিনে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়তে লাগল। আরও কিছু পদ খাদ্যতালিকায় যোগ হল। ফিশ রোল, মটন কবিরাজি, ফিশ পকোড়া, চিকেন কষা, সেঁকা পাউরুটি ইত্যাদি। বহু বিখ্যাত মানুষ এখানকার খাবারের ভক্ত ছিলেন ও আছেন। মহানায়ক উত্তম কুমারের মামাবাড়ি ছিল ওই পাড়াতেই। মামাবাড়িতে এলে বাঁধা ছিল ধীরেন কেবিনে এসে চিকেন স্টু, ফিশ ফ্রাই, চিকেন ব্রেস কাটলেট, মাটন চপ বা মোগলাই পরোটা খাওয়া। বিখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হাতিবাগানের থিয়েটার পাড়ায় এলেই চলে আসতেন ধীরেন কেবিনে। চিকেন স্টু, মটন ব্রেস কাটলেট, মোগলাই পরোটা, ফিশ ফ্রাই, ভেজিটেবল চপ খুব পছন্দ করতেন। খেতে খেতেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতেন। বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার পঙ্কজ রায় থাকতেন এই পাড়াতেই। উনি এখানকার খাবারের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। কলকাতায় থাকলে নিয়মিত আসতেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও ধীরেন কেবিনে এসে ওনার প্রিয় চিকেন স্টু ও ফিশ ফ্রাই খেয়ে গিয়েছিলেন।
কিংবদন্তি গায়ক রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ওনার পুত্র শ্রীকুমার দুজনেই ধীরেন কেবিনের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন। শ্রীকুমার আজও আসেন। ফিশ চপ, মটন ব্রেস কাটলেট, চিকেন পকোড়া ও মোগলাই পরোটা ছিল রামকুমারবাবুর প্রিয়। প্রাক্তন বিচারপতি গীতানাথ সেন এখানকার মটন কবিরাজি, চিকেন স্টু পছন্দ করতেন। প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল সেন ধীরেন কেবিনের খাবার খুব ভালোবাসতেন। ফিশ ফ্রাই, চিকেন স্টু , মটন ব্রেস কাটলেট ছিল ওনার খুব প্রিয়।
ধীরেনবাবুর মৃত্যুর পরে ওনার পুত্র প্রবীরকুমার দে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধীরেন কেবিনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আজও সেই পুরনো শ্বেত পাথরের টেবিল ও সাবেকি ছোট ছোট কাঠের চেয়ারে বসে এখানকর সাবেকি খাবারগুলো খেতে খেতে টাইম মেশিনে চেপে অনেক পিছনে চলে যায় মন। পুরনো প্রজন্মের ক্রেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আসেন নতুন প্রজন্মের ক্রেতারাও। পুরনো খাবারের সাথে কিছু নতুন পদও চালু হয়েছে। নতুন পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, দই চিকেন। এখানকার ঐতিহ্যবাহী পদগুলি হল চিকেন স্টু, ফিশ ফ্রাই, মটন ও চিকেন ব্রেস কাটলেট , ফিশ রোল, মটন ও চিকেন কবিরাজি, ফিস/মটন/ভেজিটেবল চপ, ফিশ/চিকেন পকোড়া, চিকেন কষা ও মোগলাই পরোটা। তবে এখনকার মোগলাই পরোটার স্বাদ একেবারেই আলাদা।