
টানা চারটি ম্যাচে হার। সব মিলিয়ে পাঁচটি ম্যাচে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) কাছে এ বারের মতোও প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। দলের মনোবল তলানিতে। খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রথম একাদশ। সেই অবস্থায় শক্তিশালী রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (RCB) বিরুদ্ধে বুধবার মুখোমুখি হতে চলেছে তারা। খেলা হবে বেঙ্গালুরুতে, যেখানে রানের বন্যা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা।
এই মুহূর্তে কলকাতার কাছে এর চেয়ে কঠিন ম্যাচ হতে পারত না। শার্দূল ঠাকুরের (Shardul Thakur) ব্যক্তিগত ক্ষমতায় ঘরের মাঠে আরসিবিকে হারালেও বেঙ্গালুরুতে কাজ একদম সহজ নয়। কেকেআরের কোনও কিছুই ঠিক হচ্ছে না। না ব্যাটিং, না বোলিং, কিছুই ঠিকঠাক নেই।
আগের ম্যাচে কেকেআরের বোলারদের পিটিয়ে ২৩০ রান তুলে দিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা। তা-ও আবার ঘরের মাঠে। কলকাতার কোনও বোলারই দাঁড়াতে পারেননি চেন্নাইয়ের বোলারদের সামনে। মঙ্গলবার তারা এমন এক দলের মুখোমুখি যে দলে বিরাট কোহলি, ফাফ ডুপ্লেসি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, দীনেশ কার্তিকের মতো ক্রিকেটার রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকে একার হাতে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন।
এ বার অন্তত দু’টি ম্যাচে ডুপ্লেসি এবং ম্যাক্সওয়েলের ঝোড়ো ব্যাটিং দেখা গিয়েছে। আগের ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধেই মারমুখী ব্যাট করেছেন দু’জন। কেকেআর বোলারদের প্রথম কাজ বেঙ্গালুরুর টপ অর্ডারকে আগে সাজঘরে ফেরানো, ছন্দের বিচারে যা এই মুহূর্তে অসম্ভব কঠিন কাজ।
ওপেনিং নিয়ে কেকেআরের সমস্যা কাটছেই না। আগের ম্যাচে হঠাৎ করেই ওপেনে নামিয়ে দেওয়া হল সুনীল নারাইনকে। তিন বলে তাঁর অবদান ০। এ ছাড়া নারায়ণ জগদীশন, লিটন দাস, জেসন রয়, রহমানুল্লা গুরবাজ— ওপেনারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন দেখার আরসিবি ম্যাচে নতুন আর কোনও জুটি পাওয়া যায় কি না।
এ দিকে, আগের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থানকে সাত রানে হারিয়ে ফুটছে আরসিবি। সাত ম্যাচের চারটিতে জিতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে তারা। কিন্তু বুধবার জিতলে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে চলে আসতে পারে।
আরসিবির সাফল্যের মূল কারণ তাদের টপ অর্ডারই। কিন্তু বল হাতে মহম্মদ সিরাজ, শাহবাজ আহমেদ, ওয়েন পার্নেল, ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গরা তো আছেনই। ম্যাচ জেতাতে তাঁরাও সমান পারদর্শী। সিরাজ তো এই মুহূর্তে বেগনি টুপির অধিকারী। অন্য দিকে ডুপ্লেসির মাথায় রয়েছে কমলা টুপি। বোঝাই যাচ্ছে আইপিএলে দাপাচ্ছে কোন দল।
শার্দুল ঠাকুর যে লম্বা রেসের ঘোড়া, কেকেআরের ঘরের মাঠে কিং খানের উপস্থিতিতে সেটা বুঝিয়ে দিলেন তিনি। শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটে ভর করে, বৃহস্পতিবারের ম্যাচে ৮১ রানে ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনল কলকাতা নাইট রাইডার্স। পাশাপাশি কেকেআরের নয়া অধিনায়ক নীতিশ রানার প্রশংসাও প্রাপ্য। খুব চেনা ছকেই যেন তিনি নিজেদের ঘরের মাঠে, বিরাটকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিলেন ডগ আউটে।
বৃহস্পতিবার কেকেআরের ঘরের মাঠে টসে জিতে প্রথম বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেয় বিরাটের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। বল হাতে ভালোই শুরু করেছিল আরসিবি। প্রথম ওভারে পরপর দুটি উইকেট নেন উইলি, কিন্তু ম্যাচের হাল ধরেন গুরবাজ তারপর গুরবাজ ও অধিনায়ক নীতিশ ও রাসেলের উইকেট পড়ে গেলে, ব্যাট হাতে ম্যাচের হাল ধরেন শার্দুল ঠাকুর ও রিঙ্কু সিং। শার্দুল ঠাকুর ২৯ বলে ৬৮ রান করেন, তাঁর ঝড়ো ইনিংসে বাউন্ডারির সংখ্যা নটি এবং ওভার বাউন্ডারি তিনটি। পাশাপাশি রিংকু সিং করেন ৩৩ বলে ৪৬ রান, তার ইনিংসে দুটি বাউন্ডারি এবং তিনটি ওভার বাউন্ডারি। এছাড়া গুরবাজ উল্লেখিত ৫৭ রান করেন ৪৪ বলে। তার ইনিংসে ছটি বাউন্ডারি এবং তিনটি ওভার বাউন্ডারি রয়েছে।
প্রথম ব্যাট করতে নেমে কলকাতা ৭ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান করে। ২০৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে বিরাটের দল ১২৩ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে বিরাট কোহলি এবং ডিউ প্লেসিস আউট হয়ে গেলে, তাসের ঘরের গুটিয়ে যায় আরসিবি টিম। ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে বিরাট কোহলি ১৮ বলে ২১ রান করে এবং ডিউ প্লেসিস ১২ বলে ২৩ রান করে।
প্রথমে বল করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। উইলি তার প্রথম ওভারেই ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং মন্দীপ সিংয়ের উইকেট ছিটকে দেয়। প্রথম ইনিংসে সিরাজ চার ওভারে ৪৪ রান দিয়ে একটি উইকেট উইকেট। এবং করণ শর্মা তিন ওভারে ২৬ রানে দুটো উইকেট তোলে। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছে ব্রেসওএল এবং হর্স প্যাটেল। দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিক চেনা ছন্দেই নীতিশ রানা, তাদের ব্রহ্মাস্ত নারাইনকে ব্যবহার করে, এবং নারাইনের প্রথম ওভারেই বিরাট কোহলির উইকেট ছিটকে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে এসে বরুণ চক্রবর্তী তিন ওভার চার বলে ১৫ রানে চারটি উইকেট তুলে নেয়। সুনীল নারাইন চার ওভারে ১৬ রানে দুটি উইকেট, সুয়াশ শর্মা ৪ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নেয়। এদিনের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় শার্দুল ঠাকুর।