প্রসূন গুপ্তঃ রবিবারেই ধার্য হয়ে গেলো, এই রাজ্য থেকে আগামীতে রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন কারা? তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যে ৪ জন যাচ্ছেন তাঁরা যথাক্রমে নাদিমুল হক, সুস্মিতা দেব, মমতা ঠাকুর এবং নতুন মুখ সাগরিকা ঘোষ। এর মধ্যে ফের আরও একবার সুযোগ পেলেন নাদিমুল, কারণ সংখ্যালঘু মুখ। সুস্মিতা আগেও তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন এবং কাজটিও ভালো করেছিলেন কাজেই ফের একবার ও মমতা ঠাকুর একবার লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে হেরে যান। তিনি মতুয়া প্রতিনিধি এবং ঠাকুর বাড়ির প্রতিনিধি কাজেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে এবারে রাজ্যসভায় পাঠালেন। বাকি সাগরিকা ঘোষ।
সাগরিকা সাংবাদিক। টেলিভিশনের নিয়মিত মুখ ছিলেন। অসাধারণ বাচনভঙ্গি। ইংরেজি ও হিন্দিতেই তিনি তাঁর কাজ করেছেন। দিল্লির প্রবাসী বাঙালি এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা। সাগরিকা কোনও সাক্ষাৎকার নিতে গেলে অতিথির ঘাম ছুটিয়ে দিতেন। তাঁর পিতা ভাস্কর ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ বিভাগে ডিরেক্টর ছিলেন। ভাস্করবাবু দূরদর্শনের অন্যতম পরিচালকও ছিলেন দীর্ঘদিন। কংগ্রেসের পছন্দের মানুষ ছিলেন। সাগরিকার অন্য এক পরিচয়ও আছে। তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজদীপ সারদেশাইয়ের পত্নী। তাঁকে মমতা পাঠালেন সুবক্তা এবং রাজনীতি সচেতক হিসাবেই।
অন্যদিকে অনেক জল্পনা কাটিয়ে বাংলা থেকে একমাত্র আসনে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে আগামীতে দেখা যাবে রাজ্যসভায়। রাজ্য বিজেপিতে অনেক জল্পনা ছিল অনেক নাম নিয়ে। মিঠুন চক্রবর্তী, অনির্বান গাঙ্গুলি, ভারতী ঘোষ, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি নাম নিয়ে ছিল টেনশন। এ বিষয়ে নাকি সম্প্রতি অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের আলোচনাও হয়েছিল। জল্পনার নামগুলি উঠে এসেছিলো ওই ভাবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের অতি পছন্দের শমীককেই রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। শমীক এক সময়ে বসিরহাট থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন, কিন্তু তারপর নানান নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেও হেরে গিয়েছেন। শমীক সুবক্তা, রাজনীতির পড়াশুনা অগাধ এবং বিতর্কিত মন্তব্য থেকে দূরেই থাকে পছন্দ করেন। সাগরিকা বা শমীক কিন্তু বক্তা হিসাবে রাজ্যসভায় স্থান করে নেবেন বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে।
একদা নরওয়েবাসী বাঙালি দম্পতি সাগরিকা চট্টোপাধ্যায় এবং অনুরূপ ভট্টাচার্যের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ছবি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। এই ছবির প্রধান চরিত্রে রানী মুখ্যোপাধায়। বিদেশের এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক মায়ের লড়াই, এই ছবির মূল প্রতিপাদ্য। শুক্রবার, ১৭-ই মার্চ মুক্তি পেয়েছে মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে। এই ছবি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যান্স জেকব ফ্রাইডেনলুন্ড।তিনি বলেন, 'মিসেস চ্যাটর্জি ভার্সেস নরওয়ে ছবিটি একদম ভুল তথ্যের উপর তৈরি। তাই আমি একজন নরওয়ের বাসিন্দা হিসেবে ভুলটা ভেঙে দেওয়া আমার দায়িত্ব।'
‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে রানী মুখ্যোপাধ্যায় প্রধান চরিত্র মিসেস চ্যাটার্জি। স্বামী (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) এবং দুই সন্তানের সঙ্গে নরওয়েতে থাকেন এই ছবির দেবিকা চট্টোপাধ্যায়। সুখী এই পরিবারের উপর এক দিন হঠাৎই বিপর্যয়।
খুদে সন্তানদের দেখাশোনায় গাফিলতির অভিযোগে নরওয়ে সরকার একদিন হঠাৎ দেবিকার দুই সন্তানকে হেফাজতে নিয়ে নেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় এক বাঙালি মায়ের সন্তানদের ফিরে পাওয়ার লড়াই।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ছবি তৈরি হয়েছে। যদিও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে পাল্টা কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন বাস্তবে মিসেস চ্যাটার্জি। সাগরিকা বলেন, 'আমি নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে আপত্তি জানাচ্ছি। আমার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতবছর পরও নরওয়ে সরকার আমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। তারা আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমার সম্মান নষ্ট করেছে। আমার সন্তানরা এখনও ওই ঘটনার স্মৃতি বইছে। তবে ওই সময় ভারত সরকারই আমাকে সাহায্য করেছে।’