
গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি ১৫ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। গতকাল ডিভিশন বেঞ্চ গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলার যাবতীয় বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর ২ সপ্তাহ স্থগিতাদেশ দেয়। সেই নির্দেশকে সামনে রেখেই প্রায় ১ মাস গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি পিছিয়ে দিল একক বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে প্রাক্তন বিচারপতি আর কে বাগের নেতৃত্বে যে অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত চালাচ্ছিল, সেই কমিটি গতকাল সকালে বাতিল করে দেয় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। সিবিআইকেই ফের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ মার্চের মধ্যে সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির রহস্যভেদে সিবিআই প্রাথমিক তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে একমাসের মধ্যে, এমনটাই নির্দেশ ছিল সিঙ্গল বেঞ্চের।
কিন্তু গতকালই বিকেলে রাজ্য সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ করা যেতে পারে, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, আর কে বাগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এখনও পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। তাই আদালত মনে করছে, এই কমিটির এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই। এসএসসি গ্রুপ ডির দুর্নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ ইস্যু। সেই কারণেই এই তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল আদালত। গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কোনও ব্যক্তি যেন বাদ না যায়, সিবিআইকে তা সুনিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দেওয়ায় আপাতত পুরো বিষয়টির নিষ্পত্তিই পিছিয়ে যায়। এবার সিঙ্গল বেঞ্চও শুনানি পিছিয়ে দিল।
এসএসসি (SSC Recruitment) মেধা তালিকায় নাম থাকলেও, এখনও নিয়োগপত্র হাতে পায়নি যোগ্যতম প্রার্থীরা। উলটে অযোগ্যরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে। এই প্রতিবাদে ৫ দিন ধরে গান্ধীমূর্তির (Kolkata Hunger Strike পাদদেশে আমরণ অনশনে চাকরি প্রার্থীরা। এই অবস্থায় রবিবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিশেষ চাহিদাপ্রাপ্ত (Physically Challenged candidate) এক চাকরিপ্রাপ্ত। শুধু তিনি নয়, এদিন সকাল থেকে মোট ৫ জন অসুস্থ হয়েছে। এমনটাই দাবি প্রতিবাদীদের। জানা গিয়েছে, প্রায় ৪০ ঘণ্টা অনশনে থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের এই মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছিল ২০১৬ সালে। তারপরেও মেধা তালিকায় জায়গা পাওয়া যোগ্যতমরা নিয়োগ পাননি। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে এই ধর্না অবস্থান। যা ইতিমধ্যে প্রায় চারমাস। পাশাপাশি আমরণ অনশনের পঞ্চম দিন।
প্রতিবাদীদের আবেদন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবি মানুক। অধিকার ফিরিয়ে দিক। এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন চলার পর মুখ্যমন্ত্রী সময় দিয়েছিলেন। প্রেসক্লাবের সামনে এসে দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনার পর দুই বছর কেটে গেলেও কোনও সক্রিয়তা দেখা যায়নি প্রশাসনিক বা এসএসসি তরফে। তাই ফের তাঁরা পথে। আর এই আন্দোলন দমনে পুলিসকে ব্যবহার করছে সরকার। এমনটাই অভিযোগ অনশনকারীদের।
পাশাপাশি অনস্থনস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়া এক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, 'শিক্ষিত হয়েও কেন আমাদের আন্দোলন করতে হবে। ভাতা নিতে হবে?'
এদিকে, এই অনশনমঞ্চ থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁদের কাঁধে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পুলিসের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।
ফের এসএসসি-র গ্রুপ সি পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। একই স্কুল, একই পদ।
অথচ নিয়োগের সময় দেখা গেল দুজন প্রার্থী। একজন নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তখনই দেখা গেল, সেই পদে অন্য একজনকে নিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। ফলে মামলা দায়ের হল হাইকোর্টে। রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে।
স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, কারা রেকমেন্ডেশন লেটার দিয়েছিল, কাদের সুপারিশে চাকরি হয়েছিল, তার উত্তর এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের এই দুই দপ্তর কেউ সঠিকভাবে আদালতে জমা দিতে পারেনি। পরবর্তী শুনানি ৭ জানুয়ারি। সেইদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এ ব্যাপারে বিশদ তথ্য জানাতে হবে।
আবেদনকারী অরিন্দম মিত্রের পক্ষের আইনজীবী আশিষকুমার চৌধুরী আদালতে জানান, ২০১৬ সালে গ্রুপ সি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর রেকমেন্ডেশন লেটার ইস্যু করে এসএসসি। তারই ভিত্তিতে গত ২০২০ সালে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে আবেদনকারী অরিন্দম মিত্রকে পূর্ব মেদিনীপুরের শ্রীরামপুর এগ্রিকালচার হাইস্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। করোনা অতিমারীর কারণে অরিন্দমবাবু নিয়োগপত্র পেয়ে স্কুলে যোগাযোগ করলে তাঁকে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়, স্কুল বন্ধ রয়েছে, খোলার পরে যোগাযোগ করবেন।
এরপর বারংবার স্কুলের সাথে, জেলা স্কুল পরিদর্শক, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং পর্ষদের কাছে লিখিত আবেদন জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি তারা। স্কুল খোলার পর অরিন্দমবাবু স্কুলে গেলে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রুপ সি পদে স্কুল সার্ভিস কমিশন মনোনীত অপর এক প্রার্থীকে নিয়োগ করে ফেলেছে তারা। বিষয়টি শিক্ষা দফতরের নজরে আনলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এরপরই তিনি হাইকের্টের দ্বারস্থ হন।
এসএসসি-র গ্রুপ ডি নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিৎকুমার বাগের নেতৃত্বে এই কমিটি তদন্ত চালিয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। কমিটিতে থাকবেন এসএসসির প্রতিনিধি আশুতোষ ঘোষ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সহ-সচিব পারমিতা রায়, হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, এর আগে এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। একইসঙ্গে যে ২৫ জনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ, তাঁদের বেতন চালু রাখারও নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
২০১৬ সালের প্যানেল অনুযায়ী গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের পরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে আরও অনেককে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগেই ওই মামলা। যে ২৫ জনের বেতন নিয়ে বিতর্ক, তাঁদেরও ওইভাবেই পরে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
সোমবার হাইকোর্টে এসএসসির আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, বেনিয়ম হয়ছে, তদন্ত হোক। কিন্তু হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে কমিটি গঠন করে দিক হাইকোর্ট। সেই কমিটি তদন্ত করুক। তারা ব্যর্থ পলে অন্য তদন্তের কথা ভাবা যাবে। অভিযুক্ত চাকরিপ্রাপ্তদের পক্ষের আইনজীবীর আর্জি ছিল, মামলার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, অথচ বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ। আগে প্রমাণ হোক, অভিযুক্তরা অপরাধী। তারপরে আদালত শাস্তি দেবে।
সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পরই আদালত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে ২৫ জনের বেতনও দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়।
নন্দীগ্রাম এসএসসি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে রবিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেন চাকরিপ্রার্থীরা। কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার প্রার্থীরাই নন্দীগ্রাম থেকে নবান্ন অভিযান করেন। নন্দীগ্রাম বাজার থেকে শুরু হয় এই অভিযান।
এঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকলেও রাজ্যের শিক্ষা দফতর এব্যাপারে কোনওরকম পদক্ষেপ করছে না। ফলে মিছিল করে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। শুরু করার সময় মিছিলে বাধা দেয় নন্দীগ্রাম থানার পুলিস। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের সাথে বচসায় জড়ায় পুলিস। ৭০ থেকে ৮০ জনের বেশি চাকরিপ্রার্থীকে আটক করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিস। কয়েকজন পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে অসুস্থও হয়ে পড়েন। আটক করাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
বিক্ষোভরত এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, রবিবার তাঁদের নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছিল। কিন্তু পুলিস তাতে হস্তক্ষেপ করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের আগেরবার অনশন মঞ্চে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপরে সিঙ্গুর আন্দোলনে গিয়েও পুলিস-প্রশাসন আশ্বাস দেয়। তবুও এখনও অবধি একজনও চাকরি পাননি। তাঁদের বিক্ষোভ কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিভাগের তরফ থেকে।
বিক্ষোভরত আরেক চাকরিপ্রার্থী জানান, তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের শুরুতেই বাধা দেয় পুলিস। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের অনুরোধ, চাকরির প্রতিশ্রুতি যেন রাখেন। অনেককেই আটক করা হয়েছে। থানায় কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েছেন বলে তিনি জানতে পারেন।
বারবার তাঁদের আন্দোলনে বাধা। এখন দেখার, তাঁদের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছয় কিনা।