Breaking News
Garden Reach: ফের গার্ডেনরিচেই বেআইনি বহুতলের সন্ধান, শুরু বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কাজ      Sandeshkhali: পোস্টার-বিরোধিতা অতীত, রেখাকে জড়িয়ে উচ্ছ্বাস সন্দেশখালিতে      Sandeshkhali: "শক্তি স্বরূপা" সম্বোধন প্রধানমন্ত্রীর, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে ফোন মোদীর      Holi: বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে বিভিন্ন জেলা, জানুন কোথায় কিভাবে উদযাপিত হল রঙের দিবস      Garden Reach: গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ে মৃত বেড়ে ১২, এখনও আশঙ্কাজনক বহু      CBI: আরও অস্বস্তিতে মহুয়া মৈত্র! কলকাতার ফ্ল্যাটে সিবিআই হানা      Delhi: আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন খারিজ      Garden Reach: জেগে উঠছে পুর প্রশাসন! পুরসভায় জমা একাধিক অভিযোগ      High Court: টেটে প্রশ্নপত্র ভুলের মামলা, পর্ষদকে দিতে হবে বিশেষজ্ঞদের মতামত, নির্দেশ বিচারপতি মান্থার      Gardenrech Controversy: গার্ডেনরিচের বহু অবৈধ নির্মাণ প্রশাসনের ঔদাসীন্যতা! উঠছে প্রশ্ন...     

Rabindranath

Shantiniketan: শান্তিনিকেতনের ফলকে ফেরাতে হবে রবীন্দ্রনাথের নাম, ডেটলাইন মমতার

শান্তিনিকেতনের নাম ফলকে ফেরাতে হবে রবীন্দ্রনাথের নাম। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রের সামনে এই ডেটলাইন বেঁধে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদি না হয়, তাহলে শুক্রবার থেকে বিশ্বভারতীর সামনে আন্দোলন শুরু করবে তৃণমূল কংগ্রেস।

সম্প্রতি বিশ্বভারতীকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। কিন্তু অভিযোগ, মূল নাম ফলকে নেই রবীন্দ্রনাথের নাম। রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক হয়েছে। বৃহস্পতিবার কালীঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করে সেই বিতর্ককে আরও একবার উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি জানান, রবীন্দ্রনাথের জন্যই গোটা বিশ্ব আজ বিশ্বভারতীকে চেনে যানে। তাঁর জন্য ইউনেস্কো এই জায়গাটিকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করেছে। এতদিন পুজো বলে তিনি চুপ করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকালের মধ্যে যদি নাম পরিবর্তন না হয়, তাহলে আন্দোলন হবে।

এদিকে, সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া হুঁশিয়ারির পর নাকি সুর খানিকটা নরম করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। নিজেদের ভুলের কথা স্বীকারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। দ্রুত নাম পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মত, মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়াতেই বিশ্বভারতীর এমন মতবদল।

5 months ago
Special: রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সহকারীকে চেনেন? এক নিখাদ সম্পর্কের উপাখ্যান পড়ুন

সৌমেন সুর: সেই সময়ের কথা। তখন সদ্য প্রকাশ হয়েছে রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে' উপন্যাস। অমিয় চক্রবর্তী (Amiya Chakraborty) তখন হেয়ার স্কুলের ছাত্র। বইটি পড়ে তরুণ অমিয় চক্রবর্তী মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখলেন। রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath) চিঠি পেয়ে পত্র লেখক কে প্রবীণ মনে করে 'আপনি' সম্বোধন করে চিঠির উত্তর দেন। পরিচয়ের সূত্রপাত হলো এই প্রথম। তারপর অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে কবির সশরীরে দেখা বালিগঞ্জের মে-ফেয়ার রোডে প্রমথ চৌধুরীর বাড়িতে। তখন কবিকে দেখে আপ্লুত অমিয়। তাঁর প্রভাব অমিয় চক্রবর্তী জীবনকে বদলে দিল। আস্তে আস্তে পরস্পরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একসময় অমিয়'র শোকের যন্ত্রণা থেকে কিভাবে শান্ত থাকতে হয় সে ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ তাকে উদ্ধার করেছিলেন। এরপর রবীন্দ্রনাথই তাকে কাছে টেনে নিলেন-করলেন তার সাহিত্য সহকারী।

অমিয়চন্দ্রের কাজ হল রবীন্দ্রনাথের বিদেশী চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়া, বইয়ের প্রুফ দেখা, কবিতা কপি করা, অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, বাংলা ও ইংরেজি পান্ডুলিপি প্রকাশের জন্য সাজিয়ে রাখা, ইন্টারভিউ দেওয়া ইত্যাদি। প্রত্যেকটি কাজে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই বিদেশীদের অভ্যর্থনার ভার তার ওপর ছেড়ে দিয়ে কবি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।

অমিয়চন্দ্রকে সংসার জীবনে প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ডেনমার্কের বিদূষী রমনী হেয়রডিস সিগরের সঙ্গে তার বিবাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কবি এই রমনীর নাম দিয়েছিলেন হৈমন্তী। এই 'হৈমন্তী'ই পরে যথার্থ একজন আশ্রমিকা হয়েছিলেন। এদিকে সাহিত্য সহকারী হিসেবে অমিয়চন্দ্র কবির ভ্রমণ সঙ্গী হবার সুযোগ পেয়েছিলেন বারবার। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রবীন্দ্রনাথের সহকারী হয়েছিলেন অমিয়। বিদেশে ভ্রমণকালে অমিয়চন্দ্রের সেবায় ও সাহচর্যে মুগ্ধ হয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বাহিরে তোমার যা পেয়েছি সেবা/ অন্তরে তাহা রাখি/ কর্মে তাহার শেষ নাহি হয়, প্রেমে তাহা থাকে বাকি।'

১৯৩৩ সালে রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অমিয় চক্রবর্তী অক্সফোর্ডে গবেষণা করতে যান। কর্মসূত্রে যোগ না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অমিয় চক্রবর্তীর সম্পর্ক আমৃত্যু অটুট ছিল। কবির কাছে অমিয় চক্রবর্তীর সাহচর্য যেমন প্রয়োজন ছিল না তেমনি আবার অমিয় বাবুর জীবনের রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যের ফলে অমিয়চন্দ্র হতে পেরেছেন বিশ্বপথিক-রবীন্দ্রনাথের যথার্থ উত্তর সাধক এবং মানবসন্তান। অমিয় চক্রবর্তী স্বীকার করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের কাছে যা পেয়েছি তা আমার অন্তরের পাথেয়।

6 months ago
Rabidranath: একটি রাবীন্দ্রিক জার্নি ফিরে দেখা

সৌমেন সুর:  রবীন্দ্রনাথ জীবনের অনেকটা সময় বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে কাটিয়েছেন। এখানে তিনি বহু রচনা করেছেন- যেমন, কবিতা, গল্প এবং পত্রাবলী। কবির বহু রচনায় এই স্থানগুলোর বর্ণনা আমরা পাই। বাংলাদেশের এই জায়গাগুলোয় যেতে ভারত থেকে দুভাবে শিলাইদহ শাহজাদপুর ও পতিসরে যাওয়া যায়। প্রথমতঃ কলকাতা থেকে বেনাপোল যশোর হয়ে বাসে বা ট্রেনে কুষ্টিয়া। এই কুষ্টিয়ায় করুন রাত্রি যাপন। কুষ্টিয়ার ঠাকুরবাড়ি, লালনের আখড়া দেখে দিন। সকালবেলা অটোতে বা ছোট গাড়িতে করে শিলাইদহে কুঠিবাড়ি, কাছারি বাড়ি, পদ্মার ঘাটে ঘুরে আবার চলে আসুন কুষ্টিয়ায়। 

কুষ্টিয়া (ভেড়ামারা) থেকে ট্রেনে নাটোর হয়ে সান্তাহারে নেমে পাশের নওগাঁ শহরে রাত্রিযাপন। নওগাঁ থেকে পরদিন সকালে অটো বা ছোট গাড়িতে করে রানিবাঁধ হয়ে পতিসর যাওয়া যায়। তারপর নওগাঁ থেকে বাসে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ, সেখান থেকে আবার বাসে শাহজাদপুর। শাহজাদপুরে কুঠিবাড়ি ও মখদুম মসজিদ দেখে বাসে করে কুষ্টিয়ায় ফিরে আসা। আবার উল্টোদিকে কুষ্টিয়া থেকে বাসে প্রথমে শাহজাদপুর দেখে বগুড়ায় গিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারেন। বগুড়া থেকে বাসে রানীবাঁধ গিয়ে ছোট গাড়িতে করে পতিসর দেখে নেওয়া। ফেরার পথে নওগাঁয় অবস্থান করলে পাহাড়পুর দেখে নিতে পারেন। তারপর নওগাঁ বা বগুড়া থেকে সরাসরি বাসে কুষ্টিয়া হয়ে যশোর।

এই জার্নিটা যারা রবীন্দ্রপ্রেমী, তাদের সুবিধার্থে লিখে জানালাম। একবার পৌঁছলে আপনার মনের দরজায় কবি কড়া নাড়বেই, এ আমি হলফ করে বলতে পারি। ভ্রমনপিপাসু যারা তাদের পক্ষে রবীন্দ্রনাথকে কাছে পাবেনই। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে রবীন্দ্রনাথের বহু সমৃতি জড়িয়ে আছে। এই স্থানে পৌঁছালেই আপনার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

                                                                                                                                                                                                               তথ্যঋণ-নিখিল দাস।

6 months ago


Rabindranath: এক সৃষ্টিশীল সাহিত্যের দরজায় আকাশচুম্বী রবীন্দ্রনাথ

সৌমেন সুর: বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব এক বিস্ময়কর ঘটনা। সাহিত্যে সবকিছু নতুন করে পাওয়ার আশায় যেন রবীন্দ্রনাথের প্রকাশ ঘটলো। উনি চিনিয়ে দিলেন গল্পে সংলাপের সন্নিবেশে শব্দের জাদুকাঠি। বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলা গদ্য ও বিহারীলাল চক্রবর্তীর বাংলা পদ্য যেন রবীন্দ্রনাথের কলমে পরিণত বয়সে পদার্পণ করলো।

শৈশবে বিশাল বারান্দা বিশিষ্ট বাড়ির অন্তঃপুরে বন্দী জীবন আর চার দেয়ালে বদ্ধ ক্লাসরুমের হাত থেকে মুক্তি পাবার পর, একের পর এক রবীন্দ্র প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে শুরু করলো। কখনো তিনি কবি, কখনো নাট্যকার, কখনো প্রাবন্ধিক, কখনো গল্পকার আবার কখনো তিনি সংগীত স্রষ্টা। তবে রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক উপলব্ধির মহোত্তম প্রকাশ তাঁর সঙ্গীতে। ভারতীয় মার্গ সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের মিলন ঘটিয়ে তিনি সংগীতে এক নতুন পথ সৃষ্টি করেন, যা পরবর্তীতে 'ভাঙা গান' নামে পরিচিতি পায়।

জমিদারি কাজে যখন শিলাইদহে কবি অবস্থান করেন, তখন বেশ কিছু বাউলের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এবং বাউল সম্প্রদায়ের গানের আধ্যাত্মিক চেতনা ও তার সাহিত্য কবির মনকে উত্তাল করে দেয়। লালন ফকিরের একটি গান 'আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে' গানটি কবিকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। এরপর কবি লালনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য ছটফট করতে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে লালনের সঙ্গে কবির সাক্ষাৎ হয়নি।

অন্যদিকে কবি চিঠি লিখতেন সযত্নে, চিঠিতে থাকতো গভীর অনুভূতি। তাঁর লেখা চিঠি অবশেষে পত্রসাহিত্য হয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। উপন্যাস লেখার বুননের থেকে কবি গল্পে অত্যন্ত বেশি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। পরিশীলিত ভাষা, পরিমার্জিত কাহিনীর বুনোট। সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ অজেয়। এক নতুন দিক নির্দেশ করে দিয়েছিলেন কবি। আধুনিকতাতেও তিনি পিছিয়ে নেই। চ্যালেঞ্জবশত লিখলেন ' শেষের কবিতা'। যে উপন্যাস মানুষের মনে এক বিশিষ্ট স্থান আদায় করে নেয়। সাহিত্যের দরজায় মহাকবি রবীন্দ্রনাথের অন্যতম একজন সৃষ্টিশীল প্রতিভাধর মানুষ হয়ে,  মানুষের মনে চিরকাল বিরাজ করে থাকতেন।

7 months ago
Rabindranath: রবীন্দ্রনাথ মহাপর্বতই বটে, যাঁর জন্ম-মৃত্যু সমান, অমর ও অনন্ত

সৌমেন সুর: আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মধ্যে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। কারণ রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক। কবি স্রষ্টার দৃষ্টি নিয়ে যা তিনি অনেক আগেই দেখে গিয়েছিলেন, আজ এতদিন পরে তা অবিশ্বাস্য ভাবে সত্য হয়ে উঠেছে। কবি বলেছেন, নিজেকে প্রাসঙ্গিক করো অন্য মানুষে, মানুষ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে বৃক্ষলতায়, নদী-পর্বত সমুদ্রে, গ্রহে-নক্ষত্রে, মহাবিশ্বে। মনে রেখো, ক্ষুদ্র অস্তিত্ব মানুষের জন্য নয়। তাই মহৎ হয়ে বাঁচো। আমরা যদি ভয়ের প্রতিক্রিয়ায় দুবেলা মরার আগে ভয়েই মরতে থাকি, তাহলে কবি বলেছেন, 'দুঃখ যদি না পাবে তো/ দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে?'

রবীন্দ্রনাথ যদি মহাপর্বত হন, তাহলে তাকে কতটুকু মাপতে পেরেছি? কজনই বা তার চূড়ায় উঠতে পেরেছি? রবীন্দ্রনাথ কখনও পুরোনো হবেন না। কারণ তিনি নিজেকে কখনও পুরনো হতে দেননি। 'শেষের কবিতা' উপন্যাসে নিজেই বলেছেন কবিদের পাঁচ বছরের বেশি বাঁচা উচিত নয়। কেন নয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, আবার নিজেকে নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- কবি কিভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সারা জীবন ধরে, এবং জীবনের অনেক পরেও। এমন একদিন আসতে পারে যেদিন কবিতার রবীন্দ্রনাথ, নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রসংগীতের রবীন্দ্রনাথকে মানুষ আলাদা আলাদা স্রষ্টা বলে ভাববে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ থাকবেন বহু ভাবে ছড়িয়ে। আমাদের কবি জীবনের প্রতিটা স্তরে কতভাবে কত কিছু চিন্তা করেছেন, যেমন শিক্ষার কত সমস্যার কথা, সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন তার ঋষিকল্প অভিজ্ঞতার প্রজ্ঞায়। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলা গল্পের অনেক বিবর্তন ঘটেছে। গল্পের রূপান্তর ঘটে গেছে অনেক, তবু আজও বাংলা ভাষায় এমন গল্প লেখা হয়। যা রবীন্দ্রযুগে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।

রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের কথা ভাবেননি। শিক্ষিত বাঙালি জীবনের রবীন্দ্রনাথ আজ এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যে ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছাই হোক, প্রতিদিন তাঁকে আমাদের স্মরণ করতে হয়। আসলে প্রতিদিন তার জন্ম। কোনদিনও তার মৃত্যু নেই। একটা ঠাকুরের বেদী চিরকাল মাটির সঙ্গে থাকবে গাঁথা, সে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। সবার প্রিয় রবি ঠাকুর। তাই পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ, দুটো তারিখই সমান। অমর, অনন্ত।

8 months ago


Swastika: 'রবি ঠাকুরকে একা ছেড়ে দিন', কবিগুরুর বেশে অনুপমকে দেখে বিরক্ত স্বস্তিকা!

কিছুদিন আগেই বলিউড বর্ষীয়ান নেতা অনুপম খের (Anupam Kher) ইনস্টাগ্রামে তাঁর এক ছবি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তাঁকে দেখা গিয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) সাজে। মাথায় পাকা চুল, একগাল দাঁড়ি ও কালো পোশাক, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফ্রেমে সেই ছবি তাক লাগিয়ে দেয় দর্শকদের। তাঁকে দেখে এই রব উঠেছিল যে, এ যেন অবিকল কবিগুরু। সমাজমাধ্যমে তাঁর এই রূপ দেখে প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই সাজে আপত্তি জানালেন টলিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি (Swastika Mukherjee)। নাম না করেই সমাজমাধ্যমে লিখলেন, 'রবি ঠাকুরকে একা ছেড়ে দিন।'

রবীন্দ্রনাথের সাজে সেজে ৮ জুলাই ইনস্টাগ্রামে অনুপম খের ছবি দিতেই হইহই পড়ে যায়। তিনি জানান, তিনি তাঁর কেরিয়ারের ৫৩৮ তম ছবিতে তিনি অভিনয় করতে চলেছেন বিশ্বকবির ভূমিকায়। বিস্তারিত তিনি পরে জানাবেন। কিন্তু এরপরেই ১০ জুলাই মধ্যরাতে স্বস্তিকা টুইটারে লেখেন, 'কাউকেই রবি ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করা উচিত নয়। তাঁকে একা ছেড়ে দিন।'

আর এই পোস্টের পরেই অনেক বাঙালি তাঁর কথাতে সহমত হয়েছেন। নেটিজেনদের মতে, 'একজন বাঙালি হিসাবে কবিগুরুকে আমরা যতটা চিনি, ততটা কেউ চেনেন না। ফলে এনাকে নিয়ে সিনেমা না করাই উচিত।' তবে স্বস্তিকার এই পোস্টে অনুপম খেরের নাম না থাকলেও কাকে উদ্দেশ্য করে এই কথা, তা প্রায় প্রত্যেকেরই জানা।

9 months ago
Tagore: এ যেন হুবহু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! কবিগুরুর সাজে এই বলি অভিনেতাকে চিনতে পারলেন?

চোখের সামনে এ যেন কবিগুরুকেই দেখতে পাচ্ছি! মাথায় সাদা চুল, গাল ভর্তি পাকা দাড়ি, গায়ে কালো পোশাক, সাদা-কালো ফ্রেমে উজ্জ্বল কবিগুরু। শুক্রবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) সাজে একজনের ছবি দেখা গিয়েছে, যা নিয়ে হইহই পড়ে যায়। সবারই প্রশ্ন, 'কে ইনি?' তবে অবশেষে সমস্ত ব্যাপার খোলসা হল। দেখা গিয়েছে, এই ছবি শেয়ার করেছেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খের (Anupam Kher)। আর এই ছবিতে অনুপম খেরই রবীন্দ্রনাথের বেশ-ভূষায় সেজেছেন। জানা গিয়েছে, তিনি তাঁর আসন্ন ছবিতে রবীন্দ্রনাথের চরিত্রেই অভিনয় করবেন।

View this post on Instagram

A post shared by Anupam Kher (@anupampkher)

শুক্রবার অনুপম খের তাঁর ইনস্টাগ্রামে এই ছবি শেয়ার করেছেন। যেখানে তাঁকে দেখা গিয়েছে রবীন্দ্রনাথের সাজে। চরিত্রের প্রয়োজনে তারকাদের বিভিন্ন সাজে সাজতে হয়। কখনও কখনও এমনও হয় যে, তারকাদের এমনই সাজ দেওয়া হয় যে, তাঁদের চেনাই দায় হয়ে পড়ে। তেমনটাই হয়েছে অনুপম খেরের এই ছবির সঙ্গেও। এই ছবির ক্যাপশনে অনুপম ঘোষণা করেন তিনি আগামী ছবিতে ‘গুরুদেব’-এর ভূমিকায় অভিনয় করতে চলেছেন। 

প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত ৫০০র বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। কেরিয়ারের ৫৩৮ তম ছবিতে তিনি অভিনয় করতে চলেছেন বিশ্বকবির ভূমিকায়। এই খবরে বিশেষ ভাবে খুশি অনুপমের বাঙালি অনুরাগীরা। তবে তাঁর এই সিনেমার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি ক্যাপশনে জানিয়েছেন, 'আমার ৫৩৮তম প্রজেক্টে গুরুদেবের ভূমিকায় অভিনয় করতে পেরে আমি গর্বিত। সঠিক সময়ে সবটা জানাব।' ফলে তাঁকে রবীন্দ্রনাথে চরিত্রে দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা।

9 months ago
Rabindranath: স্বপ্ন-ব্যথা-সৃষ্টি ও রবীন্দ্রনাথ

সৌমেন সুরঃ কলকাতায় সেই সময় হঠাত্ এক মারণ ব্যাধি উপস্থিত। প্লেগ। তখন এই রোগের ওষুধ বেরোয়নি। বহু লোক মারা যায়। এমন এক সংকট মুহুর্তে মানুষের সেবায় নামলেন ভগিনী নিবেদিতা। রবীন্দনাথও নিবেদিতার পাশে দাঁড়ালেন। দিনরাত এক করে কাজে ব্যাপৃত থাকলেন দুজনেই। এই মানবিক কাজের মধ্যে কবির লেখালেখি বন্ধ হয়নি--ক্ষণিকা, কল্পনা, কথা, কাহিনী প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। মানুষের জন্য লেখায় কবির একটা দায়বদ্ধতা ছিল। সৃষ্টির ফোরামে কখনো তিনি কর্মে ফাঁকি দেননি। এতকিছুর পরও কবির মনে হতে লাগলো কিছুই তো হলো না। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তে থাকে তাঁর। বাবার সঙ্গে তাঁর শান্তিনিকেতনে ঘোরা। সেই সবুজ প্রান্তর, লাল মাটি, ধানক্ষেত, গাছগাছালি সবকিছু তাঁকে অসীম এক আনন্দনিকেতনে পৌছে দিয়েছিল। সেই শান্তিনিকেতন ছবির মতো ভেসে উঠলো আবার। বড় নিরিবিলি, বড় শান্তির জায়গা। 

এই শান্তিনিকেতনে কবি চাইলেন অন্য একটা কিছু করতে। এমনকিছু যা সারা বিশ্ব মনে রাখবে। ১৯০১ সালে কবি এখানে প্রতিষ্ঠা করলেন মানুষ গড়ার কারিগর। প্রতিষ্ঠা হলো বিদ্যালয়। বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম। কিন্তু শুধু আশ্রম গড়লেই তো হবে না--এর পেছনে বিশাল খরচ। সেই অর্থ কোথায়! অবশেষে পুরীর সমুদ্রতটে সুন্দর বাড়ি, বই ঠাসা লাইব্রেরী, সব বিক্রি করে করে তাতেও কোলালো না। শেষটায় স্ত্রী মৃণালিনী দেবী পাশে দাঁড়ালেন। সমস্ত গহনা তুলে দিলেন কবির হাতে। এছাড়াও নিতে হলো পৈতৃক জমিদারির আয়। এবার কবির স্বপ্ন সার্থকের পথে এগিয়ে চললো। ছাত্রদের লেখাপড়া শুধু নয়, গান শেখানো, খেলাধূলা, সৃজনে উত্সাহ কোনো কিছু বাদ গেল না। 

একদিকে কবির স্বপ্নের কূল গড়তে লাগলো, অন্যদিকে কবির কূল ভাঙতে লাগলো। ছাত্রদের খাওয়ানো, স্নান করানো, ঘুম পাড়ানো, রান্না করা, এক অমানুসিক পরিশ্রমে কবির স্ত্রী অসুখে পড়ে গেলেন। মাত্র এক বছর বাদ ১৯০২ সালে মৃণালিনী দেবী মারা গেলেন। মা-হারা ছোট্ট শমীন্দ্রর বয়স তখন আট। তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য আলমোড়ায় বসে রচনা করতে লাগলেন একের পর এক কবিতা। তৈরি হলো 'শিশু' কাব্যগ্রন্থ। যাতে সব লেখাই মাকে ঘিরে। কিন্তু আবার পতন ঘটলো। মাত্র ১১ বছর বয়সে শমীন্দ্র মারা গেল। কবি ভীষণ ব্যথা পেয়েছিলেন শমীন্দ্রের মৃত্যুতে। কবির মন পুড়তে পুড়তে অন্যদিকে তৈরি হতে থাকে লেখা ও গান। যা আমাদের চিরকালীন সম্পদ হয়ে, ধ্রুবতারার মতো বিরাজ করছে।    

10 months ago


Special story: মানুষের পাশে রবীন্দ্রনাথ

সৌমেন সুর: ১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সাল। প্রাথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। সারা পৃথিবী তঠস্থ হয়ে উঠল। চারিদিকে আগুন। মূল্যবোধের অবক্ষয়। সম্পদ ধ্বংস। জলে স্থলে শত্রু আর শত্রু। প্রচণ্ড হিংসায় উন্মত্ত হয়ে উঠল যুদ্ধের সেনাবাহিনী। চারিদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। রক্তস্রোত গড়িয়ে এলো প্রাচ্যের মাটিতে। কবির মনন ও কলম ধিকৃত হয়ে উঠল মানবতার অপমানে। রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'বিশ্বের পাপের যে মূর্তি আজ রক্তবর্ণে দেখা দিয়েছে, সেই বিশ্বপাপকে দূর করো, বিনাশ থেকে রক্ষা করো।' কিন্তু একি, ধ্বংস যে মানে না। আসলে ধ্বংস চলছে তার নিয়মে। কবির কন্ঠে ধ্বনিত হোলো,'সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত সকলকেই করতে হবে।' এরপর ঘোর বিভীষিকার বছর এলো ১৯১৯ সালে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে। এক বৈশাখী উত্সবে জড়ো হয়েছিল প্রচুর মানুষ। শান্তিকামী-মানুষের সমাবেশ ছিল সেদিন। ইংরেজ শাসকের জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালানো হলো সেখানে। মরলো অধিকাংশ নিরপরাধ শিশু ও মহিলা। এই নারকীয় কাণ্ডের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল দেশ। কবি খবরটা শুনে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় ছুটে এলেন। কবি কিছুতেই এই হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি। 'নৈবেদ্য'তে তিনি লিখলেন, 'অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।' এরপর সারারাত ধরে এক ঐতিহাসিক চিঠি লিখলেন তখনকার ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডকে। দ্য স্টেটম্যান কাগজে সেই চিঠি পড়ে চমকে উঠল দেশবাসী ও সরকার। কবি সরাসরি 'নাইডহুড' উপাধি প্রত্যাখ্যানের দাবি করলেন। দেশের মানুষ তাঁর কাছে সবার আগে। মানুষই সব। এর চেয়ে বড় সম্মান আর কি হতে পারে। তিনি মানুষের পাশেই থাকবেন।   

10 months ago
Rabidranath: নাস্তিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (শেষপর্ব)

সৌমেন সুর: আশির দোরগোড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঐ বয়সে 'রবিবার' গল্পটি লেখেন। বিষয় নাস্তিকতা। গল্পের নায়ক অভীক। সে বৈদিক ব্রাহ্মন। পিতৃদত্ত অভয়াচরন নাম বদলে, এখন অভীককুমার। সনাতনী-আচারসর্বস্ব ঘেরা আচার ধর্মকেই আক্রমণ করে বসে নাস্তিক সন্তান অভীক কুমার। ফলে তাজ্যপুত্র হতে হলো তাঁকে। নাস্তিকতা অভীকের গর্বের। শাস্ত্রে নিষিদ্ধ পশু মাংস খাওয়ায় কেউ তাঁকে মুসলমান বললে অভীক বলে, মুসলমান কি নাস্তিকের চেয়ে বড়? এই অভীক কলেজের ছাত্রী বিভার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এবং বিভাকে ভালোবাসে। অভীক চায় বিভাকে বিয়ে করতে। কিন্তু অভীকের প্রতি অনুরক্ত হয়েও বিভার কোথাও যেন একটা বাধা ঝলকে ওঠে। সেটা তার পিতার শর্ত। পিতার মতে নাস্তিকরা হলো সমাজের অকল্যাণ। পিতা আর অভীক এই দুই মানুষের মাঝে পড়ে বিভা কি করবে তার কিনারা খুঁজে পায় না। বিভা দোটানায় পড়ে গুমড়ে ওঠে। আর অভীক, তার জাতের বালাই নেই। ব্রাহ্ম বিয়েতে তাঁর জাত যাবার ভয় নেই। তাই অভীক বলে, 'তুমি তো নাস্তিকের জাত মারতে পারো না, আমার ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব এইখানে।' 

দিনরাত ধর্ম নিয়ে খুনোখুনির দেশে সব ধর্মকে মেলাবার পূন্যব্রত নিয়েছে অভীক। সেই অভীক দূর্গাপুজোর চাঁদার টাকা অন্যায়ভাবে দিয়ে দেয় বিভার শিক্ষক অমরবাবুর বিলেত যাওয়ার জন্য। উদ্দেশ্য অঙ্ক কনফারেন্সে যোগ দেবার জন্য। অভীক বিভার মায়ের গয়না বেচতে দেয় না। বিভা এই ব্যাপার দেখে অভীককে প্রশ্ন করলে বলে, 'আমি নাস্তিক আমি বুঝি সত্যিকার পুজো কাকে বলে, ওরা ধর্মপ্রাণ মানুষ, ওরা কি বুঝবে?' এই কথায় আমাদের হৃদয় আর্দ্র করে ফেলে। এরপর বিভা তার মায়ের গয়না অভীকের কাছে রাখার দায়িত্ব দেয় তখন অভীক কপট প্রশ্ন করে, 'আমার লোভ কে সামলাবে?' এ কথার স্পষ্ট জবাব দেয় বিভা, 'তোমার নাস্তিক ধর্ম।' নাস্তিকীয় সততায় এমন পরম ভরসা সর্বত্র যুগিয়ছেন রবীন্দ্রনাথ। তথ্যঋণ-অরুনাভ মিশ্র                                         

10 months ago


Rabindranath: নাস্তিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুরঃ যে নাস্তি শব্দ থেকে নাস্তিক শব্দের ব্যুত্পত্তি তার তিনটে অর্থ হতে পারে-- যে ঈশ্বর মানে না, যে পরলোক মানে না এবং যে বেদের প্রামান্য মানে না। 

রবীন্দ্ররচনাবলিতে নাস্তিকতা শব্দটি এসেছে বহুবার। তিনি হয়ত ঈশ্বরদ্রোহী হিসেবে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। দেখা গেছে নাস্তিকদের প্রতি রবীন্দ্রমনন যেন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। নাস্তিকরা সমাজপতিদের শেখানো ধারণা অনুযায়ী নিন্দার পাত্র আর অকল্যাণের প্রতীক। ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বলে ঘৃণাও করেন অনেকে। এই নাস্তিকদের চরিত্রে কবি এঁকে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ কিছু মানবীয় গুণ। উন্নত করেছেন তাঁদের। পৌঁছে দিয়েছেন সামাজিক উচ্চতায়। 

রবীন্দ্রনাথের 'চতুরঙ্গ' গল্পে জ্যাঠামশাই জগমোহন চরিত্রটি সেকালের নাস্তিকের আদলে সাজানো। যখন এই চরিত্রটি পূর্ণরূপ পেলো তখন দেখা যায় মনুষ্যত্বের মাপকাঠিতে বিশাল উঁচুতে তাঁর স্থান। গল্পের চলনে দেখি, জগমোহন ঈশ্বরে অবিশ্বাশী, পাশাপাশি তাঁর ভাই হরিমোহনের ঈশ্বরে অবাধ বিশ্বাস। এদিকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মুখে যুক্তি বসিয়েছেন, "ঈশ্বর যদি থাকেন তবে আমার বুদ্ধি তারই দেওয়া, সেই বুদ্ধি বলছে ঈশ্বর নেই। অতএব ঈশ্বর বলছেন যে ঈশ্বর নেই।" এই জায়গা থেকে আস্তিক্য ধর্মকে ডুবিয়ে দেওয়াই জগমোহনের ধর্ম হয়ে ওঠে। আর সে নাস্তিক্য ধর্মের প্রধান অঙ্গ হয়ে ওঠে মানুষের ভালো করা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে খাওয়াবে এটা জগমোহনের মনে একবার স্থান পায়, সেটা ভাই হরিমোহনের কাছে ব্যক্ত করলে হরিমোহন আপত্তি জানায়। 

তখন জগমোহন বলে, 'তোমার ঠাকুরের ভোগ তুমি রোজ দিচ্ছ, আমি কিছু বলি না, আমার ঠাকুরের ভোগ আমি একদিন দেবো, এতে বাধা দিও না।' এই কথা শুনে হরিমোহনের ছেলে পুরন্দর হুমকি দিলে জগমোহন হাসি মুখে বলে, 'ওরে বাদর, আমার দেবতা যে কত বড় জাগ্রত তা তাঁর গায়ে হাত দিতে গেলেই বুঝবি, আমাকে কিছুই করতে হবে না।' এখানে দুই মনের দুই মানুষের 'আমার দেবতা' 'তোমার দেবতা' এবং কে কত বড় জাগ্রত, তা জানানোর ছলে আমরা একটা অর্থ খুঁজে পাই, বার্তা দেখতে পাই। (চলবে) তথ্যঋণ--অরুনাভ মিশ্র 

10 months ago
Special story: 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া'

সৌমেন সুর: প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরেছেন রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore)। পৃথিবীর যেখানেই গেছেন সেখানেই কবিকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দিয়েছে। অবশ্য ভ্রমণের কারণ ছিল, বিশ্বভারতী (Visva Bharati) গড়ে তোলবার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, আর একটা কারণ- বিশ্বের নীতি, মতবাদ নিজের অন্তরে গ্রহন কোরে তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা। এবং স্বদেশের আদর্শ, দর্শন পৌছে দিতেন বর্হি বিশ্বের কাছে। কবি বিশ্বাস করতেন, 'আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।' এইভাবেই কবি বিশ্বের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন এবং নামজাদা ব্যক্তিত্বের সাথে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। রম্যাঁ রলাঁ, বানার্ড শ, আইনস্টাইন অন্যদিকে স্বদেশের মহাত্মা গান্ধী, চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষ, ত্রিপুরার রাজা রাধাকিশোর মানিক্য সব বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। কবি অসংখ্য কাজে দেশের মানুষের কাজে ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন।

কাজের ভিড়ে বাচ্চারা তার কলম থেকে বাদ যাইনি। অসংখ্য কবিতা, ছড়া এবং শিশুপাঠ্য বই 'সহজ পাঠ' লিখেছেন। ১৯৩০ সালে কবি তখন অসুস্থ, ঠিক হলো স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য দার্জিলিং যাবেন। ১৯৩১ সালে হিজলী কান্ডে দার্জিলিং যাওয়া বন্ধ করলেন। হিজলী ডিটেনশন ক্যাম্পে দুজন বন্দি মারা যায়। সেই প্রতিবাদে ময়দানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন রবীন্দ্রনাথ। পরাধীন দেশের অত্যাচারিত বঞ্চিত মানুষদের জন্য তার ভাষা গর্জে উঠেছে কবিতায়, প্রবন্ধে ও নানাবিধ রচনায়। রবীন্দ্রনাথ কবি, মহাকবি। রবীন্দ্রমালার মধ্যে আছে নানা রঙের নিখুঁত ফুল। সেগুলি হল নানা রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ, গায়ক রবীন্দ্রনাথ, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। অন্যদিকে তিনি সংগঠক, শিক্ষক, সমাজসেবী, বক্তা, মানুষের নেতা। রবীন্দ্রনাথ আমাদেরই লোক হলেও বিশ্বমানবতা জুড়ে আছে তার কর্মে, তার সৃষ্টিতে। 

10 months ago
Special: অগ্রজের রথের রশি নবীন সারথির হাতে

সৌমেন সুর: চারদেয়ালের গণ্ডী কখনো কবিকে আটকে রাখতে পারে! কখনই না। আসলে কবি হওয়ার জন্যই তাঁর জন্ম। তাই ক্লাসরুমের মাপা শাসন তাঁকে স্বস্তি দেয়নি। সে কি বন্দীশালায় দিন কাটাতে পারে! তাঁর মন প্রকৃতির সবুজ সমারোহে ঘুরতে থাকে। প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্রে তাঁর ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে। এহেন অবস্থায় তাঁকে কি বেঁধে রাখা যায়! সে যে সুদূরের পিয়াসী। 

রবীন্দ্রনাথ তখন নেহাতই যুবক। ইউরোপ ভ্রমণ থেকে ফিরেছেন দেশে। সঙ্গে করে নিয়ে এলেন প্রচলিত আইরিশ ও স্কটিশ লোকগানের 'মেঠো' সুর। এই সুর কবির মনপ্রাণ ভরিয়ে দিয়েছে। বয়স তখন কবির, মাত্র ১৯। ইউরোপ থেকে ফিরে এসে, মুক্তঝরা মনের অন্দরে একমুঠো সতেজতা নিয়ে লিখে ফেললেন, দুটি গীতিনাট্য-- 'বাল্মীকি প্রতিভা', 'কালমৃগয়া'। বাল্মীকি প্রতিভায় ও কালমৃগয়ায় রবীন্দ্রনাথ অভিনয় করেন। তাঁকে দেখতে বড় ভালো লাগছিল। রবীন্দ্রনাথ বাল্মীকি ও অন্ধমুনির চরিত্রে অভিনয় করেন। অত্যন্ত সাবলীল অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নেন। দর্শকদের মধ্যে সেদিন বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পীদের মনে কোনো নতুন কিছু করার বাসনায় একটা অস্থিরতা থাকে। সেই অস্থিরতা রবীন্দ্রনাথের মনে। কারণ নিয়ম শৃংখলার বেড়া দিয়ে তাঁকে বাঁধতে গেলেই, তিনি সেই বেড়া অতিক্রম করে বেরিয়ে গিয়েছেন। অতিক্রম করে এবার রবীন্দ্রনাথ কিছুদিনের জন্য মুসৌরিতে বাবার কাছে চলে গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ভারতী পত্রিকায় লিখলেন উপন্যাস 'বউ ঠাকুরানীর হাট'। তরুণ কবির নাম ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল থেকে দেশের বর্হিমহলে ছড়িয়ে পড়লো কবির নাম। ১৮৮২ সালে প্রাকশিত হয় 'সন্ধ্যাসংগীত'। এটা পড়ে বঙ্কিমচন্দ্র অত্যন্ত অভিভূত হয়ে গেছিলেন। পুরস্কার স্বরূপ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর গলার মালা খুলে রবীন্দ্রনাথের গলায় পরিয়ে দেন। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স মাত্র একুশ বছর। এ যেন অগ্রজের হাত থেকে রথের রশি নবীন সারথির হাতে। যেন মিলনমেলায় দুই মনিষীর অন্তরঙ্গ প্রকাশ।      

10 months ago


Special story: " মুক্তির আলোয় মুক্ত রবি "

সৌমেন সুরঃ এগারো বছর ন' মাস বয়সে ১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) উপনয়ন হয়। তাঁর পরিবার ব্রাক্ষ্ম হলেও আদি ব্রাক্ষ্মসমাজে উপনয়নের রীতি আছে। যথাসময়ে রবীন্দ্রনাথের পৈতে হওয়ায় তাঁকে নেড়া হতে হয়। এই অবস্থায় স্কুলে গেলে, বিশেষ করে ফিরিঙ্গি স্কুলে-তারা ক্ষেপাতে ছাড়বে না। স্কুল সে যাবে না-মনে মনে এই পণ করলো। ঠিক এইসময় পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (Debendranath Tagore) রবির অবস্থা বুঝে তাঁকে হিমালয় ভ্রমণে নিয়ে যাবেন ভাবছেন। 

এই প্রস্তাবে রবি কি রাজী? রবি এই প্রস্তাব শুনে খুশীতে ফেটে পড়ে। চোখ বুজে রাজী হয়ে যায়। পিতার সঙ্গে এই প্রথম ভ্রমন। চারদেওয়ালকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে নিজেকে যুক্ত করতে চলেছে। স্কুল আর বাড়ির চৌহদ্দির মধ্য়ে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন রবি। যাই হোক বীরভূম জেলায় বোলপুর গ্রামে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েক বিঘে জমি কিনেছিলেন। সেই জমির ওপর একটা বাড়ি বানিয়েছিলেন। বাড়িটার নাম দিয়েছিলেন 'শান্তিনিকেতন'। হিমালয় যাবার আগে এখানে কয়েক দিনের জন্য় অবস্থান হলো। চারদিকে ধূ ধূ প্রান্তরে সবুজ শ্য়ামলীমার নৈসর্গিক দৃশ্য় রবিকে বিমোহিত করে দেয়। দূরে তালবনের সারি। আঁকাবাকা লাল মাটির মেঠো পথ। রবির খুব ভাল লাগতে থাকে জায়গাটা। এক একাই ঘুরতে থাকেন। 

মুক্তির আনন্দে সে বিহ্বল। কলকাতার লোকজনের কোলাহল থেকে নিঃসীম শান্তিতে এই শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের ভীষন ভাল লেগে গেল। এতদিন পিতা ছিলেন দূরের মানুষ। এখন বরফে ঢাকা পাহাড় তাঁকে অন্য় জগতে নিয়ে যায়। পিতার সাহচর্যে আজ রবীন্দ্রনাথ যেন প্রকৃতি প্রেমিক। ডালহৌসির দিগন্ত বিস্মৃত মোহময় দৃশ্য়ের মধ্য়ে পিতা তাকে একটি একটি করে নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথ নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে ডুবে যায়। পিতার কাছে রোজ সকালে জ্য়োর্তিবিদ্য়া অঙ্ক, ইতিহাস, সংস্কৃত শিখতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে এক নতুন দিগন্তের পথ খুলে যায়। পিতার কাছে অনেক কিছু শিখে জ্য়োতিষ বিদ্য়ার ইংরেজী বই থেকে বাংলা অনুবাদ কোরে একটা প্রবন্ধ লিখে ফেলেন। লেখাটি তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ছাপা হয়। সম্ভবত এটিই তার প্রথম রচনা। মুক্তির আলোয় রবীন্দ্রনাথ মুক্ত হয়ে বিভিন্ন রচনার জন্য় তৈরী হন। পরবর্তীকালে আমরা সমৃদ্ধ হই তাঁর রচনাবলীতে। 

10 months ago
Rabindranath: তবু মনে রেখো, কিশোর ভাবনায় রবিঠাকুর

প্রসূন গুপ্তঃ প্রতি বছরই দুই বাংলায় আন্তরিক ভাবে পালিত হয় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। আজকাল আর কেউ ঠিক এ বছরে কত বয়স হলো তার হিসাব রাখে না। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় উৎসব। পাড়ায় কিংবা হল ভাড়া করে। স্কুল-কলেজ ছুটি থাকলেও সকালে কবি প্রণাম সেরে ফেলা হয়। যদিও আজকের পশ্চিমবঙ্গের তরুণ সমাজ কতটা উৎসবে সামিল হয় বা নেহাত রবি ঠাকুরকে নিয়ে সামান্যতম ভাবনা থাকে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভাবাবে কে?

বাম জমানাতে কমিউনিস্টরা আলাদা করে রবীন্দ্র উৎসব পালন না করলেও তাদের সরকার পালন করেছে। রবীন্দ্র সদন বা রবীন্দ্র ভারতীতে। জ্যোতিবাবুর ভিন্ন উৎসাহ বা আগ্রহ না থাকলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মননে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মহাপুরুষ। সুভাষ চক্রবর্তী ছিলেন সবথেকে উৎসাহী। তিনি মাঝেমধ্যেই চলে যেতেন বোলপুরে।

অবিশ্যি মমতা সরকার আসার পর রবীন্দ্র বন্দনা হয়ে গেল বাধ্যতামূলক। সমস্ত নেতাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হলো রবীন্দ্র উৎসব পালন করতেই হবে। মমতার প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রবল ভাবে নিয়ে আসা হলো রবি ঠাকুরকে। রাস্তার ক্রসিং-এ বাজানো হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত। এতে করে যুব মহল কতটা রবীন্দ্রনাথ কে গ্রহণ করলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরাই যদিও পাত্তা দেন নি মমতা। কিন্তু যুব মহলের হাতে এখন মুঠো ফোন, তারা কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে নিশ্চিত রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনে কি?

পাশাপাশি ওপার বাংলা। বাংলাদেশ। একটা দেশের জন্ম হলো বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে। তাদের কাছে মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ব্যান করেছিল পাকিস্তানের সামরিক শাষক আয়ূব খান, তারপরেই জ্বলে উঠেছিল বাঙালি সমাজ। শুরু হয়েছিল আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা। কাজেই ওদেশের মানুষের রক্তে রন্ধ্রে অনুতে পরমাণুতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ। রাষ্ট্রীয় চাপের প্রয়োজন হয় না। কয়েক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে কবি প্রণাম। এই প্রবল গরমকে আমল না দিয়ে প্রকাশ্য পথে গান গাইতে চলেছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, যার কোনও ঠিকানা নেই থাকবেই বা কেন সমস্ত বাংলাদেশটাই তো রবীন্দ্রনাথের।

কবি প্রণাম।।

11 months ago