বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে শুনানি ছিল নিয়োগ মামলার দুই মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। সেই মামলায় পার্থ এবং সুজয় দু’জনের জামিন চেয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন রাজ্যের এজি। রাজ্যের এজির সওয়ালে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি। রাজ্যের প্রতিনিধি কেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করছেন রাজ্যের এজি কিশোর দত্তের কাছে জানতে চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে অনুমতি আছে? তারপরেই বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন রাজ্যের অনুমতি পত্র ছাড়া সওয়াল শোনা সম্ভব নয়। যার জেরে পিছিয়ে গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের জামিন মামলার শুনানি।
উল্লেখ্য, রাজ্যের এজি পদে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে থেকেই পার্থ এবং সুজয়ের জামিনের মামলা হাইকোর্টে লড়ছেন কিশোর দত্ত। সেই মামলা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এই আবহেই রাজ্যের নতুন এজি পদে দায়িত্ব নেন কিশোর। তারপরে বুধবার পার্থ এবং সুজয়ের জামিনের শুনানি পড়ে। নিজের হাতে থাকা পুরোনো মামলা নিজেই লড়তে এসেছিলেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। কিন্তু সওয়াল করতে এসেই বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। এর পরেই সময় চান রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত। রাজ্যের অনুমতি নিয়ে সওয়ালে অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি। বিচারপতি জানান, রাজ্য যদি অনুমতি দেয়, তবে আদালতের কোনও অসুবিধা নেই।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পার্থের জামিনের মামলার শুনানি হবে। সুজয়ের মামলাটির পরবর্তী শুনানি ৬ ফেব্রুয়ারি।
রাজ্যের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। সোমবার আদালতে শিক্ষা দুর্নীতির চারটি মামলার তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিট চার্জশিটেই নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এছাড়াও পার্থর প্রাক্তন সচিব সুকান্ত আচার্য (ডব্লুবিসিএস), এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শর্মিলা মিত্র'র নাম রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সিবিআই সূত্র জানা গিয়েছে, নবম-দশম, একাদশ - দ্বাদশ, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। এসএসসির একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এদিন পেশ করা চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন কর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য, ওএমআর শিট প্রস্তুতকারক সংস্থা নাইসার কর্তা পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল, এজেন্ট প্রসন্ন রায়, প্রদীপ সিং, প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী, অরুণ মাইতি, অশোক মাইতি।
নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পেশ করা চূড়ান্ত চার্জশিটে নতুন অভিযুক্তর তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র প্রাক্তন আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ, নাইসা, পুনীত কুমার, পঙ্কজ বনশাল। এমনকি অভিযুক্ত হিসেবে কয়েকজন শিক্ষকের নামও রয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সৌমিত্র ঘোষ, সুবীর ঘোষ, দিলীপ ভৌমিক-এর নাম আছে। এসএসসির গ্রুপ ‘সি’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এই মামলায় আগেই দু’দফায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিবিআই সূত্রে আরও খবর, চার্জশিটে নাম রয়েছে এসএসসির প্রাক্তন আধিকারিক পর্ণা বসু-রও।
'সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি না। আমি মরে গেলে বিচার করবেন কি করে?' আদালতে এসে জেলের চিকিৎসা নিয়ে এমনিই দাবি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন বিচারপতি।
মঙ্গলবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছিল। সেখানেই সশরীরে হাজির করানো হয় পার্থকে। এজলাসে তাঁর আইনজীবী বিচারককে নিজের মক্কেলের অসুস্থতার কথা যখন বলছিলেন, তখনই নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়ান পার্থ। হাত জোড় করে বিচারককে জানান নিজের শরীর খারাপের কথা। বিচারকের উদ্দেশে পার্থ বলেন, ‘স্যার একটা কথা বলতে চাই। আমার অসুস্থতার কথা জেল সুপার লিখে দিচ্ছেন হাসপাতালক কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতাল ১০ দিন পর রিপোর্ট ব্যাক করছে (ফেরত পাঠাচ্ছে)। এক জন আক্রান্ত হবেন, তার ১০ দিন পর এসে চিকিৎসক দেখবেন! দেখুন একটু।’
জবাবে বিচারক জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘আপনি প্রথম জানালেন। দেখছি ব্যাপারটা।’ পার্থ এর পরে আরও জোরালো ভাবে আর্জি জানান। তিনি বিচারকের সামনে হাত জোড় করে বলেন, ‘‘দেখুন স্যর! মরে গেলে আর বিচার করবেন কী করে? স্যর, ৩০০ দিনের উপর হয়ে গিয়েছে।’’ এর পরে বিচারক বলেন, 'ঠিক আছে।'
বৃহস্পতিবার আলিপুর সিবিআই (CBI) আদালতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chaterjee) পেশ করা হয়েছে। প্রথম পক্ষের সওয়াল জবাবের পর, পার্থ বিচারককে বলেন, 'আপনি আগের দিন বলেছিলেন ৫ মিনিট সময় দেবেন।' এরপর বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিচারক কথা বলার অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়েই আদালতে পার্থ বলেন, '৮ মাস অন্ধকারে আছি। বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আমার বিশ্বাস যাই ঘটুক না কেন সত্য একদিন প্রকাশিত হবে। কিন্তু সেটা কতদিন? আমি মন্ত্রী তাই আমার অপরাধ? স্যার প্রাইমাফেসি মানে কি?' বিচারককে প্রশ্ন করেন পার্থ।
তিনি বিচারকে আরও বলেন, ' যা প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে। আমার ৭০ বছর বয়স। আমার বিরুদ্ধে থানায় কোনো ডাইরি নেই। বিরোধী নেতা থাকাকালীন আমার বিরুদ্ধে শাসককুল কিছু বলতে পারেনি। আমি কোথায় পালিয়ে যাবো স্যার? আমার মামা সাহিত্যিক। বংশপরম্পরা আছে। আমি আমার জীবদশায় এই বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা জানিনা।' এরপর বিচারক বলেন, 'প্রাইমাফেসি মানে আপাত গ্রাহ্য।'
এরপরে পার্থ বলেন, 'আপাত গ্রাহ্য ভাবে কতদিন চলবে? আমার আপনার উপর আস্থা আছে। আমি অন্ধকারে বসে আছি। আমি নিয়োগকর্তা নই। বোর্ড দ্বারা পরিচালিত সবাই। এটাই আমার বিনীত নিবেদন।' পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বেরিয়ে, সাংবাদিকদের বলেন, 'যাঁরা নিজেরা কালিমালিপ্ত, তাঁরা আমায় কী কালিমালিপ্ত করবে? আমি দলের সঙ্গে আছি আছি।'