
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের মামলায় নয়া তথ্য পেশ ইডি-র আইনজীবীর। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে ইডি-র আইনজীবীর দাবি,পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতোই মানিক ভট্টাচার্যেরও রয়েছে একটি স্কুল। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর সওয়ালকে মান্যতা দিতে নারাজ অভিযুক্তের আইনজীবী। যে স্কুলের প্রসঙ্গ আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে, সেই স্কুল ১০০ বছরের পুরনো। সাফ জানালেন মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী। আদালত সূত্রে খবর, ২৭ সেপ্টেম্বর হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এদিন আদালতে বিযয়টি খতিয়ে দেখতে ও তদন্তের গতি বাড়াতে শুনানির জন্য আরও ৩ সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়ে ইডি। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এর আগেও তদন্তের স্বার্থে দু'সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু আদৌ অগ্রগতি কি হয়েছে মামলার? জবাব চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। অন্যদিকে, আদালতে জামিন মামলায় অভিযুক্ত স্বয়ং উপস্থিত থাকার আর্জি জানিয়েও মিলল না কোনও সদুত্তর। মানিক ভট্টাচার্যের এই আর্জিকে আমল দিতে নারাজ বিচারপতি। এই মুহূর্তে মামলার শুনানিতে ধৃতের উপস্থিত থাকার কোনও আবশ্যকতা নেই। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের পরই পোস্টিং দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছে মানিকের। প্রকাশ্যে এসেছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এবার তদন্তে উঠে এল স্কুলের মালিকানার ঘটনা। তবে কি পুজোর আগেই হবে মানিক রহস্যের পর্দাফাঁস? ক্রমশ জোড়ালো হচ্ছে প্রশ্ন।
কলকাতায় নামকরা যে পুজোগুলো হয় তার মধ্যে অন্যতম বড় পুজো নাকতলা উদয়ন সংঘ। ওই পুজো কমিটির মধ্যে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে জেলে বন্দি রয়েছেন। ফলে স্বভাবিকভাবে চলতি বছরের পুজো কমিটি থেকে নাম বাদ গেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এবিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে আবেগে ভাসলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। মান্না দে-র গানের লাইনে জবাব দেন তিনি। তাঁর কথায়, পাথরে নাম লিখলে ক্ষয়ে যেতে পারে, হৃদয়ে নাম লিখলে রয়ে যাবে।
চলতি বছর থেকে নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোয় নাম এসেছে অরূপ বিশ্বাসের। এবিষয়ে পার্থবাবুর জবাব, অরূপ অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মত তাঁর।
চাকরি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তারপর থেকে জেলেই রয়েছেন তিনি। জেলে যাওয়ার পর থেকে এক এক করে ক্ষমতা কমানো হয়েছে। এবার পুজো কমিটি থেকেও নাম বাদ গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
পুজোতে কোথায় থাকবেন তিনি ? জেলে নাকি জেলের বাইরে। বুধবার তার সিদ্ধান্ত হল না। বরং আরও একমাস পর এই ব্যাপারে শুনানি হবে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, আরও একটা পুজো হয়তো জেলেই কাটাতে চলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
জামিনের আবেদন চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতির এজালাসে নাকি মামলাও উঠেছিল। কিন্তু বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন।
হিসাব বলছে, ১৯ তারিখ থেকে পুজো শুরু। তার আগে জামি চেয়ে এদিন হাই কোর্টে গিয়েছিলেন পার্থর আইনজীবীরা। কারণ, এর আগে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাস থেকেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়েছেন আর এক অভিযুক্ত মানিক ভট্টচার্যের স্ত্রী। যদিও পার্থর ক্ষেত্রে তা কাজে লাগলো না। ইতিমধ্যেই ১৩ মাস জেল খাটা হয়ে গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গত বছরের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পার্থর দাবি, তাঁর সঙ্গে দুর্নীতির যোগ রয়েছে, তা এখনও প্রমাণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও শোভনকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
আদালত চত্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। যদিও পার্থর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি তাঁকে। বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রায় ৪৫ বছরের পুরনো সহকর্মী পার্থ ও শোভন। শনিবার ব্যক্তিগত কাজে আলিপুর আদালতে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই হাজির করানো হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শোভনের সঙ্গে ছিলেন বান্ধবী বৈশাখি। পার্থকে নিয়ে আসার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শোভন।
দেখা না করতে পেরে ফিরে এসে শোভন বলেন, 'পার্থর সঙ্গে দেখা না করতে যাওয়া অপরাধ!' তারপরেই তিনি স্পষ্ট জানান, অভিযুক্ত এবং দোষী প্রমাণের মধ্যে ফারাক রয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী,পশ্চিমবঙ্গ সরকার): সংস্কৃতি তো জীবনের অঙ্গ, থাকতেই হবে কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্বে আসার পর সময় কোথায়? সত্যি বলতে কি, আমরা ওপার বাংলার মানুষ। ওই বাংলায় আমার পরিবারের নিয়মিত অবসরে গানবাজনা নাটক থাকতোই। আমি এদিকের হলেও পরিবারের ছোঁয়া তো ছিলই। ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আবার ফুটবল খেলা পাগল ছিলাম। এই যে গতকাল আমার প্রিয় দল ইস্টবেঙ্গল শেষ মুহূর্তে জার্মানের মতো জ্বলে উঠে দু গোল শোধ করে টাই-ব্রেকে জিতল তাতে শেষ মুহূর্তে যেন ছোটবেলায় চলে গিয়েছিলাম।
নাটক চিরকালই আমার প্রিয় বিষয়। নৈহাটী জানবেন এমন একটা ছোট্ট শহর যেখানে যুগে যুগে শিল্পী সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে কাজেই আমি কি ব্যতিক্রম হতে পারি। সিনেমা বা ক্যামেরার সামনে যেতে হবে এমন স্বপ্ন দেখিনি। পরে ছাত্র রাজনীতি থেকে মূল রাজনীতিতে। কংগ্রেস করতাম পরে তৃণমূল সংগঠিত হওয়ার পরে দিদির সাথেই সৈনিক হিসাবে কাজ করে গিয়েছি। আমি নিজেকে আজকেও কেউকেটা মন্ত্রী ইত্যাদি ভাবি না। আমার উপর দায়িত্ব যা বর্তিয়েছে চেষ্টা করেছি তা পালন করার।
বিধায়ক ও চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আমার ভাতৃসম। আমাকে জানালেন যে তোমাকে আমার পরের ছবিতে একটা কাজ করতে হবে। আমি বলেছিলাম যে , সময় কোথায়। রাজ্ বললেন যে , ও ঠিক খুঁজে নেওয়া যাবে। রাজি হলাম। মূল চরিত্র কিছু নয়। সুন্দরবনের এক পুলিশ অফিসারের চরিত্র, যার কিনা নিজের উপরেই ভরসা নেই। একদিকে ভীতু প্রকৃতির আবার দুস্টুবুদ্ধি প্রবল। শেষে এক কড়া বস আসায় নিজেদের সমঝে নিতে হল এবং তারপর ... । নাহ সিএনের দর্শকদের আর বলবো না , দেখে নিন। তা ওই ছবিতে মুদ্রাদোষের মতো আমার একটা সংলাপ ছিল " হ্যালো স্যার " । কি জানি মন্ত্রী বলেই কি না সাংঘাতিক হিট করে গেলো ওই হ্যালো স্যার। এবারে বিধানসভায় এসেছি ২৮ অগাস্ট অমনি দুস্টু সাংবাদিদের আওয়াজ শুরু হলো হ্যালো স্যার। প্রায় সবাই। দলের এবং বিরোধীদের মুখেও হ্যালো স্যার। কি যন্ত্রনা।
শেষে মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে এলো বিষয়টি। আবার প্রলয়। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন , তিনি শুনেছেন এই ছবির কথা এবং খুবই খুশি হয়েছেন। বললেন যে , দলের কেউ যদি শিল্প সংস্কৃতিতে যোগ দিয়ে কাজ করতে পারে তবে খুব ভালো কথা। আমি দিদিকে প্রণাম করলাম, তিনিও আশীর্বাদ করলেন। এর থেকে সেরা পুরস্কার কি হতে পারে। তবে নিয়মিত মোটেই ওই জগতে যাচ্ছি না, সময় কোথায় কিন্তু সুযোগ পেলে নাটক করবো নিশ্চিত। আমার সংগীত শিল্পী স্ত্রীর ইচ্ছাও তাই, একই ইচ্ছা কন্যারও। সিএনের পড়ুয়াদের রাখির শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।
অনুলিখন: প্রসূন গুপ্ত
প্রলয় সিনেমা ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর এই সিনেমার দ্বিতীয় ইনিংস 'আবার প্রলয়' (Abar Proloy) নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ওটিটির পর্দায় সিরিজটি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন দর্শক। সুন্দরবনের একটি থানার পুলিস ইন্সপেক্টর 'করালিবাবুর' চরিত্রে এই অভিনেতাকে চেনা চেনা লাগছে, ওঁ পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী না! হ্যাঁ তিনিই রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick)। যে কটি দৃশ্যে তাঁকে দেখা গিয়েছে, জমিয়ে দিয়েছিলেন উপস্থিতি। সিরিজে তাঁর মুখে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংলাপ 'হ্যালো স্যার'। মন্ত্রীমশাইকে এখন অনেকেই 'হ্যালো স্যার' বলে সম্বোধন করছেন। দর্শকেরা যাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, তাঁর তারিফ করলেন এবার মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজের ঘরে সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তখনই সেই ঘরে প্রবেশ করেন সেচমন্ত্রী। তাঁকে দেখে যথারীতি সাংবাদিকরা বলে ওঠেন 'হ্যালো স্যার'। পার্থ ভৌমিক তখন খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন, সাংবাদিকদের ইশারায় বলছেন চুপ করতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার মন খুলে প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পার্থর উদ্দেশে বলেন, 'আমি সকলের মুখে তোর কথা শুনেছি। শুনলাম খুব ভালো কাজ করেছিস নাকি। এত দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেও যে অভিনয় করছিস জেনে ভালো লাগল।' সেচমন্ত্রী একথা শুনে পা ছুঁয়ে দিদির আশীর্বাদ নেন।'
তবে সেচমন্ত্রী যে অভিনয় করবেন একথা নাকি মোটেই জানাতে চাননি মুখ্যমন্ত্রীকে। পরিবার নিয়ে সুন্দরবোন বেড়াতে যাবেন বলে চারদিন ছুটি নিয়েছিলেন। ওই চার দিনেই পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় করালীবাবুর চরিত্রের শ্যুটিং শেষ করেছেন।'
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী,পশ্চিমবঙ্গ সরকার)ঃ মহম্মদ হাবিব চলে গেলেন স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। আলজাইমা এবং নানা রোগে মাঠের সিংহ যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। ১৯৬৬-তে আমার প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে যখন এলেন, তখন আমি নেহাতই শিশু। কিন্তু খেলা মানে ইস্ট-মোহনের খেলা থাকলেই বাড়ির বড়রা রেডিওর সামনে বসে যেতেন। আমি অত না বুঝলেও এটা বুঝেছিলাম আমার ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন করাটা আমার পারিবারিক কর্তব্য। মাঠে যাওয়া শুরু করি ১৫ বছর থেকে ১৯৭৮ থেকে। কি দল ছিল তখন। খেলা বোঝার সময় থেকে কয়েকজন খেলোয়াড়ের অন্ধ ভক্ত ছিলাম, যার অন্যতম বড় মিঞা মানে হাবিব।
সিএন পোর্টালে হাবিব নিয়ে লিখতে বসলে উপন্যাস হয়ে যাবে তাই বেছে নিলাম ১৯৮০। ভয়ঙ্কর ফুটবল বছর ছিল ওই বছরটা। সেবার ইস্টবেঙ্গল থেকে ৯/১০ জন নিয়মিত খেলোয়াড় দল ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। থাকার মধ্যে স্টপারে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আর তেমন কেউ নেই। ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত নিশীথ ঘোষ। তাঁর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় নাকি সব বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের মতো কট্টর সমর্থকদের তো মাথায় হাত। নিশীথবাবু বুদ্ধি করে কোচ করে নিয়ে আসলেন প্রদীপদাকে। পিকে ব্যানার্জি। পরে প্রদীপদার কাছে শোনা কিছু গল্প শোনাই।
প্রদীপদা প্রথমেই দলে নিলেন পড়ন্ত বিকেলের সুধীর কর্মকার ও হাবিবকে। এরপর অবশ্য দলে আসলেন চ্যালেঞ্জের মজিদ বাসকার, জামশেদ নাসিরীকে। মোটামুটি একটা দল দাঁড়ালো। সেবার এপ্রিল, মে-তে কলকাতায় ফেডারেশন কাপের খেলা ছিল ইডেনে। মজিদ জামশেদ এবং হাবিবের ট্রাওতে দল দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠলো। মাঠেতো নিয়মিত গেছিই । বুক দুরুদুরু। কিন্তু প্রথম থেকেই হাবিব খেলা ধরে নিলেন। বয়স হয়েছে কিন্তু নিজের ফরোয়ার্ডের জায়গা ছেড়ে লিঙ্কম্যানে খেলতে শুরু করলেন। প্রবল গরম অন্যদিকে তখন রামজান মাস চলেছে। হাবিব কিন্তু চিরকাল রোজা করে এসেছেন, এবারেও তাই। এক বিন্দু জল না খেয়ে ৯০ মিনিট খেলা ভাবা যায় না। এরমধ্যে একটা আক্রমণ মোহনবাগানের গোলরক্ষক প্রতাপ ঘোষ কোনও রকমে কর্নার করে বাঁচালেন। কর্নার থেকে কলার মতো বাঁকানো শট এলো জামশেদের মাথায়। জামশেদ ফ্লিক করে দিলেন হাবিবের দিকে। স্পট জাম্প করে ওদের স্টপারকে বোকা বানিয়ে বল গোলে। তারপর সম্মিলিত চিৎকার। আর মনে নেই।
কিন্তু সেই বছর আজকের দিনে অর্থাৎ ১৬ অগাস্ট ইডেনে ফের মোলাকাত ইস্ট-মোহনের। প্রথম থেকেই প্রবল গন্ডগোল মাঠে। মজিদকে কাঁচি করে মাঠে বাবলুদা ফেলতেই ইট বৃষ্টি শুরু। তারপর বিদেশ বসুকে (বর্তমানে আমাদের বিধায়ক) আমাদের রাইট ব্যাক দিলীপ পালিত ট্যাকেল করার পর বিদেশদা মাথা গরম করে লাথি মারলেন দিলীপদাকে। ব্যাস স্টেডিয়ামে উত্তাল গন্ডগোল। মৃত্যু হলো ১৬টি তাজা প্রাণের। শোনা যায় প্রশাসনের মারাত্মক ভুলেই নাকি দু দলের সমর্থকদের একসাথেই বসার ব্যবস্থা করেছিল ক্রীড়া বিভাগ।
তবুও সেদিন খেলা পুরো হয়েছিল ওই হাবিবের জন্যই। তিনিই দর্শকদের শান্ত হতে গ্যালারির কাছে দৌড়ে গিয়েছিলেন। আজ সেই মাঠের সিংহ নেই। স্মৃতিতে ছবি হয়ে গিয়েছেন। হাবিব মিঞা অমর রহে। (অনুলিখন- প্রসূন গুপ্ত)
পার্থ ভৌমিক (সেচমন্ত্রী-পশ্চিমবঙ্গ সরকার): সিএন পোর্টাল থেকে বললো যে রবিবার বন্ধুত্বের দিবস বা ফ্রেন্ডশিপ ডে। আমাদের যুগে এতশত বুঝতাম না যে এটারও আবার একটা দিন হতে পারে। একটা কথাই বাস্তব, ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা-খেলাধুলা সবেতেই বন্ধুত্ব থাকতো যা কিনা আজকেও আছে। আমি হয়তো আজ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হতে পারি, হয়তো সরকারি সিকিউরিটি নিয়ে অফিস যেতে হতে পারে, কিন্তু এখনও অফিসে যাওয়ার পথে কাউকে দেখলে থেমে যাই বা হাত নাড়িয়ে ডেকেনি।
এ অভ্যাস আমার আর পাঁচ জনের মতো। মানে বন্ধুত্বের কথা বলি। মনে পড়ে যাচ্ছে স্কুল জীবনের কথা। ক্লাস করার থেকে টিফিনে দুস্টুমিই বেশি মনে পড়ে। খেলাটা আমার নেশা ছিল স্কুলে তো ফুটবল খেলতামই। কিন্তু ছুটির পর পাড়ার মাঠে খেলাটাই বেশি পছন্দের ছিল। লাল হলুদ জার্সির আকর্ষণ তো ছিলই। লাইন দিয়ে বিস্তর খেলা দেখেছি। দলবল নিয়েই যত কাণ্ড আমার ছিল। এমন কোনও দিন থাকতো না যেদিনটা বন্ধুহীন হয়ে থাকতাম।একটু বড় হওয়ার পর তো আমাদের পুজোর মধ্যে চলে এলাম। তখন পড়ার বাইরে খেলা আড্ডা এবং পুজোতে কাজ করাটাই ছিল আসল। অষ্টমীতে দল বেঁধে সবার বাড়িতে খিচুড়ি বিতরণ এবং কালী পুজোতে তো দায়িত্ব আরও বেড়ে যেত। আমাদের নৈহাটিতে কালী পুজো বিখ্যাত। ফলে অন্য ক্লাবের পুজোর সঙ্গে টক্কর তো থাকতো।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে একটু ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে গন্ধ দূর করার একটা আর্ট ছিল। ধরা পরে মার খাবার কথাও ভুলিনি। ইস এতো বছর বাদে ওই দিনের কথা লিখতে বসে কত কথা মনে পরে চোখে জল এসে যাচ্ছে। আমার মনে হয়ে ছোটবেলার বন্ধুই সেরা বন্ধু। যদিও কলেজে ঢুকে নিজেকে অনেকটাই স্বাধীন মনে হয়েছিল। এরপর তো কলেজের আড্ডা, রাজনীতি, অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা ইত্যাদির সঙ্গে ভীষণ ভাবে যেটা ভালো লাগলো তা হচ্ছে নাটক। আজকেও শত কাজের মধ্যে নাটকটা সুযোগ পেলে করি। এখানকার বন্ধুরা আবার একটু গম্ভীর মেজাজের। আমার গিন্নি দারুন সংগীত শিল্পী, কাজেই ওর সঙ্গে আগে অনেকটা সময় কাটতো সংস্কৃতি মানসে। ও তো আমার প্রিয় বন্ধুই বটে, এ ছাড়া আমার সন্তানরাও আমার বন্ধু।
রাজনীতি করি, যাদের সঙ্গে করি তাঁরা আমার বন্ধু। এখন তো ওদের সঙ্গেই কাজ। এ ছাড়া দপ্তরে তো কাজের ফাঁকে যোগাযোগ রাখি বন্ধুদের সাথে। মনে হয়ে ভগবানকে বলি, আমি যেন সকলের পার্থ হয়েই থাকতে পারি এবং আপনারা আমার বুদ্ধিদাতা কৃষ্ণ। (অনুলিখন- প্রসূন গুপ্ত)
'সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি না। আমি মরে গেলে বিচার করবেন কি করে?' আদালতে এসে জেলের চিকিৎসা নিয়ে এমনিই দাবি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন বিচারপতি।
মঙ্গলবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছিল। সেখানেই সশরীরে হাজির করানো হয় পার্থকে। এজলাসে তাঁর আইনজীবী বিচারককে নিজের মক্কেলের অসুস্থতার কথা যখন বলছিলেন, তখনই নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়ান পার্থ। হাত জোড় করে বিচারককে জানান নিজের শরীর খারাপের কথা। বিচারকের উদ্দেশে পার্থ বলেন, ‘স্যার একটা কথা বলতে চাই। আমার অসুস্থতার কথা জেল সুপার লিখে দিচ্ছেন হাসপাতালক কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতাল ১০ দিন পর রিপোর্ট ব্যাক করছে (ফেরত পাঠাচ্ছে)। এক জন আক্রান্ত হবেন, তার ১০ দিন পর এসে চিকিৎসক দেখবেন! দেখুন একটু।’
জবাবে বিচারক জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘আপনি প্রথম জানালেন। দেখছি ব্যাপারটা।’ পার্থ এর পরে আরও জোরালো ভাবে আর্জি জানান। তিনি বিচারকের সামনে হাত জোড় করে বলেন, ‘‘দেখুন স্যর! মরে গেলে আর বিচার করবেন কী করে? স্যর, ৩০০ দিনের উপর হয়ে গিয়েছে।’’ এর পরে বিচারক বলেন, 'ঠিক আছে।'
প্রসূন গুপ্ত: পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) জানাচ্ছিলেন যে আর একমাসের মধ্যেই পুরাতন পঞ্চায়েতের (Panchayet) পাঁচ বছরের পালা শেষ হবে, কিন্তু ভোট (Election) কবে হবে তাঁর বার্তা দিতে পারেন নি। বিভিন্ন সচিব মহলেও একই প্রশ্ন ছিল। তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলা যেতেই পারে যে লোকসভা অবধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা করবেন না। অন্যদিকে যে ভাবে প্রচারে সেকেন্ড ইন কমান্ড জেলা থেকে জেলায় যাচ্ছেন তাতে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা যে ভাবেই হোক দ্রুত ভোট পর্বটি শেষ করতে চাইছেন তাঁরা।
সম্প্রতি এগরাতে বাজি বিস্ফোরণে কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা সোচ্চার। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চলে যান এগরায়। মঞ্চে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন যে, তিনি এই ঘটনায় দুঃখিত। মৃত পরিবারে তিনি আড়াই লক্ষ করে টাকার চেক দেন এবং প্রতি পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি এও বলেন যে মৃত্যু নিয়ে তিনি রাজনীতি চান না। একই দিনে তিনি অভিষেকের সভা রয়েছে শালবনিতে। এটি যে এক সময়ে নক্সালদের আখড়া ছিল তা বিস্তর জানেন অভিষেক। একই মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। মালদহের পরে একই মঞ্চে মমতা ও অভিষেক। অর্থাৎ এটি যে ভোটার প্রস্তুতি তা বলাই বাহুল্য।
এদিনই প্রধানমন্ত্রীর ডাকা নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা যান নি কাজেই এমন বার্তাও তিনি রাজ্যবাসীকে দিলেন যে , তাঁর প্রধানমন্ত্রীর ডাকা অর্থনৈতিক বৈঠকে কোনও আগ্রহ নেই। যদিও বিজেপির থেকে চরম সমালোচিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদি জুলাইতে পঞ্চায়েত ভোট হয় তবে প্রশ্ন কতটা প্রস্তুত বিরোধীরা। বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন এই ভোটে সন্ত্রাস হতে পারে কিন্তু আসল বিষয়ে এবারে কিন্তু বামেদের ভোট বাড়বেই বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে। বিজেপির বিগত বিধানসভা ভোটে ৩৬% ভোটার অধিকাংশ যে বামেদের ভোট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বামেরা কিন্তু খুব নীরবে এলাকায় এলাকায় গিয়ে প্রচার সারছে। কাজেই দেখার বিষয় তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ কিন্তু বামেরা হতেই পারে। আপাতত এ বিষয়টা সময়ের সাথে সাথে আরও স্পষ্ট হবে।
যখন লেখায় যাচ্ছি তখন অন্তত কংগ্রেস (Congress) ১৩০ + আসনে (Seat) এগিয়ে কাজেই অসম্ভব কিছু না ঘটলে তারাই যে সরকার (Goverment) গড়তে চলেছে তাতে আর সন্দেহের কিছু নেই। আমরা রাজ্য বা রাজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকলেও প্রায় প্রতিদিন মিডিয়ার বা সোশ্যাল নেটের পোর্টালগুলির উপর নজর রাখতাম। বুঝতেই পারছিলাম বিজেপির জমি খারাপ হচ্ছে। হবেই বা না কেন, যে ভঙ্গিতে তারা ২০১৮ র ভোটে জনবার্তা না মেনে প্রায় জবরদস্তি ঘোড়া কেনা বেঁচা করে কর্ণাটক দখল করেছিল তা মোটেই ওই রাজ্যের মানুষ ভালো ভাবে নেয় নি। এই সংস্কৃতিটা বিজেপির আমলে যে ভাবে মাথাচারা উঠেছিল তা মোটেই দেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। একেবারে একের পর এক রাজ্যে ক্ষমতায় না এসেও নানান চাপ দিয়ে সরকার দখল করেছিল বিজেপি তা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। গোয়া, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং অবশ্যই কর্নাটকে ঘোড়া কেনাবেঁচা করেছিল তার পরিষ্কার জবাব আজ কানাড়ি জনতা দিয়ে দিয়েছে এবং এতটাই ফারাক যে এবারে পুরোনো ফর্মুলা আর চলবে না।
আমি মনেকরি লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা বিজেপির কাছে মস্ত ধাক্কা। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেইছিলেন যে তিনি চান সর্বত্র বিজেপি হারুক। আজ অবশ্য আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিবেদনটি লিখছি। শুধু ধর্ম নিয়ে ভোট যেটা যায় না। প্রধানমন্ত্রী সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রচারে। এটা বাস্তব কর্নাটকেও উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণের রাজনীতি আছে। কিন্তু দেশের সরকারের বোঝা উচিত উন্নয়ন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে দেশের মানুষ চরম সংকটে রয়েছে। করোনাকাল গেলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট যা দেখা গিয়েছিল তার কোনও সমাধান তো কেন্দ্র করতে পরেই নি উপরোন্ত দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। মানুষ খাবে নাকি জাতপাত ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাবে। এর জবাব আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদী আরও বুঝতে পারবেন। কর্নাটকে যে পরিমান দুর্নীতি হয়েছে এবং তা কেন্দ্রীয় সরকার তা আমলই দেন নি, আজকের ভোটের ফলে তার প্রতিচ্ছবি পড়েছে। একটা সিনেমা দিয়ে কি আর ক্ষমতায় আসা যায়? যাই হোক জনতার রায় মাথায় রেখে বিরোধী আসনে মেনে নেওয়াই বাঞ্চনীয়।
(অনুলিখন : প্রসূন গুপ্ত)
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে গত বছর ২৩শে জুলাই নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর প্রতিবারই ইডির তরফে আদালতে পেশের সময় তার মুখে বিভিন্ন বিষয় শোনা গিয়েছে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তিনি এলেন, ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী আগে রবীন্দ্রনাথ আওড়ালেন। অবশ্য এর প্রতিদানে দিনশেষে জুটল 'চোর চোর' স্লোগান।
'মসী লেপি দিল তবু ছবি ঢাকিল না। অগ্নি দিল তবুও তো গলিল না সোনা।' সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি তদন্ত মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজিরার আগে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর গলায় রবীন্দ্রনাথের এই দুই লাইন শুনে সবাই অবাক। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই দুটি লাইনের মধ্যেই তাঁর গ্রেফতারি এবং তার পরবর্তী সময়ের ঘটনাপ্রবাহকেই বোঝাতে চাইলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিনের তুলনায় এদিন ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শুধু রবীন্দ্রনাথের কবিতা নয়, এদিন অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রার প্রশংসা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার রাজ্যে পালিত হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। তারআগে, এদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার আগে নিজেই সোনারতরী কাব্যগ্রন্থ থেকে এই দুটি লাইন শোনান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা করছেন তা তারিফ যোগ্য। পার্থর দাবি, ১০০ শতাংশ সফল হবে এই কর্মসূচি।
গত ২৩ জুলাই নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে নিজের নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপর থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেই স্থান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এদিন রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলে জনসমাজে ফের বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। যেখান কলঙ্ক সরিয়ে নিজেকে সোনার সঙ্গে তুলনা করলেন।
জেলে ঢোকার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chattopadhyay) আঙুল ফোলা ছিল। আর সেই কারণেই তাঁর আঙুল থেকে আংটি খোলা সম্ভব হয়নি! প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর (Minister) আংটিকাণ্ড নিয়ে বুধবার আদালতে হাজিরা দিয়ে এমনটাই দাবি করলেন প্রেসিডেন্সি (Presidency) সংশোধনাগারের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। জেল সুপারের জবাব শুনে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের বিচারকের প্রশ্ন, ৯ মাসেও কেন সেই আংটি খোলা গেল না। বিচারক বলেন, ‘৯ মাসে আপনি যেটা করতে পারলেন না আদালতের তরফে ৯ মিনিট ৯ সেকেন্ডে তা করে ফেলা গেল।’
বুধবার জেল হেফাজতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আংটি পরে থাকা নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় দেবাশিসকে। আংটি-কাণ্ড নিয়ে জেল সুপারের দেওয়া জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে পার্থের জেলে প্রবেশের সময়ের রেজিস্ট্রার খাতা খতিয়ে দেখেন বিচারক।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে পার্থ গত ৯ মাস ধরে জেলবন্দি। জেলের মধ্যেও আঙুলে আংটি পরে থাকা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৯ মাস ধরে জেলের মধ্যে হাতে আংটি পরেই থাকতেন তিনি। আদালতে এই নিয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইডির আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ‘জেল কোড’ অনুসারে সংশোধনাগারে কোনও অলঙ্কার পরা যায় না। কিন্তু পার্থ সেই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তবে আদালতের হস্তক্ষেপে সেই আংটি খুলে ফেলেছেন পার্থ।
পার্থের আঙুল ফুলে থাকার কারণে তাঁর আংটি খোলা যায়নি বলে আদালতে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্সির জেল সুপার দেবাশিস। পার্থের যুক্তি ছিল অন্য। তিনি আদালতে দাবি করেছিলেন, স্বাস্থ্যের কারণেই ওই আংটি তিনি পরে রয়েছেন। তাঁকে জেলে কেউ আংটি পরতে বারণ করেননি বলেও দাবি করেছিলেন পার্থ।
২২ জুলাই, ২০২২ রাজ্য রাজনীতিকে তোলপাড় করে দিয়েছিল একটি ঘটনা। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চর্চিত বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার আবাসনে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। সময় যত গিয়েছে ইডির গুনতিতে, তত বেড়েছে টাকার অঙ্ক। নগদে থাকা সেই টাকা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ বাংলার। সেই ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর, এখনও জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। রাজ্য রাজনীতিতে এই জুটি 'অপা' নামে এখন বেশি পরিচিত। সেই অর্পিতার বাড়িতে উদ্ধার টাকার উৎস কী?
সোমবার সংবাদ মাধ্যম এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল পার্থর দিকে। তাঁর জবাব, 'আপনারা খুঁজে বের করুন।' এই কয়েকটি শব্দের বাইরে সেভাবে এই প্রশ্নে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া এদিন ফের ৮ মে পর্যন্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ নিয়োগ-কাণ্ডে জেলবন্দি সাত জনের জেল হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ফের নিজের উপর থাকা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উলটে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ঘাড়ে ঘুরিয়ে দোষ চাপান তিনি। এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, 'নিয়োগে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। মন্ত্রী নিয়োগ কর্তাও নয়। আইন অনুযায়ী প্রতি বোর্ড এক একটি সংস্থা। এতে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। এক বছরে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। আর নতুন করে কী বলবো?'
এদিকে, ফের নিয়োগ-কাণ্ডে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে। আগামি ৮ মে পর্যন্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ সাত জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এদিন পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া জোড়া কর্মসূচির সাফল্য প্রার্থনা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
অপরদিকে, গত শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের আংটি নিয়ে আদালতে আপত্তি তোলে ইডি। সেই আপত্তির পর এদিন কোনওরকম আংটি-অলঙ্কার ছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। যদিও আংটি প্রসঙ্গে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, ওটা ধর্মাচারণের অঙ্গ। কোনও অলঙ্কার নয়।