পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সক্রিয় সিবিআই। এই মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অয়ন শীলকে। পাশাপাশি, অয়ন শীলের সংস্থার একাধিক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন পুরসভার কর্মীদের-ও। জানা গিয়েছে, বরানগর পুরসভার ক্লার্ক, পিয়ন সহ একাধিক পদে নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে ২০টি সেন্টারে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, এই নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছিল মূলত ভুয়ো পরীক্ষার্থীরাই। এমনকি প্রার্থী সংখ্যাতেও কারচুপি করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই সেই সময় কারা পরিদর্শক ছিলেন, তা জানতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই মতো বরানগর পুরসভার কর্মীদের ডেকে পাঠানো হয়। বুধবার এই মামলায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন বরানগর পুরসভার ২ কর্মী।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে, এক প্রাক্তনসরকারি কর্মী জানান, তিনি তিনবছর আগে একটি স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে বাকি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তিনি।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্যের শাসকদলের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া এত বড় দুর্নীতি কি আদৌ সম্ভব? সিবিআইয়ের তদন্তে কি সামনে আসবে এই দুর্নীতির মাথাদের নাম?
বুধবার নিজাম প্যালেসে আসেন দেবরাজ চক্রবর্তী। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এর আগে বিধাননগর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের 'প্রভাবশালী' কাউন্সিলরকে বাড়ি, অফিসে গিয়ে জেরা করেছে সিবিআই। জমা নিয়েছে কিছু নথিও। তারপর সাতদিন আগেই এই মামলার হাজিরা দিতে নিজাম প্যালেসে এলেও, বুধবার ফের হাজিরা দিতে আসেন দেবরাজ।
সকাল থেকেই জল্পনা চলছিল দেবরাজ নিজাম প্যালেসে আবারও আসবেন কিনা, তা নিয়ে। তবে, দেবরাজ আসেন, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে জানান, 'তদন্তের স্বার্থে আরও কিছু তথ্য আমায় দিতে হবে। তবে যেহেতু তা তদন্তের অংশ, তাই তিনি সেবিষয়ে কিছু বলতে চান না এখনই।'
এমনিতেই দেবরাজের বাড়িতে তদন্ত চালিয়ে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা উদ্ধার করেছিলেন একাধিক অ্যাডমিট কার্ড, সুপারিশ পত্র সহ বেশ কিছু নথি, যা সরাসরি নিয়োগ মামলায় দেবরাজের যোগের কথাই বলে। এখন দেখার এরপর আগামী দিনে নিয়োগ দুর্নীতির চূড়ান্ত চার্জশিটে দেবরাজ চক্রবর্তীর নাম খোদাই থাকে কিনা।
নিজাম প্যালেস (Nizam Place) থেকে বেরিয়ে হুঙ্কার অভিষেকের (Abhishek Banerjee)। প্রায় সাড়ে নয় ঘন্টা জিজ্ঞাসা বাদের পর নিজাম প্যালেস থেকে বার হলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআই (CBI) সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে তার থেকে বয়ান এবং পুরো জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও রেকর্ডিং হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রায় সাড়ে ৯ ঘন্টা পর নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে অভিষেক হুঙ্কার দেন। এবং গোটা প্রক্রিয়ায় বিজেপিকে টার্গেট করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই হেটে তিনি বলেন, 'নবজোয়ার' যাত্রা সফল, এটা বিজেপির সহ্য হচ্ছে না। এটার জন্যই বিজেপির চক্রান্ত এটা। পাশাপাশি শনিবার রাতে তিনি সিবিআইকে টার্গেট করে আরও বলেন, 'পারলে সিবিআই আমাকে অ্যারেস্ট করুক।'
শুক্রবার প্রায় একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সুকন্যা মণ্ডলকে (Sukanya Mondal) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই (CBI)। সূত্রের খবর, সেই সময় অনুব্রত (Anubrata Mondal) কন্যার মুখে মনীশ কোঠারির নাম উঠে এসেছে। অনুব্রত মণ্ডল পরিবারের হিসেব পরীক্ষক বা চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মনীশ কোঠারি। তিনিই নাকি সব জানেন বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জানান সুকন্যা। জানা গিয়েছে, বাকি সব প্রশ্নের উত্তরে বাবা অনুব্রত মণ্ডলকে অনুসরণ করেন সুকন্যা। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরেই সুকন্যা জানি না, বলতে পারবো না সুলভ জবাব দিয়েছেন। এদিকে, শুক্রবার হেফাজতে পাওয়ার পর শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করছে সিবিআই। এমনটাই সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়েছে জেরা। শুরুতে আলাদা আলাদা ভাবে পার্থ ও কল্যাণময়কে জেরা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেওয়া বয়ানের সঙ্গে শনিবার নেওয়া বয়ান খতিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার মিডলম্যানদের জেরা করে উঠে আসা তথ্যের উপরেও এই দু'জনকে জেরা করতে পারে সিবিআই। এমনটাই সূত্রের খবর।
অপরদিকে, কয়লা এবং গরু পাচার নিয়ে কি আরও কোমর বাঁধছে ইডি। সিজিও কমপ্লেক্সে চলা তাঁদের কৌশল নির্মাণ বৈঠক ঘিরে সেই প্রশ্ন উঠছে। কয়লা পাচার এবং গরু পাচার-কাণ্ডের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের নিয়ে এই বৈঠক বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি নোটবন্দির সময় বৃহৎ পরিমাণ নগদ একাধিক ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। সেই সংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ এই বৈঠকে অঙ্গ বলে জানা গিয়েছে। এই বৈঠকের পর ইডি জোন-২-এ তদন্তের গতি আরও বাড়তে পারে বলে সূত্রের খবর।
অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আর্জি খারিজ। ফের ৪ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি। ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। অর্থাত্ বীরভূমের দাপুটে নেতার ফের ঠিকানা নিজাম প্যালেস।
অনুব্রতর শারীরিক অসুস্থতার যুক্তি খারিজ আদালতে। সূত্রের খবর, জামিন পেলে প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন, তাই প্রভাবশালী তত্ত্বে খারিজ জামিনের আবেদন।
উল্লেখ্য, গরু পাচার মামলায় গত ১১ আগস্ট সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত মণ্ডল। সেদিন থেকেই সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি। শনিবার ১০ দিনের সিবিআই হেফাজত শেষে সকালে আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর তাঁকে নিয়ে আসানসোলের আদালতে তোলা হয়। অনুব্রতর শরীর ভালো নয়, তাঁকে জামিন দেওয়া হোক, আদালতে জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। যদিও সেই আবেদন এদিন খারিজ হয়ে যায়।
আমি জানতাম, দিদি বুঝতে পারবে, আমি কোনও অপরাধ করিনি। আমি কোনওভাবে এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নই। সোমবার নিজাম প্যালেসে (Nizam Palace) এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা। অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করার পর বাইরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, অনুব্রত (Anubrata) এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী (Self Confident)। উনি আগে থেকেই জানতেন যে মুখ্যমন্ত্রী (CM) উনাকে সাপোর্ট (Support) করেছেন। উনাকে ভরসা জুগিয়েছেন। বলেছেন যে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, যেটা আমরা আদালতেও বারবার বলেছি। দলনেত্রী সমর্থন করায় উনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুব্রত বলেছেন, আমি জানতাম, দিদি আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।
অনির্বাণবাবু বলেন, শারীরিকভাবে উনি (অনুব্রত) অত্যন্ত অসুস্থ। এই অবস্থার মধ্যেও উনার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস অবশ্যই এসেছে। আমরা আদালতে বারবার বলেছি, গরু পাচারের সঙ্গে উনার কোনও সম্পর্ক নেই। গরু পাচার যদি হয়ে থাকে, সেটা সীমান্তের সমস্যা। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সম্পর্ক রয়েছে। কাস্টমস এবং বিএসএফ, তারাই সীমান্তের দায়িত্বে থাকে। যদি পাচার হয়ে থাকে, তাহলে ওই বিভাগের অফিসাররা যুক্ত। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়নি। এফআইআরে নাম থাকা একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে, তাও ৩২ দিনের মাথায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন। অথচ এঁদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই একই অভিযোগ ফুটে উঠেছে উনার দলনেত্রীর কথায়। সেই কারণেই উনি আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন।
অন্যদিকে, অনুব্রত মণ্ডলের গড়ে ফের হানা দিতে চলেছে সিবিআই। চলতি সপ্তাহে বোলপুরে যাচ্ছে সিবিআইয়ের বিশাল টিম। অনুব্রতর নামে যে ৪৩ টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে তল্লাশি চালানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর। একইসঙ্গে তদন্ত চলাকালীন উঠে আসা বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে বীরভূম জেলার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হতে পারে সিবিআইয়ের তরফে।
সিবিআই সূত্রে খবর, আজ ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। আগামীদিনে ডাকা হতে পারে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়েকেও। ইতিমধ্যে সিবিআই-এর হাতে এসেছে অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ের নামে থাকা দুটি কোম্পানির তথ্য। গরুপাচারের টাকা কি কোনওভাবে এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে ইনভেস্ট করা হত, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।