হাতে গুনলে দুর্গা পুজোর বাকি আর মাত্র ১১ দিন। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। চারিদিকের পুজো প্যান্ডেল সেজে উঠেছে। আলো লেগে গিয়েছে পাড়ার মোড়ে মোড়ে। এমন সময় কি নিজেকে শান্ত রাখা যায়! তাই পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছেন অভিনেত্রী মনামী ঘোষ (Monami Ghosh)। সকলেই জানেন, মনামী একজন গুণী নৃত্যশিল্পীও। এবারের পুজোয় নিজের ভক্তদের উপহার দিলেন একটি মিউজিক ভিডিও।
মনামীর নতুন মিউজিক ভিডিওর নাম 'আইলো উমা বাড়িতে।' ৪ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওর পুরোটাই শ্যুট করা হয়েছে বনেদি বাড়িতে। অভিনেত্রীর মতে, ৩ ঘন্টার একটি সিনেমা দেখা যাবে ৩ মিনিটের ওই গানে। ভুল কিছু বলেননি। ভিডিওতে শুধুমাত্র মনামীর নাচ নয়, অন্যরকম একটি গল্প দেখা গিয়েছে। মনামী হয়ে উঠেছিলেন এক অন্যরকম চরিত্র। গানটি গেয়েছিলেন, জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী অন্তরা নন্দী।
গানটি মুক্তি পেতেই সামাজিক মাধ্যমজুড়ে মনামী ম্যাজিক দেখা গিয়েছে। মিউজিক ভিডিওটি ইতিমধ্যেই ৩৯ হাজার মানুষ দেখে ফেলেছেন। সামাজিক মাধ্যম ভরে গিয়েছে অসংখ্য রিলস ভিডিওতে। সেই রিলস ভিডিওই আবার নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করছেন মনামী ঘোষ। সব মিলিয়ে অভিনেত্রীর পুজো জমজমাট।
সারা ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এআর রহমান (AR Rahman)। শুধু সিনেমায় নয়, তাঁর গান সামনে থেকে শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন দর্শকেরা। দেশের যে কোনও প্রান্তে তাঁর লাইভ অনুষ্ঠান হলে, সেখানে ছুটে যান রহমানের ভক্তরা। সম্প্রতি চেন্নাইতে আয়োজিত করা হয়েছিল তেমনই একটি লাইভ অনুষ্ঠান, 'মারাক্কুমা নিনজম'-এর। এআর রহমানের কনসার্ট শুনতে লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। সেই কনসার্টেই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার অভিযোগ।
বিশৃঙ্খলার দৃশ্যে মাত্র দুটি বিবরণেই বোঝা যায়। প্রথম দৃশ্য, গেটের বাইরের। রহমানের গান শোনার জন্য ২ হাজার টাকা দিয়েও টিকিট কেটেছিলেন ভক্তরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই কনসার্ট স্থলে পৌঁছেও গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু গিয়ে দেখেন অনুষ্ঠানের গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গার্ডদের বারংবার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা কনসার্টের দরজা খোলেননি।
পরের দৃশ্য কনসার্টের ভিতরের। সেখানে শ্রোতারা প্রায় একে অপরের গায়ের উপর উঠে বসেছিলেন বা দাঁড়িয়েছিলেন। যে পরিমাণ শ্রোতা সেই কনসার্টে ছিলেন, সেই তুলনায় জায়গা এতটাই ছোট ছিল যে দমবন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই ঘটনার জন্য, কনসার্টের আয়োজকদের দায়ী করছেন শ্ৰোতারা। টাকা দিয়ে টিকিট কিনে কনসার্ট দেখতে না পেয়ে, আয়োজকদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও তুলছেন অনেকে।
এই অবস্থায় মর্মাহত হয়েছেন খোদ গায়ক। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি দর্শকদের কাছে আবেদন করেছেন, যারা টিকিট কেটেও কনসার্টে ঢুকতে পারেননি, তাঁরা যেন টিকিটের একটি ছবি আপলোড করেন সামাজিক মাধ্যমে। এরপর এআর রহমান কি পদক্ষেপ করবেন, সেইটাই দেখার।
গায়িকা ইমন চক্রবর্তী (Iman Chakraborty) অবশেষে সুখবর দিলেন। না না, যা ভাবছেন তা নয়। সামাজিক মাধ্যমে মুক্তি পেতে চলেছে ইমনের নতুন মিউজিক ভিডিও। গায়িকা নিজেই সামাজিক মাধ্যমে সেই ঘোষণা করেছেন। নতুন গানের নাম দিয়েছেন, 'তোমাকে দেখব বলে। ' গানটি গেয়েছেন ইমন নিজেই। গানের কথা লিখেছেন, দীপাংশু আচার্য। গানটির কিউরেটর ইমনের স্বামী তথা সঙ্গীত পরিচালক নীলাঞ্জন ঘোষ।
ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে শিডিউল হয়ে গিয়েছে গানের ভিডিওটি। বিকেল ৫টা বেজে ৩০ মিনিট থেকেই গানটি শোনা যাবে ও দেখা যাবে। গায়িকা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কামিয়েছেন ইমন। জাতীয় পুরস্কার সহ আরও একাধিক পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। অন্যদিকে সঙ্গীত পরিচালক নীলাঞ্জন ঘোষও তাঁর কাজে সিদ্ধহস্ত। উপরি আগ্রহ বাড়ায় গানের সুরকার দীপাঞ্জন আচার্য। তাঁর লেখা 'কিচ্ছু চাইনি আমি' গানটি আজও শ্রোতাদের মুখে ফিরছে।
প্রসঙ্গত 'তোমাকে দেখব বলে' গানটির ঘোষণার আগে ইমনকে নিয়ে এক প্রস্থ চর্চা হয়ে গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এই গানটির প্রচারের জন্যই ইমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, 'আর বিলম্ব নয়'। নেটিজেনরা ধরে নিয়েছিলেন, গায়িকা বোধহয় পরোক্ষভাবে তাঁর সন্তানসম্ভবা হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। যদিও ইমন পরবর্তীতে স্পষ্ট করে নেট মাধ্যমে লেখেন, কথাগুলি তিনি লিখেছিলেন নতুন গান আসছে বলে।
সংগীতশিল্পী এআর রহমানের (A.R Rahman) গানের ভক্ত অগুন্তি। তাঁর গান একবার শোনার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন দর্শক। অস্কারের মতো সম্মান রয়েছে রহমানের ঝুলিতে। আর সেই শিল্পীকেই অনুষ্ঠানের মাঝপথে গান থামাতে বাধ্য করল পুনে পুলিস। ৩০ এপ্রিল পুনেতে বিশাল গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন রহমান। গান গাইতে মঞ্চেও উঠেছিলেন গায়ক। কিন্তু আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে মাঝপথেই তাঁকে গান থামাতে বাধ্য করল প্রশাসন।
কী হয়েছে আসল ঘটনা? স্টেজে উঠে নিজের গানের ঝুলি থেকে একের পর এক গান গাইতে শুরু করেন এআর রহমান। গানের আবেশে ভাসতে শুরু করেছে দর্শক। সময় যে কখন পেরিয়ে গিয়েছে, সেই খবর কেউ রাখেনি। গায়কও খতিয়ে দেখেননি সময়। এমন সময় কনসার্টে উপস্থিত এক পুলিস অফিসার রহমানকে বলেন, ১০টা বেজে গিয়েছে, এরপর আর গান গাওয়ার অনুমতি নেই। গায়ক সেই সময় অনুষ্ঠানের শেষ গান গাইছিলেন। পুলিশের কথা শুনে তিনি গান গাওয়া বন্ধ করে দেন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সামাজিক মাধ্যমে এই খবর দেন। নেটিজেনদের কেউ পুলিসের ভূমিকার বেশ প্রশংসা করছেন। অনেকে আবার বলছেন,' সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ গানটা গাইতে দিলে এমন কি আর হত !'
প্রসূন গুপ্তঃ সঙ্গীতের অমূল্য সম্পদ ছিলেন মান্না দে (Manna Dey)। অনেকের মতে ভারতীয় সঙ্গীত (Music) জগতের সব ধরনের গান বিচার করে মান্না দে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। অবিশ্যি এই নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু আজ নয়। আজ মান্নাবাবু ১০৫-এ পা দিলেন। জন্মদিবস তাঁর। তাঁকে নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু আজ কিছু প্রায় অজানা তথ্য তুলে ধরতে চাই।
মান্না দে মনে করতেন, তাঁর উত্থান বলে কিছু ছিল না। তিনি মুম্বইবাসী হলেও হিন্দি ছবির নায়কদের লিপে তাঁর কন্ঠ থাকতো খুবই কম। মুম্বইয়ে তিনি সহযোগীতা পেয়েছেন প্রায় সব সঙ্গীত পরিচালকের এবং সেসব গান ছিল অসাধারণ এবং চিরকালীন। তিনি শচীন দেববর্মনের সহকারী ছিলেন। কাজেই শচীন কর্তার সুরে প্রচুর গান গেয়েছেন। একই সঙ্গে নায়কদের লিপে তাঁকে দিয়ে নিয়মিত গান করিয়েছেন রাহুল দেববর্মন। কিন্তু তাঁকে বিশেষ পছন্দ করতেন রাজ কাপুর। রাজ নিজে মান্নার গানে লিপ দিয়েছেন বহুবার। রাজ বলতেন, মান্নাজির গান আমার অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু মান্নার উত্থানের অন্যতম হোতা কমেডিয়ান মেহমুদ।
দেব আনন্দ ও শচীন দেবের বন্ধুত্বের গল্প সর্বজনবিদিত। দেব সাহেব কিশোর কুমার ছাড়া নিজের গান গাইতেন না। একবার দেবের প্রোডাকশনে একটি ছবি "ছুপা রুস্তম"। সেখানে একটি কাওয়ালি গান ছিল। দেব শুনলেন গানটি গাইবেন মান্না। তিনি সোজা শচীনকর্তাকে বললেন, দাদা ইস গানেমে কিশোরকো লিজিয়ে। শচীন তাঁকে কড়া ভাবে বললেন, এটা গাইবার ক্ষমতা মান্নারই আছে। ব্যস আর একটিও কথা নয়। সীতা অউর গীতা ছবিতে সঞ্জীব কুমারের লিপে গলা দিয়েছিলেন কিশোর কিন্তু ধর্মেন্দ্রর লিপে গাইবে কে? পরিচালক রমেশ সিপ্পি, রাহুল দেববর্মনকে বললেন, তাহলে ধর্মেন্দ্রর লিপে রফি সাহেবকে নিয়ে এসো। রাহুল কারুর কথার ধার ধারতেন না। তিনটি গানই গাওয়ালেন মান্না দে কে দিয়ে। সিপ্পিদের পরের ছবি শোলেতে অমিতাভের লিপেও গান গেয়েছিলেন মান্না।
একটা সময় রাজেশ খান্না ছিলেন এতটাই সর্বেসর্বা যে তাঁর কথা ফেলতে পারতেন না প্রায় কেউই। বাবুর্চি ছবি তৈরি হচ্ছে, সুরকার মদনমোহন। রাজেশ বললেন, তাঁর গান যেন কিশোরই গায়। অথচ দুটি গানই ছিল ধ্রুপদী। মদন সোজা গিয়ে পরিচালক ঋষিকেশ মুখার্জিকে জানালেন। ঋষিবাবুকে রাজেশ খুব ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন। ঋষিবাবু সটান রাজেশকে বললেন, মান্না গান গাইবে, যদি তোমার পছন্দ না হয় তবে তোমার চরিত্রে সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে আসবো। ব্যস রাজেশ চুপ।
মান্না দে ছিলেন উত্তর কলকাতার ঘটি এবং গোড়া মোহনবাগানী। কিন্তু শচীন কর্তার পাল্লায় পরে দিব্বি গড়গড় করে বাঙাল কথা বলতেন। শচীন কর্তা ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক। মুম্বাইয়ে রোভার্স কাপের ফাইনালে ইস্ট-মোহনের খেলা থাকলেই শচীনকর্তা, মান্না দে কে নিয়ে মাঠে যেতেন। ইস্টবেঙ্গল গোল করলেই শিশুর মতো চিৎকার করতেন। বেচারা মান্না বিমর্ষ। কর্তা মান্না কে বলতেন, মানা চেচাইস না ক্যান। কি আর করা বেচারা মান্নাকে হাততালি দিতেই হতো।
এরকম অনেক গল্প আছে জানাবো আগামীতে।
আপনার সন্তানদের কি শুধুমাত্র পড়াশোনার মধ্যেই রেখেছেন? পড়াশোনায় ক্ষতি হবে বলে কোনও সংগীত বা বাদ্যযন্ত্র (Musical Instruments) বাজাতেও দেন না? তবে এটা আপনি কোনও বড় ভুল করছেন না তো! কারণ সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, সংগীত বা কোনও বাদ্যযন্ত্র কতটা ভালোভাবে প্রভাবিত করতে পারে শিশুদের মস্তিষ্ককে। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, তার সঙ্গে সে সংগীত বা বাদ্যযন্ত্র যেকোনো একটির নিয়মিত চর্চা করলেই তার মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদ্যযন্ত্র বাজানো মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, যে কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজানো যদি কারোর নিয়মিত চর্চার মধ্যে থাকে, তবে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ তো হয়ই। এর পাশাপাশি মস্তিষ্কের বার্ধক্যও ধীর গতিতে হয়। কথায় আছে, মনের বয়স ঠিক রাখতে মাথার বয়স কে ঠিক রাখা জরুরি। আর 'মাথা' বা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে জরুরি বেশ কয়েকটি অভ্যাসের। ফলে বাদ্যযন্ত্র বাজানোও এক ভালো অভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্ককে যত বেশি খাটাবেন ততই তার কার্যকরী ক্ষমতা বাড়বে ও সতেজ থাকবে। এছাড়াও মস্তিষ্কের পাশাপাশি স্ট্রেস, মানসির অবসাদ কাটাতে, মনকে ভালো রাখতেও আপনি বাদ্যযন্ত্র বা সংগীতের চর্চা করতে পারেন। ফলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রত্যেককেই তাঁদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত এসব চর্চার মধ্যে থাকা উচিত।
'আই এম স্যাড টু সে, আই এম অন মাই ওয়ে, ওন্ট বি ব্যাক ফর মেনি এ ডে...' দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি চললাম, অনেক দিন আর ফিরব না। নিজের গান 'জামাইকা ফেয়ারওয়েল'-এ এই কথাগুলি লিখেছিলেন আমেরিকার প্রবাদপ্রতিম গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে। অনেক দিন নয়, আর কোনও দিনই ফিরবেন না তিনি। ৯৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বেলাফন্টে। তাঁর দীর্ঘদিনের মুখপাত্র কেন সানশাইন একথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে সারা বিশ্বের সঙ্গীত প্রেমীদের মনে।
পঞ্চাশের দশকে আমেরিকার সঙ্গীত জগতে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। বর্ণবিদ্বেষীর শিকড় তখন ছড়িয়ে পড়েছে। শেতাঙ্গদের চরম নিপীড়নের শিকার কৃষ্ণাঙ্গরা। সেই সময়েই উত্থান হ্যারি বেলাফন্টের। তাঁর গানই হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ভাষা। বেলাফন্টের গান যেন একাই মিছিল। গানের প্রতিটি শব্দ যেন গণ আন্দোলনের স্লোগান। 'ক্যালিপসো', 'জামাইকা ফেয়ারওয়েল'-এর মতো অ্যালবাম তাঁরই সৃষ্টি। 'মাটিল্ডা', 'শেক শেক সেনোরা'র মতো কালজয়ী গান উঠে এসেছে তাঁর কণ্ঠে।
গরিব পরিবারে তাঁর জন্ম, তাই সংখ্যালঘুদের ব্যথা ভালোই বুঝেছিলেন। তাঁদের নিয়েই গান বাঁধতে চেয়েছেন। গানে-কথায়-ছন্দে কোনও বৈষম্য নেই, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমেরিকাকে। তাঁর গান সীমাবদ্ধ আটকে থাকেনি আমেরিকায়। সমগ্র বিদেশে এমনকি ভারতেও এসে পড়েছিল তাঁর উদাত্ত কণ্ঠের ব্যাপ্তি। বেলাফন্টের সংগ্রামে সামিল হয়েছিল গোটা দেশ। তাঁর মৃত্যুতে যেন থমকে গেল এক সময়কাল।
ডিজের আওয়াজে বিরক্ত, আওয়াজ কমানোর প্রতিবাদে গুলিতে (Shooting) প্রাণ হারালেন এক সন্তানসম্ভবা মহিলা (Pregnant Woman)। বাঁচানো গেলো না তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকেও। ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির (Delhi) সিরসপুরে। মৃত মহিলার নাম রঞ্জু, বয়স ৩০ বছর। অভিযোগ, জোরে জোরে ডিজে বাজানোয়, সেই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা সমস্যায় পড়েছিলেন। সোমবার, ৩ এপ্রিল হরিশ নামের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে তাঁর ছেলের মঙ্গল কামনা উপলক্ষে বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেছিল।
সেই পুজো উপলক্ষেই ডিজে বাজানো হচ্ছিল। অভিযোগ, ডিজের আওয়াজ এতটাই জোরে ছিল যে, অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা সমস্যায় পড়েছিলেন। বারান্দায় বেড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন সন্তান সম্ভবা ওই মহিলা। অভিযোগ, ডিজের আওয়াজ কমানোর কথা শুনেই হরিশের মাথা গরম হয়ে যায়। তিনি রাগের মাথায় তার বন্ধুর কাছ থেকে একটি পিস্তল নিয়ে আসেন এবং অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেন। গুলি গিয়ে লেগেছিল মহিলার ঘাড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
চিকিৎসকরা জানান, তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু মহিলাকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি ওই সন্তান সম্ভবা মহিলাকে। শনিবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই মহিলার। গ্রেফতার এই ঘটনায় অভিযুক্তরা। তাঁদের বিরুদ্ধে আইপিসির একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
শুভশ্রী মুহুরী: প্রভাবশালী জোর জুলুমে আটকে রয়েছেন বাদ্যযন্ত্র শিল্পীরা, তাঁদের বাঁচাতে এবার সামাজিক মাধ্যমের সহায়তা নিলেন সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী (Iman Chakraborty) ও লোপামুদ্রা মিত্র (Lopamudra Mitra)। করজোড়ে সকলের কাছে কাতর আর্তি জানাচ্ছেন 'আটক' সহকর্মীদের জন্য। গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র শনিবার সামাজিক মাধ্যমে লাইভ আসেন। তিনিই প্রথমে সহকর্মীদের দুরাবস্থার কথা জানান। এরপর লাইভে আসেন ইমন চক্রবর্তী। তিনিও আর্তি জানান সকলের কাছে।
লোপামুদ্রা মিত্র বলেন, 'খবর পেলাম আমার কয়েকজন মিউজিশিয়ান বন্ধু কাঁথিতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আটকে রয়েছেন। ঠিক কী কারণে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে তা নিয়ে নিশ্চিত নই। তবে আমিও এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি তাই ধারণা করতে পারি নিশ্চয় অর্গানাইজার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে। আমি এই বিষয়ে কলকাতা পুলিস ও পশ্চিমবঙ্গের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।'
গায়িকা লোপামুদ্রার লাইভ দেখে ইমন চক্রবর্তীও লাইভে আসেন। তিনি বলেন, 'গানবাজনা করতে চাওয়ার পরিণাম কী এই যে একটা দলকে চার পাঁচদিন আটকে রাখা হবে? যারা এই কাজ করেছেন তাদের দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে করজোড়ে অনুরোধ করব যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা ব্যবস্থা নিন।'
সৌমেন সুর: অন্নপূর্ণাদেবী ছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র ছোট মেয়ে। তাঁর আসল নাম রোশনারা আলি। মহারাজা ব্রিজনাথ সিংয়ের রাজসভার প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। মহারাজা উস্তাদের মেয়ের নাম রাখেন অন্নপূর্ণা। যখন এই কন্যার জন্ম হয়, তখন সারাদেশজুড়ে চলছে দুর্ভিক্ষ। সনাতন ধর্মমতে অন্নপূর্ণাদেবী হলেন অন্নদাত্রী। তাই মহারাজা নাম দেন অন্নপূর্ণা। আলাউদ্দিন রাজার দেওয়া নাম বাদ দেননি। তাই তার নাম রওশন আরা অন্নপূর্ণাদেবী। ছোটবেলা থেকেই অন্নপূর্ণাদেবীর সংগীতের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড। এ নিয়ে সংসারে প্রচণ্ড অশান্তিও হয়। সেই সময় রাজদাসী, দেবদাসী, বারাঙ্গনা ছাড়া কোনও সাধারণ নারী সংগীত পরিবেশন করবেন, এ কথা ভাবাই যেত না। অগত্যা আলাউদ্দিন মেয়েকে তালিম দিলেন না।
কিন্তু অন্নপূর্ণা লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়ের তালিম দেওয়া দেখাতেন আর সেটি রেওয়াজ করতেন। পরে আলাউদ্দিন মেয়ের প্রতিভা দেখে, ওকে তালিম দেওয়া শুরু করলেন প্রথমে ধ্রুপদী কন্ঠসংগীতের তালিম, পরে সেতার শেখেন অন্নপূর্ণাদেবী। উস্তাদ আলাউদ্দিনের কাছে সংগীতের তালিম নিতে আসেন রবিশংকর। এখানে অন্নপূর্ণাদেবীর সঙ্গে রবিশংকরের আলাপ হয়, পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেতার বাজনায় অন্নপূর্ণাদেবীর নাম সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ভালবেসে আনন্দে অন্নপূর্ণাদেবীকে মুর্তিমতী সরস্বতী বলে আখ্যা দেন।
এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই অসম্ভব প্রতিভাময়ী শিল্পীর ঠিকমতো মূল্যায়ন আমরা করে উঠতে পারলাম না। অন্নপূর্ণাদেবী ছিলেন প্রচার বিমুখ। পণ্ডিত রবিশংকরের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকেই তিনি অন্তরালে নিভৃত জীবনযাপন করেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সংগীতানুষ্ঠান করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তবে বদ্ধ জীবনযাপনে তাঁর সাধনা থেমে থাকেনি। দেশের বহু প্রথম সারির শিল্পী তাঁর শিষ্য ছিলেন। যেমন পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, ওস্তাদ বাহাদুর খাঁ, ওস্তাদ আশিস খাঁন, পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া প্রমুখ।
সৌমেন সুর: নচিকেতার গানে মানবিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলো-- এই বেশ ভালো আছি, চল যাবো তোকে নিয়ে, বৃদ্ধাশ্রম, নীলাঞ্জনা, কে যায় ইত্যাদি। তাঁর গানে রাগ সঙ্গীতের সঙ্গে সমকালীন সুর নিরীক্ষার এক চমকপ্রদ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। মঞ্চের অনুষ্ঠানে নচিকেতা একটা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। গানের সঙ্গে সঙ্গে অডিয়েন্সের মন জয়ে তিনি অনবদ্য। এই পথেই একে একে এলেন অঞ্জন দত্ত, মৌসুমি ভৌমিক, পল্লব কীর্তনিয়া, কাজী কামাল নাসের, লোপামুদ্রা মিত্র, শিলাজিৎ প্রমুখ শিল্পীরা। অঞ্জন দত্তের, 'বেলা তুমি কি শুনতে পাচ্ছো', 'রঞ্জনা আমি আর আসবো না', 'পুরনো গিটার'-এর মতো গানগুলো লোকমুখে ঘুরতে লাগলো। মৌসুমির গানে প্রথম কোনও মহিলা গীতিকারের নিজের ভাষায়, নিজের কথা শোনা গেলো। লোপামুদ্রা অন্যের কবিতায় সুর দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কামাল নাসেরের গানও জনতা স্পর্শ করেছে।
তারপর একে একে বিভিন্ন বাংলা ব্যান্ডের উত্থান হল। সমবেত প্রয়াসে গান সৃষ্টি ও পরিবেশন শুরু হলো। মূলত বিদেশী সঙ্গীতের প্রভাবে রক, পপ, জ্যাজ, রক অ্যান্ড রোল, কান্ট্রি এবং বাংলার নিজস্ব লোক সঙ্গীতের প্রভাব পড়লো এঁদের গানে। ইলেক্ট্রনিক সাউন্ড প্রাধান্য পেলো। প্রাধান্য পেলো সাইকেডেলিক আলো এবং বিভিন্ন স্টেজ অ্যাক্ট। মূলত ইংরেজি গান গাওয়া ব্যান্ডগুলোর মতো মহীনের ঘোড়াগুলোর অনুসরণে তৈরি হল লক্ষ্মীছাড়া, চন্দ্রবিন্দু, ভূমি, পরশ পাথর,শহর,ফসিলস ইত্যাদি ব্যান্ড। তরুণ এবং যুবসমাজের কাছে এঁদের আশাতীত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হল। বাংলা গানের ধারায় বাংলা ব্যান্ডের অবদান কতখানি, তা নিয়ে মন্তব্য করার মতো যথেষ্ট সময়ের ব্যবধান তৈরি হয়নি বলেই আমি এই বিষয়ের উপর লেখায় ইতি টানলাম।
সৌমেন সুর: নয়ের দশক সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্রান্তিকাল। খোলা বাজারের মুক্ত অর্থনীতি, ভোগবাদী বাজার সংস্কৃতির আগ্রাসন, সোভিয়েত রাশিয়ার পতন, রাজনৈতিক আন্দোলনের বিষয়হীনতা এবং বাঙালির গতানুগতিক সংস্কৃতি চর্চায়, বাঙালি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এলো সংগীতে একটু পরিবর্তন। 'মহীনের ঘোড়াগুলি, মেঘনাদ, অনুশ্রী-বিপুল, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, এরা অন্যরকম গানের কান্ডারী ছিল। বিশেষ করে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানে ছিল জাগরণের বানী। বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটারের মতো খালি গলায় অন্য ধরনের উদ্দীপ্ত মনোজ্ঞ গানে মন প্রাণ ভরে উঠেছিল কলকাতার সংগীত প্রেমীদের। মূলত কলকাতার বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত তরুণদের গান শুনিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
এমন সময় সুমন চট্টোপাধ্যায় (কবীর সুমন)-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন 'নিউ সং' আন্দোলনের প্রেক্ষিত অনুভবে রেখে, পিট সিগার, বব ডিলান, জনি ক্যাশ, লেনার্ড কোহেনদের উত্তরাধিকার বহন করে বাংলা গানের সুমনের পদক্ষেপ। ১৯৯২ সালে 'তোমাকে চাই' অ্যালবামে বানী, সুর ও যন্ত্রানুষঙ্গে শ্রোতারা হলেন সব ক্ষেত্রেই তিনি একক ভূমিকা নিলেন। এই অভিনবত্ব দেখে বাংলার মানুষ তাঁকে দুহাত প্রসারিত করে বুকে টেনে নিলেন। এরপর 'একে একে বসে আঁকো', 'ইচ্ছে হলো', 'ঘুমাও বাউন্ডুলে', 'গানওয়ালা','চাইছি তোমার বন্ধুত্বা', 'জাতিস্মর' প্রভৃতি অ্যালবামের সুমনের একটা নিজস্ব গানের ভুবন তৈরি হয়ে যায়। গানের কথায়, দেশি-বিদেশি সুরের বৈচিত্র্যে এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে সুমন পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে গভীর প্রভাব ফেললেন।
এই সময়ে আর একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীর প্রকাশ ঘটে। তিনি হলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। তার গান-বাজনা সূত্রপাত আটের দশকে। নয়ের দশকে তার বেশ কিছু অ্যালবাম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। সাধারণ মানুষের আশা নিরাশা, ক্ষোভ প্রতিবাদ, প্রেম, স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা তাঁর গানে বানীরূপ পায়।