সৌমেন সুর: অবনীন্দ্রনাথের বিশেষ ক্ষমতা ছিল নানাবিধ বানানো গল্প দিয়ে ছোটদের আবিষ্ট করে রাখবার। এই ক্ষমতা দেখে রবীন্দ্রনাথ একদিন তাঁকে ডেকে বললেন, 'অবন তুমি লেখ না কেন? যেমন করে মুখে মুখে গল্প বানিয়ে ছোটদের বলো, তেমন করেই লেখো।' অবনীন্দ্রনাথ বললেন, 'আমি কি আর লিখতে পারবো। বানান-টানানের ঠিক নেই।' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'সে আমি দেখে দেব, তুমি লেখো।' একদিন এভাবেই আবির্ভূত হলেন বাংলা সাহিত্যে আর এক ঠাকুর। ছবির মতো গল্প লিখে যাওয়া অবন ঠাকুর। একে একে 'শকুন্তলা','ক্ষীরের পুতুল', 'নালক', 'রাজকাহিনী','বুড়ো আংলা' প্রভৃতি। মূলত ছোটদের জন্য লেখা।
যাত্রাপালা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উৎসাহ দিয়েছিলেন অবন ঠাকুরকে। এরপর লেখায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিশির ভাদুরি আসতেন অবন ঠাকুরের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে পরামর্শ করতে। ঠাকুরবাড়িতে বসতো চাঁদের হাট। অবনীন্দ্রনাথের যাত্রা দেখে রবীন্দ্রনাথ প্রচুর প্রশংসা করতেন। 'বাল্মিকী প্রতিভায়' রবীন্দ্রনাথ হয়েছিলেন বাল্মিকী আর অবন ঠাকুর হয়েছিলেন ডাকাত। এরপর ডাকঘরে সেজেছিলেন মোড়ল। সাড়া ফেলে দেওয়া সেই অভিনয়, মানুষ দেখেছিল এক অসাধারণ অভিনয়। সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, ব্যথা-বেদনা উদাসী নয়নে হতচকিত হয়ে চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ।
গলা ভারী করে ভ্রু কুঁচকিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, তা দেখে দর্শক আসনে যারা থাকতেন তাঁদের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। এমনই অভিনয়ে মাতিয়ে রাখতেন অবনীন্দ্রনাথ। (চলবে)
কুলতলী (Kultali) ব্লকের কৈখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (Kaikhali Primary Health Centre)। যেখানে মূলত মানুষেরা যান স্বাস্থ্যপরীক্ষা বা রোগ নিরাময়ের জন্য। তবে এখানে চিত্রটাই অন্যরকম। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (hospital) ঢুকলেই দেখা যাবে সেখানে চলছে যাত্রাপালার রিহার্সাল। যাত্রার নাম "সুন্দরীর বুকে শয়তানের থাবা"। কিন্তু কেন এই অবস্থা? রোগীদের দেখাই বা মিলছে না কেন?
কৈখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। হাসপাতালে চিকিৎসকেও পাওয়া যায় না। চিকিৎসার জন্য ১২ কিলোমিটার দূরের জামতলা ব্লক হাসপাতালে যেতে হয় স্থানীয় রোগীদের। এমনকি, হাসপাতালের গর্ভবতী মায়েদের চেকআপের ঘরেরও ছাদ থেকে টপ টপ করে পড়ছে জল। এখানে ওখানে সিলিং-এর চাঙর ভেঙে পড়ছে। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। নজর নেই স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের। একাধিকবার বলেও মেলেনি সুরাহা।
তবে হ্যাঁ! এই অব্যবহৃত ঘরগুলিতে দেদার হচ্ছে যাত্রাপালার রিহার্সাল। ঘরগুলিতে ঢুকতেই দেখা যাবে সিলিং-য়ে ঝুলছে একাধিক প্লাস্টিকের গ্লাস। যেটা মূলত মাইক ভেবে রিহার্সাল দেওয়া হয় যাত্রাপালায়। কিন্তু হুঁশ কোথায় প্রশাসনের? প্রশ্ন তুলে সরব স্থানীয়রা। তাঁরা চান গ্রামের মধ্যেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গড়ে তোলা হোক সুষ্ঠভাবে।
কুলতলি ব্লকের কৈখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (Primary Health Centre)। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমনিতেই বেহাল দশা। চারদিক ভরে উঠেছে আগাছা এবং জঙ্গলে। বহু ঘরেরই দরজা, জানালা নেই। সর্বত্রই জার্ণতার ছাপ। আর তারই মধ্যে ১৫-১৬ বছর ধরে ঘর দখল করে রয়েছে একটি যাত্রা কোম্পানি (Jatra Company)। চলছে যাত্রাপালার রিহার্সাল (Rehearsal)। যাত্রার নাম "সুন্দরীর বুকে শয়তানের থাবা"।
অথচ এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। হাসপাতালে চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। চিকিৎসার জন্য বারো কিলোমিটার দূরের জামতলা ব্লক হাসপাতালে যেতে হয় রোগীদের। হাসপাতালের জমি দখল হয়ে গিয়েছে। সেখানেই জমি দখল করে চলছে চাষবাস ইত্যাদি।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘরের মধ্যেই বড় বড় ট্রাঙ্কে রয়েছে যাত্রার সরঞ্জাম। রয়েছে আলো, সাউন্ড সিস্টেম সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।
প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতালে যেখানে চিকিত্সা পরিষেবাই ঠিকমতো পাওয়া যায় না, সেখানে কীভাবে হাসপাতালের ঘর দখল করে একটি যাত্রাপালা গোষ্ঠী তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যাঁরা ঘর দখল করে এসব করছেন, তাঁদের অবশ্য এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।
এক সময় এখানে সবই ছিল। কোয়ার্টারগুলিও সব ভর্তি ছিল। কিন্তু কোনও একটি ঘটনার পর সব ফাঁকা হয়ে যায়। এখন ডাক্তার, নার্স আসেন বটে, তবে ওই নাম কা ওয়াস্তে। এখানে যে এভাবে যাত্রাপালার রিহার্সাল চলে, তা সবারই জানা, জাক্তাররাও জানেন, দাবি এক কর্মীর।