২৪ ঘন্টার মধ্যেই রাজ্যে ডিজি পরিবর্তন। ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে রাজ্য পুলিসের ডিজি করল নির্বাচন কমিশন। সোমবারই রাজ্য পুলিসের ডিজির পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। নতুন ডিজির জন্য রাজ্যের কাছে তিনটি নাম চাওয়া হয়েছিল। তিন জনের মধ্যে বিবেককে বসানোর অনুমতি রাজ্যকে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার সকালেই বিবেক সহায়কে সরিয়ে ভোটের সময় রাজ্য পুলিসেরর ডিজি করা হল সঞ্জয়কে।
সোমবার রাজ্যের মুখ্য সচিব বিপি গোপালিককে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। সেখানেই, রাজ্য পুলিসের ডিজির পদ থেকে অবিলম্বে রাজীব কুমারকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্দেশিকায় জানানো হয়, রাজীব কুমারকে এমন পদে নিয়োগ করতে হবে, যার সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনের কোনও যোগ থাকবে না। ডিজি পদে নতুন নিয়োগের জন্য বিকেল ৫টার মধ্যে রাজ্য সরকারকে তিনটি নাম পাঠাতে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই মোতাবেক তিন জনের নাম পাঠায় রাজ্য। বিবেক সহায়ের পাশাপাশি আরও দুই সিনিয়র আইপিএস অফিসার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এবং রাজেশ কুমারের নাম পাঠানো হয়েছিল কমিশনে। তাঁদের মধ্যে থেকে সোমবার বিবেককেই ডিজি পদে বসায় কমিশন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে আবার সেই পদে বসানো হল সঞ্জয়কে।
প্রসূন গুপ্ত: স্বাধীনতা উত্তর যুগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সৌজন্যতা ভীষন ভাবেই ছিল। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু মনে করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামে সবারই দান আছে। অন্যদিকে এ রাজ্যে দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়ও ঐ একই ভাবনায় বিশ্বাস করতেন। এ কারণে দুটি জায়গা থেকে দুই ভবিষ্যতের নেতার পরিচিতি হয়েছিল। একজন অটল বিহারী বাজপেয়ী অন্যজন জ্যোতি বসু।
আইনসভায় বা ভোটের সময় যতই এক দল অন্য দলকে আক্রমন করুক না কেন ব্যক্তিগত কুৎসা কখনও হতো না। এটির জন্ম ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে। বাংলাদেশ যুদ্ধের পরে ইন্দিরা কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু জরুরি অবস্থার পরে তিনিই হয়ে গেলেন বিরোধীদের ঘৃণার পাত্রী। কারণও ছিল, ঐ সময় নতুন আইন চালু করে ইন্দিরা, বিরোধীদের জেলে পরেছিলেন। কাজেই বিষয়টি শত্রুতায় পরিনত হলো। ১৯৭৭ এর লোকসভা ভোট থেকে রাজনৈতিক দলগুলি ইন্দিরাকে প্রচারে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে দলীয় আক্রমনে তুলোধনা করেছিল। ৭৭ এ হেরে ফের ক্ষমতায় ফের ইন্দিরা কংগ্রেস এবং ঐ সময় থেকে কংগ্রেসও বিরোধীদের ভয়ঙ্কর প্রচারে নাস্তানাবুদ করেছিল। এটা পরিবর্তিত হয় রাজীবের আমলে। পরে নরসিমা রাও, অটলবিহারী বা ড. মনমোহন সিং কিন্তু যথেষ্ট সৌজন্য দেখান বিরোধীদের।
কিন্তু এ বাংলায় বামেরা ৭৭এ ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্র তথা রাজ্যের বিরোধীদের যে ভাষা ব্যবহার করতো তা বোধকরি বটতলা নিষিদ্ধ বইয়ের ভাষাকে লজ্জা দেবে। আজকে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের ভাষা আক্রমন বিন্দুমাত্র কমে নি। সংস্কৃতি হাত বদল হয়। ২০১১ এ ক্ষমতায় এসে ভাষা আক্রমনে তৃণমূল যেন ৩৪ বছরের ক্রোধ উসুল করে নিয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী আসনে বিজেপি। মোদী জমানা থেকে কেন্দ্র বা রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের একপ্রকার পাত্তাই দেয় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিভিন্ন ভোট প্রচারে ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক। এদের স্ট্র্যাটেজিই তাই। এ রাজ্যে কুবচন যেন এক সংস্কৃতি। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদী কিন্তু যথেষ্ট সংযত। ব্যক্তি আক্রমণে যাচ্ছেন না মোটেই। বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি ফের ক্ষমতায় ফিরছেন কাজেই হালকা ভাষনে ব্যস্ত থাকছেন।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নানান কেন্দ্রে সৌজন্যের প্রচার দেখা যাচ্ছে। হুগলি কেন্দ্রে দুই বন্ধু লকেট ও রচনা কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেন নি। ব্যারাকপুর কেন্দ্রে পার্থ ভৌমিক বা অর্জুন সিং প্রচারে পরস্পরকে "বন্ধু" বলছন। যাদবপুর কেন্দ্রে অনির্বাণ বা সায়নী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখছেন। কিন্তু ব্যাতিক্রমও আছে। তমলুক কেন্দ্রে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী ও তৃণমূলের দেবাংশু তীব্র আক্রমনেই রয়েছেন।সৌজন্যের রাজনীতি আজ আর কোথায়।
মাঝরাতে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বড়সড় দুর্ঘটনা। সকাল হতেই মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা অবস্থায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল ৯টার একটু পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে যান গার্ডেনরিচের ফতেপুর ব্যানার্জি বাগান লেনের ওই এলাকায়। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই এলাকা পরিদর্শন করেন। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। মৃতদের পরিবার পিছু ৫লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। রাতেই সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ”রমজান মাসে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা সকলে অত্যন্ত মর্মাহত। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা এটা এবং বেআইনি কাজের জন্য এই ঘটনা ঘটল। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কড়া অ্য়াকশন নেওয়া হোক। উদ্ধারকাজ দ্রুত হচ্ছে।”
সাতসকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল বহুতল সেকারণেই এই ঘটনা।
মেয়র জানিয়েছেন, কোনও অনুমতি না নিয়েই প্রমোটার বহুতলটি নির্মাণ করছিল। পুরো ঘটনার তদন্ত হবে। তবে আগে ঘটনাস্থল থেকে আটকে থাকাদের উদ্ধার করা জরুরি। কিন্তু কীভাবে পুরসভার নজর এড়িয়ে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে গার্ডেনরিচ মেয়রের নিজের এলাকা। সেখানে এই ধরনের ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
ফিরহাদ হাকিম বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে উদ্ধারকাজ আগে শেষ করতে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় সেখানে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের পৌঁছতে সময় লেগেছে। স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজ শুরু করে দিয়েছিল। মেয়র ফিরহাদ হাকিম আরও জানিয়েছেন, বাম আমল থেকেই বেআইনি ভাবে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এলাকায়। এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে পরিস্থিতি। তারপরেও কোন গলিতে কে বেআইনিভাবে নির্মাণ করছে তা বোঝা অত্যন্ত কঠিন। দোতলার অনুমোদন নিয়ে পাঁচ তলা বাড়ি বানানো হচ্ছিল। সেকারণেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
প্রসূন গুপ্তঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের দীর্ঘ ৪০ বছরের আলাপ। অত্যন্ত কাছের থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেছি। বহুবার তাঁর বাড়িতে গিয়েছি কাজে বা আমন্ত্রণেও। তাঁর সঙ্গে বহু সফরের অভিজ্ঞতা আছে কাজেই এখন, যখন বৃহস্পতিবার তিনি পরে গিয়ে মারাত্মক আহত হন, তখন বিভিন্ন মহল বিভিন্ন ভাবে তার বিবরণ দিচ্ছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, তিনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নাকি বাড়িতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গেলেন অথবা কেউ পিছন থেকে ধাক্কা দিলো?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংঘাতিক মানসিক শক্তির অধিকারী। যে কোনও মহিলার থেকেও সৃষ্টিশীল শক্তি তাঁর বেশি। রোজ বাড়িতে বা ট্রেডমিল মারফত প্রচুর হাঁটাহাঁটি করেন যা কল্পনাতীত। সেই তিনি সন্ধ্যায় হাটতে গিয়ে পরে গেলেন এবং মারাত্মক আঘাত পেলেন, বিষয়টি আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি পরে যাওয়ার পরেই তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ফেটে যাওয়া মাথায় তিনটি এবং নাকে একটি সেলাই করা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন, শুক্রবার দুপুর বারোটায় এই খবর পেলাম কালীঘাট সূত্রে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন এবং একটি শিশুর থেকেও কম খাওয়া দাওয়া করেন। সারাদিন চা, কখনও এক আধটা বিস্কুট কিংবা ছোলা ভাজা খান। যা খাওয়ার রাতে খান। ইদানিং যথেষ্ট টেনশনে রয়েছেন। সামনে নির্বাচন। এছাড়া দলের অন্দরে নানান চাপ ইত্যাদি আছেই। মমতা যা দশ বছর আগে পারতেন তা আজকেও একই ভাবে চালিয়ে যাবেন এটা ভাবাও ভুল। কাজেই নিজের শরীরের দিকে নজর তো রাখতেই হয়। যা তিনি পরোয়া করেন না।
বৃহস্পতিবার প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন একডালিয়ায়। খুবই ক্লান্ত লাগছিলো। সুব্রতবাবুর কথা স্মরণ করে ভীষণই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু একই সাথে তাঁকে ক্লান্তি সম্ভবত চেপে ধরেছিলো। ভাষণ দিতে গিয়ে আটকে যাচ্ছিলো কথা। আমার কেন মনে হচ্ছিলো উনি কি অসুস্থ বোধ করছেন? সব মিলিয়ে পুরাতন মমতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তারপর বাড়ি ফিরেই তো এই কান্ড।
তবে চিকিৎসকদের কথা, তাঁর মনে হতে পারে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু তেমনটি নয়। আসলে নাকি মাথা ঘুরে যাওয়ার সময়ে এতটাই বিশৃঙ্খল ছিল তাঁর মগজশক্তি যা মনে হতে পারে কেউ ধাক্কা দিয়েছে। সে যাই হোক না কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে বিভিন্ন রাজনৌতিক ও অন্য পেশার ব্যক্তিরা তাঁর সুস্থতা কামনা করেছে। আমরাও কামনা করি।
কপালে চারটে সেলাই নিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএসকেম হাসপাতালে চিকিৎসকরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড' কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ পিছন থেকে ধাক্কা। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বিভিন্ন মহলে। বাড়িতে কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে নানামহলে নানা প্রশ্ন। এরই মাঝে ‘পুশ ফ্রম বিহাইন্ড’-এর ব্যাখ্যা দিল এসএসকেএম।
এসএসকেএম-এর ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিষয়টা আদতে পিছন থেকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন তা একেবারেই নয়। উনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। সেই সময় কেউ ধাক্কা দিলে যেমন অনুভূত হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সেরকম মনে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকদের। সেটাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু সেটা কোনওভাবেই কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তেমনটা নয়।
পুলিস সূত্রে খবর, চিকিৎসকের তরফে কোনও ধাক্কা দেওয়া হয়নি জানানোই, আপাতত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ধাক্কা তথ্য না থাকলে অভিযোগ দায়ের করবে না পুলিস। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এসেছিলেন কলকাতা পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁর কপালে গুরুতর আঘাত ছিল। কপাল ফেটে রক্ত বেরোয়। হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এমআরআই, সিটিস্ক্যান করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইহই পড়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি শেয়ার করে তাঁর আরোগ্য কামনা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তাঁর চিকিৎসায় কার্ডিও,মেডিসিন, সহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। আপাতত শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল মুখ্যমন্ত্রীর। তবে আজ, শুক্রবার ফের শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
গুরুতর আহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বাড়িতে হাঁটাহাটি করার সময় আচমকা পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই সূত্রের খবর। কপাল ফেটে রক্ত বেরোতেই তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন তিনি। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আঘাত কতটা গুরুতর তা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকরা। এমআরআই, সিটি স্ক্যান করা হবে।
লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার সংবাদে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন অনুরাগীরা। এই দুঃসংবাদ জানানো হয়েছে তৃণমূলের সোশাল মিডিয়া পেজে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কপাল থেকে নাক বেয়ে রক্ত পড়ছে, হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রয়েছেন মমতা। ক্যাপশনে লেখা, 'আমাদের চেয়ারপার্সন গুরুতর আহত হয়েছেন। উনার জন্য প্রার্থনা করুন আপনারা।' তাঁর সুস্থতা কামনায় ভক্তরা ভিড় করেছেন হাসপাতালে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির উদ্বোধন করেন মমতা। এর পর তিনি বাড়ি চলে যান। ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরাই দ্রুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয়। এই নিয়ে পর পর বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনায় আঘাত পেলেন তিনি।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ভোটের দিন ঘোষণা হয়নি এখনও। তৃণমূল, বিজেপির পর এবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বামফ্রন্ট। প্রার্থী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেইন শরিকদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বৃহস্পতিবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক বৈঠক করে ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমের ১৩ জন এবং বাকি ৩ প্রার্থী শরিকদের। একনজরে দেখে নিন প্রার্থীতালিকা।
কোচবিহার: নীতীশচন্দ্র রায় (ফরওয়ার্ড ব্লক)
জলপাইগুড়ি: দেবরাজ বর্মন (সিপিএম)
বালুরঘাট: জয়দেব সিদ্ধান্ত (আরএসপি)
কৃষ্ণনগর: এস এম শাদি (সিপিএম)
দমদম: সুজন চক্রবর্তী (সিপিএম)
যাদবপুর: সৃজন ভট্টাচার্য (সিপিএম)
কলকাতা দক্ষিণ: সায়েরা শাহ হালিম (সিপিএম)
হাওড়া: সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় (সিপিএম)
শ্রীরামপুর: দীপ্সিতা ধর (সিপিএম)
হুগলি: মনোজিৎ ঘোষ (সিপিএম)
তমলুক: সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (সিপিএম)
মেদিনীপুর: বিপ্লব ভট্ট (সিপিআই)
বাঁকুড়া: নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত (সিপিএম)
বিষ্ণুপুর: শীতল কৈবর্ত (সিপিএম)
বর্ধমান পূর্ব: নীরব খান (সিপিএম)
আসানসোল: জাহানারা খান (সিপিএম)
তবে এদিন যে ১৬ টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানের ১৪ জনই ওনতুন মুখ। ভোট বৈতরণী পার হতেই তরুণ মুখেদের উপরেই ভরসা রেখেছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ম্যানেজাররা। তবে কয়েকটি আসন নিয়ে রীতিমত চাপের মুখে পড়তে হয়েছে বামফ্রন্টকে।
তবে এদিন ডায়মণ্ডহারবার কেন্দ্রের জন্য কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই কেন্দ্র থেকে নওশাদ দাঁড়াতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে। তবে এই বিষয়ে আলোচনা চলতেই পারে বলে দাবি বিমান বসুর। তবে জোট নয়, আসন সমঝোতার উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “বামফ্রন্টের শরিকদলগুলি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কোনওদিনই জোট ছিল না। ভোটে লড়ার জন্য আসন সমঝোতা হয়েছিল। এবারেও হতে পারে।”
ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। বেশ কয়েকটি আসনে বদলানো হলো প্রার্থী। ফলে বিদায়ী অনেক সাংসদই টিকিট পেলেন না। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় একঝাঁক নতুন মুখ। নজিরবিহীনভাবে লোকসভার ৪২ প্রার্থী নিয়ে র্যাম্পে হাঁটলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রার্থী তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, দেখে নিন একনজরে-
কোচবিহার থেকে লড়বেন- জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া
আলিপুরদুয়ার- রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বড়াইক
জলপাইগুড়ি- সাংসদ নির্মল চন্দ্র রায়
দার্জিলিং- গোপাল লামা
রায়গঞ্জ- কৃষ্ণ কল্যানী
বালুরঘাট- মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র
মালদা উত্তর- প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
মালদা দক্ষিণ- শানোয়াজ আলী রেহান
জঙ্গিপুর- খলিলুর রহমান
বহরমপুর- ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান
মুর্শিদাবাদ- আবু তাহের খান
কৃষ্ণনগর- মহুয়া মৈত্র
রানাঘাট- মুকুটমণি অধিকারী
বনগাঁ- বিশ্বজিৎ দাস
ব্যারাকপুর- পার্থ ভৌমিক
দমদম- প্রফেসর সৌগত রায়
বারাসত- ডক্টর কাকলি ঘোষ দস্তিদার
বসিরহাট- হাজী নুরুল ইসলাম
জয়নগর- প্রতিমা মণ্ডল
মথুরাপুর- যুবনেতা বাপি হালদার
ডায়মন্ড হারবার- তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর- সায়নী ঘোষ
কলকাতা দক্ষিণ- মালা রায়
কলকাতা উত্তর- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাওড়া- ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি- অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরামবাগ- মিতালী বাগ
তমলুক- আইটি সেলের রাজ্যের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য
কাঁথি- উত্তম বারিক
ঘাটাল- দীপক অধিকারী (দেব)
মেদিনীপুর- জুন মালিয়া
ঝাড়গ্রাম- কালিপদ সরেন
পুরুলিয়া- শান্তি রাম মাহাতো
বর্ধমান-দুর্গাপুর- কীর্তি আজাদ
আসানসোল- শত্রুঘ্ন সিনহা
বাঁকুড়া- অরূপ চক্রবর্তী
বোলপুর- অসিতকুমার মাল
বীরভূম- শতাব্দী রায়
বিষ্ণুপুর- সুজাতা খাঁ
“জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।” ব্রিগেড গ্রাউন্ডের মঞ্চে নতজানু হয়ে, মাথা ঠেকিয়ে উপস্থিত সাধারণ মানুষকে প্রণাম করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর কণ্ঠেই শোনা যায় এমন শ্লোগান।
গর্জে ওঠেন অভিষেক। ১২ দিনের মধ্যে ব্রিগেড করে দেখিয়ে দিলাম। কেউ বলেছিল একে একে দল ছাড়ছে, তৃণমূল দলটা উঠে যাবে। কিন্তু এই ব্রিগেড থেকেই বিজেপির বিদায়ের সূচনা হয়ে গেল। মঞ্চে দাঁড়িয়ে হুঁশিয়ারি তৃণমূল সেকেন্ড ইন কমাণ্ডের। শুধু তাই নয়, বাংলা বিরোধী বিজেপি, ইডি-সিবিআই ভোট দেবে না। তা বলেও আক্রমণ শানান তিনি।
আরও বলেন, 'জনগর্জন কী আজকে তো ট্রেলার দেখালাম। আসল সিনেমা নির্বাচনের দিন আপামর বাংলা দেখাবে বিজেপিকে।' একইসঙ্গে দিল্লিতে ‘ভূমিকম্পে’র ডাক দেন তিনি।
সুপার সানডে! লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে একেবারে কোমর বেঁধে প্রচারের ময়দানে নেমেছে বিজেপি-তৃণমূল। আজ, 'জনগর্জন সভা' তৃণমূলের। আর সেই সভায় যোগ দিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা ইতিমধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন ব্রিগেড ময়দানে। ক’দিন আগে বিজেপি রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২০টি আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছিল। সূত্রের খবর, আজকের সভামঞ্চ থেকে তৃণমূল ৪২টি আসনেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিতে চলেছে।
৪২ এ ৪২-এর লক্ষ্যে 'জনগর্জন সভা' থেকেই প্রচারে নেমে পড়বেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এদিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সভা থেকেই প্রার্থী তালিকা তৃণমূল সুপ্রিমো ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যে বাংলার ২০ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে চমক দিয়েছে বিজেপি। পাল্টা ব্রিগেডের ময়দানই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার করবেন সুপ্রিমো। ৪২ টি লোকসভা আসনেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৭ই মার্চ বিজেপিতে যোগদান করেছেন। আবার তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায়ও ঘাসফুল শিবির ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। পাল্টা বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে ঘরে তুলেছে তৃণমূল। ব্রিগেডের মঞ্চে আরও বড় কোনও চমক থাকতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
একেবারেই হাইভোল্টেজ রবিবার। একদিকে তৃণমূলের 'জনগর্জন' সভা। আর অন্যদিকে তৃণমূলের ব্রিগেডের পালটা আজ সন্দেশখালিতে সভা করবেন শুভেন্দু অধিকারী। উপস্থিত থাকবেন সন্দেশখালির মহিলারা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই সভা হবে।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। দিন ঘোষণা না হলেও একেবারে জোরদার প্রচারে নেমে পড়েছে ডান-বাম রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষ করে বাংলায় সন্দেশখালির ইস্যুকে কেন্দ্র করে লাগাতার বিক্ষোভ-মিছিল, আন্দোলনে নেমেছিল বঙ্গ বিজেপি। সন্দেশখালির বুকেই সভা করবেন আজ শুভেন্দু-সুকান্তরা।
এক ইঞ্চি ময়দান ছাড়তে নারাজ ঘাসফুল শিবিরও। ব্রিগেডের 'জনগর্জন' সভার মধ্যে দিয়ে একেবারে পুরোদমে লোকসভা নির্বাচনে নেমে পড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, ব্রিগেডের ময়দান থেকেই সন্দেশখালি ইস্যুতেও বার্তা দিতে পারেন তাঁরা, এমনটাই সূত্রের খবর।
নতুন রূপে তৈরি করা হয়েছে 'জনগর্জন' সভা মঞ্চ। ৩৩০ ফুট লম্বা র্যাম্প মূল মঞ্চের সামনে তৈরি হয়েছে। মূলত বিদেশের বিভিন্ন মিউজিক কনসার্ট কিংবা ফ্যাশন শো'তে এমন র্যাম্প দেখা যায়। সেই মঞ্চ তৈরি হয়েছে ব্রিগেডের। আর এই র্যাম্প ধরেই জনতার মাঝে পৌঁছে যাবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অন্যদিকে মূল মঞ্চ লম্বায় ৭২ ফুট, মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের পিছনে থাকছে এলসিডি। যাতে ব্রিগেডের সমস্ত কোণা থেকে সবাই দেখতে পারেন। শুক্রবার রাত থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা আসতে শুরু করেছে।
যদিও সন্দেশখালিতে সভার আগে মহিলাদের ভয় দেখানোর অভিযোগ সামনে আসছে। বিজেপির দাবি, সন্দেশখালির মানুষ যাতে বিজেপির সভায় না যেতে পারে সেজন্য ভয় দেখানো হচ্ছে। যদিও শাসকদলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, বাস কিংবা অন্য কিছু তো তৃণমূলের ব্রিগেডের জন্য পাওয়া যাবে না। সন্দেশখালির মহিলারাই মাঠ ভরাবেন বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। তাঁর সঙ্গে এদিন সন্দেশখালির সভায় থাকবেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।
বৃহস্পতিবার থেকে উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে একের পর বিস্ফোরক মন্তব্য করে চলেছেন কুণাল ঘোষ। শনিবার ফের সুদীপ প্রসঙ্গে বিস্ফোরক কুণাল। তিনি অভিযোগ করেছেন জেল হেফাজতে থাকাকালীন সুদীপ বন্দোপাধ্যায় বেশ কিছুটা সময় ছিলেন একটি ভুবনেশ্বরে বেসরকারি হাসপাতালে। কুণাল প্রশ্ন তুলেছেন সেই সময় সুদীপের হাসপাতালের বিল কে দিয়েছে? তিনি দিয়েছেন না কেউ তার হয়ে দিয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা? এই বিষয়টি নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কুণাল।
অবাক হওয়ার মত ঘটনা, এতদিন ধরে যে কুণাল ঘোষ ইডি ও সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য ও কটাক্ষ করেছেন। খড়্গহস্ত হয়েছেন, সেই কুণালই এবার সুদীপ প্রসঙ্গে ইডি ও সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। কুণালের মতে সুদীপের হাসপাতালের বিল নিয়ে ইডি ও সিবিআই তদন্ত করে দেখে যদি কোনও গরমিল পায় তাহলে সুদীপের ফের গ্রেফতার হওয়া উচিত। যদি কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিজে থেকে না এগোয়, তাহলে তিনি নিজে আদালতের দ্বারস্থ হবেন এবং এই বিষয়ে তদন্তের আবেদন করবেন, এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন কুণাল। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদের পাশাপাশি দলীয় মুখপাত্রের পদ ছাড়লেও তিনি যে দলের জন্য পথে নেমে লড়াই জারি রাখবেন তার বার্তাও শনিবার দিয়েছেন কুণাল।
শুধু কুণালই নন, এবার কুণালের সমর্থনে তৃণমূলের আর এক বিধায়ক, তাপস রায়। ঠিক কি বললেন তিনি। তিনিও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে এলেন জনসমক্ষে। কুণাল ঘোষ একজন সাংবাদিক তার যুক্তি তো ফেলে দেওয়া যায়না। কয়লার টাকা নিয়ে খুব ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেছেন কুণাল।
কুণালের মতই তাপসের গলাতেও অভিমানের সুর। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের দুই দুঁদে নেতার মন্তব্যেই হাওয়া গরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘাসফুলের অন্দরের কোন্দলের যে গুঞ্জন ছিল রাজনীতির বাতাসে তাই এই দুই নেতার মন্তব্যে প্রতিধ্বনিত হল। লোকসভা নির্বাচনের আগে যা কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে নিয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেসকে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রসূন গুপ্তঃ সুখের দিনের বন্ধু এবং দুঃখে পলায়নের কথা তো চিরকালীন। রাজনীতিতে এর যোগ সবচাইতে বেশি। ৭৭-এ বামেরা মোটেই পূর্বতন কংগ্রেসীদের তাদের দলে নিয়ে নেয়নি, কারণ এটা তাদের ট্র্যাডিশন নয়। কিন্তু ২০১১-তে তৃণমূল আসার আগে থেকেই বাম দলগুলি থেকে গুন্ডা, বদমাস অথবা সমাজবিরোধীরা চেষ্টা করলো নতুন দলে আসার জন্য। শুধু তারাই নয়, নেতাদেরও জার্সি বদল শুরু হলো। ওই সময়ে তৃণমূলে প্রবল ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন মুকুল রায়। তিনি বাঁধন ছাড়া এই দলকে আশ্রয় দিয়েছিলেন দলে। প্রতিবাদ এসেছিলো ভীষণভাবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। তাঁর এই প্রয়াসকে পাথেয় করে কমতি যাননি অন্য নেতারাও। যথা আপাতত জেলে থাকা বালু মল্লিক।
আজকে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বুঝতে পারছেন কি সর্বনাশটি সংগঠিত হয়েছে। হাতে গরম প্রমাণ সন্দেশখালি। এরা সব সুখের পায়রা। এদেরই এক দল তৃণমূলে পাত্তা না পেয়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলো। বলতে গেলে বিজেপির কর্মী সমর্থকদের বেশিরভাগটাই প্রাক্তন সিপিএম। বাম থেকে রাম। এছাড়াও এমন বহু যুবক বা মধ্যবয়সী ২০১১-র পরে তৃণমূলে এসেছে। এরা জানেই না বা জানতে ইচ্ছুক নয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি প্রচন্ড লড়াই লড়েছিলেন সিপিএমের বিরুদ্ধে। অনেকেই নিজেদের আখের গোছাতে দল করছে। অবিশ্যি তৃণমূলের প্রবল শক্তির মধ্যে একটি দুর্বল স্থান সোশ্যাল নেটে তাদের ভূমিকা। যেখানে বিজেপি তুমুল শক্তিশালী বা শূন্যে থাকা সিপিএমও। দেখা গিয়েছে কয়েক মাস আগে তৃণমূল একটি আইটি সেল খুলেছে। চেষ্টা করছে তারা প্রচার করতে দলের, কিন্তু সুখের পায়রা এখানেও ঢুকে পড়েছে। তারা কমিটিতে না থাকলেও দাবি করছে তারা নাকি প্রচুর প্রচার করছে দলের হয়ে। আসলে কিছুই নয়। ওই জানান দিতে যে 'আমি দিদির লোক'।
গতকাল দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ জানালেন যে, আগামী ১০ মার্চ সকল ১১ টাতে ব্রিগেডে মহা সমাবেশ। এদিকে ওই দিন সন্ধ্যায় মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ। কাজেই একদল ওই যুবকরা বেজায় ক্ষুব্ধ। তারা পোস্ট করে দলেরই সমালোচনা করছে। এই নব্য তৃণমূলীদের কতটা ভরসা করা যায় তা নিশ্চিত ভাবনার।
সন্দেশখালির তপ্ত ভূমে পা রাখেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। যাত্রাপথে বাধা দেয় পুলিস। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বকে। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। এরই মাঝে উঠে আসে অন্য এক ছবি। পুলিস ফোর্সের পোশাকে মুখে কালো কাপড় বাধা বেশ কয়েকজন। পুলিস পিকেটিংয়ের মাঝে এরা কারা? পুলিসের হাতে এত বড় বড় নখ কেন? প্রশ্ন ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের।
বাধা পেয়ে আচমকা মীনাক্ষী বলে ওঠেন, “এই তোমার নাম কী? তোমাদের নেমপ্লেট কোথায়?” পরক্ষণেই বলে ওঠেন, “ছবি তোল, পুলিসের পোশাকে তৃণমূল কর্মীরা এসেছেন। এরা পুলিস তো? মুখ ঢাকা কেন?” পাশ থেকে বাম কর্মীরা মহিলা পুলিস কর্মীদের নখ দেখে মন্তব্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে মীনাক্ষী বলেন, “এদের নখ বড় কেন? নেলপলিশ পরে আছে পুলিস কর্মী? এরা কেউ পুলিসের লোক নাকি। এদের নখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এরা পুলিসের কর্মী নয়। সব তৃণমূল কর্মী।”
নন্দীগ্রাম আন্দোলনে পুলিসের পোশাকে হামলা করেছিল সিপিএম ক্যাডাররা। পাল্টা ইতিহাস ঘেঁটে কটাক্ষ শাসক নেতা শান্তনু সেনের। অন্যদিকে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, কালো কাপড়ে সন্দেহভাজন কারা? তদন্ত করবে না পুলিস। মানবাধিকার কমিশনে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
পুলিসের মধ্যে মিশছে আততায়ীরা? সত্যিই কি অন্য কেউ তপ্ত করছে সন্দেশখালি? মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগ কি অন্য অধ্যায়ের সূচনা করবে সন্দেশখালিতে? অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না, সেদিকে নজর থাকবে।
শনিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছেন ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। প্রথমে ছদ্মবেশে সন্দেশখালি ঢুকলেও পুলিসি বাধার মুখে পড়েন বাম নেত্রী মীনাক্ষী। ১৪৪ ধারার যুক্তি দেখিয়ে গ্রামে যেতে বাধা দেওয়া হয় মিনাক্ষী-সহ সিপিএমের যুব নেতানেত্রীরা। তবে শনিবার সকাল থেকেই গ্রামে ঘুরছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। তাঁরা কীভাবে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন, প্রশ্ন মীনাক্ষীর।
শনিবার সকালে মুখ ঢাকা দিয়ে পুলিসের নজর এড়িয়ে সন্দেশখালিতে পৌঁছন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। টোটো করে গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। কথা বললেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের বাড়িতেও যান মীনাক্ষী। দুপুর দেড়টার পর মিনাক্ষীদের পুলিস আটকায়। তার আগেই বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন মিনাক্ষীরা। মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বাম নেত্রী। পুলিসের তরফে সাফ জানানো হয়, যেহেতু সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গাতে ১৪৪ ধারা রয়েছে তাই সেখানে একসঙ্গে এত লোকজন নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। তারপরই পুলিসের কাছে লিখিত অর্ডার দেখতে চান মীনাক্ষীরা। যদিও পুলিস কোনওরকম অর্ডার দেখাতে পারেনি।
এদিকে, শনিবার গ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালিতে যান সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। পুলিসি বাধা পেয়ে মীনাক্ষী দুই মন্ত্রীকে ‘শাহজাহানের লোক’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ, সুজিত শাহজাহানের দলের লোক। ওঁরা মানুষকে ভয় দেখাতে এসেছেন। যখন জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল, তখন ওঁরা কোথায় ছিলেন? ‘দুয়ারে সরকার’ কোথায় ছিল?’’
মীনাক্ষী আরও বলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি থাকলে আমি একা যেতে পারি। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তো বাধা নেই। আমরা যেতে চাইছি। যেতে দিচ্ছে না। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আছে। পুলিসের সঙ্গে কথা বলতে চাই। মানুষ জমি ফেরত চায়। পুলিশের শাস্তি চাই। পুলিশ মানুষের কথা শোনে না। আমরা সে বিষয়ে কথা বলতে এসেছি। জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিস তা বার করে দিক।’’ থানায় যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয় মীনাক্ষীদের। সন্দেশখালি ঘাটের কাছে বসে পড়েন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগেও সন্দেশখালি যাওয়ার পথে পুলিসি বাধার মুখে পড়েন মীনাক্ষীরা।