প্রসূন গুপ্ত: বৃহস্পতিবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুরু চতুর্থ তথা শেষ টেস্ট। আহমেদাবাদের এই টেস্টে ভারতকে জিততেই হবে। ইতিমধ্যে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারত যদি এই টেস্ট জিততে পারে তবে ১২ পয়েন্ট পেয়ে লর্ডসে যেতে পারবে। অবশ্য ড্র করলে ৪ পয়েন্ট পেয়ে একটা ক্ষীণ আশায় তাকিয়ে থাকবে নিউজিল্যান্ডের দিকে। আহমেদাবাদের প্রবল গরমে খেলা শুরু হয়েছে। অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপাতত মধ্যহ্নভোজের বিরতি পর্যন্ত ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ অস্ট্রেলিয়া (এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)। ক্রিজে রয়েছেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। প্রথম দিনের খেলা শেষ হতে হাতে এখনও ৩৭ ওভার।
এ তো খেলার মাঠের কথা। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগে অনেক বিতর্ক হয়েছে আহমেদাবাদ টেস্টকে ঘিরে। আগের তিন টেস্ট নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় একাধিক প্রশ্ন তুলেছে আইসিসি। তাদের প্রশ্ন, বিশেষ করে গত ইন্দোর টেস্টকে ঘিরে। সেই টেস্ট একেবারে ব্যাটেরদের বদ্ধভূমি ছিল। ঝুরঝুরে পিচ, ব্যাট নাকি করা যায়নি প্রথম দিন থেকে। বাস্তবিক যে, যেকোনও ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ তার নিজের মতো উইকেট তৈরি করতে পারে। কিন্তু তা বলে এই রকম ঘূর্ণি পিচ নিয়ে প্রশ্ন বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থার।
কোচ দ্রাবিড় যদিও জানিয়েছেন, এসব পিচে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি-সহ ৩০০র বেশি রান করেছেন। বিরাট কোহলির রানও ২০০-র বেশি, তবে প্রশ্ন উঠছে কেন। এই বিতর্ক যদিও ঢাকা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রী। এবার তিনি রয়েছেন কমেন্ট্রি বক্সে।
শাস্ত্রী, ইন্দোর টেস্টে ভারত বিপাকে পড়ার পর ধারাভাষ্যে বলেছেন, অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল নাকি রোহিত বাহিনীর। এটাই নাকি টেস্টে হারার কারণ।এই কথায়, শাস্ত্রীর পাল্টা রোহিত জানান, পরপর দুটি টেস্ট জেতার পর নিজেদের আত্মবিশ্বাস আসতেই পারে। যারা বলে (পড়ুন রবি শাস্ত্রী) আত্মতুষ্টি, তাদের কথা "জঞ্জাল", এভাবেই রোহিত শর্মা শাস্ত্রীকে ডাস্টবিনে ফেলেছেন। আপাতত খেলায় মন ভারতের। পিচ স্পিনের হলেও প্রথম থেকেই সাহায্য পাওয়া যাবে কম। সেকারণে ভারতীয় দল সেরা ফাস্ট বোলার শামিকে ফিরিয়ে এনেছে। বাংলার পেসার কিন্তু দ্রুত একটি উইকেট পেয়েছেন। এবার নজরে বাকি চার দিন।
আগের দুই টেষ্টের মতোই তৃতীয় টেস্টেও ইন্দোরে ঘূর্ণি পিচ করেছিল ভারত। আগের দুই টেস্টে ভারতের কাছে দুরমুশ হয়েছিল প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। দিল্লির টেষ্টের পরেই কামিন্স দেশে ফিরে যান মায়ের অসুস্থতার জন্য। অনেকেই বলেছেন, অসুস্থ হওয়াটা নাকি বাহানামাত্র, আসলে ভারতে এসে সবকটি টেস্ট হেরে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার দায়ভার নিতে চায়নি কামিন্স। অবশ্য তা একদিকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ভালোই হয়েছে, নেতৃত্বে ফিরেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ।
স্মিথকে কোনও একটি দোষের জন্য শাস্তিস্বরূপ নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। এটা বাস্তব স্মিথ কিন্তু যেমন ভালো ব্যাটার তেমনই ভালো অধিনায়ক। কামিন্স ফিরে আসাতে ভালোই হল স্মিথের পক্ষে। ভারতের উইকেট সম্বন্ধে ভালো ধারণা রয়েছে তাঁর। আইপিএলে অধিনায়কও হয়েছেন। ভারতের পিচ বা উইকেট নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, এ কোন ধরণের উইকেট যেখানে ব্যাট ধরতেই পারছেন না।
দুই দলের খেলোয়াড়রা। আইসিসি-তে অভিযোগ দেওয়ার কোথাও হয়েছে। ভারতের বক্তব্য এবিষয়ে পরিষ্কার যে, অস্ট্রেলিয়ায় গেলে গ্রিন টপ উইকেট দেওয়া হয় যেখানে গোলার মতো ফাস্ট বোলাররা বল করে, সেখানে ভারতে উইকেট স্পিনারের উপযুক্ত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। যদিও ভারতে বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলার রয়েছে। কিন্তু ওই বল খেলে অভ্যস্ত অজিরা, কাজেই তাদের বিপাকে ফেলার উপায় স্পিনিং ট্র্যাক।
বুধবার ইন্দোরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার দল মাত্র ১০৯ রানে সবাই আউট হয়ে যায়। বেশি রান করেন বিরাট কোহলি মাত্র ২২। অস্ট্রেলিয়া এবার ভারতে ৪ জন স্পিনার নিয়ে এসেছিল। ম্যাথু কুনেমান ৫ উইকেট, নাথান লায়ন পান ৩ উইকেট এবং টড মার্কি একটি। এরপর ব্যাট করতে নেমে কিন্তু এক উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ভারতের রানকে টপকে যায়।
কিন্তু তারপরেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন জাদেজা। তিনি পরপর ৩ উইকেট এবং সর্বোপরি ৪ উইকেট দখল করেন। আপাতত অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ১৫৪। সেরা ব্যাটাররা সবাই আউট। কিন্তু কোনওভাবে যদি প্রথম ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রানের লিড নিতে পারে অজিরা তবে ভারত চাপে পড়বে। কাল এই টেস্টের দ্বিতীয় দিন।