Breaking News
Convocation: যাদবপুরের পর এবার রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সমাবর্তনে স্থগিতাদেশ রাজভবনের      Sandeshkhali: স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন 'সন্দেশখালির বাঘ'...      High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ হাইকোর্টের      Sandeshkhali: সন্দেশখালিতে জমি দখল তদন্তে সক্রিয় সিবিআই, বয়ান রেকর্ড অভিযোগকারীদের      CBI: শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ! তদন্তে সিবিআই      Vote: জীবিত অথচ ভোটার তালিকায় মৃত! ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ধূপগুড়ির ১২ জন ভোটার      ED: মিলে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর, শ্রীঘই হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ ইডির      Ram Navami: রামনবমীর আনন্দে মেতেছে অযোধ্যা, রামলালার কপালে প্রথম সূর্যতিলক      Train: দমদমে ২১ দিনের ট্রাফিক ব্লক, বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, প্রভাবিত কোন কোন রুট?      Sarabjit Singh: ভারতীয় বন্দি সরবজিৎ সিং-এর হত্যাকারী সরফরাজকে গুলি করে খুন লাহোরে     

Fireworkshop

Explosion: রাজ্যে সিংহভাগ বাজি কারখানাই অবৈধ, বৈধ ক'টি! কাদের মদতে এত বাড়বাড়ন্ত?

মনি ভট্টাচার্য: 'একটা দুটো পয়সা পেলে বিকিয়ে দেব দেশও।' কবি শঙ্খ ঘোষের লাইনটা এই বেআইনি বাজি (FireCracks) কারখানায় (Fireworkshop) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সময়ে বড্ড প্রাসঙ্গিক। কারণ কেবল পুলিস (Police) ও প্রশাসনের (Administration) মদতে গোটা রাজ্যে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বাজির ব্যবসা ও কারখানা। শুধু তাই নয় শুনলে আঁতকে উঠবেন পশ্চিমবঙ্গে আইনি বাজি কারখানা নেই বললেই চলে। চারিদিকে যত বাজি কারখানা আছে তাঁর সিংহভাগই বেআইনি। সিএন ডিজিটালকে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে মোট বৈধ বাজি কারখানা মাত্র ৭টি। কিন্তু সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রকৃত বাজি কারখানার সংখ্যা আরও অনেক গুণ বেশি। কিন্তু তা সবই অবৈধ। পূর্বেও এই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে। এবার সেটা সীমা ছাড়িয়েছে। এরপরেও কীভাবে! কাদের মদতে বেআইনি বাজি ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে সে প্রশ্নই উঠছে?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বাজি একপ্রকার নিষিদ্ধ। সব বাজি নিষিদ্ধ না হলেও পশ্চিমবঙ্গে যে ধরণের বাজি তৈরী হয় তা সবই প্রায় বেনিয়মে তৈরী ও নিষিদ্ধ। তবে আইনি বাজি কি নেই? ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, সবুজ বাজি অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব বাজি কেবলমাত্র আইনি বাজি। কিন্তু কি এই সবুজ বাজি! সিএসআইআর এর অনুমোদিত এই বাজি কোনওভাবেই বেরিয়াম নাইট্রেট নামক বিষাক্ত যৌগ দিয়ে তৈরী হবে না। পাশাপাশি কার্বন ব্যবহার করতে হবে আর্সেনিক ও অন্যান্য যৌগের বদলে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, এই বাজির আওয়াজ ৯০ থেকে ১০০ থেকে ডেসিবেলের মধ্যে হতে হবে। যেখানে সাধারণ বাজির আওয়াজ ১৭০ থেকে ২০০ ডেসিবেল হয়। ন্যাশনাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে সফল, শ্বাস ও স্টার এই তিন প্রজাতির সবুজ বাজি হয়। ওই সূত্র অনুযায়ী, আমাদের রাজ্যে যত বাজি বিক্রি হয় সবই প্রায় বেআইনি উপায়ে তৈরী।


বৈধ বাজি বা অবৈধ বাজি এগুলো হয়ত অনেকেই জানেন, কিন্তু অবৈধ বাজি কারখানা কোনটা? আর বৈধ বাজি কারখানাই বা কোনটা? এগরার পর বজবজ, পরের দিনই মালদহে। পরপর এই বাজি কারখানা বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। এগরা বিস্ফোরণের পরেই খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই এগরার বাজি কারখানার মালিক ভানু বাগ, বাজির দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বাজি কারখানা চালাচ্ছিলেন। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এত বড় একটা অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে, আর পুলিসের কাছে খবর নেই? এগরার বিস্ফোরণের দিন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিস সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, ভানুর কারখানা অবৈধ। এ বিষয়ে সিএন-ডিজিটালের তরফে পুলিস সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয় ওই জেলায় ক'টি বৈধ বাজি কারখানা আছে? এ বিষয়ে কিন্তু কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিস সুপার অমরনাথ কে। যদিও তদন্তে নেমে এগরা থেকেই প্রায় ৫০ কেজি বাজি ও মশলা উদ্ধার করেছে পুলিস।


এখানেই শেষ নয়, ন্যাশনাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বলছে, সবুজ বাজি তৈরির সমস্ত নিয়ম মেনে, এনফোর্সমেন্ট, পিইএসও, সিএসআইআর, দমকল সহ রাজ্যের সমস্ত নিয়ম মেনে বাজি কারখানা তৈরী করলে ওই কারখানার লাইসেন্স পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে ওই কারখানাকে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, সবুজ বাজি তৈরী ব্যবসা হলেও, সেটি ছোট ব্যবসা অর্থাৎ ছোট কোনও কটেজে বা ছোট ঘিঞ্জি জায়গায় এই কারখানা করা যাবে না। বাজির কারখানা হতে হবে খোলা মেলা জায়গায়। এছাড়া বিস্ফোরক মজুতের ক্ষেত্রে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের নিয়ম, কোনও কারখানায় বা দোকানে কোনও ভাবেই ১৫ কেজির বেশি বিস্ফোরক বা বাজির মশলা মজুত করা যাবে না। দাহ্য যৌগগুলির মধ্যে পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার ও চারকোল রয়েছে যা বিভিন্ন মিশ্রণে বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। এখন প্রশ্ন উঠছে এই নিয়ম মেনে সবুজ বাজি তৈরির কারখানা এ রাজ্যে ক'টি আছে?

এ উত্তর জানতে সিএন-ডিজিটালের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের সঙ্গে। তিনি উত্তর দেন নি। যোগযোগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের মেম্বার সেক্রেটারি রাজেশ কুমারের সঙ্গে, তিনি এর দায় ঠেলেছেন চেয়ারম্যানের দিকে। বুধবার সংশ্লিষ্ট দফতর অর্থাৎ জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন,"ঠিক এই মুহূর্তে রাজ্যে ৭টি বৈধ বাজি কারখানা রয়েছে। যেখানে ২০ টি কারখানা সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছিল।" তিনি আরও জানান, 'যে কারখানাগুলি বিস্ফোরক মজুতের অনুমতি পেয়েছে সেই কারখানাগুলিকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি কারখানাগুলির অনুমোদন নিয়ে তদন্ত চলছে।'

এগরা, বজবজ, মালদহে রাজ্যের তিন জায়গায় বাজি বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এখনও অবধি উদ্ধার করা হয়েছে দেড় লক্ষ কেজি বাজি ও বাজির মশলা। এখন প্রশ্ন, রাজ্যে এত অবৈধ বাজির কারখানা রমরমা, সে খবর কেন পুলিসের কাছে নেই? কেন আগে সতর্ক হল না পুলিস? কেন সামান্য নিয়ম ভেঙে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করছে কারখানা গুলি? এ অনিয়ম-বেআইনি কারখানায় বিস্ফোরণে ১৬ টি তরতাজা প্রাণের মৃত্যুর দায় কার?


গোটা ঘটনায় অবশ্য বেজায় চটেছেন রাজ্য পুলিসের ডিজি। মঙ্গলবার জেলার পুলিস সুপারদের নিয়ে বৈঠকে সুপারদের ধমক দেন এবং জানতে চান জেলায় কোথায় কোথায় বাজি কারখানা আছে, সেখবর কেন পুলিসের কাছে থাকছে না? আসলে পুলিস সবই জানে। এমনটা নিজস্ব বক্তব্য নয়, এমন দাবি করেছে এগরার স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, পুলিস প্রতিমাসে টাকা পেত ভানুর থেকে। টাকা পৌঁছে যেত স্থানীয় নেতৃত্বের কাছেও। তাহলে কী দাঁড়াল! পুলিস এবং প্রশাসনের মদত ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এত বড় অপরাধ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এ কথা মানছেন রাজনৈতিক ও পুলিস মহলও। এবার শঙ্খ ঘোষের কবিতার লাইনের সঙ্গে কিছু মিল কি খুঁজে পাচ্ছেন?

11 months ago