করোনাকালে মদ (liquor) বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। লকডাউন (Lockdown) হওয়ার আগে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল মদের দোকানের বাইরে। আর লকডাউন খোলার পর তো কার্যত মদ কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বলা যায়, মহামারীকালে মদ বিক্রির রেকর্ড ভেঙেছে একাধিক রাজ্য। বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে (Delhi)। রঙের উৎসবের দিনও রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে দিল্লিতে। ফলে কোষাগারে যে ভালো পরিমাণে টাকা ঢুকল তা বলাই বাহুল্য।
আবগারি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২৩৪ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত অন্যান্য সময়ের থেকে অনেকটাই বেশি। দিল্লিতে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫৯ কোটি টাকার ব্যয়ে মোট ২৬,০২,০৪৩ বোতল বিক্রি হয়েছে মদ। যা গত ডিসেম্বরের বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষে বিক্রি হওয়া পানীয়র মূল্যকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আর এবার দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে মাত্র একটি সপ্তাহে মদ বিক্রি করে সরকারের আয় হয়েছে ৬১০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুল্কের পরিমাণই প্রায় ১১০০ কোটি টাকা।
জানা গিয়েছে, মোট মদ বিক্রির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিক্রি হয়েছে বিয়ার। মোট মদ বিক্রির মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বিয়ার বিক্রি হয়েছে দোলের দিন। আবার বিয়ারের পরেই বিক্রি হয়েছে ভোদকা।
বাংলায় “খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল” হোক বা হিন্দিতে “বালাম পিচকারি” হোক, বসন্ত উৎসব কিন্তু রঙ সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। দোল বা হোলির (Holi) কথা বললেই চলে আসে রাধা-কৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র মথুরা-বৃন্দাবনের প্রসঙ্গ। সারা বিশ্ব থেকে বহু মানুষ আসেন মথুরা-বৃন্দাবনের হোলি উৎসবে শামিল হতে। বৃন্দাবনে ধুমধাম করে পালিত হয় রঙের উৎসব। আর এবারে সেই আনন্দে যোগ দিতে গিয়েছিলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। তাও আবার ৯ বছর পর গায়ে দোলের রঙ লাগালেন অভিনেত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি নিজেই পোস্ট করেছেন।
বৃন্দাবনে রং খেলার ছবি পোস্ট করে স্বস্তিকা লেখেন, “৯ বছর পর দোল খেললাম। ২০১৪ সালের পর আর রং ছুঁইনি, বাড়ি থেকেও বার হইনি। আগের এতগুলো বছরের সমস্ত পাওনা এক দোলেই মিটিয়ে নিলাম। আগামী দিনের জন্যও বেশ কিছু বাড়তি রং তুলে নিলাম। রাধে রাধে।”
ছবিতে একেবারে রাধার মতোই লাগছিল স্বস্তিকাকে। কখনও হলুদ শাড়িতে আবার কিছু ছবিতে সাদা শাড়িতে রঙিন হয়ে উঠেছেন নায়িকা। এত বছর পর যে মনে রঙ লেগেছে তা ছবিতে ঝরে পড়া হাসি দেখে স্পষ্ট। এর পিছনে কী অন্য কোনও কারণ রয়েছে?
প্রতি বছর দোল উৎসবের (Dol Utsav) একসপ্তাহ আগে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাওড়ার (Howrah) উনসানি শিউলিপাড়ায় মট-ফুটকড়াই তৈরির কারিগররা। তবে এ বছর কারিগররা মট তৈরি করলেও সাধারণ মানুষের কেনার চাহিদা আগের মতো আর নেই। দোল উৎসবের আগে মট তৈরির কাজ আজও অপরিহার্য। দোলের আগে বিক্রেতারা গোলাপী, হলুদ, সাদা-সহ রঙবেরঙের মটের পসরা নিয়ে দোকান সাজান। এমনকি দোকানগুলিতে রাখা থাকে ফুটকড়াইও।
গোটা বছর ধরে হাওড়ার বাতাসা তৈরির কারখানাগুলোতে গুড় ও চিনির বাতাসা-সহ নকুল দানা এবং মুড়কি তৈরি হয়। কিন্তু দোলের দু'সপ্তাহ আগে কারিগররা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন মট, ফুটকড়াই এবং মুরকি তৈরির কাজে। কারণ দোলযাত্রার দিনে মন্দিরে এবং বাড়িতে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহকে বাতাসা, মট এবং ফুটকড়াই দিয়ে পুজো করার রীতি বহু পুরনো। আবার পুজোর পর এগুলি ঘরে ঘরে প্রসাদ হিসেবেও বিতরণ করা হয়। বাঙালির নিজস্ব মিষ্টি হিসাবে চাহিদা মেটাতে এই বছরেও একই ছবি দেখা গেল কারখানাগুলিতে।
চিনির গাঢ় রস মিষ্টির ছাঁচে ফেলে কারিগররা তৈরি করছেন রকমারি মট এবং বাতাসা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, আগের থেকে মট এবং ফুটকড়াইয়ের চাহিদা কমেছে। এক বিক্রেতা জানিয়েছেন, কোভিডের আগে বিক্রির পরিমাণ ভালো ছিল। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র পুজো দেওয়ার জন্যই কম পরিমাণে মট কিনছেন সাধারণ মানুষ। দোকানদারদের অনুমান, মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণে বিক্রির পরিমাণ কম। তবে সাধারণ মানুষ মট কেনা কমালেও ফুটকড়াইয়ের চাহিদা বেশ ভালোই বজায় রেখেছে। এমনকি দোলের পরেও চলে ফুটকড়াই বিক্রি।
সৌমেন সুর: ভারতজুড়ে হোলি আর সমগ্র বাংলাজুড়ে এই দোল উত্সবে রঙ আর আবীরের খেলায় মেতে ওঠেন সবাই। এই দোল উত্সব একসময় ছিল রাজ-রাজড়া জমিদার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। খেলতেন নবাব-বেগমরাও। ১৪৮৬ সালে এক ফাল্গুনী পূর্ণিমায় দোলযাত্রার দিন সন্ধ্যাবেলায় আর্বিভূত হয়েছিলেন এক মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব। চৈতন্যদেবের নগরসংকীর্তন, দোল উত্সবে ফাগ ও আবীরের সঙ্গে সেই নগরকীর্তন অন্য মাত্রা পেতো।
দোলে আবীর একটা মস্ত পার্ট। ভীষণ ঐতিহ্যময়, বেশ লাগে-এই আবীর খেলায়।রঙ খেলা ছাড়া এই আবীর কোথা থেকে এলো? আবীর কীভাবে তৈরি হয়? আবীরের তত্ত্ব-তালাশ জানতে প্রথমেই মনে পড়ে, রাজস্থানের এক উচ্চবিত্ত পরিবারের পদম সিং ১৫০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় কলকাতায় আছেন। কলকাতায় সর্বপ্রথম তার ঠাকুরদা উদয়চাঁদ মানত আবীরের ব্যবসা শুরু করেন। বড়বামরের উদয়চাঁদ রঞ্জিত সিং-এর দোকানে ৫০ বছর আগেও জার্মানি থেকে রঙ আসতো, গুণগতমান ভাল রাখার জন্য। এছাড়া বুড়ো প্রোডাক্টের প্রদীপ সাঁতরা।বয়স ৫০। আবীর তৈরিই তার ধ্যান-জ্ঞান।
প্রদীপবাবুর আবীর নির্মাণ পদ্ধতি একটু আলাদা। একটা গামলায় ফ্রেঞ্চচক, রঙ, জল, বোরিক অ্যাসিড ও সেন্ট মিশিয়ে ভাল করে মেখে রোদে দেওয়া হয়। গন্ধের জন্য ব্যবহার করা হয় জেসমিন-রোজ। আর চামড়ার ক্ষতি না হওয়ার জন্য বোরিক অ্যাসিড। দোল সত্যি একটা উত্সব বটে। বিশেষ করে আবীর খেলা। আবীর ছুঁয়ে শপথ করি আমরা-রঙ হোক ঐক্যতায়, সহমর্মিতায়, আমরা যেন একে অপরের হাত ধরে চলতে পারি। বসন্তের হাওয়ার পূর্ণ হোক আমাদের নির্মল মন।
তথ্যঋণ/ সুজাতা হালদার
ভোরের দিকে মেঘলা আকাশ। একটু বেলা বাড়তেই রোদের তেজ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার (Temperature) পারদ। কলকাতা (Kolkata)-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় দেড় ডিগ্রির বেশি। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দিনের এবং রাতে তাপমাত্রায় (Weather) সেরকম কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টা পর থেকে দিনের এবং রাতে তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়বে। অর্থাৎ গরম একটু বেশি অনুভূত হবে। দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে খুব হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। বাকি অন্য জায়গাগুলোতে শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে বলে খবর।
দোলের দিনে কলকাতা ও আশেপাশে এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। গরমেই কাটবে রঙের উৎসব।