সন্দেশখালি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার সঙ্গে মোট চারটি মামলা একত্রে শুনানি করতে চায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু সন্দেশখালিতে এখনও শাহজাহানের ভয় বর্তমান। সেখানে এখনও তার অনেক ছায়ারা ঘোরাফেরা করছে। মানুষের হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘিত হয়েছে। এখনও শান্তি ফেরেনি সন্দেশখালিতে। তাই সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরানো নিয়ে চিন্তিত আদালতের তৈরি করা আদালত বান্ধব এবং মামলার আবেদনকারীরা। তাঁরা আদালতে দাবি করেন, সন্দেশখালিতে দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনার। সার্বিক শান্তি ফেরাতে প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানান তাঁরা। প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার বার্তা দেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। আগামী ৪ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।
অন্যদিকে, শেখ শাহজাহানের আইনজীবী দৃষ্টি আকর্ষণ প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের প্রেক্ষিতেই গ্রেফতার হয় শেখ শাহজাহান। তাই তাঁর জামিনের বিষয়ে শুনানি এখানেই করা হোক বলে আদালতে আবেদন করেন শাহজাহানের আইনজীবী। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন শেখ শাজাহানকে জামিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাতে হবে।
সন্দেশখালির ঘটনায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জিও বৃহস্পতিবার জানানো হয় কোর্টে। বিশেষত যারা এলাকায় থাকেন তাদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা প্রয়োজন। যেহেতু সিবিআইয়ের হাতে এখন তদন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। সিবিআইকেই এই মামলায় যারা সাক্ষী হিসাবে কোনও বয়ান দিয়েছে বা কথা বলেছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নির্দিষ্ট আইন ও গাইডলাইন মেনে। এই আবেদনের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন তদন্তকারীদের এই ব্যাপারে আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের।
আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল এদিন আদালতে জানান সন্দেশখালিতে প্রায় ৮০ জন আক্রান্ত রয়েছেন, যাদের অভিযোগ রয়েছে। একথা শোনার পর, আক্রান্তদের বিষয়ে জানাতে প্রধান বিচারপতি একটা আবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন তাঁর বেঞ্চে বিচারাধীন মামলায়। এলাকার মানুষ যারা আক্রান্ত বলে অভিযোগ জানাতে চান তারা তাদের পরিচয় এবং কিভাবে আক্রান্ত ওই আবেদনে স্পষ্ট করে জানাতে হবে।
রাজ্যসভায় (RajyaSabha) পেশ করা হল আরও এক বিল। এবার থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (Election Commissioner) ও নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন সদস্যের প্যানেলে থাকবে না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice)। এবারে এই বিষয়েই লোকসভায় পেশ করা হল বিল। অর্থাৎ আজ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেশ করা হল 'নির্বাশন কমিশনার বিল ২০২৩'। এই বিল পাশ হয়ে গেলেই এটি আইনে পরিণত হবে।
গত মার্চ মাসেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছিল যে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই করার ক্ষেত্রে একটি প্যানেল গঠন করা হবে। আর সেই প্যানেলে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও প্রধান বিচারপতি। কিন্তু এবারে সেটিই পরিবর্তিত হয়ে গেল। রাজ্য়সভায় এই বিলের প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য কমিশনারদের নাম সুপারিশ করবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি প্যানেল। সেই সুপারিশ মেনে রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ করবেন।
বিলে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি থাকবে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত মন্ত্রী ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা। মোট তিনজন সদস্যের প্যানেল হবে এটি। তবে এই প্রস্তাবে বিরোধীরা এই প্রতিবাদ করেছে। এছাড়াও এই বিল পাশ হয়ে আইন হলে পরবর্তীতে বিচারব্যবস্থা ও দেশের সরকারের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) পরবর্তী প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি (Chief Justice) প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ মার্চ। তাঁর জায়গায় দেশের সবচেয়ে পুরোনো কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে বৃহস্পতিবার বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নাম সুপারিশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির কলেজিয়াম।
২০০৯ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন টিএস শিবজ্ঞানম। বর্তমানে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ বিচারপতি। সবদিক বিবেচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর নাম কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজিয়াম। ২০২৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারপতি শিবজ্ঞানমের কার্যকালের মেয়াদ রয়েছে।
এবার রাজশেখর মান্থার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতিকে চিঠি বার অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী-সহ বেশ কিছু মামলায় আইন না মেনে স্থগিতাদেশ দিয়ে দিচ্ছেন বিচারপতি মান্থা। তিনি কিছু কিছু মামলার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করছেন। অর্থাৎ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর এবার এক শ্রেণীর আইনজীবীদের রোষে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। এদিকে, দিন কয়েক আগেই এই বার অ্যাসোসিয়েশনের আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। তিনি এজলাসে দেরিতে বসেন। এই অভিযোগপত্র বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল প্রধান বিচারপতির কাছে। যা ঘিরে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে জানান, যারা এই চিঠি লিখেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার (contempt of court) মামলা করা হবে। তার আগে তাঁদের হলফনামা (affidavit) দিয়ে আদালত জানতে চাইবে এই চিঠিতে সই করার কী কারণ।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বার্তা পেয়ে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে আবেদন করেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। অরুণাভ ঘোষের দাবি, যত দিন যাচ্ছে বিচারপতি-আইনজীবীদের সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে। এর প্রত্যুত্তরে প্রধান বিচারপতি জানান, আদালতের গরিমা রক্ষার দায়িত্ব বিচারপতি এবং আইনজীবী উভয়েরই।
পাশাপাশি আইনজীবীদের দাবি, কোর্টে সংবাদমাধ্যমের অবাধ বিচরণ বিচারব্যবস্থাকে ক্ষুণ্ণ করছে। কোর্টরুমের প্রসিডিং ভিডিওগ্রাফি করছে সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার আবেদনও জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
তাঁদের এই আবেদনও ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব।
সম্প্রতি, ভরা এজলাসে একের পর এক উত্তপ্ত কথোপকথনে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। সুকন্যা মণ্ডল শুনানিতেও উত্তেজক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। এই বাগযু্দ্ধের জেরে আইনজীবীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত চত্ত্বরে ব্যানারও পড়েছিল। এবার অভিযোগ স্বয়ং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ঘটনায় দ্বিধাবিভক্ত বিচারব্যবস্থা।
আদালত গণতন্ত্রের পিলার, সাধারণ মানুষের পিলার। আম জনতা বিচার পেতে আদালতে আসেন। ন্যায়বিচার কখনও একপক্ষ হয় না, ন্যায়বিচার নিরপেক্ষ হয়। মানুষ যখন সব জায়গা থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন আদালতে বিচার চাইতে আসে। আদালত, সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের স্তম্ভ। কখনই যাতে এদের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়। বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের ভবন সম্প্রসারণের একটি অনুষ্ঠান এদিন আয়োজিত হয়েছে নব মহাকরণে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ অন্য বিচারপতিরা। ছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং মুখ্যসচিব এইচকে দ্বিবেদী।
সেই অনুষ্ঠানেই এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আমি নিজে আইনজীবী। যে কোনও মামলায় আদালতে চলে যেতে পারি। মানবাধিকার সংক্রান্ত একাধিক মামলায় আমি সওয়াল-জবাবও করেছি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র মেম্বারশিপ কার্ডও আছে আমার কাছে।
প্রধান বিচারপতির প্রতি তাঁর অনুরোধ, 'প্রায় তিন-চার বছর প্রচুর মামলা ঝুলে রয়েছে। সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পদক্ষেপ নিক হাইকোর্ট। পাশাপাশি বাড়ানো হোক মহিলা বিচারপতির সংখ্যা।' এমনকি, মামলার শুনানিতে মিডিয়া ট্রায়ালে যাতে কান না দেন মহামান্য বিচারপতিরা। এই অনুরোধও করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমকেও মিডিয়া ট্রায়াল না করার আবেদন করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের মূল ভবনের স্থান সংকুলানের জন্য নব মহাকরণের প্রথম থেকে নবমতল ভবন সম্প্রসারণের স্বার্থে হাইকোর্টকে তুলে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আইন দফতর, পূর্ত দফতর এবং হাইকোর্ট সচিবালয়ের সমন্বয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সবপক্ষকেই ধন্যবাদ জানান তিনি।