আবারও সিবিআইয়ের স্ক্যানারে নারদাকর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল। ৪ঠা এপ্রিল সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে তলব সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদককে। ষড়যন্ত্র, নাকি দুর্নীতি, উত্তর কি সামনে আসবে এবার? ইমেল মারফত তাঁকে সিবিআই ডেকে পাঠালেও পাল্টা জবাব দেন ম্যাথু।
সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে স্যামুয়েল হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক নাটকে পরিণত হয়েছে, পাল্টা জবাব তাঁর। দুই মাস আগেও এমন একটা চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর জবাবে বলা ছিল, তিনি এখন বেঙ্গালুরুতে থাকেন আর এত কম সময়ে কলকাতা আসতে পারবেন না। তাঁকে যাতায়াত এবং থাকার খরচ দিতে হবে। গোটা ঘটনায় তিনি কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চান। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, কলকাতায় আসা-যাওয়ার খরচও জোগাতে হবে সিবিআইকে। ২০১৬ সাল থেকে সিবিআই এই মামলার তদন্ত করলেও এখনও রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ তারা। এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তৎপর দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআই। ফের নির্বাচনের আগে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৎপর সিবিআই। কিন্তু কে এই ম্যাথু স্যামুয়েল? কীভাবে তিনি যুক্ত নারদা-কাণ্ডের সঙ্গে।
ম্যাথু স্যামুয়েল একজন সাংবাদিক। তিনি সংবাদমাধ্যম তেহলকার প্রাক্তন সম্পাদকও। তিনিই নারদ ‘স্টিং অপারেশন’ চালিয়েছিলেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বাছাই করা কিছু নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ২০১৪ সালে হওয়া এই অভিযানে ক্যামেরার সামনেই টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল বাংলার শাসক দলের একাধিক সাংসদ, মন্ত্রীকে। অভিযোগ, তোয়ালে মুড়ে টাকা নিতে দেখা যায় তৎকালীন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে উত্থানও এই ২০১৪ সাল থেকেই। বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় এই সমস্ত নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সখ্যতা খুব একটা মধুর ছিল না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বারবার বলতে শোনা যায়, “এটি দুর্নীতি ছিল না, এটি ছিল ষড়যন্ত্র। কনস্পিরেসি মেড বাই ভাইপো। যাদের সহ্য করতে পারত না, যাদের মনে করত আগামী দিনে বাধা হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধেই ম্যাথুকে কেডি সিং-এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছিল।" যদিও আট বছর পরেও এখনও অধরা নারদা রহস্য!
তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের লোকসভার প্রার্থী মহুয়া মৈত্রর কলকাতার ফ্ল্যাটে সিবিআই হানা। শনিবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ দিল্লি থেকে সিবিআই-এর একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল মহুয়া মৈত্রের কলকাতার ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছয়। সেখানেই থাকেন মহুয়া মৈত্রের বাবা এবং মা। তবে সিবিআই আধিকারিকরা যখন সেখানে এসে পৌঁছন সেই সময় তাঁরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সিবিআই আসার খবর পেয়ে সেখানে এসে পৌঁছন মহুয়া মৈত্রর মা মঞ্জু মৈত্র।
এর আগে গত সোমবার ক্যাশ ফর কোয়ারি কাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল লোকপাল। পাশাপাশি, এই মামলায় ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্যও বলা হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। এরপর শনিবার মহুয়া মৈত্রর ফ্ল্যাট সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সূত্রের খবর, ফ্ল্যাটে থাকা ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি খতিয়ে দেখেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। শেষ কবে মহুয়া মৈত্র বিদেশ সফর করেছিলেন, প্রায় সাত ঘণ্টা সেখানে তল্লাশি চালানোর পর বেলা ২টো নাগাদ ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, মহুয়ার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্যই সংসদে প্রশ্নগুলি করেছিলেন মহুয়া। এই ঘটনায় মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের দাবিতে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে চিঠি লিখেছিলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভার এথিক্স কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। কমিটি নিশিকান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মহুয়াকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে মহুয়া ওই কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপরই সাংসদ পদ থেকে মহুয়াকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছিল এথিক্স কমিটি। সেই সুপারিশ মোতাবেক মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করেন লোকসভার অধ্যক্ষ। লোকসভা ভোটের মুখে সিবিআই-এর এই তৎপরতায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
ইডির উপর হামলার ঘটনায় সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার আরও ৩। গ্রেফতার শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর ছাড়াও মাফুজার মোল্লা ও সিরাজুল মোল্লা। ইডির উপরে হামলার ঘটনায় এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় সিবিআই। সেইমত নিজাম প্যালেসে উপস্থিত হয় শেখ আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার তাকে তলব করা হলেও হাজিরা এড়িয়ে যায় আলমগীর।
তারপর ফের শনিবার তাকে তলব করে সিবিআই। আর তার সঙ্গেই তলব করা হয় সন্দেশখালি এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি মাফুজার মোল্লা ও অপর তৃণমূল নেতা সিরাজুল মোল্লা সহ আরও বেশ কয়েকজনকে। টানা ৯ ঘন্টা ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। আর তারপরই গ্রেফতার শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর। ইডির ওপর হামলার ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন শেখ আলমগীর। ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে ও একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শেখ আলমগীরকে গ্রেফতার করে সিবিআই।পাশাপাশি গ্রেফতার অপর ২ তৃণমূল নেতা মাফুজার মোল্লা ও সিরাজুল মোল্লা।
আদালতের নির্দেশে সন্দেশখালিতে ইডির উপর হামলার ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। অন্যতম মূল অভিযুক্ত শাহজাহান এখন সিবিআই হেফাজতে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা বেশ কয়েকবার সন্দেশখালি গিয়েছেন। সন্দেহভাজনদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করে তলবের নোটিস দিয়ে এসেছেন। শাহজাহানের ভাই আলমগীরের বাড়িতেও গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা।
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলার তদন্তের জন্য শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু শাহজাহানের অনুগামীদের আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয় ইডি আধিকারিকদের। মারধর করার অভিযোগ ওঠে। তারপর থেকে শাহজাহান নিখোঁজ ছিলেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পুলিস গ্রেফতার করে। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। গত ১৪ মার্চ শাহজাহানকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁকে আরও আট দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এবার সিবিআইয়ের জালে তার ভাই আলমগীরও।
সন্দেশখালিতে রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে শাহজাহান অনুগামীদের হাতে মার খেতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। গত ৫ জানুয়ারির ওই ঘটনার মূল চক্রী শেখ শাহজাহান ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি। হামলার ওই ঘটনায় কারা কারা যুক্ত ছিল, তা জানতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সম্প্রতি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এই আবহে শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর সহ ১০ জনকে তলব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। বৃহস্পতিবারই নিজাম প্যালেসে তাদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সিবিআইয়ের তলবে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার নিজাম প্যালেসে হাজির হন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ ২ ব্যক্তি।
সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার ঘটনার রহস্যভেদে ততপর সিবিআই। আগামী দিনে তদন্তে কোনও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে কিনা, সেটাই এখন দেখার।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সিবিআইএর হাতে গ্রেফতার ৪ জন। রাজ্য পুলিসের পক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয় ৭ জনকে। এই ৭ জন হলেন আলী হোসেন ঘরামী, সঞ্জয় মন্ডল, সুকমল সদ্দার, মেহেবুব মোল্লা, আমিনুর শেখ, এনামুল শেখ এবং আইজুল শেখ।
এই ৭ জনকে এবার নিজেদের হেফাজতে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে সিবিআই। এ বিষয়ে বুধবার বসিরহাট মহকুমা আদালতে আবেদন সিবিআইয়ের। বুধবার বসিরহাট মহাকুমা আদালত চত্বরে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সিবিআই প্রতিনিধি দল সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা৷ সন্দেশখালি কেসের তদন্তে ও নথি সংগ্রহ করতে বসিরহাট আদালতে তারা আসেন বলেই সিবিআই সূত্রে খবর৷ পাশাপাশি শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ফারুক আকুঞ্জিকেও মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা।
ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় ৫৫ দিন পর গ্রেফতার হয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। কোথায় আত্মগোপন করেছিলেন তিনি? সিবিআই সূত্রে খবর, একদিকে যখন তাঁর ফাঁসির দাবিতে সরব ছিল সন্দেশখালি, তখন তিনি ছায়াসঙ্গী ফারুক আকুঞ্জির বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। সেকারণেই সমগ্র বিষয়ে এই ঘটনায় জড়িতদের নিজেদের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। এখন এই সন্দেশখালি কাণ্ডের জল কতদূর গড়ায়, আর কোন কোন ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত সেদিকেই তাকিয়ে বাংলার ওয়াকিবহাল মহল।
ইডির উপর হামলার ঘটনায় তিনজন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গ্রেফতারির পর তাঁদের নিজাম প্য়ালেসেই রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে জিয়াউদ্দিন মোল্লা, দিদার বক্স মোল্লা ও ফারুক আকুঞ্জিকে নিজাম প্যালেস থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হল বসিরহাট আদালতের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি মঙ্গলবার আরও তিনজনকে তলব করল সিবিআই। তাঁরা হলেন সিদ্দিক মোল্লা, আবিবুর রহমান, রহমান আকুঞ্জি।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির বেড়মজুরে সিদ্দিক মোল্লা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। সেখানেই জানা গিয়েছে, সিদ্দিক মোল্লা হলেন বেড়মজুরের পঞ্চায়েত প্রধান। গত ৫ জানুয়ারি ইডির উপর হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূলের এই পঞ্চায়েত প্রধানকে এদিন কলকাতার সিবিআই দফতরে আসতে বলা হয়েছে।
গতকাল অর্থাৎ সোমবার ইডির উপর হামলার ঘটনায় তদন্তে নেমে সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে সিবিআই আধিকারিকরা। ন্যাজাট থানার অধীনস্থ ফাঁড়িতেও তদন্তের প্রয়োজনে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ধৃত শাহজাহান শেখের এক প্রতিবেশীর বাড়িতেও যান। রহমান আকুঞ্জি নামে এক ব্যক্তির খোঁজ না পেয়ে তাঁর বাড়ির এক সদস্যের হাতে নোটিশ দেন সিবিআই। কিন্তু রহমানের সৎ মা সিবিআইয়ের সামনেই তাঁদের দেওয়া নোটিশ ছিঁড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।
সন্দেশখালিকাণ্ডে ইডির উপর হামলার ঘটনায় শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তিনজনকে গ্রেফতার করল সিবিআই। এর মধ্য়ে রয়েছেন জিয়াউদ্দিন মোল্লা, শাহজাহানের ডান হাত হিসেবে তাঁর এলাকায় পরিচিত। আর বাকি দুই জন হলেন ফারুক আকুঞ্জি এবং দিদার বক্স মোল্লা।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে। ঘটনার তদন্তে নেমে শাহজাহান শেখের কললিস্টে জিয়াউদ্দিন মোল্লার নাম দেখা গিয়েছে। এই বিষয়ে এবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে তলব সিবিআই এর।
সোমবার জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর নিজাম প্য়ালেস থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে বলে সূত্রের খবর।
সন্দেশখালির পর এবার ইডির উপর হামলার তদন্তে বনগাঁয় গেল সিবিআই। সোমবার সকালে ফরেনসিক টিম ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। বাড়ি পুরো ঘিরে রেখেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে গত ৫ জানুয়ারি তল্লাশি চালাতে যায় ইডি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পথে বাড়ির বাইরে মব তৈরি হয়। হামলা চালানো হয় ইডি আধিকারিকদের গাড়ির উপর। ইডি আধিকারিকদের গাড়ির উপরে হামলার ঘটনায় বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ইডির তরফে। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্ট সেই তদন্তভার দেয় সিবিআই-এর হাতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিবিআই আধিকারিকরা শঙ্করের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় আসেন এবং সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেন। ভিডিওগ্রাফি করে নিয়ে যান। সোমবার ফের ইডির উপর হামলার ঘটনায় বনগাঁয় তদন্তে যায় সিবিআই ও তাদের ফরেনসিক টিম। সমস্ত তদন্ত প্রক্রিয়া ডিজিটাল এভিডেন্স হিসেবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর পরবর্তীতে সিবিআই আধিকারিকরা বনগাঁ পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ-এর বাড়িতে যান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা ধরে তদন্ত চালায় সিবিআই।
তদন্তে জানা যায়, শঙ্করের বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা CCTV ক্যামেরার তার খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ঘটনা নিছকই কাকতালীয় নাকি এর পিছনেও লুকিয়ে কোনও রহস্য? ধন্দ কাটাতে বনগাঁ পুরসভায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে নোটিশ সিবিআই এর। ফুটেজ চেয়ে নোটিশ তলব গোপাল শেঠকেও।
সন্দেশখালিকাণ্ডে ইডির উপর হামলার ঘটনায় এবার তিনজনকে তলব করল সিবিআই। তারমধ্য়ে শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ সরবেড়িয়া আগারহাটি অঞ্চলের প্রধান জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে তলব করলেন সিবিআই আধিকারিকরা। ইতিমধ্য়ে নিজাম প্য়ালাসে যান জিয়াউদ্দিন।
সূত্রের খবর, আর বাকি দুই জন হলেন, দুরন্ত মোল্লা এবং শফিকুল রহমান। এর আগে এই দুই শাহজাহান ঘনিষ্ঠের বাড়িতেও সিবিআই হানা দিয়েছিল। তারপরে সোমবার তাঁদের তলব করা হয়।
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে। ঘটনার তদন্তে নেমে শাহজাহান শেখের কললিস্টে জিয়াউদ্দিন মোল্লার নাম দেখা গিয়েছে। এই বিষয়ে এবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে তলব সিবিআই এর। জানা গিয়েছে, শাহজাহানের ডান হাত হিসেবে এলাকায় পরিচিত এই জিয়াউদ্দিন মোল্লা।
শেখ শাহজাহানকে রবিবার বসিরহাট আদালতে পেশ করল সিবিআই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সকাল ৮.৩০ টায় নিজাম প্যালেস থেকে বের করে বসিরহাট আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকরা।
২৮ ফেব্রুয়ারি বসিরহাট জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে গ্রেফতার করার পর ২৯ তারিখ তাকে পেশ করা হয় আদালতে। আদালতের পক্ষ থেকে দশ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। হাইকোর্টের নির্দেশেই শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে নেয় সিবিআই। শাহজাহানের ঠিকানা হয় নিজাম প্যালেস। সিবিআই হেফাজতে এই ৫ দিন শাহজাহানকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বসিরহাট মহকুমা আদালতে শাহজাহানকে পেশের পর বাকি চার দিনের হেফাজতের আবেদন জানায় সিবিআই।
আদালতে সিবিআই জানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে এখনও অনেক তথ্য নতুন করে পাওয়ার আছে তাই আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।সিবিআই-এর আইনজীবী আদালতে আরও জানান তদন্তে অসহযোগিতা করছেন শেখ শাহজাহান। তাই তদন্তকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
শেখ শাহজাহান সিবিআইয়ের হেফাজতে এলেও এখনও উধাও মোবাইল ফোন।তাই শেখ শাহজাহানের ফোনের খোঁজে সিবিআই। পুলিস জানিয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের সময় তার ফোনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।কিন্তু সিবিআই দাবি করেছে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শেখ শাহজাহানের মোবাইল ফোন। এমনকি সিবিআই যখন পরবর্তীতে শাহজাহানের আকুঞ্জিপাড়ার বাড়িতে তল্লাশি চালায় তখনও তারা শাহজাহানের দুটি ফোনের কোনও হদিশ পায়নি বলেই দাবি করেছে সিবিআই। বসিরহাট আদালতে প্রবেশের সময় সাংবাদিকরা একাধিকবার শাহজাহানকে প্রশ্ন করেন আপনার মোবাইল ফোন দুটি কোথায়? নিরুত্তর থাকেন শাহজাহান।
অন্যদিকে এদিন শেখ শাহজাহানের তরফে জামিনের আবেদন করা হয় বসিরহাট মহকুমা আদালতে। ইডির উপরে হামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন শাহজাহান বলে আদালতকে জানান শেখ শাহজাহানের আইনজীবী। মূলত ইডির ওপর হামলার ঘটনায় যে মামলা সেই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। সেই মামলাতেই এদিন বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয় শাহজাহানকে।
ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে ন্যাজাট থানায় ২ টি এফআইআর করা হয়। একটি এফআইআর নম্বর ৯ ইডির ওপর হামলার ঘটনায়, অপরটি ৮ যা রাজ্য পুলিস সুয়ো মোটো করেছে।এদিন শুনানি শেষে ৪দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেয় বসিরহাট মহকুমা আদালত। আগামী ১৪ তারিখ ফের শেখ শাহজাহানকে বসিরহাট মহাকুমা আদালতে পেশ করা হবে।
একেবারে নবাবি মেজাজেই সন্দেশখালিজুড়ে চলত শাহজাহান রাজত্ব। তাঁর গ্রাস থেকে বাদ যায়নি জমি, দোকান এমনকি মানুষও। প্রথমে সাহস ছিল না প্রতিবাদের, তবে ত্রাসের গ্রেফতারি পর বুকে বল পেয়েছেন বাসিন্দারা। একে একে বেরিয়ে আসছে অভিযোগের পাহাড়। সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার মোড়ে বিশাল বড় পাঁচিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে 'শেখ শাহজাহান মার্কেট'। পিছনেও রয়েছে এক বঞ্চনায় ভরা ইতিহাস। অভিযোগ, জোর করে জমি দখল করে রাতারাতি গড়ে তোলা হয় বিশাল মার্কেট।
শেখ শাহজাহানের নামের সঙ্গে এই মার্কেটও এখন জনপ্রিয়। মার্কেট তৈরির সময়কালের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের ক্ষমতায় আসার বিস্তর মিল। মার্কেটের সামনেই জ্বলজ্বল করছে ২০১১। শাসক দল ক্ষমতায় বসার পরই বেড়েছিল শাহজাহানের প্রভাব। দলবল নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দখল করা হয়েছিল স্থানীয়দের ১ একর ১৫ শতক জায়গা। রামচন্দ্র মণ্ডল, আরতী মণ্ডল ও নিতাই চন্দ্র মণ্ডলের কাছ থেকে জোর করে জমি সাদা কাগজে লিখিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই রাতারাতি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় মার্কেট তৈরির কাজ। কয়েক মাসের সেই মার্কেট রমরমিয়ে চলতে থাকে। যা থেকে মুনাফার সমস্ত টাকাই ঢুকত শেখ শাহজাহানের পকেটে।
মণ্ডল পরিবারের দাবি, সরকারি কাগজপত্রে এখনও তাঁদের নামেই রয়েছে সেই জমি। শাহজাহান গ্রেফতার হতেই জমি ফেরানোর দাবিতে সরব হয়েছে তাঁরা। পুলিসের খাতাতেও জমা পড়েছে অভিযোগ। সেই শাহজাহন মার্কেট এখন সিবিআই স্ক্যানারে। পরপর দু-দিন শাহজাহান মার্কেটেই হানা দিয়েছিলেন আধিকারিকরা। চালানো হয়েছে তল্লাশিও। দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান-- সেই রাজা আজ গারদে, ভাঙছে সাম্রাজ্য, এখন শুধু অপেক্ষা বিচারের।
সন্দেশখালিকাণ্ডে পরতে পরতে রহস্য। এবার খবরের শিরোনামে শাহজাহানের অফিসের কর্মী দুরন্ত মোল্লার নাম। শাহজাহান মার্কেটে তল্লাশি অভিযানে যেতেই দিদার দুরন্ত মোল্লাকে ডেকে পাঠান ইডি আধিকারিকরা। তাঁর কথায় শাহজাহান মার্কেটের প্রত্যেক দোকানদার কাছ থেকে টাকা তুলে শাহজাহানের অফিসে পৌঁছনোই ছিল দুরন্ত মোল্লা কাজ।
সূত্রের খবর, দিদার দুরন্ত মোল্লা হচ্ছে শাহজাহানের ছায়াসঙ্গী। গত ৫ তারিখ শাহজাহান এই দিদার দুরন্ত মোল্লাকে ফোন করেছিলেন। কল ডিটেইলস খতিয়ে দেখে দিদার দুরন্ত মোল্লা সম্পর্কে জানতে পারেন সিবিআই। সেই কারণে তার বাড়িতে সিবিআই পৌঁছায়। কিন্তু বাড়িতে ছিলেন না তিনি।
শুধু তাই নয়, টাকার হিসাব দিতে হতো শেখ শাহজাহানকে। প্রত্যেক দোকানদারের থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা টাকার পরিমাণ ৫-১০০টাকা। মাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা তুলে দিতে হতো শেখ শাহজাহানের হাতে। জানিয়েছেন শাহজাহানের অফিসের কর্মী দুরন্ত মোল্লা।
সূত্র বলছে, ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের বাড়ির পাশাপাসি অফিসেও অভিযানের পর ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ন্যাজাট থানায় এফআইআর করেন এই দুরন্ত মোল্লা। দিদার দুরন্ত মোল্লার অভিযোগ ছিল, ইডির তল্লাশির পর শাহাজাহানের অফিস থেকে খোয়া যায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন দুরন্ত মোল্লা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। কিন্তু যদি মিথ্যে প্রমাণ হয় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেটাই দেখার।
বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ফের শেখ শাহজাহানের ডেরায় সিবিআই টিম। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আকুঞ্জিপাড়ায় শাহজাহানের বাড়িতে যায় সিবিআই অফিসাররা। সেই সঙ্গে রয়েছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ৫ই জানুয়ারি এখানেই আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা।
আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার দশ দিনের পুলিসি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে শাহজাহান শেখের। তারপর তাঁকে পেশ করা হবে আদালতে। তবে তার আগে একাধিক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য়ে এদিন শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে সিবিআই। গত ২৪ শে জানুয়ারি শাহজাহান শেখের এই বাড়ি সিল করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। এদিন ইডির দুই অফিসারের উপস্থিতিতে সেই সিল খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন সিবিআই অফিসাররা।
পাশাপাশি সিবিআই আধিকারিকরা যান সরবেড়িয়ায় শেখ শাহজাহান-এর মার্কেটে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে অফিস। তারপর খোলা হয় শাহজাহানের অফিসে যাওয়ার সিঁড়ির দরজা। মার্কেটে যায় সিএফএসএল-এর টিমও।
সূত্রের খবর, শাহজাহান শেখের বাড়ির বাইরে রাস্তার মাপ নেন সিবিআই অফিসাররা। তাঁর বাড়ির আশপাশের মেজারমেন্ট নিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে রাস্তায় ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল, সেই রাস্তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে দেখেছেন সিবিআই অফিসাররা।
৫ জানুয়ারি ইডির উপর হামলার ঘটনায় ন্যাজাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ইডি কর্তা গৌরব ভারিল। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে ন্যাজাট থানা। এরপর সন্দেশখালিকে জুড়ে রাজ্য রাজনীতি দেখেছে একাধিক কাণ্ড ও ঘটনাপ্রবাহ। গ্রেফতার হয়েই তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত শাহজাহান। এবার ৫ জানুয়ারির মূল ঘটনার সূত্র ধরে সন্দেশখালির পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের তদন্তে শাহজাহানকে জেরা করছে সিবিআই। এই মামলায় তদন্তে গতি রাখতে ইডি কর্তা গৌরব ভারিলকে তলব করে সিবিআই। তাঁর বয়ান নথিবদ্ধ করে আকুঞ্জিপাড়ার ঘটনার বিবরণ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে চাইছে। সিবিআই তলবে সাড়া দিতে ইডি কর্তা নিজাম প্যালেসে হাজিরও হয়েছেন।
যদিও সিআইডির হাতে তদন্তভার থাকাকালীন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার তলব এড়িয়েছেন গৌরব ভারিল। কোর্ট নির্দেশে সন্দেশখালি-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নিয়েই ন্যাজাট থানার পুলিসের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলার নথিপত্র, কেস ডায়েরি সংগ্রহ করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, মামলা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ন্যাজাট থানার পুলিস অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছে। হেফাজতে পেয়েই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘণ্টা দুয়েক জেরা করা হয়েছে শাহজাহানকে। মূলত ৫ জানুয়ারির সকালের প্রেক্ষাপট নিয়ে বেশ কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
শাহজাহানকে জেরার পাশাপাশি সিবিআইয়ের তরফে বসিরহাট আদালতে জমা করা হলো এফআইআর কপি। যেহেতু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ শেখ শাহজাহান সিবিআই হেফাজতে, তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দায়ের করা এফআইআর কপি ও আদালতের অর্ডার কপি জমা করা হয়েছে বসিরহাট আদালতে। কোর্ট নির্দেশ থাকলেও একদিন পর সিবিআইয়ের হাতে শেখ শাহজাহানকে তুলে দিয়েছে সিআইডি। তাদের এহেন অবস্থানের কারণ রীতিমতো প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা। চলতি মাসের ১০ তারিখ ফের আদালতে হাজির করতে হবে শেখ শাহজাহানকে। এখন দেখার ফের তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে হেফাজতে পায় কিনা সিবিআই।
সমস্ত টালবাহানার পর শেখ শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে পেল সিবিআই। অবশেষে সন্দেশখালির কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত এখন সিবিআই-এর হাতে। গত ৫ জানুয়ারি তাঁর বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়ে ইডি আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই চলছে শাহজাহানের খোঁজ। দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকার পর দেখা দিলেও, ছিলেন সিআইডির হাতেই। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতের দ্বারস্থ হয়, শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, শেখ শাহজাহান যতদিন সিআইডি হেফাজতে থাকবেন, ততই তথ্য প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা বাড়বে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরের দাবি তুলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন মঙ্গলবারেই তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে বিকেল ৪.৩০ এর মধ্যে হস্তান্তর করতে হবে। তবে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য যায় সুপ্রিমকোর্টে। ফের বুধবার ইডি যায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। বুধবারও প্রধান বিচারপতিৰ রায়কে বহাল রেখেই আদালত জানায়, তাঁর সিবিআই হস্তান্তরের কথা।
অপরদিকে, বিকেল গড়াতেই ভবানী ভবনে পৌঁছয় সিবিআইয়ের অ্যান্টি কোরাপশন ব্রাঞ্চের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এদিকে সিবিআই হস্তান্তরের আগে সিআইডির তরফ থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য শাহজাহানকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে ভবানীভবনে নিয়ে আসা হয় শাহজাহানকে। অবশেষে সিবিআইয়ের হাতে হস্তান্তরিত হন তিনি। সিবিআইয়ের আধিকারিকদের ঘেরাটোপে রেখে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে।
অবশেষে শাহজাহানের তদন্তভার পেল সিবিআই। বৃহস্পতিবার থেকে এবার শাহজাহান সম্পর্কিত কী তথ্য দেয় সিবিআই- সিআইডিকে দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে সিবিআইকে দেওয়া জবানবন্দি মেলে কিনা, সিবিআইকে তদন্তে সহযোগিতা করেন কিনা শেখ শাহজাহান- উত্তর দেবে সময়ই।