আদানি ইস্যুতে (Adani Row) মোদী সরকারকে চাপে ফেলতে যখন বিরোধী শিবির কোমর বেঁধেছে, তখন দুর্নীতি প্রশ্ন পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে (UPA Government) পাল্টা আক্রমণ নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi)। বুধবার সূচি মেনেই রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বলতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিকেল ৪টে থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৫ মিনিট সংসদে (Parliament) বক্তব্য রাখেন নরন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্যের পুরো জুড়ে ছিল নিজের সরকারের ভূয়সী প্রশংসা এবং পূর্বসূরির সমালোচনা।
দুর্নীতি প্রশ্নে ইউপিএ সরকারকে বিঁধতে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, 'বড় বড় দুর্নীতি থেকে মুক্তি খুঁজছিল দেশ। আজ সেই সব দুর্নীতি থেকে দেশ মুক্ত। ইউপিএ আমলের শেষ ১০ বছর কাশ্মীর-কন্যাকুমারী পর্যন্ত শুধু সন্ত্রাসবাদী হামলা। সবাই ভয়ে ভয়ে থাকতেন। জম্মু-কাশ্মীর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত, সর্বত্র কেবল হিংসা আর হিংসার ঘটনা। আর ভারতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।' কটাক্ষের সুরে প্রধানমন্ত্রী জানান, 'লোকসভায় মঙ্গলবার কয়েক জনের মন্তব্যের পর পুরো ইকো সিস্টেম নড়ে গিয়েছে। তাঁদের সমর্থকরাও উল্লসিত। আমিও গতকাল (পড়ুন মঙ্গলবার) দেখছিলাম। কয়েক জনের বক্তৃতার পর কিছু লোক খুশি হয়ে বলছেন, ইয়ে হুয়ি না বাত। হয়তো তাঁরা রাতে ভাল ঘুমিয়েছেন এবং আজ সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারেননি।' আদতে তাঁর এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য যে পরোক্ষে রাহুল গান্ধী, বুঝতে ভুল করেনি ওয়াকিবহাল মহল।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, 'গত কয়েক বছরে একের পর এক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতির যখন বেহাল দশা, সেই সময়েও ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে উঠে এসেছে। এটা কি গৌরবের নয়? আসলে কিছু মানুষ এমন ভাবে নিরাশায় ডুবে থাকেন যে, দেশের প্রগতির কোনও কিছুই তাঁদের চোখে পড়়ে না।'
নরেন্দ্র মোদীর সংযোজন, 'ইডি-কে ধন্যবাদ। ভোটাররা যা পারেননি, তা তারা করে দেখিয়েছে। তাদের জন্যই আজ বিরোধীরা এক মঞ্চে জড়ো হয়েছেন। গণতন্ত্রে সমালোচনা জরুরি এবং তা গঠনমূলক হওয়াই অভিপ্রেত। কিন্তু এখানে শুধু সেনাকে গালি, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে গালি, আরবিআইকে গালি দিচ্ছেন বিরোধীরা। শুনুন, মোদীর উপর দেশবাসীর ভরসা টিভি চ্যানেলে বসে হয়নি। খবর ছাপিয়েও হয়নি। দেশের জন্য তিনি লড়েছেন। দেশবাসীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিংড়ে দিয়েছেন নিজেকে। তাঁর উপর যেভাবে দেশবাসী ভরসা করেন, তা বিরোধীদের চিন্তাভাবনার বাইরে।' মোদী জানান, '১৪০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ মোদীর মাথায় রয়েছে। ওটাই আমার সুরক্ষাকবচ। শুধু হার্ভার্ড নয়, বিশ্বের সমস্ত বড় বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেসকে নিয়ে পড়াশোনা করবে।'
বাজেট অধিবেশনের (Budget Seesion) প্রথম দিন থেকেই আদানি ইস্যুতে (Adani Row) উত্তাল সংসদ। বিতর্ক এবং আলোচনার পরিসর চেয়ে আন্দোলন করছে সরকার-বিরোধী দলগুলো। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শিল্পপতি গৌতম আদানির ছবি তুলে ধরে সংসদে সুর চড়ান কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। তাঁর প্রশ্ন, 'কীভাবে সব ব্যবসাতে ঢুকে পড়ছে আদানি গোষ্ঠী? প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক ঠিক কী?' রাহুলের দাবি, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন যেখানেই তিনি গিয়েছেন, সর্বত্র একটিই নাম শুনেছেন— আদানি, আদানি এবং আদানি।'
মঙ্গলবার লোকসভায় বলতে উঠে রাহুল বলেন, 'তামিলনাড়ু থেকে কেরল, কেরল থেকে হিমাচল প্রদেশ, আমরা একটাই নাম শুনে এসেছি। মানুষ আমার কাছে জানতে চাইছেন, কীভাবে প্রতিটি ব্যবসায় আদানিরা ঢুকে যান এবং প্রতি ব্যবসায় ওই শিল্পগোষ্ঠী সফল হয়েছে!'
এদিন রাহুলের বক্তব্যের মধ্যেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বিরোধিতার সুর ওঠে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর মন্তব্য, 'শুধুমাত্র বড় অভিযোগ করলেই হয় না। সেই অভিযোগের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে হয়।' দু'পক্ষের এই বাদানুবাদে বাজেট অধিবেশনের পঞ্চম দিনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদের দুই কক্ষ।
গৌতম আদানি-কাণ্ডে (Goutam Adani) সরগরম সংসদের বাজেট অধিবেশনের (Budget Session) দ্বিতীয় দিন। সাম্প্রতিক শেয়ার বাজার পরিস্থিতি এবং এফপিও থেকে আদানি গোষ্ঠীর সরে আসা প্রসঙ্গে আলোচনা দাবি করে বিরোধী শিবির। শুরু হয় তুমুল হট্টগোল, এতেই দুপুর ২টো পর্যন্ত মুলতবি হয়ে গিয়েছিল লোকসভা-রাজ্যসভার বাজেট অধিবেশন।
পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি গঠনের দাবি তুলেছে বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার সংসদে এই দাবিতে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম এবং শিবসেনা-সহ বিরোধী দলের সাংসদরা। বৃহস্পতিবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশনের আগে বিরোধীদের মন্তব্য, 'এটা শুধু একটি শিল্পগোষ্ঠীর সম্পদ মূল্য কমে যাওয়ার প্রশ্ন নয়। এর জেরে দেশবাসীর সঞ্চয় বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, ওই সংস্থার মাধ্যমে এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কের তহবিল বিনিয়োগ হয়েছে। ঋণ হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনভর উপার্জনের সঞ্চয় রয়েছে।'
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে অধিবেশন শুরুর আগেই সংসদের বিরোধীরা একজোট হয়েছিল। তাদের আলোচনার বিষয়, আদানির বিরুদ্ধে ওঠা আমেরিকার সংস্থার অভিযোগ নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা করতে হবে।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে হয় বৈঠক। তাতে যোগ দিয়েছিল, তৃণমূল, কংগ্রেস, আপ, ডিএমকে, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি-সহ বামদলগুলিও।