Breaking News
Mahua Moitra: লোকসভায় খারিজ মহুয়ার সাংসদ পদ, পাশে মমতা, তোপ বিজেপিকে      ED: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষকের বাড়িতে ইডি হানা!      Ragging: যাদবপুরে ফের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ! প্রথম বর্ষের ছাত্রকে ফোন করে দেওয়া হত হুমকি...      Film Festival: শুরু ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, উদ্বোধনে 'বাদশা' নয় ভাইজান      SSKM: বেড নেই এসএসকেএম-এ! দেড় বছরের শিশুকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে      BJP: জাতীয় সঙ্গীত 'অবমাননা' মামলায় জোর ধাক্কা রাজ্যের! বিজেপি বিধায়কদের গ্রেফতারে 'না' হাইকোর্টের      Recruitment Scam: ফের তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে উদ্ধার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি ও অ্যাডমিট কার্ড!      Congress: স্বাধীনতার পর প্রথম তেলেঙ্গানায় সরকার গঠনের পথে কংগ্রেস      Deganga: গুরুতর অভিযোগ! মিড ডে মিলের চাল লুকিয়ে রাখা হচ্ছে স্কুলের শৌচালয়ে      Sujoykrishna: সুজয়কৃষ্ণের ভয়েস স্যাম্পেল টেস্টে 'ঢিলেমি'! এসএসকেএম-এর ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন     

British

War: ভারতে প্রথম সশস্ত্র গণ বিদ্রোহ (১ম পর্ব)

সৌমেন সুরঃ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ প্রথম সশস্ত্র গণ অভ্যুত্থান-পরাধীন ভারতে। এই সালে মহাবিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ প্রথম অভিভক্ত বাংলাদেশে প্রজ্জ্বলিত হলেও বাঙালিরা সক্রিয়ভাবে এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার ফলে দেশের নব উদ্ভূদ জমিদার শ্রেণি বিদ্রোহীদের বিপক্ষে যোগদান করে এবং ইংরেজ প্রভুদের সর্বপ্রকারে সাহায্য করে তাদের শ্রেণিস্বার্থ ও চরিত্র নগ্নভাবে প্রকাশ করে।

কিন্তু জমিদার শ্রেণির প্রধান সংগঠন 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন' বিদ্রোহী সিপাহীদের আচরণের নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ করে। তৎকালীন জনপ্রিয় পত্রিকা 'সংবাদ প্রভাকর'-এ সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত নির্মমভাবে বিদ্রোহের সমালোচনা করেন। সৃজনশীল রচনায় যেমন উপন্যাস ও ছোট গল্পে, সে সময়ের দুই দিকপাল সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রমেশ চন্দ্র দত্ত সিপাহী বিদ্রোহকে অবলম্বন করে কিছু সৃষ্টি করা থেকে আশ্চর্যরকম বিরত ছিলেন। কিছু স্বল্পখ্যাত লেখক সিপাহী বিদ্রোহের বীরগাথা উপজীব্য করে উপন্যাস রচনা করেছেন। মহাবিদ্রোহের পটভূমিকায় লেখা প্রথম উপন্যাস 'চিত্তবিনোদিনী' লেখক গোবিন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, প্রকাশকাল ১৮৭৪। এই উপন্যাসে লেখক প্রথম সচেতনভাবে সিপাহীযুদ্ধের পটভূমিকা অবলম্বনে কাহিনি রচনা করেন।

১৮৭৯ সালে প্রকাশিত উপেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের নানাসাহেব উপন্যাসে নানাসাহেবকে কেন্দ্র করে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস বিধৃত। নানাসাহেব তাঁর ছোট ভাই বল্লারাও-এর প্রেমিকা অহল্যার রুপে মুগ্ধ হয়ে, তাঁকে পাবার লোভে এত উন্মত্ত হয়েছেন যে, কর্তব্যকর্ম, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে অবহেলা করছেন। (চলবে) (তথ্যঋণ- সুমিত তালুকদার)

9 months ago
Theatre: বাংলা পেশাদার থিয়েটারের দেড়শো বছর (২য় পর্ব)

সৌমেন সুর: দেখতে দেখতে পেশাদার থিয়েটারে রাজনীতির বিষয়ের অতিসক্রিয়তা ইংরেজ সরকার ভাল চোখে নিতে পারেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল, থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে মানুষের গণচেতনা প্রসার লাভ করছে। ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। ইংরেজ সরকারের তরফ থেকে প্রবল চাপ আসতে থাকল- থিয়েটারে রাজনীতির কথা থাকবে না। বন্ধ করা হলো এই থিয়েটার। সেইসময় পেশাদার থিয়েটার জগৎ ইংরেজদের এই হুলিয়া মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।

তৈরি হয়তে শুরু করল পৌরাণিক নাটক। নাট্যকার গিরীশ ঘোষ একের পর এক পৌরাণিক নাটক লিখলেন। অন্যদিকে সুকৌশলে নাটকের মধ্যে স্বদেশপ্রেম-এর কথা ঢুকিয়ে দেওয়া শুরু হল। পেশাদার থিয়েটার সাড়ম্বরে সেটা উপস্থাপন করতে থাকল। এর মধ্যে বাংলায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হলে থিয়েটার নতুন রূপে প্রাণ ফিরে পায়। বাঙালির মনে যে রাজনৈতিক সচেতনতা কাজ করছিল, তাকে নতুনভাবে রূপ দেওয়া হলো ঐতিহাসিক নাটকে। সেইসময়ে বারাঙ্গনাদের নিয়ে থিয়েটারে অভিনয় করানো খুব একটা সহজ ছিল না। সেদিন বহু মানুষ থিয়েটারকে ঘৃণার চোখে দেখতেন, অবশ্য বিপরীত মনস্ক মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না।

স্বয়ং মাইকেল মধুসূদন, বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার শরৎচন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন, "তোমরা স্ত্রী লোক লইয়া থিয়েটার খোলো। আমি তোমাদের জন্য নাটক লিখিয়া দেবো।" তারপর তো ইতিহাস। (চলবে)

11 months ago
Britain: সপার্ষদ পোঙ্গল উদযাপন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনকের, কলাপাতায় ভূরিভোজ

পোঙ্গল উৎসব উদযাপন করলেন ভারতীয় বংশোদভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক (Rishi Sunak)। ১৫-ই জানুয়ারি ব্রিটিশ পিএমও-র (Britih PMO) আধিকারিকদের সঙ্গে 'থাই পোঙ্গল' উৎসব পালন করেন ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী। এই উৎসবে অংশগ্রহণের ভিডিও ট্যুইটারে পোস্ট করেছে পিএমও। মুহুর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্যরা কলাপাতায় খাবার খাচ্ছেন। এই উৎসবটি (Pongal Festival) মূলত দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে তামিলরা পালন করেন। তবে এখন ভারত ছাড়াও অন্য জায়গাতে এই উৎসব পালিত হয়।

ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে পোঙ্গল  পালন করছেন। ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হয়েছেন সুনক। এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটারে সকলকে ভালো ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দেন। এছাড়া সকলকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান তিনি।



11 months ago


Quit India: ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং মহিয়সীদের ভূমিকা (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: কংগ্রেসের পুরোনো মহিলা কর্মীদের অনেকেই তখন সরোজিনী নাইডু-সহ জেলে। সুচেতা কৃপালিনী ছাড়াও এখানে এক দু্র্ধর্ষ মহিলা মৃদুলা সারাভাইয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। আহমেদাবাদের সরাভাই পরিবারের অসম সাহসী কন্যা গান্ধিজীর দূত হয়ে নির্ভীক চিত্তে অনেক কঠিন কাজে লিপ্ত ছিলেন। একদা অবিভক্ত বাংলার উত্তরবঙ্গে জোরদার আন্দোলন হয়। মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূল ও কিছু নদী দ্বারা বেষ্টিত অঞ্চলে সতীশ সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়া প্রমুখদের নেতৃত্বে স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের একটি মহিলা বিভাগ ছিল ভগিনী সমাজ। গ্রামের মহিলারা এর স্বেচ্ছাসেবিকা ছিলেন। তাদের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

১৯৪৩-র ঘূর্ণিঝড়ে এরা বৃটিশ সেনাবাহিনীর অত্যাচারের শিকার হন। কয়েকশো মহিলা ধর্ষিতা ও নিগৃহীতা হন। মেদিনীপুরের আন্দোলন শুরু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরা সরকারি ভবনে পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তমলুক আন্দোলনের বিবরণ শুনে কাঁথি, বাঁকুড়া, বীরভূমে দলে দলে মহিলারা কারাবরণ করেন। ওড়িশার ভদ্রক অঞ্চল ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করে ২৮ আগস্ট। ওই অঞ্চলকে স্বাধীন অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়। সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ হয়।

১৯৪২-এর আন্দেলনে বৈশিষ্ট ছিল অহিংস সহিংস সব দলের নেতৃবৃন্দ-কর্মীবৃন্দ এই স্বাধীন ভারতবর্ষ দেখার আশায় যোগ দিয়েছিলেন। এখানে মেয়েদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই বিপ্লবীদের সাহায্যকারিনী হিসাবে মেয়েরা ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে এসেছিলেন।

11 months ago
Quit India: ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং মহিয়সীদের ভূমিকা (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪১-১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ এই দু-তিনটি বছরে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং পরে ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা যখন নিষ্ফলা, তখন জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪২ সালে ৮-ই আগস্ট বোম্বাই অধিবেশনে 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন'-র প্রস্তাব গৃহীত হয়। তখন হিটলারের আক্রমনে ফ্রান্স-ব্রিটেন বিধ্বস্ত। অন্য়দিকে হিটলারের মিত্র শক্তি জাপান পার্ল হার্বার আক্রমণ করেছে। ফলে যুদ্ধের পরিধি দঃপূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত। ভারতের ব্রিটিশ সরকার তখন বিপর্যস্ত।

এদিকে 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' যেটা গান্ধিজি স্বাধীনতার অন্তিম যুদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। তাঁর এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার দিন মধ্য়রাত্রে বোম্বাইতে উপস্থিত সব নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হয়েছিলেন। কলকাতায় দাদাভাই নৌরজির দৌহিত্রী খুরশেদ বেন, নেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। বোম্বাই নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের পর সে শহরে ব্য়াপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় বহু স্বেচ্ছাসেবক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য় প্রস্তুত। এখানে একজনের নাম করতেই হবে-তিনি হলেন সরলা বেন। ইনি ১৯৪২-এ লরি ভর্তি স্বেচ্ছাসেবক ও সেবিকাদের নিয়ে আন্দোলন করে কারাবরণ করেন। (চলবে)

11 months ago


Sir: বাংলার বাঘের শৈশব এবং সংক্ষিপ্ত জীবন (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: ১৮৬৪-র ২৯ জুন কলকাতার বৌ বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। বাবা গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন ডাক্তার, মা জগত্তারিনী দেবী ছিলেন আদর্শ মহিলা। আশুতোষের জন্মের কিছুদিন পরে তাঁর বাবা বৌবাজার ছেড়ে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া অঞ্চলে চলে আসেন। সেখানে চক্রবেড়িয়া পাঠশালায় আশুতোষ ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর বাল্যশিক্ষা এখান থেকেই শুরু। তিনি শৈশব থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। অঙ্কে ছিলেন মাস্টার, অনেক কঠিন অঙ্ক অনায়াসে সমাধান করে ফেলতেন। তাঁর মেধা থেকে ইংরেজ সরকার শিক্ষা দফতরের উচ্চপদে চাকরি দিতে চাইলে, তিনি তা প্রত্যাখান করেন।

তিনি জানতেন চাকরি গ্রহণ করলেও, ইংরেজ সরকার তাঁকে ইংরেজদের সমমর্যাদা দেবে না। তাই চাকরি প্রত্যাখান করেন। তিনি গণিতে এমএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরের বছর পদার্থ বিদ্যায় এমএ পাশ করেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি, আইন পরীক্ষাতেও পাশ করেন। (চলবে)

12 months ago
Special: অসীম সাহসী বীরাঙ্গনা ঝলকারি বাঈ (শেষ পর্ব)

সৌমেন বসু: ঝলকারি বাঈ ছোট থেকেই অসীম সাহসী ও দৃঢ় চরিত্রের মেয়ে ছিলেন। ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের যোগ্য সহচরী ছিলেন। দরিদ্র দলিত পরিবারের সন্তান হলেও, ঝলকারির বাবা নেয়েকে ঘোড়ায় চড়া ও অস্ত্র চালনা শিক্ষায় পারদর্শী করেছিলেন। ঝাঁসির কাছে ভোজনা গ্রামে ঝলকারি জন্মগ্রহণ করেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে ঝলকারির কৃষক বাবা মেয়েকে বেশি দূর পড়াশোনা করাতে পারেনি। শোনা যায়, ঝলকারি ঘরের কাজকর্ম সেরে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যেতেন। একদিন তিনি এই কাজ করতে গিয়ে বাঘে খপ্পরে পড়লেন। একদম ভয় না পেয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে কুড়ুলের আঘাতে সেই বাঘকে মেরে ফেললেন। এমন সাহসী ছিলেন তিনি...প্রথম পর্বের পর

ফিল্ড মার্শাল হিউরোজ তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে একবার ঝাঁসি আক্রমণ করলেন। মাত্র চার হাজার সেনা নিয়ে রানী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করলেন। হিউরোজ ভাবলেন ঝাঁসির রানীকে এভাবে পরাস্ত করা যাবে না। ব্রিটিশ বাহিনী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। কিন্তু দুর্ভাগ্য লক্ষ্মীবাঈয়ের। তাঁর সেনাবাহিনীর একজন বিশ্বাসঘাতকতা করে দুর্গের একটা দরজা খুলে দেন। সেই দরজা দিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যরা দলে দলে প্রবেশ করেন। সেই সময় একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন ঝলকারি বাঈ। তিনি লক্ষ্মীবাঈকে বাঁচানোর জন্য রানীর সাজ পোশাক নিজে পরলেন, আর কিছু সৈন্য নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলেন। সবাই ভাবলো রানী লড়াই করছেন। এই ফাঁকে রানী তাঁর শিশুপুত্রকে পিঠে বেঁধে ঘোড়ায় চেপে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঝাঁসি ত্যাগ করলেন।

এদিকে, খবর রটে যায় ঝলকারি বাঈ, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ নয়। যুদ্ধ করতে করতেই ঝলকারি ধরা পড়েন। লক্ষ্মীবাঈয়ের বিশ্বাসঘাতক সৈন্য তাঁকে ধরিয়ে দেয়। পরে ঝলকারিকে মুক্তি দেওয়া হয়। অন্য একটি মতে, ঝলকারি বাঈ যুদ্ধ করতে করতে কামানের গোলার আঘাতে মাটিতে পড়ে যান। তখন শুধু মাটিতে উচ্চারণ হয় জয় ভবানী।

দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এই বীর নারীর গাঁথা ইতিহাসের পাতায় অবহেলিত ছিল। কোরি সম্প্রদায় প্রতি বছর ঝলকারি বাঈয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহিদ দিবস পালন করে। ভারত সরকার ২০০১ সালের ২২ জুলাই ঝলকারি বাঈকে স্মরণ জানিয়ে ডাক টিকিট প্রকাশ করে। ঝাঁসি দূর্গের মধ্যে একটি মিউজিয়ামকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ ঝলকারি বাঈয়ের নামে উৎসর্গ করে। এমন বীর নারীর প্রতি রইলো অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা।     

12 months ago
Special: অসীম সাহসী বীরাঙ্গনা ঝলকারি বাঈ (প্রথম পর্ব)

সৌমেন বসু: ঝলকারি বাঈ ছোট থেকেই অসীম সাহসী ও দৃঢ় চরিত্রের মেয়ে ছিলেন। ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের যোগ্য সহচরী ছিলেন। দরিদ্র দলিত পরিবারের সন্তান হলেও, ঝলকারির বাবা নেয়েকে ঘোড়ায় চড়া ও অস্ত্র চালনা শিক্ষায় পারদর্শী করেছিলেন। ঝাঁসির কাছে ভোজনা গ্রামে ঝলকারি জন্মগ্রহন করেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে ঝলকারির কৃষক বাবা মেয়েকে বেশি দূর পড়াশোনা করাতে পারেনি। শোনা যায়, ঝলকারি ঘরের কাজকর্ম সেরে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যেতেন। একদিন তিনি এই কাজ করতে গিয়ে বাঘে খপ্পরে পড়লেন। একদম ভয় না পেয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে কুড়ুলের আঘাতে সেই বাঘকে মেরে ফেললেন। এমন সাহসী ছিলেন তিনি।

একসময় গৌরী পুজোর সময় ঝলকারি অন্য মহিলার সঙ্গে ঝাঁসির রানীকে সম্মান জানাতে রাজ মহলে আসেন। এখানে রানী ঝলকারিকে দর্শন করতেই অবাক হয়ে যান। লক্ষ্মীবাঈ দেখেন, ঠিক তাঁর মতো হুবহু দেখতে ঝলকারি বাঈ। এরপর রানী যখন ঝলকারির সাহস এবং অস্ত্র চালনার ব্যাপারে জানলেন, তখন রানীর দুর্গা দল বাহিনীতে ঝলকারিকে যোগ দিতে প্রস্তাব দেন রানী। ঝলকারি যেন এই অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন, রানীর নির্দেশে তিনি দুর্গাদল বাহিনীতে যোগ দেন। ১৮৫৭ সালে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় সিপাইরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন, তখন রানী ঠিক করলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে তাঁর ঝাঁসিকে উদ্ধার করতে হবে। (চলবে)

12 months ago


Woman:বাংলার অগ্নিদূত নারী শেষ পর্ব (দৌলতউন্নিসা)

সৌমেন সুরঃ ছোটগল্প, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্যে দৌলতউন্নিসার বিশেষ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'পরশপাথর'। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যুক্ত হন দৌলতউন্নিসা। ওঁর শ্বশুরবাড়ি গাইগান্ধা। গাইগান্ধা মহিলা সমিতির সম্পাদক তিনি। তাঁর জ্বালামুখী বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে ৭/৮ গ্রামের মেয়েরা, এমন কি মুসলিম সম্প্রদায়ের মেয়েরা পর্দা সরিয়ে ছুটে আসত তাঁর সভায় যোগ দিতে। রাগে-ক্ষোভে ব্রিটিশ পুলিসরা যোগদানকারীদের বসত বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিত। তবু দৌলতকে দিমিয়ে রাখতে পারেনি। সভার পর সভা করে গেছিলেন। অবশেষে পুলিস ফুলছড়ি গ্রামের সভা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকায়। তবু আন্দোলন থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম মেয়েরাও যে ঘর ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে প্রতিবাদ করতেন তার প্রামাণ দৌলতউন্নিসা।

অথচ ওঁর ত্যাগ, সংগ্রামী চেতনা, নাম, আমরা কজনই বা জানি। ইতিহাসের অন্তরালে হারিয়ে গেছে এমন অনেক অজানা আত্মত্যাগী মানুষ। যখন পুলিস দৌলতউন্নিসাকে ধরে, তখন তাঁর শাস্তি ছিল এমন, রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি, বহরমপুর প্রভৃতি জেলে তাঁকে পাল্টে পাল্টে রাখা হতো। যাইহোক দৌলতউন্নিসা যে ব্রিটিশদের একসময় ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল, একথা প্রমাণিত সত্য। শুধু মুসলিম পুরুষরা নয়, মেয়েরা স্বাধীনতা সংগ্রামে যে বীরত্ব দেখিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। (সমাপ্ত)

তথ্যঋণ: সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

12 months ago
Woman:বাংলার অগ্নিদূত নারী দ্বিতীয় পর্ব (সত্যবতী ও দৌলতউন্নিসা)

সৌমেন সুর: ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার মেয়েদের বাড়ির সদর দরজার বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তাঁরা পর্দাসীন ছিল। তবু শত শত নারী তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিল স্বাধীনতার নিরিখে। নিজেদের নাম, যশ, মোহ ত্যাগ করে স্বাধীনতার সংগ্রামে জড়িয়েছিলেন বহু নারী। তৎকালীন সমাজে কোণঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরা নিজের নিজের জায়গা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজ করেছেন গোপনে বা প্রকাশ্যে। কেউ সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউ প্রাণ দিয়েছেন, কেউ বা ব্রিটিশ পুলিসের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের প্রাণকে আত্মহুতি দিয়েছে দেশমাতৃকার চরণে। প্রথম পর্বের পর...

সত্যবতীকে পুলিস জেলে চালান করে। তিন মাস জেল খেটে মুক্তি পেয়ে আবার দেশের হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনে নেমে পড়েন। ১৯ ফেব্রুয়ারি নন্দীগ্রামে এক রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতে গিয়ে আবার গ্রেফতার হন সত্যবতী। এদিকে সূত্র মারফৎ পুলিস জানতে পারে সত্যবতী গোপনে খবর চালান করে বিপ্লবীদের। যার ফলে পুলিস ঘটনাস্থলে পৌছনোর আগেই বিপ্লবীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হত। এই খবর জানতে পেরে পুলিস সত্যবতীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। অত্যাচারের ফলে সত্যবতীর কিডনি ও অন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালে এই ক্ষতের চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। ফলে সত্যবতী শহিদ হন।

দেশের কাজে তাঁর আত্মত্যাগ ভোলা সম্ভব নয়। তবু দেশের স্বাধীনতার কাজে তাঁর ভূমিকা আজও মানুষের কাছে অধরা হয়ে আছে। কজনই বা তাঁকে আমরা স্মরণ করি। এবার আপনাদের সামনে হাজির করছি বিপ্লবি দৌলতউন্নিসাকে। ইনিও হারিয়ে গিয়েছে অবহেলার স্রোতে। ছোট বয়স থেকে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করে যশোরের এই প্রতিভাবান ছাত্রী। ঢাকার ইডেন স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া দেশ, বঙ্গশ্রী ও বিচিত্রা পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করতেন। তখনকার দিনে মেয়েদের পড়াশোনা এমনকি কোনও সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকা সমাজ পছন্দ করতো না। তাছাড়া মুসলমান সমাজের কোনও মেয়ে পড়াশোনা করে উন্নতি করুক এটা তখনকার সময়ে সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।  কিন্তু দৌলতউন্নিসার বাবা, মা এবং স্বামীর সমর্থনে পড়াশোনার দরজা খুলে যায়। (চলবে)

তথ্যঋণ: সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 

12 months ago


Nandkumar: স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নন্দকুমারের ফাঁসি (শেষ পর্ব)

সৌমেন সুর: আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করলাম অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের থেকে, সে ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানতে হবে। তারা সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হোক- যে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হবে তাঁদের প্রাণ, তাঁদের মন। এসব জানতে হলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তাঁদের পড়তে হবে, ভাবতে হবে, লিখতে হবে। এমন অনেক বিপ্লবী আছেন, যাঁদের নাম বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে গিয়েছে। আবার অনেক নাম আছে যাঁদের স্মরণ করলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। প্রথম পর্বের পর...

১৭৭৫ সালে ৫-ই অগাস্ট কলকাতার রেসকোর্সে কাছে কুলিবাজার মোড়ে বর্তমান বিদ্যাসাগর সেতুর প্রান্তে প্রায় ৩০০ বছর আগে মহারাজা নন্দকুমারকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজদৌল্লার পতন হয়। সেই সময় দিল্লির বাদশাহ ছিলেন শাহ আলম। সিরাজদৌল্লার পতনের পর নতুন নবাব হন মীরজাফর দিল্লির বাদশাহের কাছে সুপারিশ করে 'মহারাজ' বিশেষণে ভূষিত করেন।

মহারাজা নন্দকুমার প্রকৃত অর্থে একজন দানশীল মহৎপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। বাংলার মানুষের কাছে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় মানুষ। তারপরেও ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল। সাড়া বাংলা জানে তিনি নির্দোষ। তবু এই নির্মম পরিহাস তাঁকে বরণ করতে হয়েছিল। যাইহোক এই সংগ্রামী মানুষদের কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। এঁরা সকলেই আমাদের কাছে প্রণম্য, বরেণ্য ও চিরস্মরণীয়।

তথ্যঋণ: ড. ত্রিগুণা চট্টোপাধ্যায়   

12 months ago
Freedom: স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নন্দকুমারের ফাঁসি (প্রথম পর্ব)

সৌমেন সুর: আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করলাম অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের থেকে, সে ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানতে হবে। তারা সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হোক- যে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হবে তাঁদের প্রাণ, তাঁদের মন। এসব জানতে হলে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তাঁদের পড়তে হবে, ভাবতে হবে, লিখতে হবে। এমন অনেক বিপ্লবী আছেন, যাঁদের নাম বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে গিয়েছে। আবার অনেক নাম আছে যাঁদের স্মরণ করলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। 

মা এবং মাতৃভূমির ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। যারা পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশমাতৃকার চরণে। তাঁরা আমাদের কাছে মহান, চিরঋণী। আসলে আমাদের সঠিক স্বাধীনতার ইতিহাস না জানার ফলে আমরা আত্মমুখী ও ভোগবাদী হয়ে উঠছি। দেশের জন্য আমাদের একটু স্বার্থত্যাগ আর অপার ভালবাসা না থাকলে সোনার ভারত গড়ে উঠবে কীভাবে!

আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত বাঙালি একজনকে। যার নাম মহারাজ নন্দকুমার। ব্রিটিশদের কাছে তিনি ছিলেন নান কুমার। সত্তর বছর বয়সেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ফাঁসিতে তাঁর প্রাণ দিতে হয়েছিল।  (চলবে)

12 months ago