
জেলার বিজেপি সভাপতিকে মানছি না মানবো না। রবিবার সাতসকালেই এলাকায় পড়ল পোস্টার। আর যা ঘিরে বিজেপির দলীয় কোন্দল এল প্রকাশ্যে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের কাছেই বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধে পোস্টার। পোস্টারে লেখা রয়েছে "বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে মানছি না মানবো না"। তবে বিষ্ণুপুর বিজেপি কর্মীদের দ্বারাই যে এই পোস্টার লাগানো হয়েছে, পোস্টারে তাও উল্লেখ রয়েছে। পোস্টারে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে। বিষ্ণুপুর শহরের একাধিক জায়গায় এই পোস্টার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
সম্প্রতি, গত ২৫ ডিসেম্বর বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় জেলা সভাপতি পদে রদবদল হয়। জেলার দু'জন সভাপতিকে বদল করে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলায় বিল্লেশ্বর সিংহকে এবং বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলায় সুনীলরুদ্র মণ্ডলকে। এরপর থেকেই বাঁকুড়া জেলায় ক্রমশ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে দলের অন্তর্কলহ। রবিবার তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নতুনদের হাতে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার পরেই দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ থেকে বেরিয়ে পড়েন জেলার ৪ জন বিধায়ক।
পরবর্তীকালে জেলার একাধিক বিধায়ক ওই দুই সভাপতির বদল চেয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠান। এবার বিষ্ণুপুর শহরেও পড়ল সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে পোস্টার। একের পর এক এমন ঘটনায় বিজেপি দলের ক্ষোভ যে ক্রমশ বৃহত্তর হচ্ছে, তা একেবারেই পরিষ্কার।
অন্যদিকে লোহাগড় মোড়ে ছাতনা এক নম্বর মণ্ডলের সভাপতি সহ ওই মণ্ডলের বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশ পদত্যাগ করে। ওই মণ্ডলের সমস্ত মোর্চা নেতৃত্ব, সমস্ত শক্তি প্রমুখ ও সমস্ত বুথ সভাপতি একসঙ্গে দলের সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করে সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দলের সাংসদ সহ জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে পদ ছাড়লেন বিজেপির ছাতনা এক নম্বর মন্ডল সভাপতি সহ ১৪০ জন পদাধিকারী।
পদত্যাগকারীদের দাবি, স্থানীয় সাংসদ নিজের ইচ্ছেমতো জেলা কমিটি গঠন করে দল পরিচালনা করতে চাইছেন। রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে সাংসদের বোঝাপড়ারও অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা। তবে শুধু সাংসদ নয়, স্থানীয় বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। সমস্ত বিষয়টিকে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করতে চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপরতন আশা করে। অরূপরতন পাবেন কিনা, জানা নেই। কিন্তু অবগাহন করতে তিনি ভালোবাসেন। তিনি বাঁকুড়ার সদানন্দ দত্ত। মাত্র ৪৫ মিনিটে ২০২২ ডুব দিয়ে অভিনব বর্ষবরণ বিষ্ণুপুরের সদানন্দের।
বর্ষবরণের প্রথম দিনই পিক-আপ ভ্যানকে বাঁচাতে গিয়ে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনার কবলে মদবোঝাই গাড়ি। দুর্ঘটনায় মদবোঝাই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় রাস্তার ধারে। এরপরই ছড়িয়ে পড়ে গাড়িতে থাকা মদের বোতল। আর সেই মদের বোতল নিয়ে চম্পট দিল পথচলতি মানুষ। শনিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার বন কামারপুকুর এলাকায়। দুর্ঘটনায় মদবোঝাই গাড়ির চালক ও খালাসি গুরুতর জখম হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় মানুষ ও পুলিস।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে একটি ৪০৭ গাড়িতে মদ বোঝাই করে কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বিষ্ণুপুর থানার বন কামারপুকুরের কাছে উল্টোদিক থেকে আসা একটি ইঞ্জিন ভ্যানকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মদবোঝাই গাড়িটি আচমকাই রাস্তার ধারে উল্টে যায়। গাড়ি থেকে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য মদের বোতল। স্থানীয় মানুষ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গাড়ির চালক ও খালাসিকে উদ্ধার করে।
কিন্তু তার আগেই পথচলতি বাইক আরোহী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ মদের বোতল লুটপাট শুরু করে। খবর দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর থানায়। এরপরও ঘটনাস্থলে পুলিস পৌঁছনোর আগে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই চলে লুটপাট। পরে বিষ্ণুপুর থানার পুলিস স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে পড়া মদ পাহারার জন্য দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় পুলিস।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির চালক জানান, গলিতে একটি পিক-আপ ভ্যানে ৫ জন বসেছিল। হঠাৎ করেই গলি থেকে বেরিয়ে আসে ওই পিক-আপ ভ্যানটি। সেই সময় তিনি পিক-আপ ভ্যানটিকে সাইড দিতে গিয়ে নিজের গাড়িটিকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। মুহূর্তের মধ্যেই সেটি উল্টে যায়।
কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছিনাথ বহুরূপীকে নিশ্চয়ই মনে আছে। বাঘরূপী ছিনাথ দেখে পড়ি কি মরি অবস্থা। আর আজ বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর পৌরসভার সদর রাস্তার ওপর দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল একজোড়া মহাদেব এবং একজোড়া হনুমানকে।
মুখে রং। মাথায় জটা। গায়ে বাঘছাল, হাতে ঝোলা। শিবের হাতে আবার ডমরু ও ত্রিশূল। আর কেউ আবার শরীর ঢেকেছেন সাদা মখমলি পাটের আস্তরণে। এভাবেই বিষ্ণুপুর পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্তে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে দুই শিব, দুই হনুমান।
তবে শিব কৈলাস থেকে আসেননি, আর হনুমানও জঙ্গল থেকে বেরোয়নি। মহাদেব চৌধুরী, শ্যাম চৌধুরী, পিন্টু চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী। এঁরা সকলেই বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা। বংশপরম্পরায় শিব এবং হনুমানের সং সেজে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ান। এটাই তাঁদের জীবিকা। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে অর্জিত অর্থেই এঁদের সংসার চলে। অতিমারী পরিস্থিতিতে রাতের ঘুম উড়েছিল। এখন আবার ধীরে ছন্দে ফিরছে জীবন। তাই পথে আবার শিব ও হনুমানের বহুরূপীরা। কখনও দোকানের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। কখনও বা পথচারীরা এসে ভিড় করছে তাঁদের সামনে। কখনও নিজের শহরে, কখনও বা প্রতিবেশী রাজ্যেও যান এঁরা।
সরকার পাশে আছে এঁদের। মাসিক ভাতা হিসাবে হাজার টাকা করে দেওয়া হয় সরকারি তরফে। তবে সেই টাকায় পেট চলে না তাঁদের। নানা চরিত্রের সাজ, পোশাক, মেকআপ কিনতেই সমস্ত টাকা খরচ হয়ে যায়। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনো অবস্থা।
সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে এই পেশাকে ধরে রেখেছেন মহাদেব, শ্যাম, পিন্টুর মতো মানুষেরা। চরিত্র বদলেও এদের দিনযাপনের চিত্রের বদল হয় না। এলাকায় ঘুরে ঘুরে সামান্য উপার্জন আর সরকারি সামান্য কিছু ভাতায় অর্থকষ্টে দিন কাটে পরিবারগুলির। পেশাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন প্রশাসনিক সাহায্য।
স্বামীর অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী আশ্রয় নিয়েছে শ্যালিকার বাড়িতে। শ্যালিকা স্ত্রীকে লুকিয়ে রেখেছে, এই অভিযোগে শ্যালিকার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল জামাইবাবুর বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বিষ্ণুপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দরবার এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত শ্যালিকার পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় পুরসভা থেকে বিধায়ক।
বছর দশেক আগে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা কাজল মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয় উত্তরপ্রদেশের পাপ্পু সিং-এর। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাত পাপ্পু সিং, এমনটাই অভিযোগ। সম্প্রতি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে উত্তরপ্রদেশে পাপ্পু সিং-এর বাড়ি ছেড়ে বিষ্ণুপুরে দিদির বাড়িতে এসে ওঠেন কাজল। স্ত্রীর খোঁজে সম্প্রতি বিষ্ণুপুর শহরে আসে পাপ্পু সিং। পাপ্পু অভিযোগ তুলতে থাকে, বিষ্ণুপুরের দরবার এলাকায় বসবাসকারী শ্যালিকা পূজা মণ্ডল তাঁর স্ত্রীকে লুকিয়ে রেখেছে। পূজা বোনকে লুকিয়ে রাখার কথা অস্বীকার করলেও সেকথা কানে তোলেনি পাপ্পু। শনিবার সকালে শ্যালিকা পূজা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে গেলে জামাইবাবু পাপ্পু শ্যালিকার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
স্থানীয়রা প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভালেও ততক্ষণে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় বাড়িটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিষ্ণুপুরের পুর প্রশাসক অর্চিতা বিদ ও স্থানীয় বিধায়ক তন্ময় ঘোষ। উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সর্বোতভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এই ঘটনায় জামাইবাবুর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পূজা মণ্ডল। অভিযুক্ত পাপ্পু সিংকে পুলিস আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তবে অভিযুক্ত পাপ্পু সিং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
১৪৮ বছরের পুরনো বিষ্ণুপুর পৌরসভায় আজও নেই স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনার স্তূপ। ভোগান্তির শিকার পুরবাসী। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। সামনেই রয়েছে অন্যান্য পৌরসভাগুলির নির্বাচন। যদিও এখনও পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি।
বিষ্ণুপুর পৌরসভার মধ্যে রয়েছে একাধিক প্রাচীন মন্দির। মল্ল রাজাদের ইতিহাস সমৃদ্ধ এই ঐতিহাসিক শহর। বিশেষ করে বছরের এই সময় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু পর্যটক আসেন মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর দর্শনে। কিন্তু পর্যটকরা মন্দিরের সামনে এই আবর্জনার স্তূপ দেখে স্তম্ভিত।
১৮৭৩ সালে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন চলাকালীন বিষ্ণুপুর পৌরসভা তৈরি হয়। তারপর কেটে গেছে ১৪৮ বছর। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে বিষ্ণুপুর পৌরসভায়। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই বিষ্ণুপুরে একটি স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে পারেনি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বর্তমানেও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আবর্জনার স্তূপের বড় বড় পাহাড় জন্মেছে। তার ওপর বিষ্ণুপুর পৌরসভার ১০ কোটি টাকা টেন্ডার দুর্নীতিকাণ্ডের কেস চলছে।
তবে বিষ্ণুপুরবাসীর একাংশ মনে করছে, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার নির্বাচন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই পৌরসভার চেয়ারম্যান নেই। রয়েছেন প্রশাসক। সেই কারণেই পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। যার ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পুরবাসী। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিতে রাজনৈতিক নেতারা আসেন বটে, কিন্তু ভোট মিটে গেলে কাজের কাজ কিছুই হয় না।
যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা। এই ইস্যুতে সরব কংগ্রেস। বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক বলেন, তৃণমূলের আমলে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর এখন জঞ্জালনগরীতে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে ব্যর্থ। তিনি শাসকদলের বিরুদ্ধে কাটমানি নিয়ে কটাক্ষ করেন।
অন্যদিকে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক নীরজ কুমার বলেন, সব প্রকল্প চুরি করার একটা বদ অভ্যাস দাঁড়িয়ে গেছে তৃণমূল নেতাদের। তবে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই, তা স্বীকার করেন বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রশাসক অর্চিতা বিদ। বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
কংগ্রেসের দামি তৃণমূল সরকারের আমলে মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর জঞ্জাল নগরীতে পরিণত হয়েছে ।সব প্রকল্প তেই চুরি করার অভ্যাস শাসক দলের দাবি বিজেপির । সাফাই প্রশাসকের ।
শাড়িতেই নারী। বাহারি শাড়িতে নিজেকে সাজাতে অনেকেরই প্রথম পছন্দ হতেই পারে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ি। তাই আপনার আলমারিতে বালুচরী শাড়ি থাকবে না, তা কি হয় ? শুধু তাই নয়, বাঁকুড়া জেলার হস্ত ও কুটির শিল্পের খ্য়াতিও জগৎজোড়া। এবার জেলার হস্ত ও কুটির শিল্প স্থান পেল ভারতীয় ডাক বিভাগের স্পেশাল কভারে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁকুড়ার এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলে ডাক বিভাগের তরফ থেকে প্রকাশ করা হল বাঁকুড়া জেলার হস্ত ও কুটির শিল্পের উপর স্পেশাল কভার।
শাড়ির ইতিহাস প্রায় অষ্টাদশ শতকের। সে সময় ভারতের নানা অঞ্চল, এমনকি বাইরে থেকেও বণিকরা আসতেন বাণিজ্যের জন্য। ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে বালুর চরে গড়ে ওঠে বয়ন শিল্প। বালুর চরে এই শিল্প গড়ে ওঠে বলে এর নাম বালুচরী। অন্য মতে, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে তিনি তাঁর রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে নিয়ে যান। সেখানে বালুর চরের শিল্পীদের নির্দেশ দেন বেগমদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরি করার। সেই থেকেই এই শাড়ি বালুচরী শাড়ি নামে পরিচিত হয়।
বাঁকুড়ায় প্রাচীন হস্তশিল্পের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্য়ে ভারতীয় ডাক বিভাগ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ি, টেরাকোটা, পট এবং মাদুর শিল্পকে স্পেশাল কভারে স্থান দিল। ভারতীয় ডাক বিভাগ এর আগে বিষ্ণুপুরের প্রাচীন অন্যতম নিদর্শন দলমাদল কামানকে স্থান দিয়েছে স্পেশাল কভারে। পরবর্তীকালে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের মন্দিরের শহরের টেরাকোটার তিন প্রাচীন মন্দিরকে স্থান দেওয়া হয় ভারতীয় ডাক বিভাগের ডাক টিকিটে।
বাঁকুড়া জেলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখতে ডাক বিভাগের এই উদ্যোগে খুশি জেলার হস্ত ও কুটির শিল্পীরা। জেলার হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রচার প্রসার ও বাণিজ্যিক শ্রীবৃদ্ধি হবে দাবি ভারতীয় ডাক বিভাগের।
এর ফলে বালুচরী শিল্পের সঙ্গে যুক্তরাও খুশি।
বৈষ্ণবদের অন্যতম উৎসব রাস উৎসব। রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহকে নানাভাবে সাজিয়ে, আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে রাসমঞ্চে পালন করা হয় এই উৎসব। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ায় রাস দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন।
প্রাচীন ঐতিহ্য আর পরম্পরা মেনে 'গুপ্ত বৃন্দাবন' হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর। সেখানে পাঁচদিনের রাস উৎসব শুরু হয়েছে। এখানকার মল্ল রাজাদের আমলে বিষ্ণুপুরে কৃষ্ণপ্রেমের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন রাজারা একের পর এক কৃষ্ণমন্দির তৈরি করেছিলেন সেই সময়। মল্লরাজাদের আমলের রাস উৎসবের ধারাবাহিকতা আজও রক্ষা করে চলেছেন বিষ্ণুপুরবাসী। শনিবার বিষ্ণুপুর রাজ পরিবার থেকে সতেরো জোড়া সহ মোট ছত্রিশ জোড়া রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহকে বিশেষ সাজে সাজিয়ে রাধামদন গোপাল জিউয়ের মন্দিরে আনা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে রানি চূড়ামণি দেবী বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে মদনগোপাল মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
তখন থেকেই বাঁকুড়ায় রাস উৎসবের সূচনা। যদিও সেখানে নির্দিষ্ট কোনও দেবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলে জানা যায়নি। জানা যায়, পরে কোনও এক সময় ওই রাস মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটায় রাসমঞ্চে রাস উৎসব পালন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গুপ্ত বৃন্দাবন বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ বীর হাম্বিরের আমল থেকে রাস উৎসবের সূচনা। বর্তমানে সমস্ত বিগ্রহ রাজবাড়ি থেকে সম্মানপূর্বক মাধবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। উৎসব শেষে সমস্ত বিগ্রহ আবারও রাজবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। পাঁচদিন ধরে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাস মেলাকে কেন্দ্র করে উৎসবে মাতোয়ারা থাকে মল্ল রাজাদের প্রাচীন এই রাজধানী। কিন্তু চলতি করোনা পরিস্থিতি এসব আয়োজনে বাধ সেধেছে। বন্ধ জনসমাগম, বন্ধ মেলা। তবে এবছর কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধিতে।
বিষ্ণুপুর মাধবগঞ্জ রাস কমিটির সম্পাদক গৌতম গোস্বামী জানান, আগের বছর ম্লান হয়েছিল পুজোর আয়োজন। তবে এবছর করোনার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি কিছু কম করা হয়েছে। বিশেষ পুজোপাঠ ও সব কটি বিগ্রহকে আলাদা আলাদাভাবে সন্ধ্যা আরতি করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠছিল, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৮ নং ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকায়৷ এবার সেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দিল বিষ্ণুপুর পুরসভা। অভিযোগ, সেখানে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ হয়েছে বেআইনিভাবে। সেই বেআইনি অংশই ভেঙে দেয় বিষ্ণুপুর পুরসভা। বিষ্ণুপুর শহরের শালবাগান তুর্কি সীতারামপুর এলাকায় পৌরপ্রশাসক অর্চিতা বিদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে এই কাজ হয়।
প্রসঙ্গত, বিষ্ণুপুর পৌরসভার ১৮ নং ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকায় দুটি অ্যাপার্টমেন্টের নির্মাণ ঘিরে প্রশ্ন তোলেন এলাকাবাসী। সেইমত, গত ২৭ শে সেপ্টেম্বর তদন্তে নেমে এলাকা পরিদর্শন করেন প্রশাসক অর্চিতা বিদ, এসডিপিও কুতুবউদ্দিন খান সহ অন্যান্য পৌর আধিকারিকরা। সেইসময় পুরসভার পাশ করা প্ল্যান খতিয়ে দেখে জরিপ করে দুটি অ্যাপার্টমেন্টের কাজের নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়ে। পুরসভার তরফে জানানো হয়, বেআইনিভাবে দখল করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিল্ডিংয়ের কলাম। আবার কোথাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বারান্দার শেড।
তাই বিষ্ণুপুর পৌরসভার তরফে থেকে দুটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিককে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা তা ভাঙেননি। মঙ্গলবার তাই পৌরসভার তরফেই তা ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়।
পুরসভার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, বহু আগে যাঁরা বেআইনিভাবে কাজ করেছিলেন, তাঁদের কিছু বলা হচ্ছে না। কারণ, এখন তাঁদের বলতে গেলে হয়রানি করা হবে। সেটাই তাঁদের এখন স্থায়ী বাসস্থান। তাই বর্তমানে যাঁরা নতুন নির্মাণ করছেন, তাঁদেরকে বার্তা দিতেই এই কর্মসূচি। এরপর থেকে আর কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না এলাকায়।