প্রসূন গুপ্ত: সম্প্রতি দুটি ঘটনা কংগ্রেস, বাম ও বিজেপিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছিলো। প্রথমটি সাগরদিঘির উপনির্বাচন, দ্বিতীয়টি কৌস্তভ কাণ্ড। দুটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সমালোচনার জেরে তৃণমূল খানিক বিপাকে পড়ায় খুশির হওয়া বিরোধী শিবিরে। ভোটের ফলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, 'সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোট'। তিনি অভিযোগ করেন, 'এক সময়ে বামেদের ভোট যেমন বিজেপিতে গিয়েছিল, তেমন এবারে বিজেপির ভোট এসেছে বাম-কংগ্রেসের জোটে।'
তাঁর এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয় নিশ্চয়। কিন্তু এতে অবাক হওয়ার মতো নতুন ঘটনা কিছু নেই। ১৯৭৭-এ ইন্দিরাকে হারাতে এবং ১৯৮৯-এ রাজীব সরকারের পতন ঘটাতে বামেরা দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। মমতা তো সেই ঘটনা জানেন। কিন্তু এই ধরণের জোট কতদিন টিকে থাকে? বিজেপি বুঝেছে তাদের ঘোষিত স্লোগান কংগ্রেস মুক্ত দেশ। সেক্ষেত্রে বাংলায় কংগ্রেস শূন্য থেকে একটি আসন পাওয়া এবং গেরুয়া শিবিরের তৃতীয় স্থানে চলে যাওয়া মোটেই সুখকর নয়। এছাড়া কৌস্তভ-কাণ্ডে মানবিকতার খাতিরেই হোক বা রাজনীতিগত ভাবেই হোক তারা প্রাথমিক ভাবে কৌস্তভের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
কিন্তু রবিবার সেই অবস্থান থেকে একেবারেই সরে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের অন্দরে সাগরদিঘি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা দেখেছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান থেকে এবার ভোটে শতাংশের বিচারে বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। তাদের পূর্বতন ভোটের নিরিখে ১৯ হাজার ভোট কমেছে। প্রশ্ন উঠেছে এই ভোট গেলো কার বাক্সে? যদি জোটের বাক্সে গিয়ে থাকে তবে ভাবতেই হচ্ছে। আবার যদি ওই ভোট তৃণমূল পেয়ে থাকে তবে শুভেন্দুর ভাষায় 'সনাতনী' ভোট পাওয়া শুরু করলো কি তৃণমূল?
কাজেই দেরি না করে দলের অন্দরে স্থির হয়েছে তৃণমূল বিরোধী ঐক্য সম্মিলিত আন্দোলন করে বাম-কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেওয়া যাবে না। কৌস্তভ কাণ্ডে তারা আর নেই। অবশ্য মিডিয়ার সামনে তারা জানিয়েছে যে তাদের আটকানোর জন্য তৃণমূলই, কংগ্রেস-বামেদের 'স্পেস' দিচ্ছে।
প্রসূন গুপ্ত: এই বছর ৯টি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। কাজেই কোমর বেঁধে নামার উপর জোর দিচ্ছে বিজেপি হাইকমান্ড। চলতি সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার দিল্লিতে আয়োজন হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। এনডিএমসি কনভেনশন সেন্টারে দলের শীর্ষ নেতারা তো আছেনই, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আছেন এই বৈঠকে। সমাপ্তি ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বিজেপি জানে, ২০২৩-এ ৯টি রাজ্যের নির্বাচন, লোকসভা ভোটের আগে সেমিফাইনাল। যদি জম্মু-কাশ্মীরের ভোট হয়, তবে এ বছর গুরুত্বপূর্ণ ১০টি রাজ্যের ভোট। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট রাজ্যগুলি যেমন আছে তেমন রাজস্থান, কর্নাটক,মধ্যপ্রদেশ,ছত্রিশগড়ের মতো রাজ্যগুলিও আছে। যেখানে পদ্ম শিবিরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসও। তাই বিজেপির নজরে কোনও ভাবে প্রতি রাজ্যে ক্ষমতায় আসা।
বিশেষ করে রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকবে বিজেপি। ঠিক যেভাবে ইউপিএ ১ এবং ইউপিএ ২ সরকার চলেছে। ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে টানা ১৫ বছর কংগ্রেস তথা পণ্ডিত নেহেরু ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীও চান ওই রেকর্ড ছুঁতে। ৭০ পেরোলেই বিদায়, এই শব্দটি যতই আগের ভোট পর্বে প্রয়োগ হোক না কেন, এবার লোকসভা ভোটে বিজেপির মুখ ওই নরেন্দ্র মোদীই।
সম্প্রতি গুজরাতে বিশাল জয় পেয়েছে বিজেপি, কিন্তু হারাতে হয়েছে হিমাচল প্রদেশ। যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে কর্মসমিতির বৈঠকে। কেন পরাজয় প্রশ্ন না তুলে বরং নাড্ডা জোর দিয়েছেন আসন্ন রাজ্যগুলির ভোটের দিকেই। এই দলীয় কর্মসূচিতে মূলত বক্তব্য রাখছেন কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অথবা প্রদেশ সভাপতি। স্বাভাবিক ভাবেই সোমবার বক্তব্য রাখতে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি কিছু বলার আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রশংসা করেন। জানান যে, ২০২১ নির্বাচনের পর যেভাবে বিজেপি বাংলায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তা সত্যি প্রশংসার। যদিও কেন্দ্রীয় বিজেপি আপাতত বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছে না। তাদের টার্গেট, গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত সাংসদের থেকে আগামি ভোটে সাংসদসংখ্যা বাড়ানো।
যদিও তারা বুঝতে পেরেছে রাজ্য বিজেপির এই মুহূর্তে কোথায় গলদ। কিন্তু তবুও তারা চায় রাজ্যের সমস্যা সমাধানের পথ রাজ্য নেতারাই খুঁজুক।
প্রসূন গুপ্ত: শনিবারে মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah at Kolkata)। তবে এটা নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎকার নয়, ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠক। এই অনুষ্ঠানে আহ্বান করা হয়েছে উত্তর পূর্ব-ভারতের (North East State) স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অথবা মুখ্যমন্ত্রীদের। এই সভা হওয়ার কথা ছিল ৫ নভেম্বর কিন্তু অমিত শাহের বিশেষ সভা থাকার জন্য তা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, যা যা ঘটছে তাতে অমিতজি আসবেন না। কিন্তু এটা একেবারেই সরকারি জরুরি বৈঠক তাই বিলম্ব হলেও তিনি আজই বিকেলে কলকাতায় এসে পৌছবেন। জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিনিধিরা আসছেন। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আগেই জানিয়েছিলেন তিনি আসতে পারবেন না। শনিবারের সভার পৌরহিত্য করবেন অমিত শাহ এবং চেয়ারপার্সন হিসেবে থাকছেন মমতা বলেই সংবাদ।
অমিত একদিন আগেই আসছেন কারণ শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বিজেপির রাজ্য দফতর মুরলীধর লেনে বৈঠক করবেন প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে। উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। থাকতে বলা হয়েছে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ ৫ সাধারণ সম্পাদক ও অন্য নেতাদের। এঁরা যথাক্রমে লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতির্ময় মাহাতো ও দীপক বর্মন।
দলের অভ্যন্তরের কী অবস্থা, রাজ্য নেতৃত্বের কোনও নেতার, বিশেষ কারও বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিযোগ রয়েছে কিনা? সেসব শুনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। মূলত পঞ্চায়েত ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে যদি কোনও ড্যামেজ থাকে সেটা কন্ট্রোল করে, দলকে উজ্জীবিত করতে শুক্রবার রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বসছেন অমিত শাহ। পাল্টা দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সরব হতে পারে মুরলীধর সেন লেন, এমনটাই সূত্রে খবর।
ফের মহুয়া মৈত্রের ট্যুইট খোঁচায় বিদ্ধ বঙ্গ বিজেপি (Bengal BJP)। গেরুয়া শিবিরের নবান্ন অভিযানে (Nabanna Abhijan) সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলছে তৃণমূল। মঙ্গলবার মেছুয়া বাজার এলাকায় পুলিসের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এবার যারা সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে সেই বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে বুলডোজার পাঠালে কেমন হয়? ট্যুইট করে মহুয়া মৈত্র (Mahua Maitra) এই প্রশ্ন করেন।
What if Bengal used Bhogiji Ajay Bisht’s model & sent bulldozers to homes of BJP workers who destroyed public property yesterday?
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) September 14, 2022
Will BJP stand by own policy or get their chadds in a twist?
তিনি বলেন, 'যদি বাংলা ভোগীজি অজয় বিষ্ঠের নীতি নিয়ে সরকারি সম্পত্তি ভাঙার অভিযোগে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে বুলডোজার পাঠায় তাহলে কী? বিজেপি কি নিজেদের নীতিতে স্থির থাকবে?' মহুয়া মিত্রের এই ট্যুইট ভাইরাল হতেই পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, 'সরকারি সম্পত্তি ভাঙার জন্য প্রথম জরিমানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবেন। আর নবান্ন অভিযানে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস বিজেপি করেছে, তার কোনও প্রমাণ নেই। বিরোধী দলের থাকাকালীন যতগুলো সরকারি সম্পত্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধংস করেছেন, তার এক শতাংশ ধ্বংস বিজেপি করেনি। আগে ওরা জরিমানা দিক, তারপর বিজেপির জরিমানা নিয়ে ভাববে।'