
মনি ভট্টাচার্য: সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায়, বারবার আদালতের চক্কর কেটেও সিবিআই-ইডির থেকে রেহাই পেলেন না অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। আজ অর্থাৎ শুক্রবার সিবিআই তৃণমূল সাংসদকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার অর্থাৎ ২০ তারিখ বেলা ১১ টার সময় নিজাম প্যালেসে হাজিরার নোটিশ পাঠায়। যদিও এই নির্দেশিকা নিজের টুইটারে পোস্ট করে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন সাংসদ নিজেই। এর পরে অবশ্য এই আসরে অংশগ্রহণ করে মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুক্রবার মমতা বন্দোপাধ্যায় অভিষেকের এই জেরা প্রসঙ্গে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি ছুড়ে দেন এবং বলেন, 'অভিষেককে বিজেপি ভয় পায়। তাই অভিষেকের এই 'নবজোয়ার'কে বানচাল করার চেষ্টা করছে। যদিও এর পাল্টা বিজেপি কটাক্ষ, 'যে কোনও বড় চোরকে পাড়া প্রতিবেশী সবাই ভয় পায়।'
শুক্রবার অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে সিবিআইয়ের তলবের পর মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'অভিষেককে বিজেপি ভয় পায়, এবং তৃণমূলকেও ভয় পায় ইডি-সিবিআই। ' মমতার এই মন্তব্যের পাল্টা কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। শুক্রবার সিএন ডিজিটালকে তিনি বলেন, 'যে কোনও বড় চোরকে পাড়া প্রতিবেশী সবাই ভয় পায়। এটা তো স্বাভাবিক যে সাধারণ মানুষরা ভয়েই থাকবে যে কখন আরও বড় কিছু চুরি করে বসে। উনি যেটা বলেছেন সেটা ঠিকই বলেছেন। এরকম চোরকে বিজেপি কেন সাধারণ মানুষ সবাই ভয় পায়।'
শুক্রবার মমতা বন্দোপাধ্যায় বিজেপিকে কটাক্ষ ও হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, 'অভিষেকের নবজোয়ার বন্ধ করার জন্য এই চক্রান্ত বিজেপি করছে। বিজেপিকে দেশ ছাড়া না করা পর্যন্ত থামব না।' এ প্রসঙ্গে অবশ্য হেসে মমতার মন্তব্য উড়িয়ে দেন বিজেপি নেতা অনুপম। তিনি বলেন, 'নবজোয়ারের তো করুন অবস্থা যেখানে তৃণমূলের কর্মীকে আরএসএস সাজিয়ে ভাইপোর কাছে পাঠানো হচ্ছিল যাতে নতুন চমক দেওয়া যায়। এই প্রোগাম একটা ফ্লপ প্রোগাম।' এছাড়া তিনি আরও বলেন যে, 'মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিতে আমাদের হাসি পাচ্ছে। এমন একটা প্রোগ্রাম যে ভাইপো বেরিয়ে যেতেই অধিকাংশ জায়গায় ব্যালট লুট হয়েছে। অভিষেককে বিজেপি তেমন বড় নেতা মনে করে না যে তার প্রোগ্রামের বিরোধিতা করার জন্য কিছু করবে। মমতার যুক্তি হাস্যকর।'
বারবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারের এড়াতে আদালতের চক্কর, ও অবশেষে অভিষেককে বিজেপির তলব। এ নিয়ে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা অভিষেককে তুলোধনা করেন। শুক্রবার সিএন ডিজিটালকে অনুপম বলেন, 'উনি মাঝে মাঝে শহীদ সাঝবার চেষ্টা করেন, বলেন অভিযোগ প্রমান হলে ফাঁসি নিয়ে নেবেন। তাহলে জনসাধারণের করের টাকায় একবার হাইকোর্টে, ওখান থেকে থাপ্পড় খেয়ে সুপ্রিম কোর্টে, ওখান থেকে থাপ্পড় খেয়ে ডিভিশন বেঞ্চে করছেন কেন? সৎ সাহস থাকলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হচ্ছেন না কেন?' যদিও এখনও অবধি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ মহল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বেলা ১১ টায় সিবিআইয়ের তলবে হাজিরা দিতেই কলকাতা ফিরেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে 'কুরুচিকর' মন্তব্যের জেরে গোয়া থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ইউটিউবার রোদ্দুর রায়। গোয়ায় কলকাতা পুলিসের টিম গিয়ে রোদ্দুরকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করে আসছেন এই ইউটিউবার।
সে সব পোস্ট নিয়ে বারবার বিতর্ক দানা বেঁধেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে বিকৃত করে গাওয়ার জন্য রোদ্দুরের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছিলেন বহু মানুষ। তাঁর পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিও সব সময়ই অশ্লীল এবং কুরুচিকর শব্দেই ভরা থাকে। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে ভিডিও লাইভ করেছিলেন রোদ্দুর রায়। সেখানেই না থেমে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ছড়াকে কটাক্ষ করে অশ্লীল শব্দেপূর্ণ অদ্ভুত সব ছড়া লিখেছিলেন রোদ্দুর রায়৷ সে নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়েছিল৷ সেই বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই সম্প্রতি আরও একটি ফেসবুক লাইভে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেন রোদ্দুর রায়৷ সেই সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কদর্য বাক্যবাণে ভরিয়ে তুলেছিলেন রোদ্দুর।
এরপরই রোদ্দুরের বিরুদ্ধে চিৎপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত। পাটুলি-সহ একাধিক থানাতেও রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। এরপরই এই গ্রেফতার। রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারির খবর সামনে আসতেই টুইটারে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন অনুপম হাজরা।
টুইটারে একটি পোস্ট করে লেখেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বা অন্যান্য মণীষীদেরকে নিয়ে যখন অশ্রাব্য গালিগালাজ এবং কুমন্তব্য করেছিলেন, তখন রোদ্দুর রায়কে গ্রেফতার করার প্রয়োজন বোধ করেনি পশ্চিমবঙ্গ পুলিস।''
অনুপম হাজরার টুইট
সেই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত, মমতা ও অভিষেকের বিরুদ্ধ অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেই রোদ্দুর রায়কে গ্রেফতার করা হল। কিন্তু বাঙালির আবেগের সঙ্গে জড়িত মণীষীদের নিয়ে যখন রোদ্দুর রায় কদর্য ভাষা প্রয়োগ করেছিল, তখন তাঁকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন বোধ করেনি। অনুপমের প্রশ্ন, ''বাক-সংযমহীন রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারিটা তখন প্রয়োজন বোধ হয়নি, যখন তিনি রবীন্দ্রনাথ বা অন্যান্য মণীষীদের নিয়ে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন বা করে থাকেন। কিন্তু আপনাকে বা আপনার ভাইপোর দিকে আঙুল তুলতেই সে গ্রেফতার!!'' সব মিলিয়ে রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে।
অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) কি অসম্পূর্ণ চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে? এসএসকেএম হাসপাতালের (SSKM) কাছে জানতে চাইলেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তথ্য জানার অধিকার আইন বা আরটিআইয়ের (RTI) মাধ্যমে এই তথ্য জানতে চেয়েছেন অনুপমবাবু (Anupam Hazra)। এই পদক্ষেপের প্রসঙ্গ ট্যুইটারেও জানিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
কোন কোন চিকিৎসক অনুব্রত মণ্ডল, মদন মিত্র-সহ তৃণমূল নেতাদের চিকিৎসা অসম্পূর্ণ করে ছেড়ে দিচ্ছেন? আদতে তাঁদের মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে কি? কেননা সিবিআই অথবা ইডি তলব করলেই অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। একইভাবে মদন মিত্র-সহ অন্য তৃণমূল নেতাদের বারবার অসম্পূর্ণ চিকিৎসা করে ছেড়ে দিয়ে মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে না তো? এমনটাই আরটিআইয়ের মাধ্যমে জানতে চান অনুপম হাজরা।
এদিকে, ফের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় মঙ্গলবার সিবিআই (CBI) দফতরে গেলেন না অনুব্রত মণ্ডল। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় মঙ্গলবার দুপুর একটায় সিবিআই দফতরে তলব করা হয়েছিল তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু সূত্রের খবর, তাঁর পরিবর্তে তাঁর আইনজীবী গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে একাধিকবার গরু পাচার মামলায় হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, এবারেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আপাতত সিবিআই আধিকারিকদের সামনে হাজিরা দেবেন না তিনি। আইনজীবী মারফত পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। চিকিৎসকেরা ১৫ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। সূত্রের খবর, চিঠিতে সিবিআই তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। জানিয়েছেন, সুস্থ হলেই তিনি হাজির হবেন তদন্তকারীদের সামনে। বর্তমানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আপাতত বোলপুরেই থাকবেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে অনুব্রত সবরকম সহযোগিতা করবেন, তা তিনি আগেই নিশ্চিত করেছিলেন। এই মুহুর্তে তিনি দলীয় কোনও মিটিং-মিছিলে যোগ দিচ্ছেন না। এমনকী পার্টি অফিসেও যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, এমনকী গরু পাচার মামলাতেও আপাতত সিবিআই আধিকারিকদের সামনে হাজিরা দেবেন না তিনি।
বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Maondal) আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এবার এই উদ্যোগকে পরোক্ষে বিঁধলেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা (BJP Leader)। বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ থাকাকালীন অনুব্রতর অনুগামী বলে রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন অনুপম হাজরা। কিন্তু ২০১৯ সালে স্রোতে গা ভাসিয়ে পদ্ম শিবিরে নাম লেখান এই অধ্যাপক-রাজনীতিবিদ। তারপর থেকেই অনুব্রত প্রশ্নে নানাভাবে সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনুপম। এবার ফেসবুকে অনুব্রত প্রশ্নে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর (Bratya Basu) সমালোচনায় সরব অনুপম হাজরা।
তিনি ব্রাত্য বসুর উদ্দেশে পরোক্ষে লেখেন, 'পুলিসকে বোমা মারুন' বলা সরল নিষ্পাপ শিশুটির আত্মজীবনী প্রকাশ করলেন রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সঙ্গে সেই আত্মজীবনী এবার পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেলেও অবাক হবো না!!!'
যদিও এই ফেসবুক পোস্টের পর তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে রাজ্য রাজনীতির কেষ্ট মণ্ডলের আত্মজীবনী নিয়ে বাংলার পাঠক মহল কতটা আগ্রহী, সেটা সময় বলবে।