
মনি ভট্টাচার্য: 'একটা দুটো পয়সা পেলে বিকিয়ে দেব দেশও।' কবি শঙ্খ ঘোষের লাইনটা এই বেআইনি বাজি (FireCracks) কারখানায় (Fireworkshop) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সময়ে বড্ড প্রাসঙ্গিক। কারণ কেবল পুলিস (Police) ও প্রশাসনের (Administration) মদতে গোটা রাজ্যে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বাজির ব্যবসা ও কারখানা। শুধু তাই নয় শুনলে আঁতকে উঠবেন পশ্চিমবঙ্গে আইনি বাজি কারখানা নেই বললেই চলে। চারিদিকে যত বাজি কারখানা আছে তাঁর সিংহভাগই বেআইনি। সিএন ডিজিটালকে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে মোট বৈধ বাজি কারখানা মাত্র ৭টি। কিন্তু সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রকৃত বাজি কারখানার সংখ্যা আরও অনেক গুণ বেশি। কিন্তু তা সবই অবৈধ। পূর্বেও এই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে। এবার সেটা সীমা ছাড়িয়েছে। এরপরেও কীভাবে! কাদের মদতে বেআইনি বাজি ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে সে প্রশ্নই উঠছে?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বাজি একপ্রকার নিষিদ্ধ। সব বাজি নিষিদ্ধ না হলেও পশ্চিমবঙ্গে যে ধরণের বাজি তৈরী হয় তা সবই প্রায় বেনিয়মে তৈরী ও নিষিদ্ধ। তবে আইনি বাজি কি নেই? ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, সবুজ বাজি অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব বাজি কেবলমাত্র আইনি বাজি। কিন্তু কি এই সবুজ বাজি! সিএসআইআর এর অনুমোদিত এই বাজি কোনওভাবেই বেরিয়াম নাইট্রেট নামক বিষাক্ত যৌগ দিয়ে তৈরী হবে না। পাশাপাশি কার্বন ব্যবহার করতে হবে আর্সেনিক ও অন্যান্য যৌগের বদলে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, এই বাজির আওয়াজ ৯০ থেকে ১০০ থেকে ডেসিবেলের মধ্যে হতে হবে। যেখানে সাধারণ বাজির আওয়াজ ১৭০ থেকে ২০০ ডেসিবেল হয়। ন্যাশনাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে সফল, শ্বাস ও স্টার এই তিন প্রজাতির সবুজ বাজি হয়। ওই সূত্র অনুযায়ী, আমাদের রাজ্যে যত বাজি বিক্রি হয় সবই প্রায় বেআইনি উপায়ে তৈরী।
বৈধ বাজি বা অবৈধ বাজি এগুলো হয়ত অনেকেই জানেন, কিন্তু অবৈধ বাজি কারখানা কোনটা? আর বৈধ বাজি কারখানাই বা কোনটা? এগরার পর বজবজ, পরের দিনই মালদহে। পরপর এই বাজি কারখানা বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। এগরা বিস্ফোরণের পরেই খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই এগরার বাজি কারখানার মালিক ভানু বাগ, বাজির দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বাজি কারখানা চালাচ্ছিলেন। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এত বড় একটা অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে, আর পুলিসের কাছে খবর নেই? এগরার বিস্ফোরণের দিন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিস সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, ভানুর কারখানা অবৈধ। এ বিষয়ে সিএন-ডিজিটালের তরফে পুলিস সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয় ওই জেলায় ক'টি বৈধ বাজি কারখানা আছে? এ বিষয়ে কিন্তু কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিস সুপার অমরনাথ কে। যদিও তদন্তে নেমে এগরা থেকেই প্রায় ৫০ কেজি বাজি ও মশলা উদ্ধার করেছে পুলিস।
এখানেই শেষ নয়, ন্যাশনাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বলছে, সবুজ বাজি তৈরির সমস্ত নিয়ম মেনে, এনফোর্সমেন্ট, পিইএসও, সিএসআইআর, দমকল সহ রাজ্যের সমস্ত নিয়ম মেনে বাজি কারখানা তৈরী করলে ওই কারখানার লাইসেন্স পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে ওই কারখানাকে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী, সবুজ বাজি তৈরী ব্যবসা হলেও, সেটি ছোট ব্যবসা অর্থাৎ ছোট কোনও কটেজে বা ছোট ঘিঞ্জি জায়গায় এই কারখানা করা যাবে না। বাজির কারখানা হতে হবে খোলা মেলা জায়গায়। এছাড়া বিস্ফোরক মজুতের ক্ষেত্রে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের নিয়ম, কোনও কারখানায় বা দোকানে কোনও ভাবেই ১৫ কেজির বেশি বিস্ফোরক বা বাজির মশলা মজুত করা যাবে না। দাহ্য যৌগগুলির মধ্যে পটাশিয়াম নাইট্রেট, সালফার ও চারকোল রয়েছে যা বিভিন্ন মিশ্রণে বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে। এখন প্রশ্ন উঠছে এই নিয়ম মেনে সবুজ বাজি তৈরির কারখানা এ রাজ্যে ক'টি আছে?
এ উত্তর জানতে সিএন-ডিজিটালের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের সঙ্গে। তিনি উত্তর দেন নি। যোগযোগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের মেম্বার সেক্রেটারি রাজেশ কুমারের সঙ্গে, তিনি এর দায় ঠেলেছেন চেয়ারম্যানের দিকে। বুধবার সংশ্লিষ্ট দফতর অর্থাৎ জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন,"ঠিক এই মুহূর্তে রাজ্যে ৭টি বৈধ বাজি কারখানা রয়েছে। যেখানে ২০ টি কারখানা সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছিল।" তিনি আরও জানান, 'যে কারখানাগুলি বিস্ফোরক মজুতের অনুমতি পেয়েছে সেই কারখানাগুলিকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি কারখানাগুলির অনুমোদন নিয়ে তদন্ত চলছে।'
এগরা, বজবজ, মালদহে রাজ্যের তিন জায়গায় বাজি বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এখনও অবধি উদ্ধার করা হয়েছে দেড় লক্ষ কেজি বাজি ও বাজির মশলা। এখন প্রশ্ন, রাজ্যে এত অবৈধ বাজির কারখানা রমরমা, সে খবর কেন পুলিসের কাছে নেই? কেন আগে সতর্ক হল না পুলিস? কেন সামান্য নিয়ম ভেঙে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করছে কারখানা গুলি? এ অনিয়ম-বেআইনি কারখানায় বিস্ফোরণে ১৬ টি তরতাজা প্রাণের মৃত্যুর দায় কার?
গোটা ঘটনায় অবশ্য বেজায় চটেছেন রাজ্য পুলিসের ডিজি। মঙ্গলবার জেলার পুলিস সুপারদের নিয়ে বৈঠকে সুপারদের ধমক দেন এবং জানতে চান জেলায় কোথায় কোথায় বাজি কারখানা আছে, সেখবর কেন পুলিসের কাছে থাকছে না? আসলে পুলিস সবই জানে। এমনটা নিজস্ব বক্তব্য নয়, এমন দাবি করেছে এগরার স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, পুলিস প্রতিমাসে টাকা পেত ভানুর থেকে। টাকা পৌঁছে যেত স্থানীয় নেতৃত্বের কাছেও। তাহলে কী দাঁড়াল! পুলিস এবং প্রশাসনের মদত ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এত বড় অপরাধ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এ কথা মানছেন রাজনৈতিক ও পুলিস মহলও। এবার শঙ্খ ঘোষের কবিতার লাইনের সঙ্গে কিছু মিল কি খুঁজে পাচ্ছেন?
মনি ভট্টাচার্য: আইনশৃঙ্খলার (Law And Order) কাজে ব্যবহার করা যাবে না কোনও সিভিককে (Civic Volunteer)। এমনই নির্দেশিকা ছিল রাজ্য প্রশাসনের (State Administration) তরফে। কিন্তু সেই নিয়ম মানছেন ক'জন? এবার সিভিক ভলান্টিয়ারকে আইনশৃঙ্খলার কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠল শিয়ালদহ জিআরপির বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিয়ালদহ ডিভিশনের বনগাঁ জিআরপি থানায় হনুমান জয়ন্তীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়াররা।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের ডিউটি রোস্টারের ছবি এক্সক্লুসিভ ছবি সিএন ডিজিটালে:
প্রসঙ্গত একটি ছবি সিএন ডিজিটালের হাতে এসেছে, যেখানে স্পষ্ট বনগাঁ জিআরপি-র অন্তর্গত বেশ কিছু রেল স্টেশনে সিভিক ভলান্টিয়ারদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটি দেওয়া হয়েছে। ওই ছবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ এপ্রিল মাসের ৬ তারিখে বনগাঁ জিআরপি থানার অন্তর্গত আকাইপুর এবং গাংনাপুর রেলস্টেশনে সিভিকদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। কেন রাজ্য প্রশাসনের আইন রাজ্য পুলিস মানছেন না!
এ বিষয়ে রাজ্য রেল পুলিসের শীর্ষকর্তার সঙ্গে সিএন ডিজিটালের তরফে যোগাযোগ করা হলে, তিনি তদন্ত করে দেখছেন বলে প্রতিক্রিয়া দেন। এছাড়া এ বিষয়ে শিয়ালদহ ডিভিশনের এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সিভিকদের আইনশৃঙ্খলার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাঁদেরকে কেবল কনস্টেবলদের সাহায্য করার জন্য রাখা হয়েছে।' এবিষয়ে ওই শাখারই রাজ্য রেল পুলিসের এক কর্তা বলেন, 'সিভিকদের কাজ করানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সব নিয়মই মানা হচ্ছে।'
হাইকোর্টের নির্দেশ মত আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের আগে থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অশান্তি এড়াতেই কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, ব্যারাকপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় আধাসেনা নামানো হয়েছে। যদিও বুধবার বিকেল থেকেই স্পর্শকাতর এলাকা গুলিতে নামানো হয়েছে সেনা। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও অবধি মোট ৩ কোম্পানি সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এ রাজ্যের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকা গুলিতেও তাঁরা থাকবেন।
রাম নবমীর মিছিলে অশান্তির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হুগলি, হাওড়া সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ কয়েকটি এলাকা। তারপরই এই অশান্তি নিয়ে মামলা হয় হাইকোর্টে, সেই মামলায় বুধবার বিচারপতি টি শিবগ্নানাম ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে বলেন, 'অশান্তি রুখতে প্রয়োজনে রাজ্য আধা সেনা নামাতে পারবে।' বুধবার রাজ্যপক্ষের আইনজীবীকে বিচারক পরিষ্কার জানিয়ে দেন, 'মানুষের নিরাপত্তা জরুরী। যে কোনওরকম উপায়ে মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই হিংসা কোনওরকমভাবে মেনে নেওয়া যায় না।' তারপরেই রাজ্যকে হনুমান জয়ন্তীতে আধাসেনা নামানোর নির্দেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশের পর, বুধবার দিঘায় অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে বলেছেন, 'হাই কোর্টের রায় আমাদের পক্ষে ভাল হয়েছে। প্রশাসনও নিজের মতো করে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারবে।' আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে হনুমান জয়ন্তী পালনের জন্য এদিন অন্যান্য রাজ্যকেও নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এছাড়া অশান্তি রুখতে, রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও অনেক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রেই খবর, এই হনুমান জয়ন্তীর মিছিলের অনুমতি নিতে হবে অনলাইনে। সেখানে একটি আবেদন পত্রের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি সূত্রের খবর রামনবমীর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, হনুমান জয়ন্তীতে অতিরিক্ত সতর্ক থাকবে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া রাজ্য প্রশাসনের তরফে, হনুমান জয়ন্তী নিয়ে কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন কলকাতা মহানগর এলাকায় হনুমান জয়ন্তীর কোন মিছিলে ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি মিছিলে আসতে পারবে না। এবং যারা মিছিলে আসবেন তাঁদের নাম এবং সবিস্তার পরিচয় থানাকে জানাতে হবে।
প্রশাসন সূত্রেই খবর, রামনবমীর অশান্তির পর হনুমান জয়ন্তীতে যাতে কোনভাবে নতুন করে অশান্তি না হয়, সেই জন্য বাইক মিছিল একেবারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং কোনভাবেই ডিজে বাজানো, মিছিলে অস্ত্র নিয়ে আসা, এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য চলবে না। প্রশাসন সূত্রে আরও খবর, মিছিলের আগেই পথ নির্দেশিকা দিতে হবে থানাকে। সেটাকে ক্ষতিয়ে দেখা হবে। যদি কোন রকম কোন অশান্তির আঁচ পাওয়া যায়, তবে সেই মিছিলকে অন্য অন্যদিকে ঘোরানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে। এছাড়া পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতা অঞ্চলে ৭০-৮০ টি হনুমান পুজো হবে, এবং ৫-৬টি মিছিল হতে পারে। এছাড়া বুধবার আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোন দলীয় নেতা এই মিছিলে বক্তব্য দিতে পারবে না।
ঝালদা পুরসভায় (Jhalda Municipality) চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে (Calutta High Court) বড় ধাক্কা রাজ্য সরকারের (Mamata Government)। আগামি ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ বিচারপতি অমৃতা সিনহার। ঝালদা পুরসভায় চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরের জারি বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের। পুরুলিয়ার জেলা শাসক আপাতত প্রশাসক হিসেবেই কাজ করবেন।
ঝালদা পুরসভায় আস্থা ভোটের পরেও রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছেন এক তৃণমূল কাউন্সিলর। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী কাউন্সিলররা। আজ দুপুর দুটোয় মামলার শুনানি হয়েছে। এদিকে, আস্থা ভোটে জিতে ঝালদা পুরসভার বিরোধী শিবির পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে শিলা চট্টোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
রাজ্য সরকার ২ ডিসেম্বর একটি নোটিফিকেশন করে তৃণমূল কাউন্সিলর জবা মাছুয়াকে সেই জায়গায় নিযুক্ত করেন। এই পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত, হাইকোর্টে এমনটাই অভিযোগ মামলাকারীর আইনজীবীর।
এদিন শুনানিতে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হলো যে রাজ্য সরকারকে তড়িঘড়ি প্রশাসক বসাতে হলো? চেয়ারম্যান নির্বাচন করার জন্য ৭ দিনের সময়সীমা ছিল।
অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরূদ্ধে আন্দোলনের জেরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর যাতে কোনও বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য রাজ্য সরকার জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যের সচিবালয় নবান্ন থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই প্রকল্পের বিরোধিতায় মিছিল, পথ অবরোধের জেরে যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, তা দেখতে জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনওভাবেই যেন কোনও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে জেলাগুলিকে। নবান্নের তরফেও প্রতিটি জেলার পরিস্থিতির উপর অবিরাম নজর রাখা হচ্ছে। হাওড়া ও পুরুলিয়ার কয়েকটি জায়গায় মিছিল বা জমায়েতের চেষ্টা হয়েছিল, তা আটকে দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে।
এদিন সকালের দিকে বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ, মিছিল হয়েছে। প্রতিটি জায়গাতেই পুলিস পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবুও বিক্ষোভের জেরে ভোগান্তির শিকার হন আমজনতা। শিলিগুড়িতে সেবক রোড, হিলকার্ট রোড, ভেনাস মোড় হয়ে ফ্লাইওভার ধরে বিক্ষোভ-মিছিল দেশবন্ধুপাড়া এলাকায় পৌঁছয়।
ফ্লাইওভারের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তরুণরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কালঘাম ছোটে পুলিশের।
'অগ্নিপথ' প্রতিবাদের আঁচ পড়ে পুরুলিয়াতেও। শুক্রবার সকাল থেকে পুরুলিয়া- বরাকর রাজ্য সড়কে পলিটেকনিক কলেজের সামনে শুরু হয় এই বিক্ষোভ। এদিন আন্দোলনকারীদের কোনও অনুমতি না থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
হাওড়া ব্রিজের ওপর আন্দোলন দানা বাঁধার আগেই পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক (CM at Medinipur) থেকে খড়গপুরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee। তাঁর মন্তব্য, 'সীমান্ত এলাকায় পুলিসি নজরদারি বাড়াতে হবে, লাগাতে হবে সিসিটিভি। বিহার (Bihar) থেকে দু'হাজার টাকায় বন্দুক এনে এখানে ব্যবহার হচ্ছে। ট্রেনে করে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। তাই ট্রেনেও নজরদারি চালাতে হবে।' আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সমালোচনায় সরব বিরোধীরা (Opposition attack)। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস একযোগে আক্রমণ করছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে।
কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'উনি যখন সাপ্লাই লাইন জানেন, তাহলে আটকানোর ব্যবস্থা করুন। পুলিসমন্ত্রী হিসেবে উনি ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু করতে হবে না। উনি শুধু পুলিসকে ফ্রি হ্যান্ড দিয়ে দিন, তাহলে সব অস্ত্র উদ্ধার হয়ে যাবে।'
সিপিএম নেতা তাপস সিনহার খোঁচা, 'বারুদের স্তূপের উপর বাংলা বসে আছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। খুন-সন্ত্রাস বাড়ছে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা আর উনি এসব বলে আই-ওয়াশ করছেন। নাকা চেকিংয়ের নামে আদতে তোলাবাজি চলছে। উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু বন্দুক ঢুকছে আর সন্ত্রাস চলছে। কালকেই দু'জায়গায় শ্যুটআউট চলছে।'
বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, 'ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটা সত্যি। বিহার থেকে বন্দুক আসছে না, বন্দুক এখান থেকে তৈরি হয় বিহারে যাচ্ছে। জেলায় জেলায় বন্দুকের কারখানা পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে, সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। কিন্তু উনি সমধান করুন এই সমস্যার।'
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে দেদার বালি চুরি চলছে দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার অধীন জেমুয়া এলাকায়। যে জঙ্গলের রাস্তায় পৌঁছে গিয়েছিল সিএন পোর্টালের ক্যামেরা, লেন্সবন্দি হয়েছে বালি চোরদের অবাধ কৌশল। দিনেদুপুরে লুট হয়ে যাচ্ছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর বালি। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কুনুর নদীর পাড় কেটে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলছে অবাধে বালি চুরি। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর বালি চুরি হচ্ছে জঙ্গলের ওই রাস্তা দিয়ে। বোঝার উপায়টুকু নেই এই রাস্তা দিয়েই দেদার লুট চলতে পারে বালি। মাফিয়ারা রীতিমতো জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে কুনুর নদীর পাড় কেটে চালিয়ে যাচ্ছে বেআইনি বালি কাটার কাজ। প্রকাশ্যে দিনের আলোতে এই কাজ চললেও হুঁশ নেই পুলিস-প্রশাসনের। তবে এই নদীর একটা অংশ কাঁকসায় পড়ে, আরও একটি অংশ করে নিউটাউনশিপ থানার অধীনে পড়ে। তাহলে প্রশাসনিক সীমানা কার? কোন থানার অধীনে পড়ছে এই অংশ?
এই জটিলতায় বালি মাফিয়ারা রীতিমতো জেমুয়ার দিক থেকে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ফেলে কুনুর নদীর পাড় কেটে দিব্যি বালি চুরি করছে। প্রাণের ভয়ে আশপাশের এলাকার মানুষজন প্রতিবাদটুকু করার সাহস পায় না। অথচ দিনের পর দিন এইভাবে বেআইনিভাবে কুনুর নদীর পাড় কেটে বালি চুরি হচ্ছে। শুধু বালি নয়, দুষ্কৃতীদের থাবায় মাটিও। একদিকে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের আশঙ্কা, কুনুর নদীর পাড় কেটে অবাধ বালি চুরির ঘটনায় এবার বর্ষায় নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে আশপাশের এলাকার বেশ কিছু গ্রামকে গ্রাস করে বসবে। মাঝে একবার এই বালির ট্রাক্টরের চাকার তলায় পড়ে মৃত্যুও হয়েছিল একজনের।
এই বিষয়ে এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ স্বাধীন ঘোষ জানান, অবিলম্বে প্রশাসনকে এই ব্যাপারে আইনমাফিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আর্জি জানাবেন তিনি।
দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের মদতে এই বেআইনি কাজ চলছে। অবিলম্বে প্রশাসন এর বিরুদ্ধে যদি কোনওরকম ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবেন।
দিনেদুপুরে যেভাবে বালি ও মাটি মাফিয়ারা কুনুর নদীর পাড় কেটে অবাধে বালি চুরির বেআইনি কাজ জারি রেখেছে, তাতে প্রশ্নের মুখে এই শহরের প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা।