লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও (Rajya Sabha) বৃহস্পতিবার বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী (PM Modi)। এদিনও আদানি-কাণ্ডে (Adani Row) সরব হওয়া বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করতে পাল্টা আক্রমণের পথ নিয়েছিলেন তিনি। এদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, 'বিরোধীদের হাতে কাদা রয়েছে বলেই ছুড়ছেন। যত কাদা ছুড়বেন, ততই পদ্ম ফুটবে।' লোকসভার ভঙ্গিতেই রাজ্যসভায় এদিন সরব ছিলেন মোদী।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, 'নেহরুকে নিয়ে অবহেলা হলে কয়েকজন অভিযোগ করেন। গান্ধী-নেহরু পরিবারের কেউ নেহরু পদবি ব্যবহার করেন না কেন? রাজ্যের সরকার ফেলতে ৫০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।'
বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চকক্ষে বিরোধীদের হল্লাকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, 'আপনারা এখানে চেঁচামেচি করছেন। মানুষ আপনাদের কথা শুনছে না। আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। কংগ্রেসকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদের দুর্দশা বুঝতে পারছি। ভারতে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি। উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস।'
বাজেট অধিবেশনের (Budget Seesion) প্রথম দিন থেকেই আদানি ইস্যুতে (Adani Row) উত্তাল সংসদ। বিতর্ক এবং আলোচনার পরিসর চেয়ে আন্দোলন করছে সরকার-বিরোধী দলগুলো। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শিল্পপতি গৌতম আদানির ছবি তুলে ধরে সংসদে সুর চড়ান কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। তাঁর প্রশ্ন, 'কীভাবে সব ব্যবসাতে ঢুকে পড়ছে আদানি গোষ্ঠী? প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক ঠিক কী?' রাহুলের দাবি, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন যেখানেই তিনি গিয়েছেন, সর্বত্র একটিই নাম শুনেছেন— আদানি, আদানি এবং আদানি।'
মঙ্গলবার লোকসভায় বলতে উঠে রাহুল বলেন, 'তামিলনাড়ু থেকে কেরল, কেরল থেকে হিমাচল প্রদেশ, আমরা একটাই নাম শুনে এসেছি। মানুষ আমার কাছে জানতে চাইছেন, কীভাবে প্রতিটি ব্যবসায় আদানিরা ঢুকে যান এবং প্রতি ব্যবসায় ওই শিল্পগোষ্ঠী সফল হয়েছে!'
এদিন রাহুলের বক্তব্যের মধ্যেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বিরোধিতার সুর ওঠে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর মন্তব্য, 'শুধুমাত্র বড় অভিযোগ করলেই হয় না। সেই অভিযোগের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে হয়।' দু'পক্ষের এই বাদানুবাদে বাজেট অধিবেশনের পঞ্চম দিনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদের দুই কক্ষ।
আদানিকাণ্ড (Adani Row) নিয়ে এবার মুখ খুললেন বীরেন্দ্র শেহবাগ (Virender Sehwag)। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন এই ব্যাটার টুইট করে আদানির সংস্থার পক্ষে যুক্তি খাড়া করেন। নাম না করে তিনি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের (Hindenburg Research) বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত। শেহবাগের অভিযোগ, 'ভারতের উন্নতি কিছুতেই সহ্য করতে পারে না পশ্চিমি দেশগুলি। ভারতের শেয়ার বাজারে সৃষ্টি হওয়া অনিশ্চয়তা একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।' হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের পর এভাবেই সরব হয়েছিলেন খোদ গৌতম আদানিও।
সোমবার শেহবাগ লেখেন, 'গোরো সে ইন্ডিয়া কি তরক্কি বরদাস্ত নহি হোতি। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক না কেন, ভারত শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।' সহবাগের এই টুইট ঘিরে সমাজমাধ্যমে হইচই।
Goron se India ki tarakki bardaasht nahi hoti. The hitjob on India’s market looks like a well planned conspiracy. Koshish kitni bhi kar lein but as always, Bharat aur majboot hi nikalkar ubhrega.
— Virender Sehwag (@virendersehwag) February 6, 2023
গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি এবং আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আনে মার্কিন সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে আদানি গোষ্ঠী। ধস নেমেছে আদানিদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে। প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি খুইয়েছে আদানিরা। তাই মনে করা হচ্ছে সহবাগ যে ভারতীয় বাজারের বিপর্যয়ের কথা টুইটে উল্লেখ করেছেন তা আদানিদের জন্যই। যদিও অনেক নেটিজেন সহবাগের টুইটের উপর ভিত্তি করে আদানিদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
এর আগে শেহবাগ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারত সরকারের করা নোটবন্দির সিদ্ধান্তকেও ‘ভাল পদক্ষেপ’ বলে প্রশংসা করেছিলেন তিনি।
আদানি-কাণ্ডের জেরে (Adani Row) বাজেট অধিবেশনের ৫ দিন পরেও বিরোধী হল্লায় উত্তপ্ত সংসদ। সোমবার সূচি মেনেই গান্ধীমূর্তির (Gandhi Statue) কাছে প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বিরোধী সাংসদরা। ইতিমধ্যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের (Hindenburg Report) রিপোর্টের ভিত্তিতে আদানি গোষ্ঠীর উপর ওঠা অভিযোগ নিয়ে সংসদে (Parliament) আলোচনা চায় বিরোধীরা।
আর একই দাবিতেই সোমবার কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিআরএস-এর মতো দলগুলির সাংসদরা সংসদের উভয়কক্ষে মুলতবি প্রস্তাব এনেছে। মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েই বিরোধী সাংসদরা এদিন সকালে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেন। সংসদের বাজেট অধিবেশনের কৌশল স্থির করতে সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের চেম্বারে বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের সদস্যরা বৈঠকে বসেন।
Opposition MPs Protesting on Adani issue in Parliament House In front of Gandhi Statue #BudgetSession pic.twitter.com/4n6RMfhdAv
— Siddharth sharma (@siddharthjourno) February 6, 2023
সেই বৈঠকে কংগ্রেস সাংসদদের পাশাপাশি, ডিএমকে, এনসিপি, বিআরএস, জেডিইউ, এসপি, সিপিএম, সিপিআই, জেএমএম, আরএলডি, আরএসপি, আপ, আইইউএমএল, আরজেডি এবং উদ্ধব-পন্থী শিবসেনা সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সেই বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনুপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন টুইট করে জানানা, 'প্রতিবাদ প্রতিবাদের জায়গায় ঠিক আছে এবং চলবে। তবে এই নিয়ে সাংসদ অধিবেশন মুলতুবি করলে চলবে না। কোনও দল যদি এই নিয়ে অধিবেশন মুলতুবি করার চেষ্টা করে, তাহলে জানতে হবে যে, তারা আদপে বিজেপিকে সাহায্য করছে।'
বৈঠকে না যোগ দিলেও গান্ধীমূর্তির পাদদেশে চলা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সোমবার গান্ধীমূর্তির নীচে তৃণমূলের মহুয়া ছাড়াও কংগ্রেস নেতা খাড়গে, অধীররঞ্জন চৌধুরী, শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত এবং অন্য দলের সদস্যদের বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা গিয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের (Hindenburg Report) উপর ভিত্তি তৈরি হওয়া আদানি কাণ্ডের (Adani Row) জেরে ব্যাঙ্কে রাখা টাকা কতটা নিরাপদ? সে নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। জীবনের শেষ সঞ্চয় তাঁরা কিছু সুদের জন্য ব্যাঙ্কেই (Bank Report) গচ্ছিত রাখেন। তাই আমানতকারী তথা আম আদমিকে সুরাহা দিতে বিবৃতি প্রকাশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। বিজ্ঞপ্তিতে আরবিআই লিখেছে, 'ভারতের ব্যাঙ্কগুলি নিরাপদ-সুরক্ষিত। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।'
শুক্রবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আরবিআইয়ের সংযোজন, 'সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির সম্পর্ক নিয়ে দুশ্চিন্তার চিত্র উঠে এসেছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রক এবং নজরদার হিসাবে আরবিআই ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের উপর প্রতিনিয়ত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।'
RBI statement on the health of Indian Banking sectorhttps://t.co/LnCLD63QBj
— ReserveBankOfIndia (@RBI) February 3, 2023
গত সপ্তাহে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্রমাগত পড়ছে আদানিদের শেয়ারের দর। এমনকি বিশ্ব ধন কুবেরদের ক্রমতালিকায় নিচে নামছেন গৌতম আদানি। এই মুহূর্তে দেশের বিত্তবান ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি। এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে আদানি এন্টারপ্রাইস ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও) এফপিও স্থগিতের কথা ঘোষণা করেছে।