
বিশ্ববরেণ্য প্রয়াত চিত্র পরিচালক (Film Director) সত্যজিৎ রায় ১০২ এ পা দিলেন। সত্যজিৎ নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে এবং হবেও। তিনি তো শুধু চিত্র পরিচালক ছিলেন না, বহুমুখী প্রতিভা (Multi Talent) ছিল তাঁর। রবীন্দ্র উত্তর যুগে একমাত্র সত্যজিতের নামই উঠে আসে বহুমুখী প্রতিভার ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক। গদ্য, পদ্য, ইলাস্ট্রেশন অর্থাৎ ছবি আঁকা সবই অসাধারণ প্রতিভার সঙ্গে প্রয়োগ করেছিলেন। ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, ডজন গপ্পো ইত্যাদি তো লিখেইছেন। তার সঙ্গে অনুবাদ সাহিত্যেও তাঁর দক্ষতা অপরিসীম ছিল। আজ সেসব বাদ দিয়ে সত্যজিতের তামাকপ্রীতি নিয়ে কিছু বলার আছে।
সত্যজিত্ ফিচার ফিল্ম (Feature Film) করেছিলেন ৩৬টি। এছাড়া ডকুমেন্টারি (Documentary) তো ছিলই। তিনি মদ্যপান করতেন না, কিন্তু সিগারেট খেতেন। ৮০ র দশকে হার্টের সমস্যা হওয়াতে সিগারেট (Cigarette) ছেড়ে পাইপ খেতেন। দেখা গিয়েছে, তাঁর সৃষ্ট ফেলুদা চারমিনার সিগারেট খেতেন। শঙ্কু সিগারেট না খেলেও কেউ অফার করলে চুরুট খেতেন। সিনেমার ক্ষেত্রে ৩৬ টি সিনেমাতেই তাম্বাকু সেবনের দৃশ্য ছিল। পথের পাঁচালিতে হরিহর থেকে দোকানদার পন্ডিতের হুঁকো খাওয়ার দৃশ্য ছিল। অপরাজিততে সর্বজয়া যে বাড়িতে কাজ করত, তাঁর মালিক হুঁকো খেত। জলসাঘরে জমিদার ছবি বিশ্বাসের গড়গড়া খাওয়ার দৃশ্য তো বিখ্যাত ছিল। পরশপাথরে পরেশবাবুর প্রথমে বিড়ি, পরে বড়লোক হযে যাবার পর চুরুট খাওয়ার দৃশ্য সকলেরই মনে আছে। অপুর সংসারে অপুকে অপর্ণা কটি সিগারেট খেতে হবে, তা বেঁধে দিচ্ছে। এরপর সমস্ত সিনেমায় সিগারেট বা হুঁকো খাওয়ার দৃশ্য ছিল। অশনি সংকেতে গঙ্গাপন্ডিত অর্থাৎ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কীভাবে হুঁকো ধরবে, তা সত্যজিৎ নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন। নায়ক ছবিতে উত্তমকুমার কীভাবে সিগারেটের ধোয়ার রিং ছাড়বেন, তও দেখিয়ে দিয়েছেন সত্যজিৎ।
সত্যজিৎ মানতেন, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এবং শেষ জীবনে হার্টের অপারেশন হওয়ার পর ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছবিতে বিদ্যমান ছিলই। হয়তো মনে করতেন, বাঙালি ধূমপান করবে না, তাও হয় নাকি? আজকের দিনে সিনেমা থেকে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য উধাও হয়েছে সেন্সর বোর্ডের নির্দেশে কিংবা দৃশ্য দেখালেও নিচে লিখতে হয় "সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।