ব্রেকিং নিউজ
inhumanity অমানবিক! বৃদ্ধার নিথর দেহ পড়ে রইল বাড়ির উঠোনেই
Homestateinhumanity অমানবিক! বৃদ্ধার নিথর দেহ পড়ে রইল বাড়ির উঠোনেই
Post By : সিএন ওয়েবডেস্ক
Posted on :2022-01-21 14:51:17
অমানবিকতার ছবি ধরা পড়ল শহর দুর্গাপুরে। নিঃসন্তান এক বৃদ্ধাকে ঘরে তালা মেরে বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠল বৃদ্ধার দুই ভাইপো এবং নাতিদের বিরুদ্ধে। সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে মেরে ফেলারও অভিযোগ করা হল তাঁদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সকালে কনকনে ঠাণ্ডায় বৃদ্ধার নিথর দেহ পড়ে রইলো বাড়ির উঠোনে খোলা আকাশের নিচে। অমানবিকতার এই ছবিতে স্তম্ভীত সমাজের সব স্তরের মানুষ। তুলসীবালা গড়াই, দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার অধীন মামড়া বাজার গ্রামের বাসিন্দা। বছর ৯১-এর তুলসীদেবীর স্বামী মারা যায় বছর পনেরো আগে। তারপর থেকেই তুলসী দেবী একাই এক চিলতে টালির ঘরের মধ্যেই থাকতেন। মাঝে পড়ে গিয়ে কোমরে আঘাত পান তুলসী বালা গড়াই, তারপর থেকে একপ্রকার শয্যাশায়ী ছিলেন বছর ৯১এর এই বৃদ্ধা। স্বামীহারা নিঃসন্তান বৃদ্ধার একমাত্র ভরসা বলতে ছিল দুই ভাইপো আর নাতিরা।
মামড়া বাজারে বৃদ্ধার স্বামীর বেশ কিছু সম্পত্তি ছিল। চাষবাস করে যেটুকু উপার্জন ছিল স্বামীর সেখান থেকেই কিছু সঞ্চয় করে রেখেছিলেন তিলসীদেবী। সঞ্চয়ের সেই টাকা দিয়েই চলতো বৃদ্ধার সংসার। পাঁচ ভাইপোর মধ্যে দুই ভাইপো ও নাতিরা আশ্বাস দিয়েছিল শেষ বয়সে তাঁরাই পাশে থাকবেন। কিন্তু বৃদ্ধার ভরসার সেই সম্বলও যে মিথ্যে ছিল সেটা দেরিতে হলেও বুঝেছিলেন তুলসীবালা গড়াই।
কিন্তু ওই যে প্রবাদ আছে ভাগের মা গঙ্গা পায়না। আর তুলসী বালা গড়াইয়ের জীবনেও সেই প্রবাদ যেন সত্যি হয়ে গেল। ছোট টালির চালে কার্যত শুয়েই থাকতো এই বৃদ্ধা। শুক্রবার ভোরে কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধা ঘরের বাইরের উঠোনের মাঝেই পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে দেখতে পান কেউ শুয়ে রয়েছে উঠোনে সন্দেহ হতেই সামনে গিয়ে তাঁরা দেখেন খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছেন বছর ৯১র তুলসীবালা গড়াই। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা খবর দেন স্থানীয় গ্রাম কমিটিকে। এরপর খবর পৌঁছোয় থানায়। পুলিস এসে বৃদ্ধার মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়।
তুলসীবালা গড়াইয়ের অন্যান্য আত্মীয়া সুস্মিতা দত্তের অভিযোগ, যেটুকু সম্পত্তি ছিল তা দুই ভাইপো নাতিরা লিখিয়ে নিয়েছে। বৃদ্ধাকে খেতে দেওয়া হতনা বলে তিনি জানান। এছাড়াও বৃদ্ধাকে ঘরবন্দি করে রাখা হত। বাইরে বেরতেও দিত না। আর বৃদ্ধার বাইরে বেরিয়ে বসার মতো ক্ষমতাও ছিল না। বৃদ্ধার দুই ভাইপো , নাতিরাই ধীরে ধীরে মেরে ফেলেছে। পড়ে অবস্থা বেগতিক বুঝে তারা বৃদ্ধাকে বাইরের উঠোনে ফেলে দেয়। প্রবল ঠান্ডায় মৃত্যু নিশ্চিত হয় তুলসীবালা গড়াইয়ের।
সমাজকর্মী রণজিত গুহ বলেন, বছরের শুরুতে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটবে তা তিনি ভাবতেই পারেননা। এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশেপাশে যাঁরা বয়স্ক-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন সকলে যাতে তাঁদের সামানুটুকু যত্ন নেয় এই আর্জি জানান তিনি।
সামাজিক অবক্ষয়ের ছবি বারবার আমরা তুলে ধরি। কিন্তু অবক্ষয়ের দানবটা যে এই সমাজকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে, তুলসীবালা গড়াইয়ের এই মৃত্যু তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।