সাত সকালে ব্যাঙ্ক খুলতেই ঢুকলো ডাকাত দল। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে খুন করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চলে লুঠপাট। সূত্রের খবর, আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকার বেশি নিয়ে চম্পট ডাকাত দলের।
মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভল্ট খুলতে বাধ্য করা হয় ব্যাঙ্ক আধিকারিককে। ঘটনাস্থল বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট চত্বর। সেখানেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিস।
ব্য়াঙ্ক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ঘড়ির কাঁটা তখন পৌনে দশটা পার করেছে। ব্যাঙ্ক কর্মী, অফিসাররা একে একে আসতে শুরু করেন। ততক্ষণেই এসে গিয়েছে কিছু আমানতকারীও। ঠিক সেই সময় বিনা বাধায় ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ে ৬ থেকে ৭ জন দুষ্কৃতী। ব্যাঙ্কের শাখায় ঢুকেই প্রত্যেকে স্বমূর্তি ধারণ করে। দুষ্কৃতীদের প্রত্যেকেরই হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ব্যাঙ্ক কর্মীদের এক জায়গায় নিয়ে আসে তারা। মেঝেতে বসতে বাধ্য করা হয়। সেখানে বসানো হয় ব্যাঙ্কের কাজে আসা মানুষদেরও। প্রত্যেকের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন দুষ্কৃতীদের একটি ব্যাগে রাখতে বাধ্য করা হয়। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট ধরে ব্যাঙ্কের ভেতরে অপারেশন চালায় দুষ্কৃতীরা। এরপর নিজেদের সঙ্গে থাকা পিঠ ব্যাগে টাকার বান্ডিল ভর্তি করে নেয় তারা। সঙ্গে থাকা হাত ব্যাগও টাকার বান্ডিল ভর্তি করে নেওয়া হয়। এরপর বিনা বাধায় চম্পট দেয় তারা।
দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাবার পর আশপাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ডাকাতির কথা জানতে পারে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা পুলিস সুপার কামনাশিস সেন সহ অন্যান্য পুলিস আধিকারিকরা। কিন্তু ততক্ষণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায় দুষ্কৃতীরা।
জনবহুল এলাকায় এত বড় ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে শহরজুড়ে। ঠিক কত টাকা লুট করেছে দুষ্কৃতীরা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ এবং জেলা পুলিস। তবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বেশি ডাকাতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান জেলা পুলিসের। এ ব্যাপার নিশ্চিত হতে ভল্টে কত টাকা ছিল, এখন কত টাকা রয়েছে তা হিসেব করে দেখা হচ্ছে।
তবে ডাকাতির পর পরই ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে বর্ধমানে। ডাকাত ঢুকেছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে এমার্জেন্সি অ্য়ালার্ম বাজানো হলো না কেন? সেই প্রশ্ন তুলছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরাও। ঘটনার তদন্তে নেমে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তদন্তকারী পুলিস অফিসাররা।
প্রশ্ন উঠছে ব্যাঙ্কের অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও। ব্যাঙ্কে ঢোকার মুখেই আগ্নেয়াস্ত্র সহ নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা। সঙ্গেই দরজা বন্ধ থাকার কথা। কর্মী, অফিসার থেকে শুরু করে আমানতকারী সকলকেই নিরাপত্তারক্ষীর নজরদারির মধ্যে থাকার কথা। একসঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্রধারী এতজন দুষ্কৃতী একসঙ্গে ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ল অথচ নিরাপত্তারক্ষী তা টের পেল না কেন?
জেলা পুলিসের তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কে সে সময় নিরাপত্তারক্ষী ছিল কীনা বা এমার্জেন্সি অ্য়ালার্ম ঠিক ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কের সিসিটিভি সে সময় কাজ করছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এরপর জেলা পুলিস সুপার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহর থেকে বেরোনোর সব রাস্তা, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সব থানা এলাকায় নাকা তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।
তবে সূত্র মারফত জানা গেছে, ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে থাকা সি সি টিভি সেসময় কার্যকর অবস্থায় ছিল না। অন্যদিকে ব্যাঙ্কের ভিতরে থাকা সিসিটিভির হার্ডডিস্ক দুষ্কৃতীরা নিয়ে চম্পট দেয় বলে জানা গিয়েছে।