কথায় আছে, পরিশ্রমের ফল কখনও বৃথা যায় না। যদি তা সত্যিকারের মন থেকে করা হয়, তার ফল ঠিক মিলবে একদিন। আর সেই কথাই সত্যি করে দেখালেন পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সাথী দে।
গলি থেকে রাজপথে এখন সাথী। মুম্বইয়ের একটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চ কাঁপালেন বাংলার তনয়া। তাঁর এরিয়াল হেয়ার অ্যাক্টে মুগ্ধ বিচারক সহ সমগ্র ভারতবাসী। সেই ডান্স পারফরম্যান্স এখন ভাইরাল।
চলতি সিজনে একটি ডান্স শোয়ে সাথী তাঁর এরিয়াল হেয়ার অ্যাক্ট দিয়ে গোটা দেশকে মুগ্ধ করেছেন। মুগ্ধ শোয়ের বিচারকরাও। প্রথম পারফরম্যান্সেই মিলেছে স্ট্যান্ডিং ওবেশন। পাশাপাশি মিলেছে গোল্ডেন বাজ্জারও। যার ফলেই শোয়ে প্রথম ষোলো জনের মধ্যে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছেন সাথী। সাথীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই চাইছেন এবার ট্রফি আসুক বাংলার ঘরেই।
তবে এখন দেখতে এবং শুনতে ভালো লাগলেও লড়াইটা কিন্তু সহজ ছিল না। পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম জামালপুরের পাঁচড়ার বাসিন্দা সাথী। গ্রামেরই স্কুলে পড়াশোনা করার পর মেমারী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন বছর বয়সেই মেয়ের মধ্যে নাচের প্রতি একটা ভালোবাসা লক্ষ্য করেন মা। সেই থেকেই শুরু লড়াই। মায়ের হাত ধরেই নাচের জগতে পা রাখেন সাথী। প্রথমে গ্রামেই নাচের তালিম নেন। এরপর মেমারী ও কলকাতায় নাচের তালিম।
তাঁর বাবা একজন কৃষিজীবী। চাষবাস করেই চলে সংসার। তাই এই সংসার থেকে কলকাতায় গিয়ে নাচ শেখা শুধুমাত্র বিলাসিতা বলে মনে করতেন বাবা। কিন্তু মা মেয়ের ইচ্ছাপূরণে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন। এই লড়াইয়ের পথে সঙ্গী হন স্বামী অভিষেকও।
জামালপুরের পাঁচড়া থেকে ভোরবেলায় মাকে সাইকেলে চাপিয়ে ২০ মিনিট পর প্রথমে মশাগ্রাম স্টেশন ও পরে ডানকুনি হয়ে কলকাতায় নাচ শিখতে যাওয়া। সারাদিনের খাবার বলতে সঙ্গে থাকা মুড়ি ও ছোলা। তারপর দীর্ঘ লড়াই। অবশেষে মুম্বইয়ের এই মঞ্চে আসা তাঁর। এত পরিশ্রম করার পর প্রথম সুযোগকে হারাতে নারাজ সাথী। নিজেকে একটু অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করার ভাবনা থেকেই এই এরিয়াল হেয়ার অ্যাক্ট। এই অ্যাক্টে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এটা করেই আনন্দ পান সাথী। তবে এইসবই সম্ভব হয়েছে মা, স্বামী ও ডান্সগুরু সম্রাট মণ্ডলের সহযোগিতাতেই- এমনটাই জানান সাথী।
ভবিষ্যতে নিজের গ্রাম তথা বাংলার জন্য কিছু করতে চান সাথী।