মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষ শেষ হয় এবং সূচনা হয় দেবীপক্ষের। মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষদের তর্পণ করার প্রথা প্রচলিত আছে। পিতৃপক্ষের সময় বিদেহী আত্মারা জল গ্রহণের জন্য মর্ত্যে আসেন। তার পর থেকে দীপাবলি পর্যন্ত তাঁরা মর্ত্যেই বিচরণ করেন। দীপাবলির সময় পিতৃলোকে ফিরে যান তাঁরা। কিন্তু যেদিন তাঁরা ফিরে যান সেই দিনটি আসলে অমাবস্যা। এই অন্ধকারে পিতৃপুরুষদের যাতে ফিরে যেতে সমস্যা না-হয়, তাই তাঁদের উদ্দেশে অন্ধকার পথ আলোকিত করে রাখা হয়। তাই ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় প্রদীপ।
এ ভাবে কালীপুজোর সঙ্গে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা জড়িয়ে পড়েছে। তবে দীপান্বিতা অমাবস্যার সময় কেন কালীপুজো করা হয়, তারও ইতিহাস রয়েছে।
ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের স্মার্ত পণ্ডিত ও নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজোর বিধান দেন। তবে কালীপুজোর কোনও উল্লেখ করেননি তিনি। এর পর অষ্টাদশ শতকে প্রকাশিত কালী সপর্যাস বিধিতে প্রথম বার দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু সপ্তদশ শতকে বাংলায় কালীপুজোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকেই বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক বলে মনে করা হয়।
এর আগে কালীর উপাসকরা তামার টাটে কালীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে তাঁর পুজো করতেন। অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপুজোকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এর পর উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজো জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)